টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত আজকেও হাজির হলাম নতুন কিছু নিয়ে। আজকে আলোচনা করব কম্পিউটার ভাইরাস নিয়ে।
যারা কম্পিউটার বা উইন্ডোজ ব্যবহার করেন তারা কখনো না কখনো ভাইরাসের ঝামেলা অবশ্যই ফেস করে থাকবেন। সত্য কথা আপনি যত শক্তিশালী সফটওয়্যার বা এন্টিভাইরাসই ব্যবহার করেন না কেন, আপনার কম্পিউটারে ভাইরাসের এটাক হবার আশংকা থাকবেই। কারণ ভাইরাস এমনই এক প্রোগ্রাম যা অনেক দক্ষ মানুষ দ্বারাই তৈরি এবং প্রতিনিয়ত তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন ভাইরাস যা আমাদের পিসিতে ইন্সটল করা সফটওয়্যার গুলো ধরতে পারে না। কেন ডিটেক্ট করতে পারে না এটা আজকের আলোচনাতে আশা করছি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আমরা সবাই জানি ভাইরাস আক্রান্ত হলে আমাদের পিসি বিরক্তিকর আচরণ শুরু করে। হতে পারে স্লো হয়ে যাওয়া, খারাপ পারফরম্যান্স, সফটওয়্যার ক্রাশ করা ইত্যাদি। তবে এই সমস্যা গুলো অন্য কারণেও হতে পারে, সেটা ভিন্ন কথা।
কোন ভাইরাসের সঠিক সমাধান ততক্ষণ বের করতে পারবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন এটা কোন ধরনের ভাইরাস। সব চেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে কিছু ভাইরাস আক্রমণে আপনি টেরই পাবেন না কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনার সর্বনাশ হতে থাকবে।
অস্বাভাবিক আচরণ যে সব সময় ভাইরাস আক্রমণে হবে সেটা বলা যায় না। আজকে আমি এই বিষয়টি নিয়েই কথা বলতে যাচ্ছি কোন কোন লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার প্রিয় কম্পিউটারটি ভাইরাসে আক্রান্ত এবং কিভাবে তা নির্মূল করবেন।
আমরা এটা হয়তো সবাই জানি যে কম্পিউটার ভাইরাস এবং মানুষ এর রোগ সৃষ্টি কারী ভাইরাস এক নয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এই দুই ভাইরাসেরই যথেষ্ট মিল রয়েছে। মানব দেহের ভাইরাসের প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য যেমন, এটি নিজে থেকে অনেক গুলো ভাইরাসের জন্ম দিতে পারে ঠিক তেমনি কম্পিউটার ভাইরাসও নিজেই একা হাজার হাজার ভাইরাস মুহূর্তেই তৈরি করে ফেলতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস আসলে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা অপারেটিং সিস্টেমে রান করতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে বিপদজনক কম্পিউটার প্রোগ্রাম গুলোকে আমরা কম্পিউটার ভাইরাস বলতে পারি। কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করে খুব কম সময়ে অপারেটর এর আদেশ ছাড়াই বিভিন্ন কাজ করে ফেলতে পারে অথবা একাধিক ভাইরাস তৈরি করে ফেলতে পারে। কম্পিউটার ভাইরাসের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনার কম্পিউটারের কন্ট্রোল নিজের করে নেয়া অথবা আপনার সিস্টেমটি ধ্বংস করে দেয়া।
আমরা যদি এটির আক্রমণ করার ধরন খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাবো তা মানব দেহের ভাইরাসের মতই হতে পারে। এটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়াতে পারে এবং অন্য প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার এর ভেতরেও থাকতে পারে।
প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ভাইরাস বানানো হচ্ছে কম্পিউটারে আক্রমণ করার জন্য। বেশিরভাগ টার্গেট হচ্ছে যারা কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্রাউজ করছেন প্রতিনিয়ত। হ্যাকাররা খুবই দক্ষতার সাথে তাদের ভাইরাস গুলো অন্য সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামে সেট করে রাখছে যার মাধ্যমে একটা সিঙ্গেল ক্লিক এর মাধ্যমেও আপনার কম্পিউটারটি তাদের কন্ট্রোলে চলে যেতে পারে।
তারা প্রথমে কোডিং এর মাধ্যমে ভাইরাসটি ডেভেলপ করে এবং বিভিন্ন দুর্বল ডিভাইসে চেক করে এবং এটাক করার ধরন পরিকল্পনা করে।
কেউ কেউ থ্রির পাওয়ার জন্য ভাইরাস আক্রমণ করায়, কেউ কেউ আপনার সিস্টেমে অনধিকার বশত ঢুকে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করতে চায়, কেউ কেউ আপনার ইনফরমেশন চুরি করে, কেউ কেউ টাকার জন্য এসব কাজ করে থাকে। যেমন ফেক সফটওয়্যার কেনানো অথবা আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল জব্দ করে টাকা চাওয়া।
আমাদের শরীরে ফ্লু যেভাবে বিভিন্ন অঙ্গে বা রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমে আক্রমণ করে ঠিক কম্পিউটার ভাইরাসও আপনার পিসি এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে আক্রমণ করার পাশাপাশি এন্টি ভাইরাসেও আক্রমণ করতে পারে। যেমন, ক্ষতিকর কোন সফটওয়্যার আপনার অজান্তেই ইন্সটল হয়ে যাওয়া, কোন স্পাই কোড একটিভ হয়ে যাওয়া যার মাধ্যমে আপনার সব এক্টিভিটি অন্য কোন কম্পিউটার বা ইন্টারনেটে ট্র্যাক হতে থাকে।
ভাইরাসটি কম্পিউটারে প্রবেশের পর মূলত যা করে, দুষিত বা ম্যালিসিওয়াস প্রোগ্রামটি ইউজারের পারমিশন নিয়ে একটিভ হয়ে যায়, এবং বৈধ কোডটি কার্যকর হবার আগেই সেটি কম্পিউটারের CPU মেমোরিতে লোড হয়ে যায়।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে ইউজার পারমিশন কিভাবে পাবে? আপনি যখন কোন একটি প্রোগ্রামে ক্লিক করবেন সেটিই ইউজার পারমিশন হিসাবে গণ্য হবে।
মেমোরিতে লোড হবার সাথে সাথে ভাইরাসটি বিভিন্ন প্রোগ্রাম, এপ্লিকেশনে আক্রমণ করে দ্রুত প্রসারিত হতে থাকবে এবং দুষিত বা বা ম্যালিসিওয়াস কোড ছড়াতে থাকবে।
ভাইরাসটি বুট সেক্টর ভাইরাস হোক বা বা অন্য ভাইরাস হোক, এটি আপনার সিস্টেমে ম্যালিসিওয়াস কোড ঢুকিয়ে দেয়, যাতে করে তারা যেকোনো প্রোগ্রাম বা ফাইল নিয়ন্ত্রণ এমনকি অপারেটিং সিস্টেম লোড হবার আগেই বুট সেক্টরে হানা দিতে পারে।
এইভাবে অপারেটিং সিস্টেমে কোড গুলো একটিভ হয়ে যায় এবং এর নির্মাতা যা চায় তাই হয়, যাকে অন্য ভাবে Payload ও বলা হয়। এর পর এটি আপনার কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক স্ক্যান করে, বিশেষ করে বিভিন্ন সেনসিটিভ তথ্য কালেক্ট করে যেমন, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল এর পাসওয়ার্ড, ইউজার নেম, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার ইত্যাদি। এবং এই তথ্য গুলো ব্যবহার করে হ্যাকাররা কি করতে পারবে সেটা হয়তো ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন।
তাছাড়া তারা আপনার সকল গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ফোল্ডার এনক্রিপ্ট ও করে ফেলতে পারে এবং বিশাল এমাউন্টের টাকাও চাইতে পারে।
অতীতে কম্পিউটার গুলোতে ভাইরাস ছড়াতো বিভিন্ন ফ্লপি ডিস্ক, পেন-ড্রাইভ বা মেমোরির মাধ্যমে কিন্তু এখন তা ছড়াচ্ছে ইন্টারনেট থেকে। ইমেইলের ফাইল থেকে, বিভিন্ন সফটওয়্যার ইন্সটল দেয়া বা ডাউনলোড দেওয়ার মাধ্যমে।
যেহেতু বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস আছে সুতরাং তাদের আচরণও ভিন্ন হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিছু কিছু ভাইরাসের আক্রমণ হয়তো আপনি বুঝতে পারবেন এবং ভাল করে লক্ষ্য না করলে কোন কোন ভাইরাস হয়তো ধরতেই পারবেন না। তবুও কিছু লক্ষণ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল,
যদি আপনার কম্পিউটার বুট হতে অতিরিক্ত সময় নেয় অথবা যেকোনো প্রোগ্রাম রান হতে সময় নেয় তবে হতে পারে আপনার পিসিটি ভাইরাসে আক্রান্ত। যদিও পিসি স্লো হবার অন্য কারণ ও থাকতে পারে তবে ভাইরাস যখন কম্পিউটারে ঢুকে কোন তথ্য স্ক্যান বা অন্যান্য কাজ করে তখন সেটা পিসির পারফরমেন্সে এফেক্ট করে।
আমরা জানি পিসিতে থাকা ফ্যান গুলো আমাদের কম্পিউটারকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে এবং গরম বাতাস বাইরে বের করে দেয় এবং যখন ভারী কোন কাজ যেমন গেমিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করা হয় তখন সেটি তুলনামূলক বেশি ঘুরে। কিন্তু যখন দেখবেন কোন কাজ করা হচ্ছে না তখনও কম্পিউটার গরম হয়ে যাচ্ছে এবং ফ্যান অতিরিক্ত ঘুরছে তখন বুঝবেন সেটা ভাইরাসের আক্রমণ।
যদি আপনার কম্পিউটার ঘন ঘন ব্লু স্ক্রিন বা ব্ল্যাক স্ক্রিন error আসে তাহলে বুঝবেন এটি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই Error গুলো ওভার হিটিং, ড্রাইভার প্রবলেম, হার্ডওয়্যার ইস্যু অথবা অন্য কোন অপারেটিং সমস্যার জন্য হতে পারে৷ যার অন্যতম কারণ কিন্তু হতে পারে ভাইরাস।
ভাইরাসের আক্রমণ কখনো কখনো আপনার ইন্টারনেট গতিও কমিয়ে ফেলতে পারে। এর মূল করণ তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনার ফাইল বা ডাটাতে এক্সেস নেয় এবং আপনার ব্যান্ডউইথ হাইজ্যাক করে। এটি ধরার সহজ একটি উপায় আছে, যখন দেখবেন আপনার ব্রাউজিং খুবই স্লো কিন্তু অন্য কোন সার্ভিস দিয়ে অনেক স্পীডে নেট ব্যবহার হচ্ছে, তখন বুঝবেন এখানে কোন সমস্যা আছে।
কখনো কখনো হয়তো আপনার ব্রাউজারে দেখতে পারেন অপরিচিত বিভিন্ন এক্সটেনশন, যা আপনি ইন্সটল দেন নি৷ সাথে সাথে বুঝে নিবেন ভাইরাসে আক্রান্ত আপনার প্রিয় কম্পিউটারটি৷
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হবার কমন একটি লক্ষণ হচ্ছে অপরিচিত বা অযাচিত কোন পেজে রি-ডিরেক্ট হয়ে যাওয়া। আপনি যখন খেয়াল করবেন আপনার ব্রাউজারে বারবার এমন এমন পেজে চলে আসছে যা আপনি রিকুয়েস্ট করেন নি তখন বুঝে নেবেন এটা ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার এর কাজ। এর মাধ্যমে আপনার সেনসিটিভ তথ্য চুরি করা হয়, ক্ষতিকর সফটওয়্যার ইন্সটল দিতে উদ্ভুদ্ব করানো হয়, অথবা এড ইম্প্রেশনের মাধ্যমে আয় করার চেষ্টা করা হয়।
যদি আপনার সিস্টেমে অথবা ব্রাউজারে পপ-এড শো করা শুরু হয় তাহলে বুঝবেন আপনার কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত। এর মাধ্যমে ব্রাউজার স্লো হয়ে যেতে পারে৷ কখনো কখনো স্ক্রিনের নিচের ডান পাশ থেকে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা এন্টিভাইরাস এর এড শো করতে পারে।
যখন আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট থেকে অস্বাভাবিক টিউন পাবলিশ হবে যা আপনি করেন নি অথবা আপনার বন্ধুরা স্পামিং মেসেজ পাবে তখন বুঝে নেবেন আপনার কম্পিউটারের তথ্য চুরি হয়ে গেছে এবং আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাসে আক্রান্ত।
আমাদের পিসির এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার মূলত আমাদের ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। কিন্তু কখনো কখনো কিছু কিছু ভাইরাস আমাদের সেই এন্টিভাইরাসকেও ডিজেবল করে দিতে পারে। এবং স্ক্যান করতে অথবা আপডেট হতেও বাধা দিতে পারে।
যখন দেখবেন আপনার এন্টিভাইরাস অস্বাভাবিক আচরণ করছে এবং বারবার ওয়ার্নিং দিচ্ছে তখন বুঝে নেবেন আপনার সিস্টেম হুমকির মুখে।
যদি পুরো সিস্টেমকে সব ধরনের ভাইরাস মুক্ত করা কঠিন তবুও নিচের পদক্ষেপ গুলো ফলো করলে প্রায় ৮০% ভাইরাস থেকে আপনার মুক্তি মিলতে পারে
প্রথম দিকে বলছিলাম কখনো কখনো আমাদের পিসিতে ইন্সটল থাকা এন্টিভাইরাস গুলোও নতুন ভাইরাস ডিটেক্ট করতে পারে না। কেন এমনটি হয়? এন্টিভাইরাস গুলোতে নির্দিষ্ট এক্সটেনশন বা কোডিং ডাটাবেজ এ সেভ করা থাকে এবং প্রতিনিয়ত আপডেট হয় যার মাধ্যমে তারা ধরতে পারে কোন ভাইরাস প্রবেশ করেছে কিনা। কিন্তু যখন হ্যাকার সম্পুর্ন নতুন কোন ভাইরাস তৈরি করে, নতুন কোড বা এক্সটেনশন দিয়ে তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ডিটেক্ট করা যেকোনো এন্টিভাইরাসের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।
কেমন হল আজকের টিউন জানাতে অবশ্যই টিউমেন্ট করুন এবং জানান। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।