Windows Task Manager হলো উইন্ডোজের একটি বিল্ট-ইন টুল যা আপনার কম্পিউটারের ব্যাকগ্রাউন্ডে কি কি প্রোগ্রাম চলছে, সে প্রোগ্রামগুলো আপনার কম্পিউটারের কতটুকু রিসোর্স ব্যবহার করছে তা আপনাকে দেখতে সাহায্য করে। তাছাড়া, Windows Task Manage ব্যবহার করে যে প্রোগ্রামগুলো "Not Responding" দেখাচ্ছে, সেগুলো আপনি বন্ধও করতে পারেন।
যদিও Windows Task Manager এ কিছু ভাল টুল আছে, কিন্তু অনেক সময় "Not Responding" প্রোগ্রাম বন্ধ করতে গিয়ে Windows Task Manager নিজেই "Not Responding" হয়ে যায়। এর চেয়ে আমার মতে বিকল্প কোন Task manager সফটওয়্যার ব্যবহার করাই উত্তম। অনেক এরকম বিকল্সপ আছে যেগুলো আপনাকে কিছু বাড়তি এবং বর্ধিত সুবিধা প্রদান করে। তাছাড়া, এসব বিকল্প সফটওয়্যারগুলো দিয়ে আপনি আরো নিবিড়ভাবে আপনার সিস্টেমের কাজ পর্যবেক্ষন করতে পারবেন এবং সে আনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
আমার আজকের টিউন সেসব বিকল্প সফটওয়্যারগুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যই করা।
প্রথমেই আমরা যে সফটওয়্যারটির ব্যাপারে জানবো তার নাম হচ্ছে Process Explorer। এটি তৈরী করেছে Microsoft Windows Sysinternals team যা আমার ব্যক্তিগত পছন্দের একটি টুল। এটি আপনার সিস্টেমের সমস্ত রানিং সম্পর্কে তথ্য প্রদর্শন করে। ভিউ মেনু থেকে Process Explorer এর ভিউকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারেন। এর উপরিভাগে আপনার সিস্টেমের সমস্ত চলমান প্রসেস গুলো প্রদর্শন করে আর নিচের অংশে কোন একটি নির্দিষ্ট প্রসেসের তথ্য প্রদর্শন করে যা আপনি উপরিভাগের ভিউতে সিলেক্ট করেছেন। যদি আপনি DLL মোড সিলেক্ট করেন তাহলে এটা আপনাকে প্রসেস দ্বারা ওপেন করা সমস্ত DLL এবং মেমরি ম্যাপড ফাইল গুলোর তথ্য প্রদর্শন করে। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য আপনি প্রসেস দ্বারা চালু হওয়া DLL গুলোর ভার্শন সমস্যা, হ্যান্ডেল লিকস গুলোর সমাধান করতে পারবেন। তাছাড়া অপারেটিং সিস্টেমের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে আরো সম্যক ধারণা পেতে পারবেন। এর সাথে আরো আছে শক্তিশালী সার্চ অপশন যা দ্বারা আপনি খুব সহজেই কোন একটা বিশেষ প্রোগ্রাম এবং এর দ্বারা লোডকৃত DLL গুলো খুঁজে পেতে পারেন। এছাড়া আরো অনেক অপশন পাবেন যে আপনি হতবাক হয়ে যাবেন।
মাত্র ১ মেগাবাইটের এই অসাধারণ সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে।
Process Hacker অনেকটা Process Explorer এর মতোই, কিন্তু এতে আপনি পাবেন আরো এ্যাডভান্সড ফিচার। অধিক কাস্টমাইজ করার সুবিধা একে এক অনন্য সফটওয়্যারে পরিনত করেছে। ট্রি ভিউ এর মাধ্যমে আপনি আপনার কম্পিউটারে কি কি প্রসেস চলছে তা দেখতে পাবেন। এটি আপনাকে আরো যেসব সুবিধা দেবে তা হলো, সিস্টেম পরিসংখ্যান গ্রাফের মাধ্যমে দেখা, নেটওয়ার্ক কানেকশনের অবস্থা দেখা এবং নেটওয়ার্ক কানেকশন বন্ধ করা। এটি দিয়ে আপনি পিসির সার্ভিসগুলো দেখতে পারবেন, এডিট করতে পারবেন এবং সেগুলোকে কন্ট্রোল করতে পারবেন, এমনকি সেসব সার্ভিসগুলোও; যেগুলো সাধারণ সার্ভিস কনসোলে দেখায় না। এটিতে এমন কিছু ফিচার পাবেন যা অন্য কোন সফটওয়্যারে পাবেন না। যেমন: গ্রাফিক ডিজাইন হ্যান্ডেলস এবং হিপস ভিউ, DLL ইনজেক্ট করা বা DLL আনলোড করা, ডিবাগার থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং শক্তিশালী প্রসেস টার্মিনেশন সিস্টেম যা সিকিউরিটি সফটওয়্যার এবং রুটকিটকে বাইপাস করতে পারে। আরো একটা ব্যপার তো বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম, এটার স্টার্ট-আপ টাইম অন্য যেকোন সফটওয়্যার থেকে ভালো, প্রায় সাথে সাথেই খুলে যায়।
খুবই কাজের কিন্তু মাত্র ১.৮ মেগাবাইটের এই সফটওয়্যারটির লেটেস্ট ভার্শন ২.২৮ ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে।
Windows Task Manage এর আরেকটি পূর্ণাঙ্গ বিকল্প হলো AnVir Task Manager। এটি আপনার কম্পিউটারের সমস্ত প্রসেস, সার্ভিস, ইন্টারনেট সংযোগ, সিপিউ এবং হার্ডডিস্কের তাপমাত্রা এবং লোড পর্যবেক্ষন করে। এটি একটি tweaker ও প্রদান করে যা দ্বারা আপনি আপনার কম্পিউটারকে টিউন আপ করতে পারবেন, হোক সে কম্পিউটার উইন্ডোজ 7, ভিস্তা বা এক্সপি। Tweaker টি আপনাকে শত শত উইন্ডোজ সেটিংয়ে আপনাকে এক্সেস দেবে এবং এমন কিছু সেটিংয়ে এক্সেস দিবে যা কিনা শুধু মাত্র সরাসরি রেজিস্ট্রি এডিট করে করা সম্ভব। AnVir Task Manager দ্বারা আপনি আপনার পিসি স্পীড-আপ করতে পারেন এবং উইন্ডোজ স্টার্ট-আপ টাইমকে আরো কমাতে পারেন। স্টার্ট-আপ ট্যাব আপনাকে আপনার সমস্ত স্টার্ট-আপ প্রোগ্রামগুলোর একটি লিস্ট দেবে। সেখান থেকে আপনার যে এ্যাপ্লিকেশন স্টার্ট-আপে দরকার নেই সেগুলো প্রয়োজন মতো ডিসেবল বা ডিলিট করতে পারবেন। আপনি যদি কোন সফটওয়্যারকে উইন্ডোজ স্টার্ট হবার কিছুক্ষন পর স্বয়ংক্রিয় ভাবে চালু করতে চান তাহলে এই সফটওয়্যারের "Delayed Startup" সুবিধা ব্যবহার করে তা করতে পারেন।
আমার ব্যক্তিগত পছন্দের মাত্র ৩.৫৭ মেগাবাইটের এই সফটওয়্যারটি আপনারা ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে।
System Explorer হলো উইন্ডোজ টাস্ক ম্যানেজারের আরেকটি বিকল্প যা দ্বারা আপনি আপনার সিস্টেম প্রসেসগুলোকে দেখতে এবং ম্যানেজ করতে পারবেন। এছাড়াও এর আরো অনেক সুবিধা আছে। এটি দ্বারা আপনি উইন্ডোজ উইন্ডোজ স্টার্ট-আপকেও ম্যনেজ করতে পারবেন। তাছাড়া, এই সফটওয়্যার দ্বারা আপনি আপনার সিস্টেমের এ্যাড-অন, ড্রাইভার এবং সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। কোন প্রসেস সম্পর্কে যদি আরো বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন পড়ে তাহলে System Explorer এর আছে অনলাইন ফাইল ডাটাবেজ যা ভাইরাস ডাটাবেজের সাথে আপনার প্রসেসগুলোর তুলনা করে যাতে করে আপনি এবং আপনার কম্পিউটার আরো নিরাপদ থাকতে পারেন।
এই সফটওয়্যারটি উইন্ডোজ 8, উইন্ডোজ 7, ভিস্তা ও এক্সপি প্লাটফর্ম সাপোর্ট করে।
অনেক কাজের কাজী, কিন্তু মাত্র ১.৯৫ মেগাবাইটের ইনস্টলার ভার্শন ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে এবং পোর্টেবল ভার্শন পেতে পারেন এখান থেকে।
Daphne ডেভলপারদের মতে এর জন্ম হয়েছিল উইন্ডোজের কোন প্রসেসকে বন্ধ করার জন্য। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটি Windows Task Manager এর আরেকটি বিকল্প সফটওয়্যার যা দ্বারা আপনি আপনার কম্পিউটারের চলমান প্রসেস, সিপিউ এর ব্যবহার, প্রসেস আইডি, প্রসেসের নাম, প্রসেসের অবস্থান, প্রসেসের অগ্রাধিকার, ক্লাস (প্রসেস/সার্ভিস), বর্তমানে কতটুকু র্যাম ব্যবহৃত হচ্ছে, কতটুকু Swap মেমরি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং কতগুলো থ্রেড ব্যবহৃত হচ্ছে তার সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেন। এটি একটি পোর্টেবল টুল যা কিনা উইন্ডোজের সিস্টেম ট্রে তে থাকে এবং সেখান থেকেই আপনাকে উইন্ডোজের প্রসেসগুলো ম্যানেজ করতে সাহায্য করে। এর সাহায্যে বিভিন্নভাবে আপনি কোন একটি প্রসেস বন্ধ করতে পারেন, যেমনঃ মূল প্রসেস লিস্টের উপর প্রসেসের নামের উপর মাউসের রাইট ক্লিক প্রদান করে অথবা এর “crosshair” আইকনকে কোন এ্যাপ্লিকেশনের উপর ছেড়ে দিয়ে। এছাড়া এর আছে "Traps" নামে একটি বিশেষ সুবিধা যা দ্বারা আপনি কিছু নিয়ম তৈরী করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোন প্রসেসকে মডিফাই করতে পারবেন বা বন্ধ করতে পারবেন।
এই সফটওয়্যারটি ৬৪ বিট সহ উইন্ডোজ 7, ভিস্তা ও এক্সপি প্লাটফর্ম সাপোর্ট করে।
মাত্র ৫.৫ মেগাবাইটের এই সফটওয়্যারটির পোর্টেবল ভার্শনটি ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে।
যদি ইনস্টলার চান, তাহলে এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন: ৩২ বিট / ৬৪ বিট।
Windows Task Manager এর আরো একটি ফ্রি বিকল্প প্রোগ্রাম হলো What’s Running। এটি আপনার কম্পিউটারে চলমান সবগুলো প্রসেস গুলো প্রদর্শন করে, বর্তমান র্যামের অবস্থা, সিপিউ ব্যবহার এবং I/O অবস্থা প্রদর্শন করে। এসব তথ্য থেকে আপনি সহজেই এমন যে কোন প্রোগ্রামকে খুঁজে বের করতে পারবেন যা আপনার সিস্টেমকে অহেতুক ব্যস্ত রাখছে। এটি দ্বারা আপনি যেকোন প্রসেসকে খুলতে বা বন্ধ করতে পারবেন এবং স্টার্ট-আপ এর প্রোগ্রামগুলো ম্যানেজ করতে পারবেন।
যেকোন প্রসেসের নাম দেখে সবসময় বলা যায় না যে কোন প্রোগ্রামটা সেই প্রসেসকে চালু করেছে। আর এই তথ্য সঠিকভাবে জানার জন্য What’s Running এ আছে বিশেষ “check online” অপশন যা আপনি কোন প্রসেসের উপর মাউসের ডান বাটন চেপে ব্যবহার করতে পারেন। এই অপশন আপনার প্রসেসটিকে তার অনলাইন ডাটাবেজের সাধারণ প্রসেসগুলোর সাথে তুলনা করবে এবং সেই প্রসেস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা দেবে।
What’s Running এ্যাপ্লিকেশনের আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি আপনাকে সিস্টেমের প্রসেসগুলোর এক মাসের স্ন্যাপশট রাখার সুযোগ করে দেবে যা দ্বারা আপনি পরবর্তী অন্য মাসের স্ন্যাপশটের সাথে তুলনা করবে। এই দুই স্ন্যাপশট ব্যবহার করে আপনি দেখতে পাবেন যে এই সময়ের মধ্যে আপনার সিস্টেমের কি পরিবর্তন হলো এবং কোন প্রসেসটা বা প্রসেসগুলো সেই পরিবর্তনের জন্য দায়ী। যাতে করে আপনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।
অসম্ভব সুন্দর এবং অতি উপকারী এই সফটওয়্যারটির বেটা ভার্শন ৩.০ এখান থেকে আর স্টেবল ভার্শন ২.২ ডাউনলোড করতে পারবেন এখান থেকে।
কোনটা আপনারা ব্যবহার করেছেন আর কোনটা আপনাদের ভালো লাগলো তা জানালে আমরা সবাই উপকৃত হবো।
আমি আমার যথাসাধ্যে চেষ্টা করেছি টিউনের মাঝে বানান এবং ব্যকরণ ঠিক রাখার জন্য। আজ অনেক বছর হলো বাংলা লেখা হয়না। যদি আপনারা কোন ভুল-ত্রুটি খুঁজে পান তাহলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। যদি আপনারা আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেন, তাহলে ভবিষ্যতে চেষ্টা করবো আরো সঠিক ভাষায় টিউন উপহার দিতে।
আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য, টিউনটি নির্বাচিত হবার জন্য মনোনয়ন ভবিষ্যতে আমাকে আরো টিউন করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন। ধন্যবাদ।
আমি শামীম রাহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 345 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বিষন্নতা এক নীরব ঘাতক।
এতোগুলো টাস্ক ম্যানেজারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 🙂