প্রতিনিয়ত কতশত ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কয়টা ওয়েবসাইট পর্যাপ্ত ট্রফিক পাচ্ছে? এই ট্রাফিক বা ভিজিটর না পাওয়ার ফলে অচিরেই হারিয়ে যাচ্ছে অনেক অনেক ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট তৈরির প্রাথমিক ইনভেস্ট টা-ই শুধু শুধু নষ্ট হচ্ছে অনেকের। আবার নিয়মিত ট্রাফিক না পাওয়ার ফলে কেউ কেউ সেচ্ছায় ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করা ছেড়ে দিচ্ছে।
আপনিও কি একই সমস্যার মধ্যে আছেন? পর্যাপ্ত ট্রাফিক পাবেন কিনা এই চিন্তায় ওয়েবসাইট তৈরি করার সাহস পাচ্ছেন না? তাহলে ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করার আগে এই ১০ টি টিপস জেনে নিন। কীভাবে ওয়েবসাইটে নিয়মিত ট্রাফিক নিয়ে আসবেন তার কার্যকরী ১০ টি টিপস নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ওয়েবসাইট এর হোমপেজ থেকে শুরু করে সকল পৃষ্ঠা গুলো চমৎকার ভাবে ডিজাইন করুন। যাতে আপনার সাইটে এসে ভিজিটর বিরক্তি প্রকাশ করে না চলে যায়। একবার ভিজিটর কোনো সাইটের প্রতি বিরক্ত হলে ঐ সাইটে আর কখনও প্রবেশ করতে চাইবে না। তাই ভিজিটর ধরে রাখতে চাইলে ওয়েবসাইট এর প্রতিটি পাতা এমনভাবে সাজান যাতে যে কেউ অভিভূত হয়ে যায়।
পাশাপাশি নানান ফিচার সংযুক্ত করে ওয়েবসাইট ডিজাইন করুন। যেখানে যতো সুবিধা সেখানেই লোকজন ভীড় করবে বেশি৷ তাই আপনার সাইটে সম্ভাব্য ভিজিটর এর ধরন অনুযায়ী নানান ফিচার যোগ করে ওয়েবসাইট ডিজাইন করুন। অডিয়েন্স সন্তুষ্ট থাকলে নিয়মিত ট্রাফিক আসবেই।
নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার ওয়েবসাইটে যে কেউ খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারবে। যতো গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইট হোক না কেন, তার Access যদি সহজ না হয় তবে ঐ সাইটে কেউ ঢু মারবে না। অনেক সময় দেখা যায় কোনো কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে অনেক বেশি সময় লাগে। আবার এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠায় যাওয়া বেশ ঝামেলা। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না এই ধরনের সাইটে সময় নষ্ট করতে।
অন্য সাইটে যদি সুযোগ সুবিধা কম-ও থাকে কিন্তু সহযে Access যোগ্য হয় তাহলে সবাই বিকল্প সাইটেই চলে যাবে। তাই সম্ভাব্য ট্রাফিক সাইটে নিয়ে আসতে ওয়েবসাইট এর ডিজাইন ও কোয়ালিটি এমন করুন যাতে তা সহজেই ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে যে কোনো ওয়েবসাইটে যতো ট্রাফিক আসে তার বেশিরভাগই স্মার্টফোন ইউজার। আমি, আপনি, আমরা সকলেই সাধারণত স্মার্টফোনের মাধ্যমেই বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করি। ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ থাকলেও তা প্রায়ই হাতের নাগালে থাকে না। তাই ওয়েবসাইট যদি মোবাইল ফ্রেন্ডলি না হয় তাহলে আপনি তুলনামূলক অনেক কম ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটে।
আপনার সাইট যতো ভারী কাজের জন্যই তৈরি করা হোক না কেন চেষ্টা করবেন অবশ্যই মোবাইল ফ্রেন্ডলি করার। নয়তো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটা বর্তমানে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। ওয়েবসাইট যতো বেশি মোবাইল ফ্রেন্ডলি হবে ততোই সাইটে ট্রাফিক বেশি আসার সম্ভাবনা থাকবে।
কনটেন্ট কে একটা ওয়েবসাইট এর প্রাণ বলা চলে। আপনার সাইটে যতো বেশি ভিজিটর দের জন্য উপযোগী কনটেন্ট থাকবে ততোই ট্রাফিক বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে এটি যদি হয় ব্লগ সাইট তাহলে তো কনটেন্ট এর বিকল্প আর কিছুই নেই। সম্ভাব্য ভিজিটর দের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট প্রকাশ করলে অর্গানিক ভাবেই সাইটে ট্রাফিক চলে আসবে।
মানুষের মধ্যে চাহিদা রয়েছে কিন্তু তেমন ভালো কোনো কনটেন্ট ইন্টারনেটে এখনও নেই, এই ধরনের টপিক খুঁজে বের করবেন। এতে করে প্রতিযোগিতা ছাড়াই আপনি সাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারবেন। পাশাপাশি কনটেন্ট গুলো হতে হবে মানসম্মত এবং ইনফরমেটিভ। যাতে আপনার সাইট থেকে পর্যাপ্ত ইনফরমেশন না পেয়ে ভিজিটর অন্য সাইটে চলে না যায়।
ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসা এবং নিয়মিত ট্রাফিক ধরে রাখার সবথেকে কার্যকরী উপায় হলো ওয়েবসাইট এসইও করা। সার্চ ইঞ্জিন কেন আপনার ওয়েবসাইটকে সবার আগে প্রাধান্য দেবে এটা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে। হাজার হাজার সাইট এর মধ্যে থেকে আপনার সাইটকে সবার আগে নিয়ে আসার জন্য যে টেকনিক্যাল পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তা-ই এসইও। এসইও করার জন্য আপনাকে এসইও এক্সপার্ট হতে হবে৷ অথবা কোনো একজন এসইও এক্সপার্ট এর সহায়তায় আপনার ওয়েবসাইট এবং এর প্রতিটি কনটেন্টকে এসইও ফ্রেন্ডলি করে নিতে হবে।
ওয়েবসাইট যতো বেশি এসইও ফ্রেন্ডলি হবে ততোই এর ট্রাফিক বৃদ্ধি পাবে। বলা যায় এসইও জ্ঞান না থাকলে একটা সাইট টিকিয়ে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য কিংবা একপ্রকার অসম্ভব বলা চলে।
একই সাইটে নানান ধরনের কনটেন্ট পাবলিশ করে ওয়েবসাইট এর অবস্থা হযবরল করে ফেলার কোনো মানে হয় না। যে কোনো একটি ক্যাটাগরি বাছাই করে নিয়মিত ঐ বিষয় নিয়েই কনটেন্ট পাবলিশ করা উচিত। এতে ধীরে ধীরে আপনার ওয়েবসাইট টি একটি ব্রান্ডে পরিনত হওয়ার চান্স থাকে। কেননা ভিজিটর রা বুঝতে পারে যে এই সাইটে আসলে তারা কোন বিষয়ে কনটেন্ট বা তথ্য পাবে৷
অন্যদিকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কনটেন্ট পাবলিশ হলে ভিজিটর বুঝে উঠতে পারে না এই সাইটটি মূলত কোনো বিষয়ক। তাই বিশেষ কোনো প্রয়োজনে তারা আপনার ওয়েবসাইটকে প্রাধান্য দেবে না। সুতরাং একটি ক্যাটাগরি বাছাই করে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট পাবলিশ করতে থাকুন।
আপনি যে কনটেন্ট টি ওয়েবসাইটে পাবলিশ করবেন তার জন্য একটি আকর্ষনীয় হেডিং নির্বাচন করুন। হেডলাইন টি এমন হওয়া উচিত যাতে ভিজিটর দেখেই বুঝতে পারে যে আপনার কনটেন্ট টি কোন টপিক এর ওপর লেখা। কিন্তু হেডিং এ কিছুটা রহস্য থাকা চাই। যাতে পাঠক হেডিং দেখে আপনার পুরো লেখাটি পড়ার জন্য আগ্রহ খুঁজে পায়৷ অর্থাৎ হেডিং এর মধ্যে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা থাকলেও যাতে পুরো তথ্য উঠে না আসে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
উল্লেখ যে এই টিপস টি ব্লগ সাইটের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার ওয়েবসাইট এর সবগুলো কনটেন্ট সোস্যাল মিডিয়ায় প্রমোট করতে হবে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, লিংকড-ইন সহ যে কোনো সোস্যাল মিডিয়া সাইটে আপনার ওয়েবসাইট লিংক ছড়িয়ে দিন। কোননা এই সকল সোস্যাল মিডিয়া সাইটে তুলনামূলক বেশি ইউজার থাকে। ফলে খুব দ্রুত এখান থেকে ট্রাফিক আসার সম্ভাবনা থাকে।
আপনার যদি সোস্যাল মিডিয়ায় একটি শক্তিশালী কমিউনিটি থাকে তবে তো কোনো কথাই নেই। সোস্যাল মিডিয়া থেকেই ওয়েবসাইট এর মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন। তাছাড়া সোস্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পেইড মার্কেটিং এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট এর প্রমোশন করতে পারেন। মোটকথা যতো উপায়ে ওয়েবসাইট কে ছড়িয়ে দেয়া যায় তার প্রতিটি উপায়কে কাজে লাগাতে থাকুন।
আপনি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ খরচ করে ওয়েবসাইট এর জন্য পেইড বিজ্ঞাপণ এর ব্যবস্থা করতে পারেন৷ এজন্য গুগল আপনার কাছ থেকে বিজ্ঞাপণ এর ধরন অনুযায়ী পেমেন্ট নেবে। বিনিময়ে আপনার ওয়েবসাইট থাকবে সার্চ ইঞ্জিন এর ওপরের সারিতে৷ পেইড বিজ্ঞাপণ এর মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুত নিজের ওয়েবসাইট এর পরিচিতি সকলের সামনে তুলে ধরতে পারবেন৷ এরপর জনপ্রিয়তা অর্জন করলে ওয়েবসাইট এর সকল সেটআপ ঠিক রেখে ওয়েবসাইট পরিচালনা করলে অর্গানিক ভাবেই ট্রাফিক আসতে থাকবে।
প্রাথমিক অবস্থায় ওয়েবসাইটে ট্রাফিক না আসলে আপনি পেইড বিজ্ঞাপণ এর দিকে আগাতে পারেন৷ এতে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু খরচ হলেও পরবর্তীতে তা সুফল বয়ে আনবে।
আশাকরি উপরোক্ত টিপস গুলো আপনার ওয়েবসাইট রান করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একটা ওয়েবসাইট রান করে সেখানে নিয়মিত ট্রাফিক ধরে রাখতে পারলে ইনকাম নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। তাই এই ৯ টি টিপস ফলো করুন আর নিজের ওয়েবসাইট প্রতিযোগীতায় টিকিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।