বর্তমানে ইন্টারনেটে হাজার হাজার ওয়েবসাইট প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে। আর এই যুগে এসেও একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আপনার ওয়েবসাইট না থাকাটা একটু অস্বাভাবিক বটে। আপনি ব্যবসায়ী হোন, চাকরিজীবী হোন, সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকুন কিংবা স্টুডেন্ট হোন না কেন আপনার একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকা এখন সময়ের দাবি। আর এখন স্বল্প কিছু টাকা খরচ করলেই আপনি আপনার মনের মতো একটি ওয়েবসাইট নিজের জন্য তৈরি করতে পারবেন।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে আমি তো কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি না, তাহলে আমার কেন ওয়েবসাইট থাকা জরুরি। আসলে প্রযুক্তির এই যুগে নিজেকে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নিজের জন্য একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ তৈরি করার বিকল্প নেই। আর এই উদ্যেশ্য থেকেই আপনার একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরি করা জরুরি। এখানে উল্লেখযোগ্য ৬ টি কারণ তুলে ধরা হলো। কেন আপনার একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকা জরুরি তার ৬ টি কারণ সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক।
নিজের কাজের ওপর ফোকাস রেখে একটি অনলাইন পোর্টফোলিও তৈরি করা বর্তমানে খুবই জরুরি। আপনি কে, আপনার কী কী কাজের অভিজ্ঞতা আছে, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, আপনার পারদর্শীতা এই সবকিছু মিলিয়েই আপনার পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে। আর এই সকল বিষয়বস্তু একসাথে তুলে ধরতে পারবেন একটি সুসজ্জিত ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে। এটাকে আপনি একটি স্মার্ট পোর্টফোলিও হিসেবে প্রস্তুত করতে পারবেন। যা আপনার ক্যারিয়ারের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে।
আপনি যদি একজন চাকরিজীবী হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের ওয়েবসাইটে আপনার প্রফেশনাল কর্মকাণ্ড তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। ফলে এখান থেকে আপনার আরও ভালো অপরচুনিটি পাওয়ার সম্ভাবন থাকে। একজন ব্যবসায়ী হলে তো আপনার অবশ্যই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে৷ আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এর অনলাইন মার্কেটিং করতে পারবেন এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে। স্টুডেন্ট হলেও নিয়মিত আপনার ওয়েবসাইটে কনটেন্ট পাবলিশ করে নিজের ক্যারিয়ারের আসল ভীত তৈরি করে রাখতে পারেন।
মোটকথা অনলাইন জগতে আপনার পরিচিতির সবথেকে ভালো মাধ্যম হতে পারে আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট। এটা আপনার একটি অমূল্য ভার্চুয়াল সম্পদ।
একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকলে আপনাকে অবশ্যই ঐ সাইটে নিয়মিত লেখালেখি করতে হবে। একটা ওয়েবসাইট Grow করার জন্য নিয়মিত কনটেন্ট পাবলিশ করার বিকল্প নেই। দেখা যাবে ওয়েবসাইট এর সুবাদে আপনি প্রতিদিনই লিখছেন৷ আপনার কাজ, আপনার পড়াশোনা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে প্রায়ই আপনাকে কমবেশি লিখতে হচ্ছে। এই লেখা আবার নিজস্ব ওয়েবাসাইটে পাবলিশ হচ্ছে।
এভাবে একটা সময় দেখা যাবে গুগল সার্চ করে হাজার হাজার মানুষ আপনার লেখা পড়ছে। এভাবে আপনার যদি প্রতিভা থাকে তাহলে ওয়েবসাইটে লেখালেখি করতে করতেই আপনি একজন ডিজিটাল সেক্টরের রাইটার হয়ে উঠতে পারবেন।
আর নিয়মিত লেখালেখি করার জন্য আপনাকে যে কোনো বিষয়ে প্রতিনিয়ত জ্ঞান অন্বেষণ করতে হবে। শিক্ষনীয় দিক গুলোই মাথার মধ্যে ঘোরপাক খেতে থাকবে। ফলে আপনার লার্নিং এনার্জি তুলনামূলক বেশি থাকবে। মোটকথা নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটকে হালনাগাদ রাখার অজুহাতে প্রতিনিয়ত আপনাকে শিখতে হবে এবং টুকটাক লেখালেখি করতে হবে। এভাবে আপনার লেখালেখির চর্চা অব্যহত থাকবে যা বর্তমান সময়ে একটি অন্যতম স্কিল হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান সময়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মানুষ সবথেকে বেশি নিজের সৃজনশীলতা তুলে ধরে। আপনি একজন লেখক, গায়ক, চিত্রশিল্পী কিংবা যা-ই হোন না কেন আপনার এই বিশেষ গুন পুরো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে। হ্যাঁ হয়তো সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার পরিচিতি বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। কিন্তু সোস্যাল মিডিয়ায় থাকা আপনার ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট গুলো আপনার নিজের সম্পদ না। যে কোনো কারণে আপনার সোস্যাল মিডিয়া কনটেন্ট, পেইজ, ফলোয়ার Vanish হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট এর কনটেন্ট আপনার নিজের সম্পদ, এটা কেউ চাইলেই Vanish করে দিতে পারবে না।
অর্থাৎ ভার্চুয়াল জগতে আপনার একটি স্থায়ী ঠিকানা হলো আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট। এখানে চাইলেই কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সুতরাং নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশের জন্য অবশ্যই একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট চালু করতে হবে। এটা আপনাকে লাইফ টাইম সাপোর্ট এর নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
বর্তমান সময়ে প্রতিদিন কিছুটা টাইম ভার্চুয়াল জগতের পেছনে আমাদের ব্যয় করা উচিত। বিশ্ব দরবারে কি হচ্ছে, কি হালচাল তার সবকিছু জানতে হলে ভার্চুয়াল জগতে একবার হলেও ঢু মারা উচিত। পাশাপাশি আপনার সাথে কানেক্টেড লোকজনকে এটা জানান দেয়া উচিত যে আপনি ইন্টারনেটে নিয়মিত আছেন। একটা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকলে এই কাজটা আমরা নিয়মমাফিক করে থাকি। কেননা ওয়েবসাইট রানিং রাখার তাগিদে হলেও আমাদের প্রতিদিন কিছুটা সময় ভার্চুয়াল জগতের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়।
একটা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে নিয়মিত কনটেন্ট পাবলিশ করলে আমরা অটোমেটিক প্রতিদিন ইন্টারনেট এর দুনিয়ায় চলে আসবো। আর নিত্য নতুন টেকনিক্যাল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে পারবো। সোজা কথা টেকনিক্যাল দুনিয়ায় ধীরে ধীরে মাস্টার হয়ে ওঠার জন্য নিয়মিত ইন্টারনেটে কানেক্টেড থাকতে হবে। আর নিয়মিত কানেক্টেড থাকার পূর্বশর্ত হতে পারে একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরি করা। সেই সাইটকে রান করার জন্য যতো স্টেপ প্রয়োজন তা গ্রহণ করা।
বর্তমানে আপনি যে পোশায় থাকুন না কেন কিংবা যে পেশায় যেতে চান না কেন আপনার একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকা জরুরি। আপনি একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে যদি বলেন আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে সংশ্লিস্ট কাজের বিষয়ে ইতোমধ্যে অনেক লেখা আপনি পাবলিশ করেছেন তাহলে কিন্তু অন্যান্য প্রার্থীর থেকে আপনার যোগ্যতা তুলনামূলক বেশি বলে বিবেচিত হবে। পরিক্ষক আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করে যখন দেখতে পারবে আপনি তাদের চাহিদার থেকেও একটু বেশিই এক্সপার্ট তখন তো আপনাকে ছাড়া বিকল্প কাউকে চাকরি দেয়ার কথা ভাববেই না। এভাবে চাকরিতে প্রমোশনের ক্ষেত্রেও আপনার এই অনলাইন পোর্টফোলিও আপনাকে ক্যারিয়ারের কয়েক ধাপ ওপরে নিয়ে যাবে।
আপনি যদি ক্যারিয়ার প্লানিং এর ক্ষেত্রে ব্যবসাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তো আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকা একদম বাধ্যতামূলক বলা চলে। এটা হয়ে উঠবে আপনার ভার্চুয়াল মার্কেটিং এর সবথেকে ভালো উপায়। পাশাপাশি এই ওয়েবসাইট থেকেই একটি ব্রান্ড তৈরি হতে পারে। সুতরাং ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জনের জন্য নিজেকে প্রমান করা যেমন জরুরি তেমন নিজেকে প্রমান করার জন্যই একটি ওয়েবসাইট পোর্টফলিও তৈরি করা জরুরি।
বর্তমান সময়ে যার কানেকটিভিটি বেশি তার অপরচুনিটি বেশি। অর্থাৎ আপনি যতো বেশি মানুষের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারবেন ততোই আপনার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। কোনো প্রতিষ্ঠান এর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করা থেকে শুরু করে কারো সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইট হতে পারে সবথেকে ভালো অপশন। আপনি কোথাও জব এপ্লাই করলেন এবং সেখানে আপনার ওয়েবসাইট এর নাম উল্লেখ করে দিলেন। ফলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সরাসরি আপনার সম্পর্কে ওয়েবসাইট থেকে সকল ধারনা নিতে পারবে।
কিংবা আপনার এলাকায় সবথেকে ভালো বিজনেস ব্রান্ড হিসেবে সকলের সাথে কানেক্টেড হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইট হতে পারে উপযুক্ত মাধ্যম। ধরুন আপনি আপনার ওয়েবসাইট টিকে বিজনেস ব্রান্ড হিসেবে খুব চমৎকার ভাবে সাজালেন৷ এবার এলাকাভিত্তিক গুগল সার্চে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এর নাম টপ লিস্টে চলে এলো, ফলে আপনার কানেকটিভিটি বৃদ্ধি পেল। এভাবে ব্যক্তি হসেবে নিজেকে এবং নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সর্বদা ভার্চুয়াল জগতে কানেক্টেড রাখতে একটি ওয়েবসাইট এর বিকল্প নেই।
একটা ওয়েবসাইট রান করাতে পারলে আপনি উপরোক্ত সুবিধা গুলো তো পাবেনই সেই সাথে ওয়েবসাইট থেকেও আয় করতে পারবেন। তাই আপনার প্রয়োজনীয় ডিভাইস এবং ওয়েবসাইট পরিচালনা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারনা থাকলে অবশ্যই আপনি একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।