ম্যাকবুক, অ্যাপলের জনপ্রিয় একটি ল্যাপটপ ব্র্যান্ড। দীর্ঘদিন ধরেই ম্যাকবুক তার চমৎকার ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির জন্য প্রশংসিত। আপনি যদি একটি নতুন ম্যাকবুক কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে বাজারে ম্যাকবুকের প্রচুর অপশন থাকায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনার জন্য কঠিন হতে পারে।
এই টিউনে আমি নতুন ম্যাকবুক কেনার আগে যা যা জানা জরুরী তা নিয়ে আলোচনা করব। আমি আপনাকে বিভিন্ন ম্যাকবুক মডেলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করব। আপনার প্রয়োজনের অপর ভিত্তি করে কোন মডেলটি আপনার জন্য সেরা তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবো। চলুন আর দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করি।
ম্যাকবুক কেনার আগে, আপনার প্রথমেই চিন্তা করতে হবে আপনি এটি কি কাজে বা কিসের জন্য ব্যবহার করবেন। অফিসিয়াল কাজের জন্য ম্যাকবুক ব্যবহার করলে, আপনার প্রচুর পরিমাণ স্টোরেজ এবং RAM-এর প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে যদি আপনি ভারী ফাইলের সাথে কাজ করেন। তবে আপনি যদি বাক্তিগত ব্যবহার বা পড়াশোনার জন্য ম্যাকবুক ব্যবহার করতে চান তাহলে একটি সাধারণ ম্যাকবুকই আপনার জন্য যথেষ্ট।
আবার, আপনি যদি হেবি গ্রাফিক্স এবং ভারী অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার একটি শক্তিশালী গ্রাফিক্স কার্ড সহ একটি ম্যাকবুক মডেলের প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে আপনি যদি গেমিং এর জন্য ম্যাকবুক ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনার একটি হাই রেজুলেশন ম্যাকবুকের প্রয়োজন হবে যাতে একটি শক্তিশালী প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ড অন্তর্ভুক্ত আছে।
ম্যাকবুক কেনার আগে অবশ্যই আপনার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা এবং আপনার জন্য কোন মডেলটি সেরা তা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ম্যাকবুক ক্রয় করার আগে আপনার ব্যবহারের প্রয়োজন বোঝার পাশাপাশি, বাজেট নির্ধারণ করাও অত্তন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, অ্যাপেলের ম্যাকবুক মোটেও কোন সস্তা ল্যাপটপ নয়। ম্যাকবুক কেনার আগে অবশ্যই এর বিভিন্ন মডেলের মূল্য তুলনা করুন এবং আপনার বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেরা অপশনটি খুঁজে বের করুন।
বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্যাজেট শপ - Star Tech এর মূল্য অনুসারে বাংলাদেশি মার্কেটে ম্যাকবুকের দাম সাধারণত ১১২, ০০০ টাকা থেকে ১, ০৯৫, ০০০ টাকা পর্যন্ত। মনে রাখবেন, দামই কিন্ত সবকিছু না! সবচেয়ে দামি মডেলটি আপনার জন্য সেরা হবে এমন কোনো কথা নয়। অবশ্যই, আপনার প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন একটি মডেল বেছে নিন, যা আপনার বাজেটের মধ্যে পড়ে।
বাজারে বর্তমানে ম্যাকবুক-এর বিভিন্ন মডেল পাওয়া যায়, প্রত্যেকটি মডেলেরই নিজস্ব স্পেসিফিকেশন এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ম্যাকবুক কেনার আগে আপনার প্রয়োজনীয়তা বুঝে সঠিক মডেলটি নির্বাচন করা অত্তন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার বাজেট এবং প্রয়োজনীয়তা অনুসারে উপযুক্ত মডেলটি নির্বাচন করতে পারেন। ম্যাকবুক কেনার আগে বিভিন্ন মডেলের স্পেসিফিকেশন এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়াও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
ম্যাকবুক কেনার আগে যা জানা জরুরী তার তালিকায় সবার উপরেই থাকে স্পেসিফিকেশন বোঝা। এটি শুধু ম্যাকবুকের ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো গ্যাজেট ক্রয়ের আগে স্পেসিফিকেশন বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, সহজ ভাষায় স্পেসিফিকেশন বোঝার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক।
স্পেসিফিকেশন হলো মূলত কোনো প্রযুক্তিগত ডিভাইসের কার্যকারিতা বর্ণনা করা। এই কার্যকারিতার মধ্যে রয়েছে প্রসেসরের গতি, RAM-এর পরিমাণ, স্টোরেজ ক্ষমতা, ডিসপ্লর মান, ব্যাটারি লাইফ ইত্যাদি। এই বিষয়গুলি বুঝতে পারালে, আপনার প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিভাইসটি নির্বাচন করা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হন তাহলে আপনাকে একটি শক্তিশালী প্রসেসর এবং উচ্চ RAM-সম্পন্ন একটি ম্যাকবুকের দরকার হবে। আবার, যদি আপনি শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং ডকুমেন্ট তৈরির জন্য ম্যাকবুক ব্যবহার করতে চান, তাহলে একটি কম্প্যাক্ট এবং সাশ্রয়ী মডেলের ম্যাকবু্কই আপনার যথেষ্ট হতে পারে।
স্পেসিফিকেশন বোঝার ক্ষেত্রে কিছুটা সাধারণ বিষয় জানাও আপনার জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, "গিগাহার্টজ" (GHz) এটি প্রসেসরের গতি পরিমাপ করে, "গিগাবাইট" (GB) যা RAM-এর পরিমাণ নির্দেশ করে এবং "টেরাবাইট" (TB) যা স্টোরেজ ক্ষমতা প্রকাশ করে।
একটি নতুন ম্যাকবুক কেনার আগে অবশ্যই বিভিন্ন মডেলের স্পেসিফিকেশন বুঝে কেনার চেষ্টা করুন। অনলাইন রিভিউ পড়ুন, অ্যাপল স্টোরে গিয়ে বিভিন্ন মডেল হাতে নিয়ে দেখুন। বাংলাদেশের ঢাকা'তে যমুনা ফিউচার পার্ক, রূপায়ন শপিং স্কয়ার এবং সুবাস্তু সুরাইয়া ট্রেড সেন্টার-এ অ্যাপল স্টোর রয়েছে।
ম্যাকবুক কেনার আগে ম্যাকবুকের অপারেটিং সিস্টেম macOS সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এটি ম্যাকবুকের মস্তিষ্ক যেখানে আপনি কাজ করবেন, অ্যাপ চালাবেন এবং ফাইল পরিচালনা করবেন।
macOS মূলত অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম। এটির সহজ ইন্টারফেস, দ্রুত পারফরম্যান্স এবং নিরাপত্তার জন্য ইউজারদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তবে, ম্যাকবুকে Windows চালানোর উপায়ও আছে, যা কিছু কিছু ব্যবহারকারীর পছন্দ।
আপনার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে কোন অপারেটিং সিস্টেমটি আপনার জন্য ভালো, তা ঠিক করুন। macOS ব্যবহারে অভ্যস্ত না হলেও চিন্তার দরকার নেই, এটি শেখা অনেক সহজ। তবে আপনি যদি পূর্বে Windows ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমদিকে macOS আপনার জন্য একটু কঠিন হতে পারে। কিন্ত অনলাইন রিসোর্স এবং অ্যাপল সাপোর্টের মাধ্যমে আপনি সহজেই শিখে নিতে পারবেন।
ম্যাকবুক কেনার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কেনার জায়গা খুঁজে বের করা। সঠিক জায়গা বেছে নিলে আপনি ভালো দাম, পণ্যের নিশ্চয়তা এবং কাস্টমার সাপোর্ট পেতে পারেন।
সাধারণত, অ্যাপল স্টোর, অনলাইন রিটেইলার এবং অথোরাইজড রিসেলার - এই তিনটি প্রধান জায়গা থেকে ম্যাকবুক কেনা ভালো।
অ্যাপল স্টোরে আপনি সরাসরি ম্যাকবুক দেখে, পরীক্ষা করে এবং কিছু সময় নিয়ে ব্যবহার করে কিনতে পারবেন। অন্যদিকে, অনলাইন রিটেইলাররা সাধারণত অ্যাপল স্টোরের থেকে কম দামে ম্যাকবুক অফার করে। কিন্তু সেখানে অ্যাপল স্টোরের মতো ফিজিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স পাবেন না। আবার, অথোরাইজড রিসেলাররা অ্যাপলের অনুমোদিত ডিলার, তারা সাধারণত ভালো দাম এবং দারুন সব সাপোর্ট অফার করে।
তবে মনে রাখবেন, অনেক রিসেলার শপ রয়েছে যারা অ্যাপলের অনুমোদিত ডিলার হিসেবে পরিচয় দিলেও তারা সাধারণত সেকেন্ড-হ্যান্ড প্রোডাক্ট রিকন্ডিশন করে নতুন বলে বিক্রি করে। এমন রিসেলার শপ থেকে সাবধান থাকবেন। নামকরা অথোরাইজড রিসেলার শপ থেকেই ক্রয় করার চেষ্টা করবেন।
একটা তথ্য দিয়ে রাখি, বাংলাদেশে কিন্ত এখনও কোন অফিসিয়াল অ্যাপল স্টোর নেই। তবে, অ্যাপলের প্রিমিয়াম রিসেলার (APR) এবং অ্যাপল অথোরাইজড রিসেলার (AAR) এর মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশে অ্যাপল প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন। আমি নিচে কিছু APR এবং AAR এর নাম দিয়ে দিচ্ছি।
অ্যাপল প্রিমিয়াম রিসেলার (APR):
অ্যাপল অথোরাইজড রিসেলার (AAR):
এইসব দোকানের ঠিকানা খুঁজে বের করতে গুগলে “Find Locations - Apple (BD)” লিখে সার্চ করুন এবং প্রথম ওয়েবসাইটে ঢুকে ঠিকানা অনুসন্ধান করুন। ম্যাকবুক কেনার আগে কেনার জায়গা সম্পর্কে ভালভাবে গবেষণা করুন।
ম্যাকবুকের ঝলমলে স্ক্রিন আর দারুন পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আবেগের বসে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে এর ওয়ারেন্টি এবং রিটার্ন নীতি সম্পর্কে সচেতনতা হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়ারেন্টি সাধারণত আপনার ম্যাকবুককে নিশ্চিন্তে ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেবে। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যারের সকল সমস্যাগুলিকে ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দেবে। সাধারণত, ম্যাকবুকগুলো এক বছরের লিমিটেড ওয়ারেন্টির সাথে আসে।
অন্যদিকে, অ্যাপলে সাধারণত ১৪ দিনের একটি রিটার্ন নীতি থাকে। যদি আপনার মন পরিবর্তন হয় বা পণ্যে ত্রুটি থাকলে অ্যাপলে আপনার পণ্য ফেরত দেওয়ার সুযোগ দেয়। তবে মনে রাখবেন, অ্যাপলের অফিশিয়াল নীতির পাশাপাশি অ্যাপল স্টোর এবং অ্যাপল অথোরাইজড রিসেলারদের নিজস্ব রিটার্ন নীতিও থাকতে পারে। তাই কেনার আগে এগুলো অবশ্যই জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
এছাড়া, ম্যাকবুক কেনার আগে তাদের ওয়ারেন্টিতে কী কী কভার করে এবং কী কী কভার করে না তা ভালভাবে পড়ুন এবং জানার চেষ্টা করুন। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে আপনি নিশ্চিন্তে ম্যাকবুক কিনতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় সুবিধাও নিতে পারবেন।
এই টিউনে ম্যাকবুক কেনার পূর্বে আপনার যে যে বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত, সেগুলি ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে। আপনার প্রয়োজন, বাজেট, পছন্দের স্পেসিফিকেশন, অপারেটিং সিস্টেম, কেনার জায়গা, ওয়ারেন্টি এবং রিটার্ন নীতি - সকল দিক বিবেচনা করে সঠিক ম্যাকবুক নির্বাচন করতে পারবেন বলে আশাকরি।
মনে রাখবেন, ম্যাকবুক মোটেও সস্তা কোন পণ্য নয়। ম্যাকবুক কেনা আপনার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। তাই, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে, সময় নিয়ে ভালোভাবে রিসার্চ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।
আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আপনার ম্যাকবুক কেনার অভিজ্ঞতা অবশ্যই টিউমেন্টে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ!
আমি ইমন সিকদার। ১ম বর্ষ, সরকারি দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ, নবাবগঞ্জ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 মাস 3 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 23 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।