একজন সাধারন ইন্টারনেট সার্ফার হিসেবে,আপনার কাছে ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য বা কনটেন্ট দেখা একদম সহজ একটি ব্যাপার। আপনি ব্রাউজার ওপেন করলেন, একটি সাইটের ইউআরএল (URL) লিখলেন, ব্যাস! ওয়েবসাইটটি বা ওয়েব পেজটি ওপেন হয়ে গেল।
তবে আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, এই একটি সাইট বা সে সাইটের একটি ওয়েব পেজ আপনার সামনে প্রদর্শন করার জন্য পিছনে কতগুলি সফটওয়্যার কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এখানে ততোধিক ওয়েব সার্ভার অনেকগুলো কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস বা CMS এর ওপর নির্ভর করে আছে; আপনার কেবল পছন্দের একটি পেজ অথবা ওয়েবসাইট আপনার সামনে উপস্হাপন করার জন্য।
আসলে আপনি যখন একটি ওয়েব পেইজ ওপেন করেন; তখন আসলে পেছনে,মূলত এই CMS এ কি হয়? আজকের টিউনে আমরা সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করব। আশা করি আজকের টিউনটি আপনার ভালোই লাগবে।
১৯৯০ সালের শেষের দিকে যখন ওয়েব/ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে পা শক্তভাবে ফেলতে শুরু করে; তখন ব্যবহারকারীদের ওয়েব কনটেন্ট এক্সেস ও এডিট করার নতুন নতুন উপাদান উন্মোচিত তথা আবিষ্কৃত হতে শুরু করে।আরও অত্যাধুনিক সিস্টেম এর মাধ্যমে পেজের কনটেন্টগুলো সরাসরি ওয়েব হোস্টেড সার্ভার থেকে দেখানো শুরু হয়।
সহজ ডোমেইন নাম রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম এর মাধ্যমে; আইপি এড্রেসগুলোকে সুন্দর নামের মাধ্যমে ঢেকে ফেলা সম্ভব হয় এবং ব্যবহারকারীরা আগের থেকে তাদের পছন্দের সাইটগুলো খুজে পেতে শুরু করে আরও সহজে!
হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল বা HTTP এর মাধ্যমে ইন্টারনেট জুড়ে একটি মানসম্মত উপায়ে তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার পদ্ধতি চালু হয়। এতে করে বিশ্বব্যাপী কোম্পানি,অর্গানাইজেশন সোময় তাদের কনটেন্ট গুলোকে HTML এ করতে শুরু করে এবং ব্রাউজার প্রচোলন এর মাধ্যমে তা সহজে যেকোন সাধারন ইন্টারনেট সার্ফার পড়ার সুযোগ ও পায়।
ওয়েব সার্ভারগুলো আরও কার্যকরীভাবে গঠন করা হল,যার কাজ ছিল ওয়েব পেজ এর রিকিয়েস্ট গ্রহন করা এবং সেই পেজটি রিকুয়েস্ট কারীর কাছে প্রেরন করা। (মূলত এটিই বর্তমান সময়য়ের ওয়েব পেজ বা সাইট লোড হওয়ার ভিত্তি।)
এই সময়ের ভেতর ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলোকে নির্মাতা কোম্পানিগুলো ফ্রী ঘোষনা করে দিতে শুরু করে।AOL এর মতন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো আনলিমিটেড ইন্টারনেট ডায়াল-আপ সুবিধা প্রদান করতে শুরু করে। এতে করে পশ্চিমা বিশ্বে এই ইন্টারনেট এর ব্যবহারকারী সংখ্যা তুলনা মূলক ভাবে বেড়ে যেতে শুরু করে।
প্রথমদিককার সময় ওয়েবসাইট তৈরি করা তেমন কোন সহজকাজ ছিলনা। তখনকার সময় নিজে হাতে কনটেন্ট তৈরির জন্য বেসিক এইচটিএমএল ইনলাইন কোডিং লিখতে হতো। এভাবে আগে প্রধানত এইচটিএমএল এর মাধ্যমে ডায়নামিক ওয়েবপেজগুলো তৈরি করা হত। তারওপর এসব হোস্ট করার জন্য ওয়েব হোস্টিং ও FTP ট্রান্সফারিং এর সম্বন্ধে জানতে হতো।
তারপর থেকে অনেক মানুষ কনটেন্ট জপনারেট বা তৈরি করা শুরু করে দিল। এসময় প্রধানত তারা প্রোফাইল ওয়েবসাইট, যেমনঃ ইয়াহু ও মাইস্পেশ এ একাউন্ট খুলে তাদের কাজ চালাত। ব্লগিং সার্ভিস লাইভজার্নাল এবং গুগল এর ব্লগার এই প্রক্রিয়াকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।ওয়েব পেইজ এডিটর এখানে খারাপ দেখা যায় এমন সব ওয়েবসাইটকে মার্জিত করার কাজ করতে সহযোগিতা করেছিলো।
এগুলো কাজ CMS আশার পর থেকে ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।মানুষ বেশি বেশি করে CMS এর দিকে ঝুকতে শুরু করে।
বর্তমানে পরিচিত -অপরিচিত মিলে প্রায় শত CMS এর দেখা পাওয়া যায়। তাদের ভেতর আমরা যে বিষয়গুলো একই দেখতে পাইঃ
CMS তৈরি বিভিন্ন প্রোগ্রামিং অথবা স্ক্রিপ্টিং ভাষায়।যেখানে HTML ছিল কেবল একটি Markup ল্যাংগুয়েজ। এসব ল্যাংগুয়েজ এর ব্যবহারের ফলে সার্চ বা অনুসন্ধান এর থেকে সে সাইটের তথ্য পাওয়া যেতে শুরু করে,সাইটগুলোকে বিভিন্ন কার্যপদ্ধতি সম্পাদন করতে সহযোগিতা করে।
উন্নত কার্যকর সার্ভারগুলো এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছে " সম্পূর্ণ প্রোগ্রামিং ভাষা না তুলে এটি কেবল",রিকোয়েস্টেড ওয়েব পেইজগুলো HTML আকারে গ্রহকের নিকট প্রদর্শন করানো হয়।
এখানে কতগুলো CMS কোন কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে হয় তা তুলে ধরা হলঃ
তবে ওয়েব CMS এর ক্ষেত্রে PHP প্রথম সারির ল্যাংগুয়জ হিসেবে কাজ করে।
২০০৩ সালের ২৭শে মে ওয়ার্ডপ্রেসের স্রষ্ঠা ম্যাট মুলেনওয়েগ সর্বপ্রথম এটি প্রকাশ করেন। এবং ডিসেম্বর ২০১১ পর্যন্ত ওয়ার্ডপ্রেস ৩.০ সংস্করণ ৬৫ বিলিয়ন বারের বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে। শুরু থেকে এটি ব্লগিং সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে অনেক বড় বড় ওয়েবসাইট নির্মান করা হচ্ছে।
শুরুর থেকে বলতে গেলে, B2 এবং CAFELOG নামের সংগঠন ওয়ার্ডপ্রেসের অগ্রদূত। ওয়ার্ডপ্রেস তৈরীর পর থেকে ২০০৩ সালের মে মাস পর্যন্ত B2 এবং CAFELOG সংগঠনটি কমপক্ষে ২০০০ ব্লগ হোস্ট করাতে চেয়েছিল। ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস-টি পিএইচপি ফ্রেমওয়ার্ক এবং মাইএসকিউএল ডেটাবেজ এর সমন্বিত রূপ। এটি মাইকেল ভাল্ড্রিঘি কর্তৃক আধুনিকায়ন করা, যিনি বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস এর ডেভেলপার এবং ওয়ার্ডপ্রেসের অফিসিয়াল অগ্রদূত। সাথে তিনি বি২ইভুলুয়েশন প্রজেক্টের এক্টিভ সদস্য।
ওয়ার্ডপ্রেস সর্বপ্রথম ২০০৩ সালে ম্যাট মুলেনওয়েগ এবং মাইক লিটিল কর্তৃক বি২ইভুলুয়েশন এর একটি ছোট প্রোজেক্ট ছিল। আর আমরা বর্তমানে “ওয়ার্ডপ্রেস” যে নামে ধরে বলছি এটা ম্যাট মুলেনওয়েগ এর বন্ধু ক্রিস্টিন সেল্লেক ট্রিমুলেট এর পছন্দ করে দেয়া নাম।
২০০৪ সালে Six Apart কর্তৃক তৈরীকৃত আরেক ব্লগিং সফটওয়্যার Movable Type তাদের ব্যবহার বিধিমালা পরিবর্তন করায় তাদের বেশির ভাগ ব্যবহারকারীরা Movable Type ছেড়ে ওয়ার্ডপ্রেসে পাড়ি জমায়। আর এটি-ই ওয়ার্ডপ্রেসের ভাগ্যকে প্রসারিত করে দেয়।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইটঃ ওয়ার্ডপ্রেস ডট ওআরজি
জুমলা এটিও ওয়ার্ড প্রেসের মত একটি ফ্রী ওপেন সোর্স অনলাইন কনটেন্ট পাবলিশিং টুল।এটি Modern View Controller Web Application Framework এর ওপর তৈরি। যা এটিকে একটি পরিপূর্ণ CMS হিসেবে তৈরি করেছে।
জুমলা PHP তে লেখা। এটি ওয়ার্ডপ্রেসের মতন প্রধানত MY SQL এ ডাটা সংরক্ষন করে। জুমলা Objects Oriented Programming টেকনিক ব্যবহার করে। জুমলা ব্যবহার করে ওয়ার্ড প্রেসে যেমন : ব্লগ,নিউজ,পোর্টফলিও, ইকমার্স ইত্যাদি রকমের সাইট তৈরি করা যায়; ঠিক এখানেও এসবই করা যায়।
নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত এই জুমলা প্রায় ৮১ মিলিয়ন বার ডাউনলোড হয়েছে। অফিসিয়াল জুমলার জন্য প্রায় ৭৫০০ টি কর্মাসিয়াল এক্সটেনশন একদম ফ্রী, জুমলার এক্সটেনশন ডাইরেক্টরিতে।ওয়ার্ড প্রেসের পর এটি সেরা দ্বিতীয় কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা CMS।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইটঃ জুমলা ডট ওআরজি
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।