কোনো প্রকার বিনিয়োগ না করে যদি অনলাইনে ব্যবসা করা যায় তাহলে কেমন হয়? হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। এক টাকাও বিনিয়োগ না করে আপনি হতে পারবেন একজন সফল অনলাইন ব্যবসায়ী। রিসেলিং এর মাধ্যমে আপনি কোনো ধরনের মূলধন এবং দায়িত্ব ছাড়াই একজন সফল ব্যবসায়ী হতে পারবে।
কিন্তু কীভাবে? আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন পুরো টিউনটি পড়ার মাধ্যমে। তাহলে চলুন দেরি না করে রিসেলিং সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়া যাক।
রিসেলিং হলো কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য আপনি আপনার নিজের পণ্য হিসেবে বিক্রি করবেন। এর ফলে ঐ রিসেলিং কোম্পানি আপনাকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন প্রদান করবে। মোটকথা যে কোনো একটি রিসেলিং কোম্পানির পণ্যের ছবি সংগ্রহ করে সেই ছবি ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে হবে। কাস্টমার জোগাড় করে অর্ডার সংগ্রহ করে তা রিসেলিং প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রেরণ করতে হবে। তারপর ঐ প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে অর্ডারকৃত পণ্যটি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবে। আর আপনার প্রাপ্য কমিশন আপনাকে সরবরাহ করবে।
এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ করুন, আপনার কাজ হলো শুধু অনলাইনে পণ্যের অর্ডার সংগ্রহ করা৷ আপনি কোনো ধরনের পণ্য মজুদ করলেন না আবার পণ্য ডেলিভারির জন্য কোনো প্রকার দায়িত্ব নিতে হলো না। কিন্তু ক্রেতার কাছে পণ্যটি আপনার নামেই ডেলিভারি করা হবে। এভাবেই একজন রিসেলার মূলধন ছাড়াই নিজের ব্যবসা চলমান রাখতে পারে। ফলে তার কমিউনিটিতে সে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পায়।
রিসেলিং সম্পর্কে তো মোটামুটি ভালোভাবে বুঝলেন। এবার কথা হলো আপনি রিসেলিং এর কাজ কোথায় পাবেন? এজন্য আপনাকে বিভিন্ন রিসেলিং কোম্পানির খোঁজ করতে হবে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য রিসেলিং কোম্পানি রয়েছে। একেক কোম্পানি একেক ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করে। আবার কোনো কোনো কোম্পানি একাধিক পণ্য নিয়েও কাজ করে।
আপনি গুগল সার্চ করলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য রিসেলিং কোম্পানির সন্ধান পেয়ে যাবেন। আমি এই পর্যন্ত যে সকল রিসেলিং কোম্পানির সাথে কাজ করেছি তা হলো: Nusaybah Online Shop, ShopUp, Checkbox। এছাড়াও বিভিন্ন রিসেলিং কোম্পানি মাঝে মাঝেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিসেলার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। তাই আপনি আপনার পছন্দমতো যে কোনো একটি কোম্পানিতে যুক্ত হয়ে মূলধন ছাড়া অনলাইন ব্যবসা করতে পারবেন।
রিসেলিং করার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি রিসেলিং কোম্পানির সাথে যুক্ত হতে হবে। কোম্পানি যদি আপনাকে একজন রিসেলার হিসেবে নিয়োগ দেয় তবেই আপনি ঐ কোম্পানির পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে পণ্যের ছবি সংগ্রহ করতে হবে। আপনি যে কোম্পানির সাথে কাজ করবেন তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট কিংবা কোনো প্রাইভেট গ্রুপে সব ধরনের পণ্যের ছবি ও পণ্যের মূল্য তালিকা দেয়া থাকবে। এক্ষেত্রে কোম্পানি আপনাকে জানিয়ে দেবে পণ্যের ছবি কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন। তো সেখান থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে পণ্য নিয়ে আপনি কাজ করতে চান সেই পণ্যের ছবি ডাউনলোড করে আপনার গ্যালারিতে সংরক্ষণ করতে হবে।
আপনার সংগ্রহ করা ছবি ব্যবহার করে নিজের বিজনেস পেইজ এবং বিভিন্ন ক্রয় বিক্রয় গ্রুপে Sell Post করতে হবে। এক্ষেত্রে বিক্রয় বিজ্ঞাপণ বা Sell Post করার কৌশল সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে আপনি খুব সহজেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারবেন।
কেউ যদি আপনার পণ্যটি কিনতে আগ্রহী হয় তাহলে কোম্পানির নিয়ম মোতাবেক অর্ডার সংগ্রহ করতে হবে। ক্রেতার নাম, ঠিকানা সহ যাবতীয় তথ্য, ডেলিভারি চার্জ (যদি কোম্পানির নিয়মানুসারে অগ্রিম নেয়ার প্রয়োজন হয়) সংগ্রহ করে এবং যে পণ্যের অর্ডার এসেছে তার বিস্তারিত লিখে রিসেলিং কোম্পানিকে অবগত করতে হবে। আপনার কাজ কিন্তু এখানেই শেষ। এরপর রিসেলিং কোম্পানি আপনার নামে সরাসরি ক্রেতার কাছে পণ্যটি পোঁছে দেবে। আর আপনার কমিশনের টাকা আপনাকে দিয়ে দেবে।
রিসেলিং থেকে আয়ের পদ্ধতি নির্ভর করে রিসেলিং কোম্পানির নিয়মানুসারে। কোনো কোনো কোম্পানি বিক্রয়ের ওপরে ৫% থেকে ২০% পর্যন্ত কমিশন প্রদান করে। অর্থাৎ আপনি ১০০০ টাকা মূল্যের একটি পণ্য বিক্রি করলে কোম্পানি আপনাকে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কমিশন প্রদান করতে পারে।
তবে বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের পণ্যের মূল দাম থেকে যতো বেশি টাকায় পণ্যটি বিক্রি করা হয় ঐ টাকা রিসেলারদের কমিশন হিসেবে প্রদান করে। অর্থাৎ মনে করুন কোম্পানি একটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিল ১০০০ টাকা। আপনি ঐ পণ্যটি ক্রেতার কাছে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করলেন। তাহলে কোম্পানি কমিশন বাবদ ৩০০ টাকা আপনাকে প্রদান করবে। অর্থাৎ আপনি মূল দামের থেকে যতো বেশি টাকায় পণ্যটি বিক্রয় করতে পারবেন সেটাই হবে আপনার ইনকাম।
তাহলে বুঝতেই পারছেন রিসেলিং করে আপনি আনলিমিটেড টাকা আয় করতে পারেন। কেননা এটা কোনো চাকরি নয়। এটা আপনার নিজের ব্যবসা। তাই যতো বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবেন ঠিক ততোটাই আয় করতে পারবেন।
বাংলাদেশে কিন্তু ছোট বড় অনেক রিসেলিং কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু সব কোম্পানির সাথে চাইলেই আপনি কাজ করতে পারবেন না অথবা কাজ করা উচিত হবে না। আপনার কিছু বিষয় বিবেচনা করে রিসেলিং কোম্পানি বাছাই করা উচিত। নিচে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হলো।
অনেক রিসেলিং প্রতিষ্ঠান আছে যারা একদম নিন্ম মানের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করে থাকে। বিশেষ করে ছোট ছোট কোম্পানিগুলোতে কাজ করার সময় এমন সমস্যায় পড়বেন। যেহেতু ক্রেতা আপনার থেকে পণ্য কিনছে তাই কোনো ধরনের সমস্যা হলে তারা আপনাকেই দোষারোপ করবে। তারা কিন্তু ঐ রিসেলিং কোম্পানিকে চিনবে না।
তাই নিজের ব্যবসায়ের সুনাম ধরে রাখতে ভালো মানের পণ্য সরবরাহ করে এমন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করুন। নয়তো দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে আগে রিসেলিং কোম্পানির রিভিউ ভালোভাবে যাচাই করে নিন।
যেহেতু আপনি কোম্পানির থেকে পণ্য নিয়ে তাদের থেকে কিছুটা বেশি মূল্যে বিক্রয় করবেন, তাই পণ্যের মূল্য যেন স্বাভাবিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। একই পণ্য কোনো কোম্পানি মোটামুটি পাইকারি দামে ছেড়ে দেয় আবার কোনো কোম্পানি উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে। পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে না হলে আপনি বিক্রি করতে পারবেন না। আর কোনো ভাবে দু একটা বিক্রি করলেও আপনার লাভ হবে খুবই সীমিত।
তাই যে সকল কোম্পানির পণ্যের মান অনুযায়ী দাম তুলনামূলক কম সেই কোম্পানিতে রিসেলার হিসেবে যোগ দিন।
অনলাইনে কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে ক্রেতা চায় তার পণ্যটি খুব দ্রুত ডেলিভারি হোক। ডেলিভারি তাড়াতাড়ি হলে এবং ডেলিভারি চার্জ কম হলে ক্রেতা সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। ফলে ঐ ক্রেতা বার বার আপনার কাছে আসবে। তাই যে সকল কোম্পানির ডেলিভারি সিস্টেম দ্রুত এবং ডেলিভারিতে চার্জ কম এমন কোম্পানি বাছাই করে নিন।
এক্ষেত্রে রিসেলার হিসেবে যোগ দেয়ার আগে তাদের ডেলিভারি পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে নিন। যদি মনে হয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে তবেই কোম্পানির সাথে কাজ শুরু করুন।
মনে রাখবেন বাংলাদেশে ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন অনেক রিসেলিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে যাচাই বাছাই করুন। যাতে বার বার আপনাকে কোম্পানি পরিবর্তন করতে না হয়।
পরিশেষে এটাই বলবো, রিসেলিং করা আর নিজে ব্যবসা করা একই বিষয়। বরং রিসেলিং এর মাধ্যম আপনার দায়িত্ব আরও কমলো। সেই সাথে কোনো মূলধন ছাড়াই ব্যবসা করতে পারলেন। তাই দেরি না করে আজই সন্ধান করুন ভালো রিসেলিং কোম্পানির। আর শুরু করে দিন নিজের অনলাইন ব্যবসা।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।