স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে এখন মানুষের চব্বিশ ঘণ্টার সঙ্গী। স্মার্টফোন ছাড়া যেন আমরা এখন একটা মুহূর্ত-ও কল্পনা করতে পারি না। সময়ে অসময়ে সারাক্ষণ আমাদের হাতে মোবাইল থাকেই। প্রয়োজন না হলেও এটি আমরা স্ক্রল করতে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন সব সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে আপনার কতোটা শারিরীক, মানসিক এবং আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে?
বিশেষ কিছু সময় বা পরিস্থিতি আছে যখন আমাদের স্মার্টফোন থেকে একদমই দূরে থাকা উচিত। এই সময়গুলোতে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে হতে পারে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি। আজকের টিউনে এমন চারটি সময় নিয়ে আলোচনা করবো যখন স্মার্টফোন থেকে আমাদের দূরে থাকা দরকার। চলুন জেনে নেই ঠিক কোন কোন সময়ে আমাদের স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকতে হবে।
আমরা বেশিরভাগ সময় একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশে মোবাইল ব্যবহার করেি। যেমন ধরুন রাতে রুমের লাইট অফ করে শুয়ে শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করি প্রায় সকলেই। এমন যে কোনো অন্ধকার পরিবেশেই আমাদের একমাত্র সঙ্গী হয় হাতে থাকা স্মার্টফোন। কিন্তু নিকষ কালো পরিবেশে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে দেখা দিতে পারে নানান সমস্যা।
চারপাশ অন্ধকার থাকলে মোবাইল স্ক্রিনের হাই রেডিয়েশন সরাসরি আমাদের চোখের ওপরে এসে পড়ে। মোবাইল স্ক্রিনের ব্লু লাইট সরাসরি আমাদের চোখে প্রতিফলিত হওয়ার ফলে চোখের রেটিনায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ জ্বালাপোড়া সহ নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারে বসে মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
মোবাইলে কাজ করতে করতে হঠাৎ চার্জ ফুরিয়ে গেলে আমরা চার্জে দিয়ে আবার মোবাইল চালাতে শুরু করি। অর্থাৎ সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করি। এই একটি ভুলের কারণে আপনার মোবাইলের আয়ু অনেক কমে যাবে। সবথেকে বেশি প্রভাব পড়বে মোবাইল এর ব্যাটারির ওপরে। একদিকে চার্জ হচ্ছে অন্যদিকে তা খরচ হচ্ছে, এই প্রসেস অনবরত চলতে থাকলে ব্যাটারি খুব দ্রুত ড্যামেজ হয়ে যায়।
তাছাড়া চার্জ দেয়া অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করলে অনেক সময় চার্জার গরম হয়ে যায়। একটানা অনেক সময় এই অবস্থা চলতে থাকলে চার্জার জ্বলে যেতে পারে। সেই সাথে মোবাইল-ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই চার্জ দেয়া অবস্থায় খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে মোবাইল ব্যবহার করবেন না।
অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন রাতে তাড়াতাড়ি বিছানায় গেলেও সহজে ঘুম আসে না। এর পেছনের কারণ কি কখনও খতিয়ে দেখেছেন? মূলত আমরা প্রত্যেকেই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল স্ক্রল করতে থাকি। রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল ব্যবহারের ফলে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। সহজে ঘুম আসে না।
তাছাড়া তাড়াতাড়ি ঘুম আসলেও একটি সুন্দর ঘুমের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। কেননা মোবাইল স্ক্রিনের বিষয়বস্তু গুলো সারাক্ষণ আপনার ব্রেইনকে সচল রাখবে। ফলে আপনার ঘুম আরামদায়ক হবে না এবং সকালে ঘুম ভাঙার পরেও নিজেকে অনেক ক্লান্ত অনুভব করবেন। আর এই সমস্যায় ভুগছেন বর্তমান জেনারেশন এর প্রতিটি মানুষ। তাই ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগেই মোবাইল থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
আমরা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যেমন মোবাইল স্ক্রলিং না করে ঘুমাতে পারি না, ঠিক তেমনই সকালে ঘুম ভাঙার সাথে সাথে মোবাইল ব্যবহার শুরু করি। দেখা যায় সকালের শরীরচর্চার সময়টুকু আমরা বিছানায় শুয়ে শুয়েই কাটিয়ে দেই। ফলে আমাদের শারিরীক সুস্থতা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। তাছাড়া সকালের স্নিগ্ধ আলোয় চোখ মেলে না তাকিয়ে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে।
আর সকালে মানুষের মস্তিষ্ক অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ থাকে। আর এই সময়ে যদি মোবাইল ব্যবহার করে মস্তিষ্ককে অলস করে দেই তাহলে পুরোটা দিনই আমাদের অলসতার মধ্য দিয়ে কাটবে। সুতরাং সকাল সকাল ঘুম ভাঙলেই মোবাইল স্ক্রল করা থেকে বিরত থাকুন।
আসলে বর্তমান জেনারেশন এর প্রতিটি মানুষ এতোবেশি মেবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে যে তারা চাইলেও মেবাইল ছাড়া একটা দিন কাটাতে পারে না। তাই একসাথে পুরোপুরি ভাবে মোবাইল ব্যবহার করা বন্ধ না করতে পারলেও এই বিশেষ সময়গুলোতে মোবাইল থেকে দূরে থাকুন। আশাকরি এভাবে নিজেকে অভ্যস্ত করতে পারলে ধীরে ধীরে মোবাইল আসক্তি থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে পারবেন। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।