বর্তমানে মোটামুটি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে অনার্স বা মাস্টার্স পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতেই কমবেশি স্মার্ট ফোন দেখতে পাওয়া যায়। কলেজ আর ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের নিঃসন্দেহে একটি ব্যক্তিগত স্মার্ট ফোন রয়েছে। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীর নিজের আলাদা মোবাইল না থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের মোবাইল ব্যবহার করতে দেখা যায় বেশিরভাগ সময়। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই স্মার্ট ফোনে ভিডিও দেখে বা গেইম খেলে তাদের ছাত্রজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে।
কিন্তু আপনি আজকে পড়াশোনায় স্মার্ট ফোনের এমন কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবেন যার মাধ্যমে পড়াশোনা হবে অনেক সহজ। ফলে স্মার্ট ফোন হাতে পেলে ভিডিও দেখা কিংবা গেইম খেলার বদলে সেই সময়টুকুও পড়াশোনার পেছনে ব্যয় করতে বাধ্য হবেন৷ আপনি যদি একজন স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আজকের টিউনটি আপনার জন্য। চলুন জেনে নেই স্মার্ট ভাবে পড়াশোনা করতে স্মার্ট ফোনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যবহার সম্পর্কে।
আমাদের হাতে থাকা সবার স্মার্ট ফোনেই গুগল সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে। যখন আপনি স্মার্ট ফোনটি হাতে নেয়ার সময় পান তখনই গুগলে ঢুকে পড়ুন। এবার মনে করে বের করুন আপনার পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয়টি নিয়ে confusion আছে। ঐ বিষয়ে সার্চ করলে ইন্টারনেটে অনেক ব্লগ টিউন ও ভিডিও পাবেন। তারপর সেখান থেকে ব্লগ পড়ে কিংবা ভিডিও দেখে পুরো বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নিতে পারবেন একদম ফ্রি তে। এভাবে হাতে থাকা সময়টুকু কাজে লাগিয়ে আপনার পড়াশোনা অনেকটা এগিয়ে যাবে।
আমাদের অনেকেরই এই সার্চ করে পড়ার অভ্যাস নেই। ফলে হাতের মুঠোয় গোটা বিশ্বের সব তথ্য নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ালেও সেই তথ্য আমাদের মগজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। তাই পড়াশোনায় smartness নিয়ে আসতে চাইলে গুগল সার্চ করে পড়ার অভ্যাস করুন। বিশ্বাস করুন এই একটি অভ্যাস আপনার জ্ঞানের পরিধি কয়েক গুন বাড়িয়ে দেবে।
ইংরেজি নিয়ে ভীতি কম বেশি সবারই আছে। অনেকে তো শিক্ষকের সাহায্য ছাড়া ইংরেজি বই ধরারই সাহস পায় না। কেননা পড়তে গিয়ে পদে পদে আটকে যেতে হয়। কোনো শব্দের উচ্চারণ পাড়লে অর্থ বোঝা যায় না আবার কোনো কোনো শব্দের অর্থ, উচ্চারন কিছুই বোঝা সম্ভয় হয়ে ওঠে না।
এই অবস্থায় আপনি গুগল ট্রান্সলেটর এর সাহায্য নিতে পারেন। অথবা যে কোনো একটি ডিকশনারি মোবাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন৷ বইয়ের যে শব্দটি বুঝতে পারছেন না কিংবা যে লাইনটি বুঝতে পারছেন না সেই অংশটুকু টাইপ করে সার্চ করে নিন। পুরো লাইন বা শব্দটির বেশ কয়েকটি অর্থ আপনি খুঁজে পাবেন। সেই সাথে উচ্চারণ না পারলেও শুনে নিতে পারবেন। এভাবে প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের অর্থ জেনে নেয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই যে কোনো ইংরেজি বই সহজভাবে পড়তে পারবেন। এতে কারো সাহায্যও লাগবে না। ব্যাপারটা খুবই মজার, তাই না?
অনলাইনে বর্তমানে পাঠ্যবই থেকে শুরু করে যে কোনো ধরনের নোট, সাজেশন ও অন্যান্য বই বিনামূল্যে পাওয়া যায়। অনলাইনে বই সংগ্রহ করে পড়লে অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে আবার পাশাপাশি যে কোনো জায়গায় বসে আপনি মোবাইলে বই পড়তে পারবেন। ফলে আপনার সময়ের আপচয়ও কম হবে।
তবে প্রশ্ন হতে পারে বইগুলো আপনি কীভাবে সংগ্রহ করবেন, কোথায় পাবেন? গুগল play store এ সার্চ করলে অসংখ্য application software পেয়ে যাবেন। সেখানে পাঠ্যবই, বিভিন্ন লেখকের আলাদা আলাদা বই সহ বিভিন্ন নোট বই সুন্দরভাবে সজ্জিত অবস্থায় আছে। এছাড়াও অনলাইনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন বই ও নোট এর পিডিএফ তৈরি করে বিনামূল্যে প্রকাশ করে থাকে।
তাই আপনার যে বইটি প্রয়োজন তা খুঁজে নিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে পড়তে পারবেন৷ এভাবে পড়াশোনা করলে সময় ও অর্থ দুটিরই সাশ্রয় হবে। আর পড়াশোনা হবে স্মার্ট পদ্ধতিতে।
বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়াশোনা বিষয়ক অনেক পাবলিক গ্রুপ রয়েছে৷ আলাদা আলাদা বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা গ্রুপ খোলা রয়েছে। আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়ের গ্রুপে সংযুক্ত থেকে সেই বিষয় সম্পর্কে নিত্য নতুন তথ্য জানতে পারবেন৷ কেননা পড়াশোনা বিষয়ক গ্রুপ গুলোতে নিয়মিত বিষয় ভিত্তিক তথ্যমূলক কনটেন্ট আপডেট করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, আপনি যদি ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে ইন্টারমিডিয়েট এর বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক গ্রুপে যুক্ত থাকতে পারেন৷ এরকম ভাবে প্রতিটি বিভাগ ও শ্রেণিভিত্তিক গ্রুপের সন্ধান আপনি আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন৷ পড়াশোনা বিষয়ক যে কোনো সমস্যায় পড়লে কিংবা কিছু জানার থাকলে ঐ সকল গ্রুপে টিউন করে সঠিক তথ্য জেনে নিতে পারবেন৷ তাহলে বুঝতেই পারছেন স্মার্ট ফোনের সঠিক ব্যবহার পড়াশোনাকে কতোটা সহজ করে দিচ্ছে৷
চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অনেক স্টুডেন্ট। বিশেষ করে অনার্স পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে এই প্রবনতা বেশি। তাই তারা চাইলেই টিউশন টিচারের কাছে পড়ার জন্য সময় এবং সুযোগ পায় না। আপনিও যদি তাদের দলে হয়ে থাকেন তাহলে টিউশনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন হাতে থাকা মোবাইলটি। তাছাড়া অনেকেই চায় অল্প বেতনে বাড়িতে বসে টিউশন সার্ভিস নিতে। তাদের জন্য অনলাইন টিউশন সবথেকে ভালো উপায়।
অনেক টিউটর বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাচ সিস্টেম করে হাজার হাজার স্টুডেন্টকে নামমাত্র সম্মানীর বিনিময়ে টিউশন সার্ভিস দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবেও অনলাইনে টিউশন করায়। জুম কিংবা গুগল মিট application এর মাধ্যমে এই অনলাইন ক্লাসগুলো নেয়া হয়ে থাকে। তাই সহজ ও সাশ্রয়ী মাধ্যমে টিউশন সার্ভিস নিতে চাইলে অনলাইন টিউশন হবে সবথেকে ভালো পছন্দ। আর এজন্যে হাতে থাকা স্মার্ট ফোনটিই যথেষ্ট।
একটি স্মার্ট ফোন আপনার পড়াশোনায় কতোটা সহযোগিতা করছে তা তো ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন৷ তাই আজ থেকে স্মার্ট ফোনে ভিডিও দেখে কিংবা গেইম খেলে সময় নষ্ট না করে ডিভাইসটি নিজের পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করুন।
চাইলে টিউনটি শেয়ার করে দিতে পারেন নিজের কাছের মানুষদের। যাতে তারা একটু হলেও আপনার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। সময় নিয়ে পুরো টিউনটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।