উবুন্টু, মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের পথিকৃৎ লিনাক্সের অন্যতম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। আপনাদের মধ্যে যারা টেকনোলজি ওয়ার্ল্ড এর বিন্দু মাত্র খবর রাখেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে উবুন্টু এর সর্বশেষ ভার্সন ১১.১০ (যা Oneiric Ocelot নামে পরিচিত - Oneiric Ocelot হল দুর্লভ প্রজাতির চিতাবাঘের মত দেখতে এক জাতের বিড়াল যা মধ্য আমেরিকায় দেখতে পাওয়া যায়) বেশ কিছু দিন আগে বের হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন উইন্ডোজ ব্যবহারকারী কিন্তু উবুন্টুর এই নতুন ভার্সনটি দেখে মনে হল একবার অন্তত মুক্ত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি। অন্যান্য নতুন লিনাক্স ব্যবহারকারীর মতই আমার প্রথম অভিব্যক্তি ছিল খুবই বাজে (শিকল বাধা থাকতে থাকতে স্বাধীনতার পথ দেখতে ভয় লাগাই স্বাভাবিক)। যাই হোক, কিছু দিন যেতেই বুঝতে পারি মানুষ কেন লিনাক্স ব্যবহার করে। নিজেই চেষ্টা করে দেখুন, আমার বিশ্বাস আপনি নিজেই তা বুজতে পারবেন।
যারা আজও কম্পিউটারের স্বাধীন দিকটি খুঁজে না পেয়ে বদ্ধ কারাগারে গোলকধাঁধার মত ঘুরছেন, মূলত তাদের জন্যই আমার আজকের লেখাটি। আসুন, দেখুন পাইরেসি আর ভাইরাস বিহীন এক নতুন জগত যেখানে আপনি সম্পূর্ণ স্বাধীন, কেওই আপনাকে বাধা দিতে আসবে না, বাধা দিতে পারবে না। আমার আজকের টিউটোরিয়ালটি পরে একজনও যদি লিনাক্সের জগতে পা রাখে তবেই আমি নিজেকে সফল মনে করব।
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কিছু ইতিহাস দেখে নেই। উনিশ শতাব্দীর শেষ দিকে যখন কম্পিউটার মাত্রই সাধারণের নাগালের বাইরে ছিল, সফটওয়্যার মাত্রই বিশাল মূল্যতালিকা লাগানো ছিল, তখন Linus Torvalds নামের হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র এমন এক প্রোজেক্ট নিয়ে ভাবতে শুরু করেন যেখানে প্রোগ্রামিং কেবলমাত্র হাতেগোনা কয়েকজন মানুষের অধীনে থাকবেনা, বরং তা ছড়িয়ে পরবে বিশ্ববাপী। লিনাক্স আর Open-Source এর ধারণার সূত্রপাত তখন থেকেই। আর উবুন্টু হল লিনাক্স কার্নেলকে ভিত্তি করে লেখা একটি অপারেটিং সিস্টেম যার পৃষ্ঠপোষক Canonical Limited। ২০০৪ সালে উবুন্টু প্রথম জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় আর এখন উবুন্টু বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। ব্যক্তিগত কাজেতো বটেই, উবুন্টু এখন অনেক বড়-বড় কোম্পানির নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইতিহাস অনেক হল, এবার আসল কথা। আজ আমি আপনাদেরকে দেখাব কিভাবে উবুন্টু ডুয়েল-বুট করতে হয়। তবে টিউটোরিয়ালে যাওয়ার আগে দেখে নিতে পারেন উবুন্টু ১১.১০ এর উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়। এছাড়াও আমার আগের লেখা থেকে জেনে নিতে পারেন ডুয়েল-বুট করার আগে কি কি জানা প্রয়োজন।
উবুন্টু ইন্সটল করার আগেই শুধুমাত্র উবুন্টু এর জন্য আলাদা একটি পার্টিশন করে নেওয়াই ভাল। আমি দেখাচ্ছি কিভাবে কোন সফটওয়্যার ছাড়াই উইন্ডোজ এর ডিফল্ট ডিস্ক ম্যানেজার MMC Snap-In এর সাহায্যে নতুন পার্টিশন তৈরি করবেন। প্রথমেই Start থেকে Run এ ক্লিক করে diskmgmt.msc লিখে Enter চাপুন।
উইন্ডোজ ডিস্ক ম্যানেজার ওপেন হবে। এখানে আপনি আপানার হার্ডডিস্ক এর সকল পার্টিশনের ডিটেলস দেখতে পাবেন। উবুন্টু এর জন্য ১০-১৫ গিগাবাইট খালি জায়গা প্রয়োজন। তাই এমন একটি পার্টিশন নির্বাচন করুন যেখানে কমপক্ষে ১০-১৫ জিবি খালি জায়গা আছে। ওই পার্টিশনের উপর মাউসের ডান বাটন চেপে Shrink Volume এ ক্লিক করুন।
নতুন একটি বক্সে আপনি কতটুকু জায়গা পেতে চান টা লিখুন। ১০ জিবি এর জন্য ১০২৪০ এর ১৫জিবি এর জন্য ১৫৩৬০ লিখুন (১ জিবি = ১০২৪ এমবি)।
এখন উইন্ডোজ ওই পার্টিশন থেকে নির্দিষ্ট জায়গাটুকু আলাদা করবে। এই জায়গা টুকু সবুজ রঙে দাগানো থাকবে আরে Free Space লেবেল লাগান থাকবে। এই Free Space এ Right-Click করে New Simple Volume এ ক্লিক করুন।
New Simple Volume Wizard ওপেন হবে। Next ক্লিক করুন।
পরের উইন্ডোতে আপনি নতুন পার্টিশনের জন্য কতটুকু জায়গা ব্যবহার করতে চান টা লিখুন। এরপর Next এ ক্লিক করুন।
পরের উইন্ডোতে আপনি নতুন পার্টিশনের জন্য একটি অক্ষর নির্বাচন করুন।
তারপর Format this volume with the following setting এ ক্লিক করে Perform a quick format এ টিক মার্ক দিন। এরপর Next এ ক্লিক করুন। তারপর ফিনিশ এ ক্লিক করুন। আপনার নতুন পার্টিশন তৈরি হয়ে গেল।
আপনি যদি সিডি/ডিভিডি তে Bootable উবুন্টু burn করতে চান তবে উবুন্টু এর Official Tutorial টি দেখতে পারেন। আমি দেখাচ্ছি কিভাবে Bootable পেন-ড্রাইভ বানাতে হয়। এই জন্য আমি UNetbootin নামের পোর্টেবল একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করব। UNebootin নামিয়ে নিতে পারেন এখান থেকে। আপনি যে পেন-ড্রাইভে উবুন্টু কপি করতে চান টা USB Port এর মাধ্যমে Connect করুন। এরপর UNebootin ওপেন করে Diskimage এ ক্লিক করে এখান থেকে ডাউনলোড করা উবুন্টু ISO ফাইলটি সিলেক্ট করুন। এরপর নিচে Type থেকে USB Drive আর Drive থেকে আপনার USB Drive টি সিলেক্ট করুন। এরপর Ok তে ক্লিক করুন। UNebootin বাকি কাজ নিজে থেকেই করে নিবে।
USB Drive টি Connect করা অবস্থাতেই পিসি রিবুট করুন। BIOS ওপেন হওয়ার পর বুট ডিভাইস হিসেবে Pen-Drive টি সিলেক্ট করুন। উবুন্টু Installation Wizard কিছুক্ষণের মাঝেই শুরু হবে। Installer Boot Menu থেকে Install Ubuntu on a hard disk সিলেক্ট করুন।
পরের উইন্ডো থেকে ভাষা সিলেক্ট করে Install Ubuntu টে ক্লিক করুন।
Installation Type থেকে Something else সিলেক্ট করে Continue তে ক্লিক করুন।
এরপর উবুন্টু Advanced Partitioning Tool ওপেন হবে। এখান থেকে আপনার নতুন তৈরি করা পার্টিশন টি সিলেক্ট করে Edit এ ক্লিক করুন। পার্টিশন সাইজ ডিফল্ট রেখে দিন। Use as: থেকে Ext4 journaling file system সিলেক্ট করুন। Format the partition এ টিক মার্ক দিন। Mount point হিসেবে / (রুট) নির্বাচন করে Ok ক্লিক করুন। এর পর Install now এ ক্লিক করুন।
উবুন্টু ইন্সটল হওয়া শুরু হবে। এসময় আপনি টাইম-জোন, ইউজার ডিটেল আর কীবোর্ড মেথড সিলেক্ট করে নিতে পারেন।
ইন্সটলেশন নিজে থেকে শেষ হবে আর পিসি রি-বুট হবে। হয়ে গেল আপনার উবুন্টু ইন্সটল।
উবুন্টু ইন্সটল করার পর প্রথম যে জিনিসটি আপনার চোখে পরবে তা হল উবুন্টু এর নতুন Bootloader GRUB 2। যদিও এটি উইন্ডোজ এর Bootloader এর তুলনায় অনেক ভাল, তবুও আপনি যদি আগের Bootloader এ ফিরে যেতে চান তবে EasyBCD সফটওয়্যার এর সাহায্যে তা সহজেই করতে পারবেন। প্রথমেই EasyBCD ডাউনলোড করে নিন এখান থেকে। ইন্সটল করে ওপেন করুন। Add New Entry তে ক্লিক করে Linux/BSD ট্যাবে যান। Type থেকে GRUB 2 সিলেক্ট করে একটি নাম দিন (যেমনঃ Ubuntu) এরপর Add Entry তে ক্লিক করুন।
এর একটু কাজ বাকি থেকে গেল। BCD Deployment থেকে MBR Configuration Options এর নিচে আপনার Windows bootloader ভার্সন সিলেক্ট করে Write MBR এ ক্লিক করুন।
ব্যস। আবার উইন্ডোজ এর Bootloader ফিরে পেলেন।
প্রথম প্রকাশঃ ABC Trick
উবুন্টু ইন্সটল করার আগে Try করে দেখতে আমার Run Ubuntu 11.10 On VirtualBox টিউটোরিয়ালটি চেক করে দেখতে পারেন।
আপ্নেনার ভাল/খারাপ মতামত কমেন্টে জানাবেন। মনে রাখবেন, উবুন্টু কোন মতেই উইন্ডোজ না। তার মানে এই নয় যে উইন্ডোজ উবুন্টু থেকে ভাল। দুটোই ভিন্ন ধরণের অপারেটিং সিস্টেম এর দুটোই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারন। উবুন্টু নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দূর করুন। পাইরেসি থেকে নিজেকে আর নিজের প্পৃথিবীকে বাচিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ অনুমতি ছাড়া কোন ইমেজ ব্যবহার করবেন না।
আমি রিয়াদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 20 টি টিউন ও 136 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নিজেকে মাঝে মাঝে অপরাধী মনে হয়। যে ভাষার জন্য এত রক্তক্ষরণ টা বাদ দিয়ে আমি কিনা বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় ব্লগিং করছি! ছিঃ! টেকটিউনস কে ধন্যবাদ।
দারুন টিউন । যদিও আমার পছন্দ মিন্ট। মিন্টও কি একইভাবে করা যাবে?