প্রযুক্তির কল্যাণে এখন কমবেশি সকলেই অনলাইন থেকে আয় করার প্রচেষ্টা করছেন। অনলাইনে এখন অসংখ্য আয়ের মাধ্যম তৈরি হয়েছে। তাই ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বেশিরভাগ স্টুডেন্ট অনলাইন সেক্টরকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে থেকে কয়জন পারে অনলাইনে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে? হাতেগোনা কয়েকজন এই সেক্টরে সফল হতে পারে আর বাকিরা হয়তো অন্য কোনো অফলাইন বিজনেস বা চাকরির সাথে জড়িত হয়ে যায়।
আপনি যদি এখন থেকে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা করেন তাহলে আপনাকে কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। অনলাইনে অনেক কাজ আছে যেখান থেকে আয় ঠিকই হয় কিন্তু সময় ও পরিশ্রমের তুলনায় তা খুবই সামান্য। আর এই সকল কাজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাই এমন সব টেম্পোরারি কাজের ধরন গুলো চিনতে হবে এবং এই কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
অনলাইন সেক্টরে যারা একেবারে নতুন তারা কোনো ভাবে মোবাইলের মাধ্যমে ১০০ টাকা আয় করতে পারলেও অনেক খুশি হয়ে যায়। আয় এই লোভে পড়ে দিনের পর দিন সময় ও মোবাইল ডেটা নষ্ট করতে থাকে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার এই কাজ থেকে আয় বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে একটার পর একটা ছোটখাটো কাজ করে টুকটাক আয় করতে থাকে অনেকে। কিন্তু এই ধরনের কাজ থেকে কখনোই একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব না।
আমি আজকে এমন ৫ টি কাজের ধরন সম্পর্কে বলবো যে সকল কাজের পেছনে সময় নষ্ট করা উচিত না। বিশেষ করে যাদের অনলাইনে ক্যারিয়ার দাঁড় করানোর উচ্চ পরিকল্পনা রয়েছে তাদের জন্য তো একেবারেই উচিত হবে না। চলুন জেনে নেয়া যাক এমন ৫ টি কাজ সম্পর্কে।
অনলাইন আয় লিখে ইউটিউবে সার্চ করলে শত শত ভিডিও দেখতে পাবেন৷ তার মধ্যে বেশিরভাগ ভিডিওতে দেখানো হয় কোনো দেশি বা বিদেশি App ডাউনলোড করে আয় করার বিষয়। App ডাউনলোড করে সেখানে ছবি আপলোড করে বা একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে ঐ App ইউজ করলে একাউন্টে পয়েন্ট জমা হয়। তারপর সেই পয়েন্ট অনুসারে টাকা প্রদান করা হয়।
খুব বেশি যে পেমেন্ট করা হয় এমন কিন্তু না। দেখা যায় একদিনে ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা আয় করা যায়। কোনো কোনো App তো আবার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পেমেন্ট করে-ও না। আবার কোনো নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ করে এই সকল App পেমেন্ট দেয়া বন্ধ করে দেয়।
মূলত বিভিন্ন App এর প্রতিষ্ঠাতা তার ঐ App টিকে প্রমোট করার জন্য এই ধরনের সিস্টেম চালু করে। যখন মোটামুটি ভাবে তাদের প্রমোশন হয়ে যায় তখন পেমেন্ট বন্ধ করে দেয়। তাই এই ধরনের আর্নিং App এর কোনো নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে।
তাই লম্বা সময় ধরে এসকল App এর পেছনে সময় নষ্ট না করে কোনো ভালো স্কিল শেখার পেছনে সময়টুকু কাজে লাগান। এতে করে অনলাইনে আয় করার একটি উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য পথ খুঁজে পাবেন।
আর্নিং App এর মতো অনেক আর্নিং ওয়েবসাইট আছে। এই সকল সাইটে নির্দিষ্ট সময় ধরে ভিজিট করলে তার ওপর ভিত্তি করে পেমেন্ট করা হয়। কিন্তু এই পেমেন্ট হয় খুবই সামান্য। আবার অনেক ওয়েবসাইটে প্রতি ক্লিক এর ওপর ভিত্তি করে পয়েন্ট জমা হয়। সেই পয়েন্ট এর অনুপাতে কিছু টাকা ভিজিটর দের প্রদান করা হয়। এমন বিভিন্ন রুলস মেনে ওয়েবসাইট থেকে আয় করা যায়।
তবে এখানে সারাদিন সময় নষ্ট করে হয়তো৫০ টাকার মতো আয় করা যেতে পারে। কখনও কখনও এর থেকে কম বা সামান্য বেশি হয়ে থাকে। আর সফল ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এই সামান্য টাকার পেছনে ছুটলে হবে না। আইটি সেক্টরে বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপ করতে হবে যাতে করে মাসে হাজার থেকে লক্ষ টাকা আয় করা যায়।
আর এই আর্নিং ওয়েবসাইট গুলো-ও হঠাৎ করে পেমেন্ট বন্ধ করে দেয়। কেননা ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসার জন্য এমন পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে। যখন ওয়েবসাইট মোটামুটি রানিং হয়ে যায় তখন হঠাৎ করেই পেমেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই এমন অনিশ্চিত কাজের পেছনে সময় নষ্ট করে কোনো লাভ নেই।
বাংলাদেশে অনেক সাইট ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে যেখানে আগে টাকা ইনভেস্ট করতে হয়। এরপর ইনভেস্ট করা টাকার অনুপাতে প্রতি সপ্তাহে বা মাসে কিছু টাকা করে পেমেন্ট করা হয়। দেখা যায় নিয়মিত-ই এমন টাকা আয় হতে থাকে। কিন্তু আপনি যদি ২০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করেন আর প্রতি মাসে আপনাকে ২ হাজার টাকা পেমেন্ট করা হয় তাহলে আপনার মূল টাকা তুলতেই ১০ মাস সময় লেগে যাবে। এরপর হয়তো আরও কয়েকমাস এভাবে পেমেন্ট পাবেন যেটা আপনার লাভ হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এমন লাভ দেখে অনেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করে ঐ সাইটে। যেহেতু যতো বেশি ইনভেস্ট করবে ততোই আয় হবে। এভাবে যখন অনেক লোক মিলে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করে ফলে তখন ঐ ওয়েবসাইট চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়। অর্থাৎ সকল ইউজার দের ইনভেস্ট করা টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এভাবে অনেকের হাজার থেকে লক্ষ টাকা লস হয়।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যে এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এখনও অনেক ওয়েবসাইট চলমান রয়েছে যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত ইনভেস্ট করছে। কিন্তু আমার মতে এই সকল সাইটে ইনভেস্ট করার তেকে সেই টাকা নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর পেছনে ব্যয় করা উচিত। অথবা একটি ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করা উচিত। এতে আর যা-ই হোক টাকা এবং পরিশ্রম কোনোটাই বিফলে যাবে না।
তাই অতি লোভে পড়ে এই ধরনের ইনভেস্ট সাইট থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। আর সত্যিকারের ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটুন।
অনেক এজেন্সি আছে যারা সোস্যাল মিডিয়ায় ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটর দের কাছে ওয়াচটাইম বিক্রি করে। কেননা ফেসবুক বা ইউটিউব অথবা যে কোনো সোস্যাল মিডিয়া সাইটে নির্দিষ্ট পরিমান ওয়াচটাইম না হলে মনিটাইজেশন দেয়া হয় না। তো এই ওয়াচটাইম পূরণ করার জন্য এজেন্সি গুলো অনেক লোক কাজে লাগায়। দেখা যায় কয়েক ঘন্টা ভিডিও দেখলে আপনাকে ২০ থেকে ৫০ টাকা পেমেন্ট করার অফার করা হয়।
যারা অনলাইন আর্নিং সেক্টরে নতুন তারা তো এই অফার পেয়ে একদম খুশি। কেননা কোনো ঝামেলা ছাড়াই শুধু ভিডিও দেখে আয় হবে। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন আপনার সময় হিসেবে এই পেমেন্ট কতোটা সামান্য? তার ওপরে ডেটা খরচ তো আছেই। অনেক App আছে সেখানোও এমন ভিডিও দেখে আয় করা যায়। আমার মতে এগুলো কোনো আদর্শ কাজ নয়।
বিশেষ করে যারা অনলাইন সেক্টরেই ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য তো এগুলো কোনো কাজের মধ্যেই পড়ে না। তাই এসকল ছোটখাটো কাজে সময় নষ্ট না করে অনলাইন আয়ের মূল ক্ষেত্রগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
বিভিন্ন App কিংবা ওয়েবসাইট তাদের সাইটে বিজ্ঞাপণ যুক্ত করে এবং ইউজার দের ঐ বিজ্ঞাপণ দেখার বিনিমনে কিছু টাকা পেমেন্ট করে। যেমন কোনো সাইটে ১০০ বা ২০০ বিজ্ঞাপণ দেখলে ১০ টাকা বা তার আশেপাশে এমন একটা এমাউন্ট পেমেন্ট করে। এখন আপনি বলুন এই ধরনের কাজ থেকে আপনি কতো টাকা আয় করতে পারবেন?
এতে তো সময়ের অপচয় হবে তার পাশপাশি অনলাইনে ক্রিয়েটিভ কোনো কাজ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবেন। তাই এমন বিজ্ঞাপণ দেখে আয় করার সাইটগুলো থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত।
প্রাথমিক পর্যায়ে মনে হতে পারে যে অনলাইনে টাকা আয় করে ফেলেছি সুতরাং অনেকটা পথ এগিয়ে গেছি। কিন্তু এই ধরনের সাইটে কাজ করে কখনোই বেশিদূর আগাতে পারবেন না।
আশাকরি বুঝতে পেরেছেন যে অনলাইনে সফল ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করতে হবে। আগে এই সেক্টরের যে কোনো একটি স্কিলে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। এসকল ফলাফল বিহীন ঠুনকো আয়ের পেছনে ছুটলে কখনোই একটি ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না।
অনলাইনে আয় করার বিভিন্ন কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জানতে আমার প্রোফাইল ভিজিট করতে পারেন। এছাড়া অনলাইন আয় সম্পর্কিত নতুন নতুন টিউন পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।