আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। আজকের সভ্যতার এই বিশাল ইমারত, বিমান, রকেট, রোবট ইত্যাদি ইত্যাদি সবই মানুষের যুগ যুগান্তরের স্বপ্ন ও সাধনার ফসল। মানুষ সভ্যতার বেদীমূলে দিয়েছে মস্তিষ্কের বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং হৃদিয়ের ভালোবাসা। বিজ্ঞান সে সভ্যতাকে করেছে গতিশীল, অগ্রসর ও আধুনিক। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে পুরো বিশ্ব আজ মানুষের হাতের মুঠোয়। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। দেশেও এর দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে। কারন আমাদের দেশে সরকারি, আধাসরকারী, বেসরকারীসহ সকল প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল প্রযুক্তির দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের হাতে। বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপশি অনলাইন মিডিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রিন্ট মিডিয়া যেখানে পৌঁছতে পারছে না অথবা পৌঁছতে অনেক সময়ের প্রয়োজন সেখানে অনলাইনে স্মার্টফোনের মাধ্যমে সে খবর মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মিডিয়া গুলো বহাল তবীয়তে ডিজিটাল দুনিয়া শাসন করছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আজ তথ্যের স্বচ্ছতা বিধানের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অদক্ষতা নির্ণয় করা সহজ হচ্ছে যা দেশকে এগিয়ে নিতে অন্য এক মাত্রা যোগ করেছে। কম্পিউটার পেশাজীবীদের সুক্ষ্ ও দক্ষ মস্তিষ্কের কারিশমায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ই-সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। বিগত কয়েকটি বছর ধরে যে হারে প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটেছে তাতে ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, সুশিক্ষিত, সুদক্ষ, এবং সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিং অনলাইনে টাকা উপার্জন করার অনেকগুলো মাধ্যমের মধ্যে একটি জনপ্রিয় এবং সত্যিকার সহজ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আপনার নিজের কোন দক্ষতা দিয়ে অনলাইনে ঘরে বসেই অন্যান্যদের কাজের অথবা সমস্যার সমাধান করে দিয়ে আয় করতে পারেন মোটা অংকের টাকা। বর্তমানে আউটসোর্সিং মার্কেট প্লেসগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথমদিকে। বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা যেমন ঘরে বসে লাখ টাকা আয় করছেন তেমনি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার এ যুগে ঘরে বসেই প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাময় একটি খাত হচ্ছে আউটসোর্সিং। আর এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে ইন্টারনেটের কল্যাণে।
যেখানে ইন্টারনেটের কল্যাণে সারাবিশ্ব উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে। যুগের সাথে তাল মিলাতে, সম্প্রতি বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়েছে। এতে আরো উন্নত ইন্টারনেট সেবার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, আইএসপি (ISP) বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যবসা নতুন উদ্যোক্তাদের নিকটে অমিত সম্ভাবনার ভান্ডার নিয়ে হাজির হয়েছে। আজকে আমরা আইএসপি (ISP) ব্যবসার সাথে পরিচিত হবো। এই ব্যবসার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোকপাত করবো। তবে, আমার প্রবন্ধ কয়েকটি পর্বে সম্পূর্ণ হবে। আশা করি এই সবকটি পর্বের সমন্বয়ে পূর্ণ প্রবন্ধটি হবে বাংলা ভাষায় প্রথম আইএসপি (ISP) ব্যবসার পথপ্রদর্শক গ্রন্থ।
অনেকেই আইএসপি (ISP) বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বিজনেস কিভাবে শুরু করতে হয় জানেন না, কিন্তু এই ব্যবসা নিয়ে জানার অনেক আগ্রহ আছে। তাই আইএসপি (ISP) ব্যবসা যারা করতে আগ্রহী তাদের জন্য আমার এই লেখা সহায়ক হবে। আইএসপি ব্যবসা হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা দানকারী ব্যবসা। এটা হতে পারে খুচরা ও পাইকারি উভয় প্রকার। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ইন্টারনেট বা আন্তর্জাল কি? কি তার ইতিহাস? কিভাবে কাজ করে? কেননা এগুলো জানলে আইএসপি (ISP) ব্যবসা বুঝতে সুবিধা হবে।
ইন্টারনেট কি?
সহজ কথায়, ইন্টারনেট হলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত জাল (Net), পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো যোগাযোগ ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র বা কম্পিউটারের সমষ্টি যা থেকে যেকোনো সময়ে যেকোনো তথ্য আদান-প্রদান করা যেতে পারে। আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।
ইন্টারনেটের ইতিহাস:
১৯৫০ সালের দিকে ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের উন্নয়নের সাথে ইন্টারনেটের ইতিহাস শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের বেশ কিছু কম্পিউটার বিজ্ঞান ল্যাবরেটরিতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের প্রাথমিক ধারণা আসে এবং এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট্স এজেন্সি (Advanced Research Projects Agency) বা আরপা (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত ছিল। এই প্রজেক্ট সম্পন্ন হয় রবার্ট টেলরের পরিচালনায় এবং লরেন্স রবার্টসের ব্যথাপনায়। ১৯৬৯ সালে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যাপক লিওনার্ড ক্লাইনারক কর্তৃক ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগার হতে প্রথম বার্তা পাঠানো হয়েছিল স্টারফোর্ড রিসার্চ ইনস্টেকটিউনসউটের (এসআরআই) কম্পিউটারে। ১৯৭০ সালে, ইন্টারনেট প্রোটোকল স্যুট (টিসিপি / আইপি) রবার্ট ই কান এবং ভিন্ট সেরফ তৈরী করেছিল এবং এটি ARPANET এ প্রমিত নেটওয়ার্কিং প্রোটোকল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইন্টারনেট ১৯৮৯ সালে আইএসপি দ্বারা সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯০ এর মাঝামাঝি থেকে ১৯৯০ এর পরবর্তি সময়ের দিকে পশ্চিমাবিশ্বে ইন্টারনেট ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হতে থাকে। ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও প্রযুক্তির উপর বিপ্লবী প্রভাব বলয় তৈরী হয়েছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক ডাক বা ইলেকট্রিক মেইল, তাৎক্ষণিক বার্তা প্রেরণ, ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) টেলিফোন কল, টু-ওয়ে ইন্টারেক্টিভ ভিডিও কল, আলোচনা ফোরাম, ব্লগ, অনলাইন নিউজ, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, অনলাইন শপিং সাইট ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কত কি সম্ভব হয়েছে। আগামী পর্বে আমরা আইএসপি (ISP) ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করব। ISPERP Software এর জন্য ভিজিট করতে পারেনঃ TUCANA ISPERP
আবুল হাসনাত পরাগ
মার্কেটিং স্পেশালিস্ট
জেবিআরসফট(JBRSOFT)
http://www.jbrsoft.com
http://www.isperp.org
আমি জেবিআরসফট আইটি ফার্ম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।