অবশেষে ১৭ মার্চ,২০১৬ অর্থাৎ গতকাল মাইক্রোসফট প্রায় সব লুমিয়া ডিভাইস এর জন্য উইন্ডোজ ১০ মোবাইল অফিশিয়ালি রিলিজ করে।যদিও এই অফিশিয়াল আপডেট এর সাথে উইন্ডোজ ১০ মোবাইল এর লেটেস্ট প্রিভিউ বিল্ড ১০৫৮৬.১৬৪ এর কোন পার্থক্য নেই।কিন্তু প্রায় দীর্ঘ ১ বছর এর টেস্টিং এর পরে পাবলিকলি রিলিজ হল উইন্ডোজ ১০ মোবাইল।মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ মোবাইল রিলিজ করেছে অনেক নতুন ফিচারস এবং ইম্প্রুভমেন্ট এর সাথে।উইন্ডোজ ১০ মোবাইল এখন অনেকটাই প্রোডাক্টিভ।এবার দেখা যাক নতুন কি কি থাকছে এই উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে। 🙂
উইন্ডোজ ১০ মোবাইল এর স্টার্ট স্ক্রিনে কিছু চেঞ্জ আনা হয়েছে।উইন্ডোজ ফোন ৮.১ এ আগে স্টার্ট স্ক্রিনের পেছনে নিজের ইচ্ছামত ব্যাকগ্রাউন্ড দেয়া যেত না।কিন্তু উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে এটা সম্ভব এবং একই সাথে আছে টাইলস ট্রান্সপিরেসি যার ফলে স্টার্ট স্ক্রিন এখন আগের থেকে অনেক স্মার্ট।
একশন সেন্টার অর্থাৎ যেটাকে আমরা নোটিফিকেশন বার বলি সেটাতেও কিছু চেঞ্জ আনা হয়েছে।আগে উইন্ডোজ ফোনে একশন সেন্টারে ৪ টির বেশি কুইক একশন বাটন রাখা যেত না,কিন্তু এখন একশন সেন্টারের বাটনগুলা সুবিধামত এক্সপান্ড করা যাবে, অর্থাৎ ১৫ টিরও বেশি কুইক একশন বাটন রাখা যাবে (উইন্ডোজ ১০ পিসির মত)।
উইন্ডোজ ১০ এ আপনার মোবাইলে আশা প্রত্যেকটি নোটিফিকেশনে আপনি আলাদা আলাদাভাবে একশন নিতে পারবেন (যদি যে অ্যাপ থেকে নোটিফিকেশন এসেছে ওই অ্যাপটি টা এলাউ করে)।সাধারনভাবে আপনি যেকোনো মেসেজ এবং ইমেইল এর রিপ্লাই এবং ফেসবুকে টিউমেন্ট এর রিপ্লাই আপনার নোটিফিকেশন বার অর্থাৎ অ্যাকশান সেন্টার থেকেই দিতে পারবেন।নতুন করে অ্যাপ লঞ্চ করতে হবে না।
উইন্ডোজ ফোন এর ডিফল্ট কিবোর্ড আগে থেকেই অন্যান্য ওএস এর থেকে অনেক বেশি কমফোর্টেবল ছিল।উইন্ডোজ ১০ এ এই কিবোর্ডকে আরও একটু উন্নত করা হয়েছে এবং নতুন কয়েকটি ফিচার যোগ করা হয়েছে।ওয়ার্ড ফ্লো ফিচারের সাথে আরো থাকছে ভয়েস এর সাহায্যে টাইপ করা।উল্লেখ্য, উইন্ডোজ ফোন এর ভয়েস রিকগনাইজেশন অন্যান্য ফোন এর থেকে অনেক উন্নত।এছাড়া কিবোর্ডে নতুন একটা বাটন যোগ করা হয়েছে যার সাহায্যে আপনি টাইপিং কারসরকে ইচ্ছামত নেভিগেট করতে পারবেন। এছাড়া বাংলা ফোনেটিক কিবোর্ড তো থাকছেই।
বড় স্ক্রিনের মোবাইলগুলো যাতে সহজে এক হাতে ইউজ করা যায় তাই অনেক মোবাইলেই এই ওয়ান হ্যান্ডেড মোড ফিচারটি দেয়া হয়।এর সাহায্যে মোবাইলটির স্ক্রিন ছোট হয়ে হাতের কাছে চলে আসে যাতে সহজেই টা এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে ব্যবহার করা যায়।আগে এই ফিচারটি উইন্ডোজ ফোনে ছিল না,কিন্তু উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে এই ফিচারটি পাওয়া যাবে।
উইন্ডোজ ফোন ৮.১ এর সেটিংস মেনু ছিল অনেকটা এলোমেলো।সেটিংস্ এর কোথায় কি আছে তা খুজে পেতেই অনেকটা সময় চলে যেত।যদিও ৮.১ আপডেট ২ তে সেটিংস্ মেনু কিছুটা সাজানো গোছানো দেখা যায়।কিন্তু উইন্ডোজ ১০ এ সেটিংস্ মেনুকে আরও বেশি সহজ করা হয়েছে এবং আরও ইম্প্রুভড ইন্টারফেস দেয়া হয়েছে।
মাইক্রোসফট এজ।আপনি যদি কোনদিন পিসিতে উইন্ডোজ ১০ ইউজ করে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই এটার সাথে পরিচিত।এই ব্রাউজারটি ইউজ করার পরেও ভাল লাগেনি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন।এটার সম্পর্কে তেমন বেশি কিছু বলার দরকার নাই।অসাধারন একটা ব্রাউজার।অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্রাউজার এর থেকে ফাস্ট,ইন্টারফেসটাও অনেক ইজি,এছাড়া এক্সট্রা অনেক ফিচারসও আছে।উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে আপনি এই ব্রাউজারটির মোবাইল ভারশন পাবেন।
উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে চলবে উইন্ডোজ ইউনিভারসাল অ্যাপস।ইউনিভারসাল অ্যাপস হচ্ছে সেই অ্যাপসগুলো যা উইন্ডোজ ১০ চালিত সব ধরনের ডিভাইসেই চলবে।ডেভেলপাররা অ্যাপস ডেভেলপ করবেন সমগ্র উইন্ডোজ প্লাটফর্ম এর জন্য যা কোন এক ধরনের ডিভাইস এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।অনেকেরই ধারনা উইন্ডোজ স্টোরে অ্যাপস এর সংখ্যা খুবই কম।ধারনাটা ৮০% ভুল।উইন্ডোজ স্টোরে আপনার প্রয়োজনীয় প্রায় সব অ্যাপসই পাবেন।বিশ্বাস না হলে একবার উইন্ডোজ স্টোর থেকে ঘুরে আসতে পারেন।উইন্ডোজ স্টোর প্রতিদিনই ইম্প্রুভ হচ্ছে।আর বর্তমানে উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে আইওএস অ্যাপস পোর্ট করা হচ্ছে।তাই ইউনিভারসাল অ্যাপস এর কোয়ালিটি নিয়ে চিন্তার কিছুই নাই।
উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে থাকছে এখন পর্যন্ত সবথেকে উন্নত মেইল ক্লায়েন্ট Outlook Mail। এই মেইলটি ইউজ করতে হলে আপনার আউটলুক মেইলেই অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে তা না,যেকোনো মেইল অ্যাকাউন্টেই আপনি এই অ্যাপটি ইউজ করতে পারবেন।ইন্টারফেস,ইন্টারগ্রেশন,ফিচারস সব দিক থেকেই এটা অন্যান্য মেইল অ্যাপ এর থেকে অনেক এগিয়ে।এই অ্যাপে মেইল টাইপ করার সময়ও আপনি এমন কয়েকটি ফিচারস পাবেন যা সাধারনত অন্য কোন মেইল অ্যাপে পাবেন না।
উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে আপনাকে স্কাইপ ইউজ করতে স্কাইপ এর অ্যাপ ইন্সটল করে রাখতে হবে না।স্কাইপ আপনার মেসেজিং অ্যাপ এর সাথে ইন্টারগ্রেটেড থাকবে।এই ফিচারটা দেয়া হয়েছে যাতে আপনি কখনও একটা স্কাইপ কলও মিস না করেন।উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে আপনি যেকোনো স্কাইপ মেসেজ এর রিপ্লাইও আপনার ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ থেকে দিতে পারবেন।
উইন্ডোজ ফোন ৮.১ এ যদিও মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপস ইউজ করা যেত, তবুও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল।ওয়ার্ড,এক্সেল,প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি সবকিছু দেখতে পারা গেলেও ক্রিয়েট করার সময় সব ধরনের ফিচার পাওয়া যেত না।কিন্তু উইন্ডোজ ১০ এর ইউনিভারসাল ওয়ার্ড,এক্সেল,প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি ক্রিয়েট করা এখন অনেক সহজ এবং ক্রিয়েট করার সময় প্রায় অধকাংসশ রিসোর্স ই পাওয়া যায়।মোটকথা, উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে অফিস প্রগ্রামে কাজ করার সময় আপনি অনেকটা পিসির অফিস অ্যাপস এর মত এক্সপেরিএন্স পাবেন।এছাড়া অফিস অ্যাপগুলার ইন্টারফেসও যথেষ্ট ইম্প্রুভড এবং সহজ।
এটা উইন্ডোজ ১০ চালিত হাই এন্ড ডিভাইস অর্থাৎ লুমিয়া ৯৫০ এবং লুমিয়া ৯৫০ এক্সএল এর ফিচার।উইন্ডোজ ১০ চালিত এই দুটি ডিভাইস মাইক্রোসফট ডিসপ্লে ডক এর সাহায্যে বা মিরাকাস্ট এর মাধ্যমে যেকোনো ডিসপ্লেতে কানেক্ট করলেই ডিসপ্লেটি উইন্ডোজ ১০ পিসিতে পরিনত হবে।মাউস এবং কিবোর্ড কানেক্ট করে এটাকে সহজেই পিসির মত ব্যবহার করা যাবে।যদিও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে,যেমন win32 অ্যাপস অর্থাৎ ডেস্কটপ অ্যাপস কন্টিনামে চলবে না।কিন্তু মেইল লেখা,টাইপ করা,ছবি বা ভিডিও দেখা ইত্তাতি কাজ খুব সহজেই করা যাবে এবং সিলেক্টেড কিছু ইউনিভারসাল অ্যাপসও চলবে।
এছাড়াও আরও অনেক ফিচারস আছে উইন্ডোজ ১০ মোবাইলে যা এখানে বলা হয় নি।সব ফিচারস মিলিয়ে উইন্ডোজ ১০ মোবাইলকে One of the most productive phones বলা যায়।এবার বলি কিভাবে আপনার লুমিয়াটি উইন্ডোজ ১০ এ আপগ্রেড করবেন।আপনি এই আপডেটটি সরাসরি উইন্ডোজ আপডেট অপশনে গেলে পাবেন না। আপডেটটা পেতে হলে এই অ্যাপটি আগে ডাউনলোড করবেন। এরপর অ্যাপটা ওপেন করে অ্যাপ এর থেকেই আপডেট চেক করবেন।যদি আপনার মোবাইল এর জন্য উইন্ডোজ ১০ আপগ্রেড এভেইলেবল হয় তাহলে ওই অ্যাপ থেকেই আপনি জানতে পারবেন এবং এরপরে সেটিংস থেকে সাধারনভাবে আপডেট দিতে পারবেন। আপডেট এর সাইজ সরবোচ্চ ৯০০ এমবি।
ধন্যবাদ আমার টিউনটা ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য।কোনরকম প্রশ্ন থাকলে টিউনমেন্টে জানাতে পারেন এবং ফেসবুকেও মেসেজ দিতে পারেন। 🙂
আমি সিয়াম একান্ত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 40 টি টিউন ও 82 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমার নাম সিয়াম রউফ একান্ত। অনেকে সিয়াম নামে চেনে আবার অনেক একান্ত নামে। যাইহোক, পড়াশুনা একেবারেই ভাল লাগেনা আমার। ভাল লাগার মধ্যে দুইটা জিনিস , ফটোগ্রাফি আর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির প্রতি ভাললাগা থেকেই টেকটিউন্স চেনা এবং টেকটিউন্সে আইডি খোলা। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়......
কিনলে পস্তাবেন এই টুকুই শুধু বলতে পারি । Windows Smart Phone ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে এই টা ব্যবহার করে শান্তি পাবেন না , যেমনটা পান Android অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে । আর সাথে তো ডাকাত Windows Market আছেই । খুব বেশিদিন নেই, Windows অপারেটিং এর দিন শেষ 🙂