ওয়ার্ডপ্রেস বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত ও জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কাজের সাথে সরাসরি জড়িত এই কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারটি এক কথায় বলা চলে টেক দুনিয়ায় রাজ করছে। তো যারা কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পেশায় আসতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস একটি গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার। একটি ওয়েবসাইট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডিজাইন করা, ফিচার যুক্ত করা, পরিচালনা করা থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল কাজ ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে সম্পন্ন করা যায় সবথেকে সহজে। কিন্তু বিষয় হলো অনেকেই টেক দুনিয়ার এই বহুল জনপ্রিয় সিস্টেম সম্পর্কে অবগত নয়।
আজকের টিউনে আমি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ওয়ার্ডপ্রেস কী, ওয়ার্ডপ্রেস এতো জনপ্রিয় হওয়ার পেছনের কারণ, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হওয়ার উপায়, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার দের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকবে পুরো টিউন জুড়ে। তাই ওয়ার্ডপ্রেস এর দুনিয়ায় ঘুরে আসতে চাইলে চোখ রাখুন পুরো টিউনে। আশাকরি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে সকল প্রশ্নের উত্তর এক টিউনেই পেয়ে যাবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস হলো একটি ওপেন সোর্স ওয়েব পাবলিশিং সফটওয়্যার যা ২০০৩ সাল থেকে বিনামূল্যে সার্ভিস দিয়ে আসছে। বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) হিসেবে পুরো পৃথিবীর জুড়ে এই সিস্টেম এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে ওয়ার্ডপ্রেস জনপ্রিয়তার দিক থেকে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম স্থান অধিকার করে আছে। আর এটা বলাই তো স্বাভাবিক, কেননা বর্তমানে টেক দুনিয়ার মোট ওয়েবসাইট এর ৪৫% এরও বেশি ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে ডিজাইন করা হয়েছে ও পরিচালিত হচ্ছে।
চলুন ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে আরও সহজভাবে বলছি। আমরা জানি একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য প্রথমেই আমাদের একটি ডোমেইন নেইম ও হোস্টিং কিনতে হয়। এই হোস্টিংয়ে একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করে ইনস্টল করতে হয়। কিন্তু নিজে নিজে একটা ওয়েবসাইট ডিজাইন করার জন্য কোডিং ও Html এর ওপরে বিস্তর জ্ঞান থাকতে হয়। একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার Html কোডিং এর মাধ্যমে যেমন খুশি তেমন ডিজাইন করে একটি ওয়েবসাইট সাজাতে পারে।
কিন্তু এই কাজটি যদি কোনো কোডিং এর ঝামেলা ছাড়াই করে নেয়া যায় তা-ও আবার একদম ফ্রি তে? হ্যাঁ ওয়েব ডিজাইন ও এর ফিচারসমূহ সাজাতে আপনি পুরোপুরি ওয়ার্ডপ্রেস এর ওপর নির্ভরশীল হতে পারবেন। আপনার ডোমেইন নেইম ও ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করা হলে ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করে আপনি আপনার ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে পারবেন এবং পুরো ওয়েবসাইট এর সকল পৃষ্ঠা পরিচালনা করতে পারবেন৷ ওয়ার্ডপ্রেসে অনেক ফ্রি ওয়েবসাইট টেম্পলেট রয়েছে যা সরাসরি আপনি আপনার সাইটে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ ওয়েব ডিজাইনিং এর জন্য কোনো প্রকার খরচ করতে হবে না।
যদিও ওয়ার্ডপ্রেস প্রথম দিকে ব্লগ তৈরির জন্য বেশি জনপ্রিয় ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনি যে কোনো ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন। যেমন: ই-কমার্স বিজনেস সাইট, সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম, ব্লগ সাইট, শিক্ষামূলক সাইট, ইন্টারন্যাশনাল ওয়েবসাইট, মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট ইত্যাদি। এজন্যই দিন দিন ওয়ার্ডপ্রেস এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, ওয়ার্ডপ্রেস হলো একটি ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে সহজেই যে কোনো ওয়েবসাইট তৈরি, ওয়েবসাইট ডিজাইন ও তা পরিচালনা করা যায়৷
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ ওয়ার্ডপ্রেস
হয়তো ইতোমধ্যে বুঝতেই পেরেছেন যে ওয়ার্ডপ্রেস পুরো বিশ্বজুড়ে কতোটা জনপ্রিয়। আর এই জনপ্রিয়তার কারণটাও হয়তো কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছেন। এতো এতো সুযোগ সুবিধা থাকলে যে কোনো সিস্টেম খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তা তো বলা বাহুল্য। চলুন ওয়ার্ডপ্রেস জনপ্রিয় হওয়ার পেছনের কারণগুলি একটু জেনে নেয়া যাক।
ওয়ার্ডপ্রেস সকল শ্রেণির ব্যবহারকারীর জন্যই একদম ফ্রি। একটি সাধারণ মানের ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে যে কোনো বিজনেস ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে আপনি সম্পূর্ণ ফ্রি তে তৈরি করে নিতে পারবেন৷ এখানে আপনাকে শুধু ডোমেইন ও হোস্টিং এর জন্য কিছু টাকা খরচ করতে হবে। যেখানে একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য বেশ মোটা অঙ্কের টাকা আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে থাকি, সেখানে যদি এমন ফ্রি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বিনামূল্যে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় তবে মন্দ কী? মূলত ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম বলেই ওয়ার্ডপ্রেস তুলনামূলক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরির জন্য কেনো কোডিং এর মাধ্যমে ওয়েব ডিজাইন করতে হবে না। কেননা ওয়ার্ডপ্রেসে আগে থেকেই বিভিন্ন ফ্রি ও পেইড থিম তৈরি করা আছে। যে কোনো একটি থিম সিলেক্ট করে তা ওয়েব সাইটের ডিজাইন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন৷ চাইলে নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। আর নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করার জন্য আছে ফ্রি প্লাগিন। তাই কোনো ওয়েব ডেভেলপার কোডিং ছাড়াও চমৎকার ফিচার সমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবে।
যদি এতো সহজেই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় তবে কে চায় শুধু শুধু কষ্ট করে ওয়েব কোডিং করতে? তাইতো দিন দিন ওয়েব ডেভেলপার সহ আমজনতার কাছে ওয়ার্ডপ্রেস জনপ্রিয়তা কুড়াচ্ছে। সাইডে ফেলে রাখুন Php, MySQL, Html দক্ষতা, আর ওয়েবসাইট তৈরি করুন ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি করা ওয়েবসাইট গুলো অটোমেটিক ভাবেই এসইও ফ্রেন্ডলি হয়ে থাকে। কেননা ওয়ার্ডপ্রেস এর ডিজাইন গুলো এসইও করা থাকে। তাছাড়া ওয়ার্ডপ্রেসের ওয়েবসাইটে খুব সহজেই অনপেজ এসইও এবং অফপেজ এসইও করা যায়, হাইপার লিংক ব্যবহার করা যায়। তাই ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট গুলোর এসইও নিয়ে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। বর্তমানে যেহেতু এসইও ছাড়া একটি ওয়েবসাইট টেনে তোলা সম্ভব না, তাই স্বভাবতই ওয়ার্ডপ্রেস এর জনপ্রিয়তা বাড়বে।
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট গুলোর নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। কোনো ওয়েব পাবলিশিং সফটওয়্যার শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই ওয়ার্ডপ্রেস যে এর ব্যতিক্রম হবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। তবে অন্যান্য CMS এর তুলনায় ওয়ার্ডপ্রেস বেশি নিরাপত্তা প্রোভাইড করতে সক্ষম। ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট গুলো সবচেয়ে কম হ্যাকার দের হাতে পড়েছে এবং তুলনামূলক কম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে৷ তাই নিরাপত্তার দিক থেকে চিন্তা করেও বেশিরভাগ লোকজন ওয়ার্ডপ্রেস এর দিকে ঝুঁকছে।
যেহেতু ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে সব ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়, তাই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা তো স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধি পাবে। আগে শুধু ব্লগারদের আনাগোনা ঘটতো ওয়ার্ডপ্রেসে। কিন্তু এখন সকল ক্যাটাগরির ওয়েবসাইট তৈরি হয় বিধায় বিভিন্ন ধরনের ডেভেলপার দের আনাগোনা ঘটতে থাকে প্রতিনিয়ত। চাইলেই আপনি অল্প সময়ে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন। যা আগে খুবই খরচ সাপেক্ষ একটি বিষয় ছিল।
তাছাড়া শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট, ব্লগ সাইট, ট্রাভেল ওয়েবসাইট, হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ওয়েবসাইট, নিউজ ওয়েবসাইট, সামাজিক ওয়েবসাইট সহ যে কোনো ধরনের ওয়েবসাইট আপনি আপনার পছন্দ মতো বানিয়ে নিতে পারবেন ওয়ার্ডপ্রেস থেকে।
ওয়ার্ডপ্রেস জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনে সবথেকে বড় কারণ হলো এর ফ্রি থিম। এই সফটওয়্যারে হাজারেরও অধিক ফ্রি থিম রয়েছে। আপনি চাইলে এই রেডি থিম থেকে যে কোনো একটি মানানসই থিম ইনস্টল করে আপনার ওয়েবসাইট এর ডিজাইন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। থিম এর কোনো একটি ডিজাইন পছন্দ না হলে, কিংবা মানানসই না হলে তা নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি কোনো প্রকার কোডিং এর ঝামেলা ছাড়াই একটি চমৎকার ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলতে পারবেন৷
তবে ওয়ার্ডপ্রেসে অনেক পেইড থিম-ও রয়েছে। ফ্রি টেমপ্লেট গুলো পছন্দ না হলে আপনি থিম ক্রয় করেও ওয়েবসাইটে ব্যবহার করতে পারবেন।
ওয়েবসাইট এর ফিচার এর মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন প্লাগিন। অর্থাৎ প্লগিন ইনস্টলেশন এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের ফিচার সেট করতে পারবেন৷ ওয়ার্ডপ্রেসে আপনি অনেক ধরনের প্লাগিন পেয়ে যাবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। যার মাধ্যমে আপনি নতুন নতুন ইউজার ফ্রেন্ডলি অপশন আপনার ওয়েবসাইটে যুক্ত করতে পারবেন৷ আর ওয়েবসাইটের ফিচার যতো বেশি থাকে সেটি ততোই ব্যবহারকারীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে। অর্থাৎ ফ্রি প্লাগিন এর জন্যও ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি ওয়েবসাইটে আপনি যে শুধু টেক্সট কনটেন্ট যুক্ত করতে পারবেন এমনটা কিন্তু না। আপনি একই সাথে টেক্সট, ভিডিও, অডিও এবং ফটো কনটেন্ট ব্যবহার করে এক একটি ওয়েব পৃষ্ঠা তৈরি করতে পারবেন। কোননা ওয়ার্ডপ্রেস মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট সাপোর্ট করতে সক্ষম। তাছাড়া ফটো ও ভিডিও কনটেন্ট অ্যাক্সেস করাও বেশ সহজ ও স্টোরেজ সিস্টেম সুবিধাজনক। তাই আপনার ওয়েবসাইটকে সব ধরনের কনটেন্ট এর সমন্বয়ে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস হবে সহজ সমাধান।
অন্য যে কোনো CMS সফটওয়্যার এর থেকে ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে টেক দুনিয়ায় মাতামাতি একটু বেশিই। তাইতো ফেসবুক বলেন, ইউটিউব বলেন, ব্লগ সাইট বলেন যেখানেই ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে সার্চ করবেন সাথে সাথে পাবেন শিক্ষামূলক বিভিন্ন কনটেন্ট। কীভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, কীভাবে ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট করবেন, কীভাবে প্লাগিন ইনস্টলেশন করবেন তার সবকিছুই ফ্রি তে শিখতে পারবেন ইন্টারনেট থেকে। উল্লেখ যে অন্যান্য CMS সফটওয়্যারে কাজ করতে গেলে কোনো সমস্যায় পড়লেও তা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত কনটেন্ট আপনি ইন্টারনেটে না-ও পেতে পারেন। অন্যদিকে ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে যে কোনো বিষয় সার্চ করলেই সাথে সাথে তার সাথে রিলেটেড কনটেন্ট পেয়ে যাবেন।
অর্থাৎ অনলাইনে ফ্রি সাপোর্ট পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ ইউজার ওয়ার্ডপ্রেস এর দিকে চলে যাচ্ছে।
ওয়ার্ডপ্রেসে কোনো কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে তা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন তার সমাধান দিতে পারবে ওয়ার্ডপ্রেস সাপোর্ট টিম। ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রায় সকল কাজই বেশ সহজ। কিন্তু এর পরেও প্রায়ই কোনো না কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ডেভেলপার দের। এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে ওয়ার্ডপ্রেস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে সাপোর্ট টিমকে অবগত করলে তারা আপনার সমস্যার সহজ সমাধান করতে পারবে। সুতরাং ওয়ার্ডপ্রেসে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা আপনার কাজকে স্টপ করতে পারবে না।
তাই CMS সফটওয়্যার এর সাথে সাপোর্টিভ মনোভাব নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে বেস্ট চয়েজ।
এই ছিলো ওয়ার্ডপ্রেস এর জনপ্রিয়তার পেছনের প্রাথমিক কারণ। এর যে আরও কতো কতো সুবিধা রয়েছে তা আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে করতেই অবগত হবেন।
যারা ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরি, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, এর পরিচালনা ও অন্যান্য কাজ করে তাদের ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার বলে। ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিতে হবে৷ কীভাবে থিম ইনস্টল করতে হয়, কীভাবে প্লাগিন ইনস্টল করতে হবে, কীভাবে থিম ডেভেলপ করতে হবে তা ধারাবাহিক ভাবে শিখতে হবে।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা কোডিং এর থেকে সহজ হলেও এতোটাই সহজ না যে আপনি দু এক দিনের মধ্যেই তা শিখে ফেলবেন। কমপক্ষে ৬ মাস সময় হাতে নিয়ে এই সেক্টরে কাজ শেখা শুরু করুন।
প্রথমেই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে কীভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করুন। ইন্টারনেটে সার্চ করুন, “কীভাবে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করবো। ” ফলাফলে আসা টিউটোরিয়াল আর্টিকেল গুলো পড়লে অনেক বিষয় বুঝবেন আবার অনেক বিষয় মাথার ওপর দিয়ে যাবে। এ পর্যায়ে যে শব্দগুলো বা টার্ম গুলো নতুন মনে হয়েছে ঐ সম্পর্কে আবার ইন্টারনেট সার্চ করে জেনে নিন। এভাবে পুরো বিষয় সম্পর্কে নিজে থেকেই খুঁজে খুঁজে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং পুরো বিষয়টা সহজভাবে বুঝে নিতে হবে।
তারপর নিজের জন্য বা প্রাথমিক পর্যায়ের যে কোনো ক্লায়েন্ট এর জন্য ডোমেইন ও হোস্টিং ক্রয় করে টিউটোরিয়াল অনুযায়ী ওয়েবসাইট তৈরি করা শুরু করুন। প্রতিটা স্টেপ যে কোনো একটি টিউটোরিয়াল ফলো করে সম্পন্ন করুন। প্রথমবার চেষ্টাতেই যে আপনি সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারবেন এমনটা না-ও হতে পারে। কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা খুঁজে বের করে ঐ বিষয়ে আবার ইন্টারনেটে সার্চ করুন। টিউটোরিয়াল অনুযায়ী আবার চেষ্টা করুন। এভাবে নিজেই যদি নিজের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে পারেন ও তা সমাধান করতে পারেন তবে টাকা খরচ করে আপনাকে আর কোর্স করতে হবে না। ফ্রি সোর্স থেকেই সবকিছু মোটামুটি ভালোভাবে শিখে নিতে পারবেন।
যদি ইন্টারনেট ঘেটে সব সমস্যার সমাধান না পাওয়া যায় তবে সরাসরি ওয়ার্ডপ্রেস সাপোর্ট সিস্টেমে প্রশ্ন করুন। সিস্টেম থেকে আপনার সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে পারবেন তার দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।
আপনি চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস এর ওপরে পেইড কোর্স করতে পারেন। এখানে আপনি অভিজ্ঞ মেন্টর দের কাছ থেকে হাতেকলমে ওয়ার্ডপ্রেস এর সকল কাজ শিখতে পারবেন৷ নিজে নিজে শিখতে গেলে যতোটা বেগ পেতে হবে ততোটা সমস্যা পেইড কোর্স করলে হবে না। তাই যদি চান সহজেই ঝামেলাহীনভাবে ওয়ার্ডপ্রেস শিখবেন তবে আপনার জন্য পেইড কোর্স উপযুক্ত। বিশ্বস্ত কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা অফলাইন ট্রেনিং সেন্টার থেকে আপনি কোর্স করতে পারেন।
তবে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে আপনার যদি Php, MySQL, Html সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকে তবে এটা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট। কেননা অনেক সময় ক্লায়েন্ট এর চাহিদা মোতাবেক কিছু কিছু ফিচার ও ডিজাইন ওয়েবসাইটে যুক্ত করতে হয় যা ওয়ার্ডপ্রেসে রেডিমেড পাওয়া যায় না। তখন ঐ কাজটুকু আপনাকে কোডিং এর মাধ্যমে করতে হবে। কোডিং দক্ষতা থাকলে অন্যান্য ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার দের থেকে আপনি প্রতিযোগিতায় কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।
আশাকরি কীভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হবে তা ক্লিয়ার ভাবে বুঝতে পেরেছেন। এবার ধারাবাহিক ভাবে কাজগুলো শুরু করে দিতে পারেন।
যে হারে ওয়ার্ডপ্রেস এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বলাই যায় ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার দের ভবিষ্যৎ বেশ সম্ভাবনাময়। দিন দিন এই সেক্টরে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার দের ক্যারিয়ার মূলত ফ্রিল্যান্সিং এর ওপরেই নির্ভরশীল। একজন সাধারণ থেকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার ঘণ্টা হিসেব করে ক্লায়েন্ট দের সার্ভিস প্রদান করে। আর ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার দের ক্লায়েন্ট এর অভাব হয় না বললেই চলে।
সাধারনত প্রতি ঘণ্টায় নূন্যতম ১০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ডলার বা তার বেশিও পে করা হয় একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারকে। এই ঘণ্টা প্রতি চার্জ কেমন হবে তা নির্ভর করে ডেভেলপার দের কাজের দক্ষতা ও স্পিড এর ওপরে। তাছাড়া লোকাল ক্লায়েন্ট দের কাজ চুক্তিভিত্তিক ভাবে করে থাকেন অনেক ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার। কেউ আবার ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি চালু করে করে নিজেই একটি ব্যবসা শুরু করে থাকে। আছে আইটি কোম্পানি গুলোতে পারমানেন্ট চাকরির সুযোগ, যেখানে ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ বা তার বেশি টাকা মাসিক স্যালারি হতে পারে।
অর্থাৎ ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার দের ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর নেই। এক্সপার্ট হয়ে উঠতে পারলে ইনকাম নিয়ে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।
বর্তমান সময়ে ওয়ার্ডপ্রেস কতো জনপ্রিয় একটি কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যেহেতু এর মার্কেট ভ্যালু অনেক বেশি তাই ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার চিন্তা ভাবনা তো করতেই পারেন৷ আর নিজেই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস হবে সবথেকে সেরা পছন্দ। আশাকরি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পেরেছি।
ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে আমি শারমিন ছিলাম আপনাদের সাথে। বিশ্বের জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সৌশল নেটওয়ার্ক টেকটিউনস এর একজন নিয়মিত টেকনিক্যাল রাইটার। আমার টিউনটি আপনাদের কাছে ভালো লাগলে একটি জোসস করবেন প্লিজ। কোনো বিষয় না বুঝলে কিংবা কিছু জানার থাকলে এই টিউনের টিউনমেন্ট বক্সে টিউনমেন্ট করে জানাতে পারেন। নতুন নতুন টেকনিক্যাল টিউন পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।