গরমে যা খাবেন এবং যা খাওয়া উচিত নয়+অসুখ-বিসুখ…

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে মানুষের শক্তির অপচয় হয় অনেক। এ সময় প্রচুর ঘামের কারণে একটু ক্লান্তি, একটু অলসতা মানুষকে কাবু করে দেয়। এ সময় আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে আমার এ সংকলিত টিউন ।

গরমে যা খাবেনঃ

১।পানি ও পানীয়
প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। ততটা পানি পান করতে হবে, যে পর্যন্ত না প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক হয়। পানি শরীরের অভ্যন্তরকে পরিশোধিত করে। এ ছাড়া পিপাসা নিবারণ করে, দেহ-মন স্নিগ্ধ, সতেজ ও পুষ্ট রাখে। কাগজি লেবু, আম, তেঁতুল, দুধ, বেল, ইসবগুল প্রভৃতি দিয়ে শরবত করে খাওয়া যেতে পারে। ইসবগুলের ভুসির শরবত খুবই শীতল। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র ও পাকস্থলীর প্রদাহ, রক্ত আমাশয় ইত্যাদিতে কার্যকর। পানীয় কয়েক ধরনের হয়। তৃপ্তিদায়ক: ফলের রস। উদ্দীপক: চা, কফি, কোকো, ওভালটিন ও অ্যালকোহল। পুষ্টিকর: দুধ, মিল্কশেক, হরলিকস, ভিভা, মালটোভা ইত্যাদি। মোটামুটিভাবে বলা যায়, ফলের রসই উৎকৃষ্ট পানীয়। চা, কফি দেহের ক্লান্তি দূর করে এবং কাজে উৎসাহ জোগায়। অত্যধিক গরমে হালকা লিকারের লেবুর চা-ই উত্তম।

২।সালাদ
গরমের সময় সালাদ একটি উপাদেয় খাবার। দই, শসা, টমেটো, গাজর, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে সালাদ করা যায়। অনেক সময় এর সঙ্গে পাকা পেয়ারা ও আপেল দিয়েও সালাদ করা যায়। সালাদ তৈরি করে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে পরে খাওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে টকদই বা কাগজি লেবুও দেওয়া যেতে পারে। লেবুতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম, যা দেহকে ঠান্ডা রাখে এবং ত্বক মৃসণ রাখে।

৩।সবজি
গ্রীষ্মকালের সবজি মোটামুটি সবগুলোই ভালো। যেমন: ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পটোল, করলা, পেঁপে, কচু, বরবটি, চালকুমড়া, শসা ইত্যাদি। নিরামিষ রান্নায় যাতে চার-পাঁচটি সবজি থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ ছাড়া হালকা মসলা ও স্বল্প তেল সহযোগে শুক্তো রান্না অত্যধিক গরমে বেশ উপাদেয়, তেমনি পেটের গোলযোগের আশঙ্কাও এতে থাকে না।

৪।ডিম, মাছ ও মাংস
গরমের সময় অনেকে বাচ্চাদের ডিম দিতে চান না বদহজমের ভয়ে। অথচ ডিম অত্যন্ত সহজপাচ্য খাবার। এটি ছোট-বড় সবারই ভালোভাবে হজম হয়। তবে ভাজা ডিমের চেয়ে পোচ, অর্ধসেদ্ধ ও পূর্ণসেদ্ধ ডিম তাড়াতাড়ি হজম হয়। মাংসের মধ্যে মুরগির মাংস সহজপাচ্য। সমুদ্রের মাছে সোডিয়াম থাকে প্রচুর। পুকুর ও নদীর মাছ এ সময় উত্তম। একটি ধারণা আছে, মাংসের চেয়ে মাছ কম পুষ্টিকর। আসলে মাছ সহজে হজম হয় বলেই হয়তো এ ধরনের ধারণা গড়ে উঠেছে। দুটিরই প্রোটিনের মান সমান।

৫।ফল
শরীর রক্ষায় ফলের গুরুত্ব রয়েছে। গ্রীষ্ককালে আমাদের দেশে প্রচুর ফল পাওয়া যায়। যেমন: আম, কাঁঠাল, জাম, পেয়ারা, লিচু, তরমুজ, ফুটি, বাঙি ইত্যাদি। অনেকের অভ্যাস থাকে হঠাৎ এক দিনে বেশ কয়েকটি ফল একসঙ্গে খাওয়ার। এতে খাবারের মধ্যে কোনো সমতা থাকে না। এ ধরনের অভ্যাস না করে প্রতিদিনই কিছু না কিছু ফল খেলে ভিটামিন ও লৌহের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। পেয়ারা, কলা, পাকা পেঁপে ও আনারস ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ রাখে। এ ছাড়া রক্তে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে আনারসে উপকার পাওয়া যায়। তরমুজ ও ফুটি বেশ ঠান্ডা। রক্তশূন্যতায় উপকারী। এ সময় পাকা বেলের শরবত বেশ উপকারী। এতে যেমন পেটের সমস্যা দূর হয়, তেমনি শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পটাশিয়ামের ঘাটতি মেটায়।


গরমে যা খাওয়া উচিত নয়

যে কোন নেশাই ক্ষতিকর। এনার্জি ড্রিংকস আর্টিফিসিয়ালি তৈরী করা হয় যা শরীরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
অন্য পানীয় পানে বিশেষ কোনো উপকার নেই। বিশেষ করে অ্যালকোহলযুক্ত বেভারেজ পান করলে শরীরে আরো বেশি পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হয়। তাই পানি স্বল্পতারোধ করতে গিয়ে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করলে শরীর আরো বেশি পানি হারাবে।
গরমের দিনে চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। চর্বি জাতীয় খাবার শরীর আরো উত্তাপ লাভ করবে, ঘাম ও অস্বস্তি দুই-ই বাড়বে। চর্বির সাথে অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা স্বস্তিদায়ক।

অসুখ-বিসুখ

১।ঘামাচি:
অত্যধিক গরমে ঘামাচি দেখা দেয়। এটি যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার। এর জন্য চাই সকাল-বিকেলে দুবার গোসল করা। ত্বকে যাতে ঘাম জমতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা। ঘাম ও ধুলাবালু জমেই ঘামাচির উৎপত্তি হয়।
শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এ সময় লেবুর রস, তেঁতুলের রস, কাঁচা আমের শরবত ও বেলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ইসবগুল, ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) ও তোকমার শরবত উপকারী।

২।ডায়রিয়া
এ সময় ছোট-বড় অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। অসুস্থতার প্রথম দিকে স্যালাইন দিতে হবে, যাতে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়। তারপর দিতে হবে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত সহজপাচ্য খাবার। খাবারের মধ্যে থাকবে জাউভাত, মাছের হালকা ঝোল, সুসেদ্ধ জল, মুরগির স্যুপ, শসার স্যুপ, আলুর পাতলা ঝোল বা আলুভর্তা, কাঁচকলার পাতলা ঝোল বা ভর্তা ইত্যাদি। তেল-মসলা যত কম থাকে, তত ভালো। ডিম সেদ্ধ বা পোচ করে শুধু সাদা অংশ এ সময় দেওয়া যেতে পারে।

৩।হাত-পা জ্বালা
গরমের দিনে অনেকেরই হাত-পা জ্বালা করার প্রবণতা দেখা যায়। এ রকম হলে দুপুর ও রাতে খাওয়ার সময় ধনেপাতা ও পুদিনাপাতার চাটনি করে খেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে। ইচ্ছে হলে এই চাটনির সঙ্গে লেবু বা তেঁতুলের রস দেওয়া যেতে পারে। আখের গুড় দিয়ে তেঁতুলের রস খেলেও হাত-পা জ্বালা কমবে। তেঁতুলে যেমন পটাশিয়াম আছে, তেমনি এতে কোলেস্টেরলও কমে।

৪।হজমের গোলমাল
হজমের গোলমাল থাকলে এ সময় প্রতিদিনই দই খাওয়া ভালো। এতে আছে ল্যাক্টোক্যাসিলাস জীবাণু, যা আমাদের অন্ত্রে পৌঁছে হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়া যদি ডিসপেপসিয়া দেখা দেয়, তখন বেল খুবই উপকারী। পাকা অথবা কাঁচা উভয় ধরনের বেলই ওষুধের কাজ করে। পাকা বেলের শরবত ঠান্ডা ও আমাশয়ের জন্য ভালো।
গরমে সারা দিনের খাবারে যত ভাজা-ভুনা এড়ানো যায়, তত ভালো। কম মসলায় রান্না হলে ভালো হয়। যেমন: মাছের পাতলা ঝোল, শুক্তো, চিঁড়া-কলা, দই, দুধ-সেমাই, আম-আমড়া ইত্যাদির টক, পাতলা জল ইত্যাদি। কোনো কোনো সময় মাছ-মাংস বাদ দিয়ে নিরামিষ খাওয়া যেতে পারে। মোট কথা, গ্রীষ্মের খাবার হবে জলীয়, সহজপাচ্য ও হালকা মসলাযুক্ত, যাতে দেহ-মন—দুই-ই সজীব ও সতেজ থাকে।

৫।অ্যাজমা রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে
অতিরিক্ত গরমে অনেকেরই অ্যাজমার সমস্যা তীব্র হয়। এ অবস্থায় অ্যাজমা রোগীরা যাতে গরমের অস্বস্তিকর পরিবেশের মুখোমুখি না হন সে ব্যবস্থা তাদের নিজেদের গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের দেয়া চিকিৎসা নিয়মিতভাবে গ্রহণ করতে হবে, মেনে চলতে হবে উপদেশগুলো। এ সময় হাতের কাছে অ্যাজমার জন্য দেয়া শ্বাসনালী প্রসারক ইনহেলারটি হাতের কাছে রাখতে ভুলবেন না।

৬।সূর্যের পোড়া এড়াতে সানস্ক্রিন
সূর্যের দাবদাহ থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন ক্রিম মাখা যেতে পারে। সানস্ক্রিন প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর মাখতে হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন বা সানব্লকার ক্রিম পাওয়া যায়। আমাদের দেশের জন্য এসপিএফ-১৫ শক্তিসম্পন্ন সানব্লকারই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গরমে অনেকেরই ত্বক লালাভ হয়ে ওঠে। ত্বকে চাকা চাকা র্যাশও ওঠে অনেকের। এই র্যাশগুলো খুব চুলকায়। এই ধরনের র্যাশ ঠাণ্ডা পরিবেশে অর্থাৎ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকলে কমে যায় বা চলে যায়। অবস্থাটা এ রকম হলে বুঝতে হবে গরমে ত্বকের অতিসংবেদনশীলতার জন্য এমনটি হচ্ছে ।

আমি মনে করি উল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চললে আমাদের শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব ।
ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন । ভাল না লাগলেও করবেন । কেননা আপনাদের মতামত কমেন্ট এ না উল্লেখ করলে আরও ভাল টিউন করা যাবেনা ।

Level 0

আমি জিহাদুর রহমান নয়ন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 72 টি টিউন ও 313 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

http://www.noyon786.blogspot.com


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

কাজের টিউন। 🙂

দারুন পোস্ট । ভাবতাছি প্রিন্ট কইর‍্যা ঘরে ঝুলাইয়া রাখুম ।

A++++++++++++++++++++++++

Level 0

thanks f……..p.give me your mobile num-01710647945

টেকটিউনের কাজটা কি ডা: এর লেখা কটে এর কোয়াক এর লেখা হাইফই করে ককককমেমমমমমমমমমমমন্ট করে। ওদের পাবনা যাওয়া উচিত।

Level 0

ধন্যবাদ,
ভাই, আনারস খাওয়ার পর দুধ খাওয়া কি ক্ষতিকর ?

Level New

beer cholbe dada? ami roj kingfissur strong beer khai. ete amar shorir thanda r chonmone thake

Level 0

Masud vai apni ata ki comments korlan.kicoy buja jai na.amar mone hoy apnar pabna jaoa uchit.