সোস্যাল মিডিয়া বলতে আমরা সাধারণত ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদিকে বুঝি। কিন্তু এর বাইরেও একটি জনপ্রিয় সোস্যাল মিডিয়া সাইট রয়েছে যা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট ধারনা নেই। আর সেটি হলো লিংকড-ইন (LinkedIn)। এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের সোস্যাল মিডিয়া সাইট যা মূলত প্রফেশনাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত। বিশ্বের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, লেখক, ব্যবসায়ী সহ যে কোনো কর্মজীবী মানুষ লিংকড-ইন (LinkedIn) ব্যবহার করে অন্যান্য প্রফেশনাল দের সাথে সংযুক্ত থাকে।
যারা ভবিষ্যতে একটি ভালো ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে চান তাদের প্রত্যেকের একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) প্রোফাইল থাকা উচিত। এতে করে অন্যান্যদের তুলনায় আপনি ক্যারিয়ারের দিক থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবেন। তবে প্রফেশনে ঢোকার আগে অর্থাৎ স্টুডেন্ট অবস্থাতেই আপনার একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) প্রোফাইল তৈরি করা উচিত। পাশাপাশি এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোয়ালিটি টাইম দেয়া উচিত।
ইউটিউব সার্চ করে কয়েকটি ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখলেই আপনি লিংকড-ইন (LinkedIn) প্রোফাইল তৈরি করা শিখে যাবেন। তাই আলাদা করে লিংকড-ইন প্রোফাইল তৈরির বিষয়ে কথা বলে লেখা বড় করতে চাই না। আমি আজকে আপনাদের সাথে লিংকড-ইন (LinkedIn) এর কার্যকারিতা সম্পর্কে কথা বলবো। একটি সফল ক্যারিয়ার গঠনে লিংকড-ইন (LinkedIn) আপনাকে কতোটুকু সাহায্য করবে তা জেনে নিন।
লিংকড-ইন (LinkedIn) হলো ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম এর মতোই একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে এখানে সাধারণত প্রফেশনাল লোকজন ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতে বা চাকরির উদ্যেশ্যে প্রোফাইল তৈরি করে। লিংকড-ইন (LinkedIn) প্রোফাইল সেটআপ করা হয় প্রফেশনাল স্টাইলে। এখানে প্রোফাইল পিকচার থেকে শুরু করে প্রোফাইলের বিস্তারিত সকল তথ্যে ব্যক্তিগত বিষয়বস্তু কম প্রাধান্য পায় আর প্রফেশনাল বিষয়বস্তু বেশি প্রাধান্য পায়।
এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ক্যারিয়ারে সফল এমন লোকজনের সাথে প্রতিনিয়ত সংযুক্ত থাকতে পারবেন। যে কোনো লিংকড-ইন (LinkedIn) ব্যবহারকারীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা Show করতে পারবেন। আর নিজের জন্য একটি চমৎকার পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারবেন।
স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে একজন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, অথবা বেকার সকলেরই একটি প্রফেশনাল লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট থাকা জরুরি। কেননা একজন স্টুডেন্ট এখন থেকে লিংকড-ইন (LinkedIn) এ নিয়মিত সময় দিলে নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কে আগে থেকেই অনেক বেশি সচেতন হতে পারবে। বেকার যুবসমাজ লিংকড-ইন (LinkedIn) এর মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরতে পারবে আর উপযুক্ত চাকরি খুঁজে নিতে পারবে। আর ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী লেকজন তাদের ক্যারিয়ার, স্কিল, অভিজ্ঞতা সবকিছু আরও বেশি ডেভেলপ করতে পারবে।
তাই অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়া সাইট গুলোর থেকে লিংকড-ইন (LinkedIn) কে একটু বেশিই গুরুত্ব দেয়া উচিত।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ লিংকড-ইন (LinkedIn)
যে ৫ টি কারণে আপনার লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট থাকা জরুরি তা জেনে নিন
বর্তমানে সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে একটা অনলাইন পোর্টফোলিও আবশ্যক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে তো পোর্টফলিও অবশ্যই প্রয়োজন। অনেকেই ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি পোর্টফোলিও তৈরির জন্য আপনাকে কিছুটা হলেও ইনভেস্ট করতে হবে। কিন্তু একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) প্রোফাইল সম্পূর্ণ প্রফেশনাল ভাবে সেট করতে পারলে সেটিই হবে একটি চমৎকার পোর্টফোলিও তা-ও আবার একেবারে বিনামূল্যে।
অবশ্য অনেক প্রতিষ্ঠান চাকরি দেয়ার আগে বিশেষ করে লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট চেক করে থাকে। কেননা লিংকড-ইন (LinkedIn) এর মাধ্যমে আপনি আপনার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারবেন। তাছাড়া আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা সব কিছুই এই একটা পোর্টফলিওর মধ্যে সাজাতে পারবেন। তাই যে কোনো প্রতিষ্ঠান আপনার একাউন্ট ভিজিট করে খুব সহজেই আপনার সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে।
তাই উচ্চপদস্থ যে কোনো চাকরির জন্য নিজের স্কিল ডেভেলপ করার পাশাপাশি একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট চমৎকার ভাবে সাজাতে থাকুন। পাশাপাশি নিয়মিত এই সোস্যাল মিডিয়া সাইটে সময় দিতে থাকুন। লিংকড-ইন (LinkedIn) পোর্টফলিও আপনার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা সাপোর্ট করবে।
অনেকেই শুধুমাত্র চাকরি খোঁজার উদ্যেশ্যে একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট তৈরি করে থাকে। কেননা দেশি বিদেশি স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সবার আগে লিংকড-ইন (LinkedIn) এ চাকরির বিজ্ঞাপ্তি দিয়ে থাকে। কারন সকলেই ক্যারিয়ার গঠনের মূল উদ্যেশ্য নিয়ে লিংকড-ইন প্রোফাইল তৈরি করে ও নিয়মিত এখানে সময় দেয়। তাই যে কোন কোম্পানি সঠিক কর্মী খুঁজে পেতে সবার আগে লিংকড-ইন (LinkedIn) এর ওপর নির্ভর করে।
আপনার প্রোফাইল আকর্ষনীয় হলে ও যথাযথ অভিজ্ঞতা থাকলে অনেকেই যেচে এসে আপনাকে চাকরির অফার করতে পারে। তাই নিয়মিত এই সাইটে কাজ খোঁজার পাশাপাশি নিজের প্রোফাইল সঠিকভাবে সেট-আপ করুন। চেষ্টা করতে থাকুন কীভাবে আরও একটু আকর্ষণীয় ভাবে প্রোফাইল সেট করা যায়।
আমি মনে করি আপনি যদি চাকরির প্রচেষ্টায় থাকেন তাহলে আপনার জন্য লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। সঠিক সময়ে, সঠিক ভাবে নিয়মিত এই সোস্যাল মিডিয়া সাইটে সময় দিলে আপনি আশানুরূপ একটি চাকরি খুঁজে পেতে পারেন।
আগেই বলা হয়েছে লিংকড-ইন (LinkedIn) হলো পেশাদার লোকজনের ব্যবহৃত একটি বিশেষ সোস্যাল মিডিয়া সাইট। এই সাইটে নিয়মিত সময় দিলে আপনি এমন সব স্বনামধন্য ও সফল পেশাদার লোকজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন যাদের সাথে সংযুক্ত হওয়ার স্বপ্ন অনেক দিন ধরেই দেখছেন। বাংলাদেশের বড় বড় স্কলার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানের সফল ব্যক্তিবর্গ নিয়মিত লিংকড-ইন (LinkedIn) এ একটিভ থাকে। তাই এই সকল সফল ব্যক্তিদের সাথে একটি সংযোগ স্থাপন করতে চাইলে আপনার অবশ্যই একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট থাকা দরকার।
ফেসবুক বা অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়া সাইটে যাদের নাগাল পাবেন না, তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে নিজের জায়গা করে নিতে পারবেন লিংকড-ইন (LinkedIn) এর মাধ্যমে। তারা প্রতিনিয়ত কীভাবে নিজেদের ডেভেলপ করছে, কীভাবে ক্যারিয়ার নিয়ে কাজ করছে সব কিছুর সঠিক আপডেট পাবেন এখান থেকে। তাদের অনুসরণ করে, তাদের পথে চলার চেষ্টা করে নিজেকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন৷
আপনি যে সেক্টরে কাজ করছেন এই একই সেক্টরে কর্মরত আছে এমন অনেক লোকজন আপনি লিংকড-ইন (LinkedIn) এ খুঁজে পাবেন। যদি আপনি এখনও কোনো প্রফেশনাল কাজকর্ম শুরু না করে থাকেন তবেও কোনো লস নেই। কেননা সবার জীবনেই একটা লক্ষ্য বা ইচ্ছা থাকে। আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে যে লক্ষ্য, সেই সেক্টরের অনেক সফল মানুষকে আপনি লিংকড-ইন (LinkedIn) এ খুঁজে পাবেন। এসকল সফল লোকজনকে ফলো করে আপনি আপনার কাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাবেন।
পেশাজীবি লোকজন প্রতিনিয়ত তাদের লিংকড-ইন (LinkedIn) প্রোফাইলে ব্লগ টিউন লিখতে থাকে। তাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কিত আপডেট দিতে থাকে। এসকল ব্লগ পড়লে আপনি নতুন নতুন স্কিল শিখতে পারবেন। ক্যারিয়ারের অনেক নতুন ধারা উন্মোচন করতে পারবেন।
তাছাড়া অনেকে তার প্রফেশনের বাইরেও বিভিন্ন কনটেন্ট প্রকাশ করে। এই সকল কনটেন্ট আপনার স্কিল ডেভেলপমেন্টে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কথায় আছে, "সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। " এই কথাটির প্রমান পাবেন লিংকড-ইন (LinkedIn) ব্যবহার করতে গিয়ে। এখানে প্রতিটি মানুষ নিয়মিত ক্যারিয়ার নিয়ে চর্চা করে, নতুন নতুন স্কিল শিখতে ও শেখাতে ব্যস্ত থাকে। তাই এই সাইটে নিয়মিত সময় দিলে আপনিও আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াস হতে বাধ্য হবেন। পাশাপাশি অজান্তেই নতুন নতুন অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্কিল শিখতে থাকবেন।
আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট থাকা অত্যন্ত জরুরি। বেশি ভালো হয় যদি আপনি আপনার ব্যবসায়ের নামে একটি প্রোফাইল তৈরি করেন। সেখানে আপনার ব্যবসায়ের যাবতীয় তথ্য, সেবা বা পণ্য সমূহ ও অন্যান্য বিষয় সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারবেন। ফলে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের একটি চমৎকার মার্কেটিং হয়ে যাবে।
তাছাড়া একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য অনেক সহযোগী বা সাপোর্টার প্রয়োজন হয়। যেমন: কাঁচামাল সরবরাহকারী, বিজ্ঞাপনদাতা, উৎপাদক, মার্কেটার ইত্যাদি। তো এই সহযোগী ব্যক্তিবর্গের সাথে একটি প্রফেশনাল সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলেও আপনি লিংকড-ইন (LinkedIn) এর সাহায্য নিতে পারেন। আবার অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথেও এখান থেকে একটি সমঝোতা বা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারবেন।
মোটকথা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসার মার্কেটিং ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনায় আপনার একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট থাকা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়।
আশাকরি লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট এর গুরুত্ব সম্পর্কে আপনাদের এখন আর কোনো কনফিউশান নেই। তাই একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে আপনাকে আপনার লিংকড-ইন (LinkedIn) পোর্টফলিও দারুণভাবে সহায়তা করবে। আমি মনে করে এই প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে এটা এখন সময়ের দাবি। তাই দেরি না করে হাতে কিছুটা সময় বের করে একটি লিংকড-ইন (LinkedIn) একাউন্ট তৈরি করে-ই ফেলুন।
টিউনটি ভালো লাগলে একটি জোসস করতে ভুলবেন না। ক্যারিয়ার ও অনলাইন আয় সম্পর্কিত নতুন নতুন টিউন পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।