ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য যে কোনো মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করে আয় করার প্রচেষ্টা প্রতিনিয়ত চলছে। আর অনেকেই নিজের ট্যালেন্ট কাজে লাগিয়ে আকর্ষণীয় ভিডিও তৈরি করে রিচ বাড়াতে পারছেন। অর্থাৎ নিজের তৈরি করা ভিডিও ভাইরাল করতে সক্ষম হচ্ছেন খুব সহজেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ভিডিও আশানুরূপ রিচ হলেও ওয়াচ টাইম আশানুরূপ হয় না অনেক সময়-ই। আসলে সমস্যাটা কোথায়?
কারণ এতো এতো কনটেন্ট এর মধ্যে দর্শক কোনটা রেখে কোনটা দেখবে তার-ই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাইতো একটা ভিডিও দু এক সেকেন্ড চালিয়ে আবার চলে যায় অন্য কোনো ভিডিওতে। এখন কথা হলো এতো এতো ভিডিওর মাধ্য থেকে আপনার ভিডিও দর্শক একটুও না টেনে পুরোটা কেন দেখবে? অবশ্যই এজন্য আপনার ভিডিওতে প্রয়োজনীয় সকল আকর্ষণ থাকতে হবে।
তো আজকের টিউনে আমি এমন সকল ট্রিকস শেয়ার করবো যার মাধ্যমে আপনি দর্শক ধরে রাখার জন্য একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। মানে যাদের কাছে আপনার ভিডিওটা পৌঁছাবে তারা স্কিপ না করে আপনার পুরো ভিডিওটা দেখবে। চলুন এমন কয়েকটি টিপস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
আপনি প্রথমেই নিজের কথা চিন্তা করুন তো। আপনি যখন ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে কোনো একটা ভিডিও দেখা শুরু করেন তখন হয়তো প্রথমেই দেখেন ভিডিওটা কয় মিনিটের। যদি দেখা যায় ভিডিওটা ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে তখন আমি বা আপনি অথবা আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নেই যে ভিডিওটা শেষ পর্যন্ত দেখব। আর যদি দেখা যায় ভিডিওর Duration ৮ থেকে ১০ মিনিট তখন খুব কম মানুষ-ই ভিডিও কন্টিনিউ করে।
অর্থাৎ এখান থেকে বোঝা গেল তুলনামূলক ছোট ভিডিও মানুষ বেশি দেখে আর বড় ভিডিওগুলো যতো ভালো কনটেন্ট সমৃদ্ধ-ই হোক না কেন তা বেশিরভাগ সময়-ই স্কিপ করে যায় সকলে। তাই আপনার ভিডিও তৈরি করার সময় মাথায় রাখা উচিত যাতে সেটি ৫ মিনিটের থেকে ছোট ভিডিও হয়। এতে ভিডিও রিচ হওয়ার পাশাপাশি এখান থেকে ওয়াচ টাইম ভালো আসবে। তবে আপনার ভিডিওর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য-ও বেশ সমৃদ্ধ হতে হবে।
ভিডিওর প্রথম ১ থেকে ৫ সেকেন্ডের মধ্যে এমন কিছু রাখতে হবে যা দেখে দর্শক পুরো ভিডিও দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে। অর্থাৎ এমন কোনো কথা বা ভিডিও চিত্র রাখতে হবে যা মানুষের কৌতুহল সৃষ্টি করবে। এক্ষেত্রে ভিডিওর মধ্যখান থেকে কোনো একটি ভিডিও ক্লিপ এনে একদম শুরুতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বসিয়ে দিতে পারেন। তবে অবশ্যই সেই ভিডিও ক্লিপটি আকর্ষনীয় হতে হবে। যাতে এর পরবর্তী ঘটনা কী হবে তা জানার জন্য দর্শকের মাঝে কৌতুহল জন্মায়।
তছাড়াও প্রথমেই বলে নিতে পারেন পুরো ভিডিওতে কী কী থাকবে। কেন ভিডিওটি শেষ পর্যন্ত সবাই দেখবে এটা ক্লিয়ার করতে পারেন। এতে করে দর্শক আপনার ভিডিওটি আর স্কিপ করবে না অর্থাৎ পুরো ভিডিওটি দেখবে৷
আপনি ভিডিও ছোট করলেন এবং ভিডিওর শুরুতেই এমন কিছু রাখলেন যা দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারল। কিন্তু ভিডিওর যে আসল কনটেন্ট তা একদমই লো কোয়ালিটি। সেটি এমন কনটেন্ট যার প্রতি এখন আর কেউ আগ্রহী না। অথবা কনটেন্ট এর ভেতরে এমন নেগেটিভ কিছু রাখলেন যা সবার সাথে বসে দেখা যায় না।
তখন কিন্তু দর্শক আপনার ভিডিওটি স্কিপ করে যাবে। কেননা আপনার ভিডিওর শুরুর কথার সাথে ভেতরের কনটেন্ট এর কোনো মিল নেই। ফলে দর্শক আপনার ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ফেসবুক পেইজের ওপর-ই বিরক্ত হবে। কখনও কখনও ঐ দর্শক আপনার কোনো ভিডিওর প্রতি-ই আর আগ্রহ প্রকাশ করবে না।
তাহলে এক্ষেত্রে আপনার করনীয় কী? আপনাকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রহনযোগ্য কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। রিসার্চ করতে হবে সময়ের সাথে সাথে মানুষ কোন ধরনের কনটেন্ট এর প্রতি বেশি আগ্রহী। আর ভিডিওর শুরুর কথার সাথে অবশ্যই ভেতরের কনটেন্ট এর মিল থাকতে হবে। সামাজিক ও গ্রহনযোগ্য কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।
আগে ভাবুন দর্শক আপনার ভিডিও কেন দেখবে? অবশ্যই নতুন কিছু জানতে বা কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে। এখন আপনি যদি আপনার ভিডিওতে মূল টপিক বাদ দিয়ে বাড়তি কথা নিয়ে আসেন তখন তো স্বাভাবিক ভাবেই দর্শক আপনার ভিডিও টেনে টেনে দেখবে। আবার কখনো কখনো দেখবেই না, অন্য কোনো ভিডিওতে চলে যাবে। এতে আপনার ওয়াচ টাইম তো স্বাভাবিক ভাবেই কমে যাবে।
আমরা অনেকেই ভিডিও তৈরি করার সময় বাড়তি কথা বলি যাতে ভিডিও-র Duration বেশি হয়। দেখা যায় ১ থেকে ২ মিনিটের একটি ভিডিওকে টেনেটুনে ৪ থেকে ৫ মিনিটে নিয়ে আাসার চেষ্টা করি। কারণ আমরা মনে করি এতে ওয়াচ টাইম বেশি হবে। কিন্তু এতে আরও হিতে বিপরীত হয়। দর্শক এই ধরনের ভিডিওর ওপর বিরক্ত হয় এবং টেনে টেনে দেখে কিংবা দেখেই না।
তাই ভিডিও তৈরি করার সময় মাথায় রাখবেন আপনার ভিডিওটা যেন কোয়ালিটি সম্পন্ন হয়। যাতে কোনো ধরনের বাড়তি বা অপ্রয়োজনীয় কিছু ভিডিওতে না থাকে।
সব মানুষ-ই কিন্তু হাসতে ভালোবাসে। খুব সিরিয়াস কোনো কাজের মধ্যেও একটু বিনোদন পেলে সবার-ই ভালো লাগে। তাই আপনি যদি কোনো টিউটোরিয়াল ভিডিও বানান কিংবা শিক্ষামূলক ভিডিও বানান এর মধ্যে ছোটখাটো টুকটাক বিনোদন রাখুন। কোননা সিরিয়াস কিছু শিখতে গেলে তার মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই একঘেয়েমি চলে আসে। শেষ পর্যন্ত তখন ভিডিওটা কন্টিনিউ করা কষ্টকর হয়। তবে এর মধ্যে ছোটখাটো বিনোদন থাকলে বিরক্তি ভাব কিছুটা কেটে যায়।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে টিউটোরিয়াল ভিডিও কিংবা সিরিয়াস বিষয়ের ভিডিও গুলোর মধ্যে বিনোদন কীভাবে রাখবেন? ধরুন আপনি কিছু একটা শেখাচ্ছেন তার মধ্যে একটা ৪ থেকে ৫ সেকেন্ডে ছোট হাসির গল্প বলে ফেলুন৷ কিংবা কথার স্টাইলে কিছুটা হাস্যকর আঙ্গিক নিয়ে আসুন। এতে করে কিন্তু আপনার একটা ব্রান্ড হয়ে যাচ্ছে। কারণ সবাই জানবে আপনার ভিডিওর মাধ্যমে মজায় মজায় নতুন কিছু শেখা যায়।
আপনার ভিডিওটি এমন ভাবে ডিজাইন করুন যেখান থেকে দর্শক এমন কোনো তথ্য বা টিপস পেল যা তারা ফ্রি তে আর কোথাও পায়নি। কোনো একটি তথ্য বা টিপস আপনি যে ফ্রি তে দিবেন এটা ভিডিওর শুরুতেই ঘোষণা করে দিন। তবে আপনি সেই টিপস বা তথ্যটি রাখবেন ভিডিওর একদম শেষ পর্যায়ে। এতে করে দর্শক আগ্রহের সাথে আপনার পুরো ভিডিওটি কন্টিনিউ করবে।
আর্থাৎ ভিডিওতে এমন কিছু চমকপ্রদ তথ্য রাখতে হবে যা দর্শকের সত্যিই প্রয়োজন। সেই চমকটি আপনি জমা রাখবেন শেষের দিকে দেয়ার জন্য।
এভাবে ছোটখাটো বেশ কিছু ট্রিকস ফলো করে আপনি সহজেই আপনার ভিডিওতে দর্শক ধরে রাখতে পারবেন। ভিডিও ভাইরাল হয়ে লাভ কী যদি সেখান থেকে ওয়াচ টাইম-ই না আসে?
আশাকরি আমার শেয়ার করা টিপস গুলো ফলো করলে আপনার ভিডিওর ওয়াচ টাইম আগের থেকে তুলনামূলক বেশি হবে। তবে সেক্ষেত্রে সব দিক বিবেচনায় রাখতে হবে। শুধুমাত্র একটা কিংবা দুইটা ট্রিকস ফলো করলেই আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে পারবেন না।
টিউনটি ভালো লাগলে প্লিজ একটি জোসস করে দিন। কোনো বিষয়ে কিছু জানার থাকলে টিউনমেন্ট করতে পারেন। আর চাইলে টিউনটি শেয়ার করে দিতে পারেন আপনার পরিচিত যে কোনো ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।