নিরাপদে Tor Browser ব্যবহার করার জন্য ৭ টি টিপস, যেগুলো সবার মানা উচিত!

Level 15
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

আপনি কি নিরাপদে ওয়েব ব্রাউজিং করার জন্য টর ব্রাউজার ব্যবহার করার কথা ভাবছেন? Tor হল একটি বিনামূল্যের সফটওয়্যার, যা সাধারণত ইন্টারনেটে Anonymous Communication এবং ব্রাউজিং সহজতর করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তেমন অনেকেই রয়েছেন, যারা ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার জন্য এটিকে প্রধান সফটওয়্যার মনে করেন। কিন্তু, একই সাথে এটি ইন্টারনেট ব্রাউজিং করার জন্য একটি নিরাপদ বিকল্প এবং এটি একটি স্বতন্ত্র ব্রাউজার।

বর্তমান সময়ে এসে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করার ক্ষেত্রে অনেকেই নিজের প্রযুক্তিগত সুরক্ষা সমস্যার কথা ভাবেন। আর আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত রাখার জন্য চাইলে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি। ‌এক্ষেত্রে, টর ব্রাউজার একটি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম হতে পারে। ‌তবে, এই ব্রাউজারটি ব্যবহার করে ও ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী।

Tor Browser ব্যবহার করে কীভাবে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যেতে পারে এবং আপনার কার্যকলাপ প্রাইভেট রাখতে হয়, সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই টিউনে।

১. ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন

ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন

অন্যান্য ব্রাউজার ব্যবহার করার মত অনেক ব্যবহারকারী একটি সাধারণ ভুল করে থাকেন, আর তা হল, তাদের ব্যক্তিগত তথ্য টর ব্রাউজারের সাথে মিশিয়ে ফেলেন। এরমধ্যে যেমন, নিজের ব্যক্তিগত ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করা, একই ইউজার নেম ব্যবহার করা, ডেবিট ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা কিংবা ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় Anonymous ফিচার ব্যবহার না করে টর ব্যবহার করা।

আপনি যদি নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য সত্যিই Tor সঠিকভাবে ব্যবহার করতে চান, তাহলে এটির জন্য একটি নতুন পরিচয় তৈরি করুন এবং সেটির মাধ্যমেই Tor ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে সুবিধাজনক উপায় হিসেবে কোন একটি Temporary Email Service ব্যবহার করতে পারেন এবং একইভাবে গোপনীয়ভাবে লেনদেনের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করুন।

Tor ব্যবহার করে আপনার তখনই কোন Temporary Email Service ব্যবহার করা উচিত, যেসব সার্ভিস গুলো আপনার নিয়মিত ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এর ফলে, কিছু সময় পর সেই ইমেইল এড্রেসটি মুছে যাবে, যা আপনার অনলাইন প্রাইভেসি রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি চাইলে টর ব্রাউজার ব্যবহারের সময় আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো গোপন রাখতে পারবেন এবং নিরাপদে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন।

২. আপনার সিস্টেম আপডেট রাখুন

আপনার সিস্টেম আপডেট রাখুন

অন্যান্য সার্ভিসের মতো টর শুধুমাত্র তখনই নিরাপদ, যতক্ষণ এটি কোন একটি আপডেটেড সিস্টেমে রানিং থাকে। এটি হলো একটি সফটওয়্যার। তাই, আপনার অপারেটিং সিস্টেম যদি পুরনো হয়, তাহলে থার্ড পার্টি কেউ সেই সিস্টেমের দুর্বলতা গুলোকে কাজে লাগিয়ে টর শিল্ডকে বাইপাস করতে পারে এবং এক্ষেত্রে আপনার কোন তথ্য হাতছাড়া হতে পারে।

যদি কোন সম্ভাব্য আক্রমণকারী আপনার অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে জানতে পারে এবং তারপর আপনার ব্যবহার করা অপারেটিং সিস্টেমের কোন দুর্বলতা খুঁজে পায়, তাহলে এক্ষেত্রে Tor ব্যবহার করার পরেও আপনি সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারেন। তাই, ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকার অন্যান্য উপায় গুলোর মত টর ব্রাউজার ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও আপনি আপনার অপারেটিং সিস্টেম নিয়মিত আপডেট করুন।

৩. টর ব্যবহার করে গুগল সার্চ করবেন না

টর ব্যবহার করে গুগল সার্চ করবেন না

গুগল সবসময় ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকে। এক্ষেত্রে যেমন, ব্যবহারকারীদের সার্চ করা শব্দ বা তাদের অনুসন্ধানের প্রশ্ন। এছাড়াও, Google আপনার ব্রাউজিং এক্টিভিটি ট্র্যাক করার জন্য আপনার কম্পিউটারে কুকিজ সংগ্রহ করে। তাই আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রাইভেসি রক্ষা করতে চান, তাহলে Tor ব্যবহারের সময় গুগল ব্যবহার না করাই ভালো।

এর সমাধান হিসেবে আপনি টর ব্যবহারের জন্য অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন যেমন: DuckDuckGo এবং StartPage ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ব্যবহারকারীদের কোন ডেটা ট্র্যাকিং করেনা। সেই সাথে, এগুলো ব্যবহারকারীদের কোন লগ রাখে না, সেগুলো সংরক্ষণ করেনা কিংবা তাদের নিজস্ব কোন ডেটা আপনার ডিভাইসে সংরক্ষণ ও করেনা। Tor ব্যবহারের সময় এই সার্চ ইঞ্জিন গুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেন এবং নিরাপদে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন।

৪. জাভা এবং জাভাস্ক্রিপ্ট নিষ্ক্রিয় করুন

জাভা এবং জাভাস্ক্রিপ্ট নিষ্ক্রিয় করুন

টর ব্যবহার করার সময় কিছু ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যার ব্যবহার করা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এ সব ওয়েবসাইট গুলোতে জাভা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে ভিজিটরদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট গুলো থেকে আপনার ব্রাউজিং অ্যাক্টিভিটি গুলো ট্র্যাক করতে এটি ব্যবহার করা হতে পারে।

এছাড়াও, এটি ব্যবহার করে Tor Browser গুলো কুকিজ এবং অন্যান্য ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে, যা আপনার জন্য খুঁজে বের করা কিংবা ডিলিট করা কঠিন হতে পারে। তাই, টর ব্রাউজার ব্যবহার করার সময় জাভাস্ক্রিপ্ট ব্লক করে Tor ব্রাউজার ব্যবহার আরো নিরাপদ করতে পারেন এবং আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

৫. Torrent বা P2P ব্যবহার করবেন না

Torrent বা P2P ব্যবহার করবেন না

Tor ব্রাউজার P2P ফাইল শেয়ারিং যেমন Torrenting এর জন্য তৈরি করা হয়নি। Tor নেটওয়ার্কের আর্কিটেকচার এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, এটি ফাইল শেয়ারিং ট্রাফিক গুলোকে সম্পূর্ণভাবে ব্লক করে দেয়। এছাড়াও, P2P টরেন্টিং টরের মাধ্যমে ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি আপনার Privacy ও ইন্টারনেটে Anonymous থাকার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ।

আর BitTorrent এর মত ক্লায়েন্টগুলো স্বাভাবিকভাবে সুরক্ষিত নয়। আর এগুলো যখন Tor এর মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়, তখন এগুলো আপনার IP Address অন্য পিয়ার দের কাছে পাঠায় এবং এটি বন্ধ করার কোন উপায় নেই। তাই, টর ব্রাউজার ব্যবহার করার সময় আপনার টরেন্টিং বা পি২পি ফাইল শেয়ারিং গুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এটি ইন্টারনেটে আপনার সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

৬. নিয়মিত কুকিজ এবং অন্যান্য ডেটা ডিলিট করে ফেলুন

নিয়মিত কুকিজ এবং অন্যান্য ডেটা ডিলিট করে ফেলুন

যদিও টর আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক কে বিভিন্ন নোটের মাধ্যমে পাঠায়, যাতে করে আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক গুলো সম্পর্কে কেউ জানতে না পারে। ‌ কিন্তু তবুও, কুকিজ এবং অন্যান্য স্ক্রিপ্ট গুলো আপনার অনলাইন এক্টিভিটি ট্র্যাক করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। এক্ষেত্রে, পর্যাপ্ত অফিস বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডেটা গুলো একত্রিত করার মাধ্যমে আপনার পরিচয় বের করা হতে পারে।

তাই, টর ব্যবহার করার সময় নিয়মিত Cookies এবং Local Site Data গুলো মুছে ফেলুন। অথবা এটির জন্য কোন একটি Add-on ব্যবহার করতে পারেন, যা এসব ডেটা গুলোকে অটোমেটিক্যালি ডিলিট করে দেয়। এভাবে আপনি আপনার প্রাইভেসি বজায় রাখা এবং ইন্টারনেটে আপনার পরিচয় সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হবেন। এসব পদক্ষেপ গুলোর মাধ্যমে আপনার Tor ব্যবহারের এক্সপেরিয়েন্স আরো নিরাপদ করে তুলবে এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো রক্ষায় এসব পদক্ষেপ গুলো সহায়ক হবে।

৭. HTTP ওয়েবসাইট গুলো এড়িয়ে চলুন

HTTP ওয়েবসাইট গুলো এড়িয়ে চলুন

HTTP সাইট থেকে যে ডাটা ট্রান্সফার করা হয়, তা এনক্রিপ্ট করা হয় না। টর শুধুমাত্র তার নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা ইন্টারনেট ট্র্যাফিক গুলোকে এনক্রিপ্ট করে। আর অন্যদিকে, আপনি যখন HTTP যুক্ত কোন সাইট ব্যবহার করেন, তখন আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক গুলো অন্যভাবে যায়, তখন এটি আপনার নজরদারির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়।

তবে, HTTPS যুক্ত ওয়েবসাইটের ভিজিট করা সম্পূর্ণ নিরাপদ, কারণ এসব ওয়েবসাইট গুলো TLS এবং SSL এর মত End-to-end Encryption ব্যবহার করে। HTTP সাইটে আপনার সমস্ত ডেটা সম্পূর্ণভাবে টর ইকোসিস্টেমের বাহিরে থাকলেও, এটি আপনার জন্য নিরাপদ থাকে। সুতরাং, আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করতে এবং নিরাপদে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য Tor ব্যবহার করার সময় সব সময় HTTPS সাইট গুলো ব্যবহার করুন।

শেষ কথা

টর ব্রাউজার আপনার অনলাইন প্রাইভেসি রক্ষা এবং নিরাপদে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য একটি শক্তিশালী টুলস হতে পারে। ‌তবে, এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে। যেমন, এখানে আপনাকে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা, আপনার সিস্টেম আপডেট রাখা, গুগল সার্চ না করা, জাভা ও জাভাস্ক্রিপ্ট ট্র্যাকিং বন্ধ করা, পি২পি ফাইল শেয়ারিং ব্যবহার না করা, নিয়মিত কুকিজ ও অন্যান্য ডেটা মুছে ফেলা সহ HTTP ওয়েবসাইট গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

এই পরামর্শ গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি Tor Browser ব্যবহার ব্যবহার করার সময় আপনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন এবং এখন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আরো সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। নিরাপদ ব্রাউজিং এর এই মূলনীতিগুলো মেনে চলা আপনাকে অনলাইন জগতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখবে।

Level 15

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস