ওয়েব কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিএমএস (CMS) এর বিস্তারিত

বর্তমানে প্রফেশনালি না হোক নিজের একটা ব্যক্তিগত ওয়েব সাইট তৈরি করার ইচ্ছে আমাদের মধ্যে অনেকেরই আছে। কিন্তু একটা ওয়েব সাইট তৈরি করতে অনেক কিছু জানতে হবে আমাকে অনেক কোডিং শিখতে হবে আমি কি পারবো?  😥 এই চিন্তায় আর তৈরি করা সম্ভব হয় না। আমাদের মধ্যে অনেক ভালো ভালো লেখক আছেন যারা নিজের একটা ব্যক্তিগত ওয়েব সাইটের স্বপ্ন দেখে, কিন্তু ওয়েব সাইট তৈরিটাকে অনেক কঠিন ভাবে চিন্তা করার কারণে আর হয়ে উঠে না। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ওয়েব সাইট তৈরি করা কি তাহলে এতই সহজ? আমার উত্তর হচ্ছে না।

Web CMS

একটা ওয়েব সাইট তৈরির ক্ষেত্রে এইচটিএমএল, সিএসএস, জাবাস্ক্রিপ্ট, পিএইচপি ইত্যাদি না জানলে ভালো একটি ওয়েব সাইট তৈরি করা যায় না। কিন্তু বর্তমানে ওয়েব সাইট তৈরির কাজ সহজ করে দিয়েছে কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সংক্ষেপে সিএমএস (CMS – Content Management System)। আপনি ডোমেইন হোস্টিং কিনে কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি সিএমএস ইনস্টল করে আপনার ওয়েব সাইটটি অনলাইনে প্রকাশ করেত পারেন। এতে আপনাকে কোন ধরনের বাড়তি কোডিং জানার প্রয়োজন নেই।

কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিএমএস (CMS) কি?

কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিএমএস হচ্ছে একটি ওয়েব ভিত্তিক সফটওয়্যার। যার সাহায্যে খুব সহজে কোন ধরনের কোডিং ছাড়াই একটি ওয়েব সাইট তৈরি এবং পরিচালনা করা যায়। ওয়েব সাইট পরিচালনা করার প্রয়োজনীয় সকল উপাদান সিএমএস এর মধ্যে থাকে। এর সাহায্যে আপনার ওয়েব সাইটের টেক্সট, ইমেজ সহ সকল কনটেন্ট (লেখা, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি) খুব সহজে এড এডিট ডিলিট করতে পারবেন। আপনি আপনার সাইটে অসংখ্য পেজ তৈরি করতে পারবেন এবং আপনার সাইটের সব কিছু নিয়ে একটা সার্চ ইঞ্জিন থাকে এই সবই করতে পারবেন কোন ধরনের কোডিং ছাড়াই।

what cms

আচ্ছা আরো সহজে বুজাই, ধরুন আপনি যেই শার্টটি গায়ে দিয়েছেন সেটি কিভাবে আপনার হাতে এসেছে ?

  • রেডিমেট
  • কোন দর্জির কাছ থেকে সেলাই করিয়েছেন
  • অথবা আপনি নিজেই সেলাই করেছেন।

এখন আপনি বলেন উপরের তিনটির মধ্যে কোনটি সহজ হবে? আমার মতে অবশ্যই রেডিমেট বাজার থেকে কিনলেন আর বাড়িতে এসেই গায়ে দিয়ে দিলেন। আর যদি দর্জির কাছ থেকে সেলাই করেন তাহলে কিছুদিন সময় লাগবে, এবং তাকে একটা নির্দিষ্ট টাকা পেমেন্ট করতে হবে। আর যদি নিজেই সেলাই করতে চান তাহলে আপনাকে অনেক কিছু জানতে হবে। কাপর কাটা থেকে শুরু করে সেলাই করা পর্যন্ত। এখন আপনি যদি ভালো মানের দর্জি না হন তাহলে শার্ট আর শার্ট হবে না অন্য কিছু হয়ে যাবে।  🙂
ঠিক তেমনি একটা ওয়েব সাইট তৈরির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে যেমন রেডিমেট হচ্ছে কোন সিএমএস এর সাহায্যে করা। আর না হয় টাকা খরচ করে কোন ওয়েব ডিজাইনার-ডেভেলপারের মাধ্যমে করা বা নিজেই যদি ওয়েব ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো ভালো ভাবে জানা থাকে তাহলে তো আর কোন কথাই নাই। আপনি নিজেই সব করতে পারবেন। আচ্ছা আমরা সবাই জানি যে রেডিমেট জিনিসে একটা না একটা সমস্যা থাকেই সব কিছু তো আর নিজের মনের মত হয় না। তো চলুন ভালো ও খারাপ দিকগুলোর হালকা কিছু ধারণা নিয়ে নেই। তবে সিএমএস এর উপর ভিত্তি করে ভালো খারাপ আলাদা হতে পারে। আমি শুধু প্রাথমিক কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছি।

সিএমএস এর ভালো দিকগুলো

  • এটি খুব সহজে ব্যবহার যোগ্য।
  • আপনার ওয়েবসাইট এর পুরা কন্ট্রোল আপনার হাতে থাকবে। (তবে সব সিএমএস এর ক্ষেত্রে নাও হতে পারে)
  • খুব সহজে অল্প সময়ে আপনার লেখা অনলাইনে প্রকাশ করতে পারেন।
  • এসইও করা যায় খুব সহজে এবং এসইও ফ্রেন্ডলি ইউআরএল পাবেন যা মেনুয়েলু করা কঠিন।
  • পুরা সাইট কন্ট্রোল করার জন্য একটি সহজ ড্যাশবোর্ড পাবেন।
  • অনেক সদস্য একটি সাইট ব্যবহার করতে পারবে।
  • প্লাগিন বা এক্সটেনশনের সাহায্যে আরও বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।
  • কোন প্রকার কোডিং ছাড়াই সাইট পরিচালনা করতে পারবেন।
  • ওপেনসোর্স সিএমএস গুলতে আলাদা প্লাগ-ইন ব্যবহার করা যায়।
  • আপনি যেকোনো প্রযুক্তিগত সহায়তা ওয়েব সিএমএস সিস্টেমের নির্মাতা থেকে পাবেন।
  • অনলাইনে সিএমএস গুলর হাজারও ফ্রী থিম পাবেন, তাই বাড়তি টাকা দিয়ে ডিজাইন করার দরকার হয় না।

সিএমএস এর খারাপ দিকগুলিঃ

  • নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আপনাকেই বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। কারন অনেক জনপ্রিয় সিএমএস এর পিছনে অনেক বড় বড় হ্যাকার হ্যাক করার জন্য লেগে থাকে।
  • আপনি চাইলও বাড়তি কোন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশান আর ব্যবহার করতে পারবেন না।
  • অনেক কাজের একটা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
  • আপনাকে কিছু জিনিস নিজের মত করে এডিট করে নিতে হতে পারে, তবে হালকা কোডিং না জানলে সমস্যায় পরবেন।

সিএমএস নিয়ে ভুল ধারনাঃ

  • আমরা অনেকেই মনে করি একটি ভালো সিএমএস আমাদের ওয়েবসাইট টিকে রাঙ্কিং আসতে সাহায্য করে তা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
  • বর্তমানে নতুন যারা কাজ শিখছে বা করছে তাদের মাঝে একটা বড় ভুল ধারণা কাজ করছে। তারা মনে করে ওয়েব সাইট মানেই একটা সিএমএস তা ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা বা অন্য যে কোন সিএমএস।

সিএমএস নির্বাচনঃ

সিএমস নির্বাচন করাটাই নতুন দের জন্য একটু ঝামেলা তৈরি করে। কারন এক একটা সিএমএস এক একটা কাজের জন্য। অনলাইনে হাজারো সিএমএস আছে যেমন কোন ব্লগ সাইটের জন্য হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা ইত্যাদি, ই-কমার্স সাইটের জন্য ম্যাজেন্টো বা অন্যান্য। তাই সাইট এর ক্যাটাগরি অনুসারে এটি নির্বাচন করতে হয়। নতুন অবস্থায় সব সময় ওপেন সোর্স সিএমএস নির্বাচন করা উত্তম। না জেনে আমরা অনেকেই পেইড সিএমএস এর ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার শুরু করি এবং কিছুদিন পর টাকা দেন টাকা দেন শুরু করে, তাই এগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো। সব সময় চেষ্টা করবেন জনপ্রিয় সিএমএস গুলো ব্যবহার করার, কারণ যেটা বেশি জনপ্রিয় তার যে কোন সমস্যার সমাধান খুব সহজে পেয়ে যাবেন। আপনি যদি একদম অপরিচিত কোন সিএমএস নিয়ে কাজ শুরু করেন তাহলে অনেক সমস্যায় পরবেন। গুগল মামাও আপনারে বাঁচাইতে পারবো না।  😛 তাই দেখে শুনে ভালো একটা সিএমএস ব্যবহার করলেই হয়।

বি দ্রঃ টিউনটি একদম নতুনদের জন্য যারা ঘুমাই ঘুমাই স্বপ্ন দেখে একটা ওয়েব সাইটের।  😥 কিন্তু কোথায় থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। তাই ওস্তাদেরা দূরে থাকুন   🙂 

ফেসবুকে আমি - আবদুল মোতালেব

Level 0

আমি আবদুল মোতালেব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 20 টি টিউন ও 79 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

লেখাটি ভালো তবে তথ্য কম, আলোচনা বেশী৷ CMS-এর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আরো তথ্যবহুল টিউন চাই৷

    আমি পোস্ট লেখার আগে অনেক তথ্য যোগ করেছিলাম। পরে একদম বেসিক আকারে পোস্ট করলাম, কারন চিন্তা করলাম যাদের CMS সম্পর্কে একদমই ধারনা নাই তারা আগে ধারনাটা পেয়ে যাক। তারপর CMS এর ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সকল তথ্য দিয়ে একটা পোস্ট লেখার কাজ শুরু করে দিয়েছি। – ধন্যবাদ