বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যখনই আমরা ইন্টারনেটে সার্ফিং করি বা কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করি, আমাদের ব্রাউজার বিভিন্ন ডেটা জমা করতে শুরু করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলো ক্যাশ এবং কুকিজ।
অনেকেই হয়তো জানেন না যে, নিয়মিতভাবে এই ক্যাশ এবং কুকিজ ক্লিয়ার করা কেন জরুরি। আজকের এই টিউনে, আমি এই ক্যাশ এবং কুকিজ নিয়ে এবং সেই সাথে আপনার কেন এগুলি নিয়মিতভাবে ক্লিয়ার করা উচিত, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আমাদের কম্পিউটারে নিয়মিত ক্যাশ এবং কুকিজ ক্লিয়ার বা ডিলিট করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানার আগে আমাদেরকে অবশ্যই এই দুইটি বিষয় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া জরুরী। তাহলে চলুন, ক্যাশ এবং কুকিজ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।
ক্যাশ হলো এমন একটি Temporary Archive যেখানে ব্রাউজার প্রায়শ ব্যবহার হয় এমন সব ডেটা জমা করে রাখে। উদাহরণস্বরূপ, কোন ওয়েবসাইটের ইমেজ বা অন্যান্য স্ট্যাটিক কন্টেন্ট প্রথমবার ব্রাউজ করার সময় ক্যাশে সংরক্ষিত হয়। পরবর্তীতে সেই ওয়েবসাইট ব্রাউজ করলে, ক্যাশ থেকে সেই ডেটা সরাসরি লোড হয়, যার ফলে ওয়েবসাইটটি দ্রুত লোড হয়।
এক্ষেত্রে পরবর্তীতে আর সেই ব্রাউজারটি মূল সার্ভার থেকে সেই ইমেজ বা ডাটাটি লোড করে না। এরফলে, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথও কমে যায় এবং সেইসাথে দ্রুত ইন্টারনেট ব্রাউজিং করা যায়।
কুকিজ হলো ছোট ছোট ফাইল যা ওয়েবসাইট আপনার ব্রাউজারে জমা করে। এতে সাধারণত ইউজার প্রিফারেন্স, লগইন ইনফরমেশন, এবং অন্যান্য ব্রাউজিং ডেটা থাকে। কুকিজের মাধ্যমে কোন ওয়েবসাইট আপনাকে চিনতে পারে এবং আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। যেমন, আপনি কোনো অনলাইন শপে গিয়ে কিছু পণ্য আপনার কার্টে অ্যাড করেছেন। এখন, কুকিজ আপনার সেই তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে।
পরবর্তীতে সেই ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ কিংবা থার্ড পার্টি বিভিন্ন কোম্পানি আপনাকে বিজ্ঞাপণ দেখানোর জন্য এই তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারে।
ব্রাউজারে জমা হওয়া ক্যাশ এবং কুকিজ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে এবং এর ফলে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি ভালো এক্সপেরিয়েন্স পেয়ে থাকি। তবে, কিছু দিক বিবেচনা করে আপনার অবশ্যই ব্রাউজার থেকে এ ধরনের ফাইলগুলো নিয়মিত ডিলিট করা উচিত। আপনি যদি ইন্টারনেটে আপনার ডাটা ও সিকিউরিটি নিয়ে বেশি চিন্তিত হন, তাহলেই কেবল এ ধরনের কাজগুলো করতে পারেন।
ব্রাউজার থেকে ক্যাশ এবং কুকিজ ডিলিট করার অন্যতম কিছু কারণ নিচে আলোচনা করা হলো।
কুকিজে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন সংরক্ষিত থাকে, যেমন লগইন ডিটেইলস, সার্চ হিস্ট্রি, এবং ব্রাউজিং প্রেফারেন্স। যদি এই তথ্যগুলি দীর্ঘ সময় ধরে জমা থাকে, তবে এটি সাইবার হামলা বা তথ্য চুরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কেননা, অনেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটারে বিভিন্নভাবে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে এবং সেগুলোর মাধ্যমেই আপনার ব্রাউজারের ক্যাশ এবং কুকিজ হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
এজন্য, নিয়মিত ক্যাশ এবং কুকিজ ক্লিয়ার করলে, আপনার ব্রাউজিং ইনফরমেশন এর সিকিউরিটি অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং আপনার প্রাইভেসি ও রক্ষা পাবে।
ব্রাউজারে দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাশ এবং কুকিজ জমা হতে থাকে, যা সময়ের সাথে সাথে প্রচুর স্টোরেজ স্পেস দখল করতে থাকে। এই কারণে আপনার কম্পিউটার স্লো হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত ক্লিয়ার করলে, এই অপ্রয়োজনীয় ডেটা খালি হওয়ার কারণে স্টোরেজ স্পেস ফ্রি হয়ে যায় এবং আপনার ডিভাইসের পারফরমেন্স বৃদ্ধি পায়।
কোন একটি ওয়েবসাইট আপডেট হওয়ার পর পুরানো ক্যাশ ফাইলগুলো অপ্রয়োজনীয় হতে পারে। এর কারণ হলো, আপনার ব্রাউজারে জমা থাকা পুরাতন ক্যাশগুলো তখন আর কোন কাজে লাগে না। এক্ষেত্রে, আপনার ব্রাউজারটি নতুন ডেটা গুলোকে ক্যাশ হিসেবে জমা করে এবং পুরাতনগুলো অকার্যকর হিসেবে থেকে যায়।
আর তাই, নিয়মিতভাবে ব্রাউজারের ক্যাশ ক্লিয়ার করলে, ব্রাউজার আবার নতুন ডেটা লোড করে, যার ফলে ওয়েবসাইট দ্রুত এবং সঠিকভাবে লোড হয়।
কখনও কখনও, ক্যাশে সংরক্ষিত ডেটা করাপ্ট হতে পারে এবং ওয়েবসাইটের কার্যক্রমে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোনো ওয়েবসাইটে লগইন করতে না পারেন, তবে ক্যাশ এবং কুকিজ ক্লিয়ার করলে এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। তাই কখনো এই ধরনের সমস্যায় পড়লে, ব্রাউজারের ক্যাশ এবং কুকিজ ক্লিয়ার করুন।
কুকিজ ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি গুলো আপনার ব্রাউজিং ইনফরমেশন এর উপর ভিত্তি করে টার্গেটেড বিজ্ঞাপণ চালিয়ে থাকে। তবে, আপনি যদি নিয়মিত কুকিজ ক্লিয়ার করেন, তাহলে আপনি এ ধরনের বিজ্ঞাপণ গুলো কম দেখতে পারবেন। এতে করে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার এক্সপেরিয়েন্স আরো বাড়িয়ে তুলতে পারবেন।
বিভিন্ন ব্রাউজারে ক্যাশ এবং কুকিজ ক্লিয়ার করার প্রক্রিয়া আলাদা। তবে সাধারণভাবে, আপনি ব্রাউজারের সেটিংস মেনুতে গিয়ে 'Privacy and Security' অপশনে গিয়ে ক্যাশ এবং কুকিজ ক্লিয়ার করার অপশন পাবেন। অধিকাংশ ব্রাউজারেই, আপনি নির্দিষ্ট সময় সিলেক্ট করে এসব ডেটা গুলো ক্লিয়ার করার অপশন দেখতে পাবেন। যেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী ক্যাশ বা কুকিজ সিলেক্ট করে তারা ডিলিট করতে পারেন।
ক্যাশ এবং কুকিজ নিয়মিত ডিলিট করার মাধ্যমে শুধুমাত্র আপনার ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স বৃদ্ধি করাই নয়, বরং এটি আপনার প্রাইভেসি ও সিকিউরিটির জন্য ও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে, ব্রাউজার গুলোর ক্যাশ এবং কুকিজ ডিলিট করার মাধ্যমে আপনি আপনার ডিভাইসের পারফরম্যান্স ও ইমপ্রুভ করতে পারবেন। তাই, আপনার কম্পিউটারটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে আপনি অবশ্যই নিয়মিত ব্রাউজারের Cache এবং Cookies ডিলিট করুন। ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)