ফেসবুক বুস্টিং কথাটির সাথে অনলাইন উদ্যোক্তারা খুব বেশি পরিচিত। তবে অনেকেই এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারনা রাখে না। কেউবা ফেসবুক বুস্টিং সম্পর্কে জানলেও বুস্ট করার নিয়ম ও বুস্ট পরবর্তী কার্যকলাপ সম্পর্কে ভালো ধারনা নেই। যার ফলে নিয়মিত ডলার খরচ করে বুস্ট করলেও আশানুরূপ সেল হয় না।
বর্তমানে ফেসবুক হাজার হাজার অনলাইন ব্যবসায়ীদের একমাত্র ভরসার প্লাটফর্ম। এই ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করছে সফল ফেসবুক ব্যবসায়ীরা। তাদের বেশিরভাগই ফেসবুক বুস্টিং এর মাধ্যমে ব্যবসায়ের মার্কেটিং করে থাকে। তবে বুস্ট করলেই যে বিক্রির বন্যা বয়ে যাবে তাও কিন্তু না।
আজকের টিউনের মাধ্যমে জানতে পারবেন ফেসবুক বুস্টিং কি এবং বুস্টিং করার পরেও কেন বিক্রয় বৃদ্ধি পায় না। সেই সাথে জানাবো ফেসবুক বুস্টিং এর পরবর্তী কাজগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
ফেসবুক বুস্ট হলো ফেসবুকে এক ধরনের পেইড মার্কেটিং। নির্দিষ্ট পরিমান ডলার খরচ করে ফেসবুক টিউন বা পেইজকে সম্ভাব্য ক্রেতা বা নির্দিষ্ট কোনো জনগোষ্ঠীর কাছে নিশ্চিতভাবে পৌঁছে দেয়ার পদ্ধতিকে ফেসবুক বুস্ট বলে। ফেসবুক বুস্ট এর মাধ্যমে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন ঠিক কতজন লোকের কাছে আপনার টিউন পৌঁছাবে। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট জেন্ডার ভিত্তিক, বয়স ভিত্তিক বা এলাকা ভিত্তিক দর্শক নির্দিষ্ট করে বুস্ট করতে পারবেন। এতে আপনার পণ্যটি সঠিক সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে গিয়ে পৌঁছাবে। এতে আপনার ব্যবসায়ের প্রচার খুব সহজেই হয়ে যাচ্ছে। এর বিনিময়ে ফেসবুককে নির্দিষ্ট পরিমান ফি প্রদান করতে হবে। তার মানে বুঝতেই পারছেন বুস্ট হলো ফেসবুকে আপনার ব্যবসা বা পণ্যের পেইড বিজ্ঞাপণ।
অনেকেই নিয়মিত ডলার খরচ করে টিউন বুস্ট করছে কিন্তু তেমন সেল হচ্ছে না। এর পেছনে বেশ কিছু গুরুতর কারণ রয়েছে। জেনে নিন সটিক কারণগুলো।
ফেসবুক বুস্টিং এর জন্য একজন দক্ষ মেটা পলিসি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন লোক প্রয়োজন। বুস্টিং এর সময় সম্ভাব্য দর্শক নির্বাচন করতে পারা এবং মেটা পলিসি মেইনটেইন করতে পারা অত্যন্ত জরুরি। সব টেকনিক্যাল সাইট ঠিক রেখে বুস্ট করতে না পারলে সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে আপনার পোস্টটি না পৌঁছে হযবরল ভাবে এর প্রচার হবে। ফলে আশানুরূপ ভাবে বিক্রি হবে না এটাই স্বাভাবিক।
আপনি ভালোভাবে সব পলিসি মেইনটেইন করে বুস্ট করলেন। আপনার টিউন সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে পৌঁছালো, কিন্তু আপনার টিউনের কনটেন্ট কাউকে তেমন ভাবে আকৃষ্ট করলো না। ফলে কেউ আপনার পণ্যটির প্রতি মনযোগী হলো না। এতে করে সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে টিউন পৌঁছালেও বিক্রি হবে না।
তাই বুস্টিং এর উদ্দেশ্যে যে পোস্টটি তৈরি করবেন এটা যেন আকর্ষনীয় কনটেন্ট সমৃদ্ধ হয় এদিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। সরাসরি সেল টিউন না করে স্টোরি টেলিং বা গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় তথ্য সমৃদ্ধ টিউন তৈরি করুন। আবার এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে যাতে কনটেন্ট টি আপনার পণ্য সম্পর্কিত হয় ও পণ্য সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ থাকে।
অনলাইনে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার মূল হাতিয়ার পণ্যের ছবি। আপনার পণ্যের ছবিতে যদি ক্রেতার চোখ আঁটকে না যায় তাহলে ক্রেতা টিউন এড়িয়ে যাবে। তাই আপনার বুস্ট করা টিউনে আকর্ষণীয় ছবি সংযুক্ত করুন। তবে ছবি হতে হবে ন্যাচারাল ও বিশ্বাসযোগ্য।
টিউন ভালোভাবে সাজিয়ে, আকর্ষনীয় কনটেন্ট ও ছবি সংযুক্ত করে সঠিক পলিসি অনুসরণ করে টিউন বুস্ট করলেন। অসংখ্য ক্রেতা এনগেজড হলো আপনার পেইজে। লাইক, টিউমেন্ট ও পেইজের ইনবক্সে মেসেজের বন্যা বয়ে গেল। কিন্তু একটা অর্ডারও হলো না!
এমনটা প্রায়ই হয়। যারা অনলাইনে নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন এবং নতুন বুস্ট করছেন তারা এই সমস্যার মধ্যে আছেন। এর একমাত্র কারণ কাস্টমারকে গুরুত্ব না দেয়া। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কোনো ক্রেতা অনলাইনে পণ্য সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিক্রেতার কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আকাঙ্খা রাখে। এরপর ঐ পণ্যটি সম্পর্কে ক্রেতা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে অনেকটা। তাই ক্রেতা বুস্ট করা টিউন দেখে আগ্রহ প্রকাশ করার সাথে সাথে তার প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য উত্তর দিয়ে ক্রেতা ধরে রাখতে না পারলে হাজার হাজার মেসেজ থেকে একটা অর্ডারও কনফার্ম করা সম্ভব না।
তাই বলা যায় বুস্ট করার পরের দায়িত্বটা কিন্তু নেহায়েত কম না। বরং বুস্ট পরবর্তী কাজগুলোই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য একটি পেইজে একজন না বরং বেশ কয়েকজন মডারেটর রাখা প্রয়োজন। আর তারা যাতে কাস্টমারকে কথার মাধ্যমে আকৃষ্ট করে ধরে রাখতে পারে এই গুন তাদের ভেতরে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কাস্টমার যখন দেখবে এই পেইজের সবকিছু বিশ্বাসযোগ্য ও সকল কর্মী অত্যন্ত আন্তরিক তখন পেইজ থেকে কোনাকাটা করার জন্য মনস্থির করতে পারবে। মনে রাখবেন ব্যবসায়ের মূল শক্তি হলো ক্রেতা। ক্রেতাকে যতো গুরুত্ব দিতে পারবেন বিক্রি ততো বৃদ্ধি পাবে।
আশাকরি এর পর থেকে ফেসবুক বুস্টিং করার আগে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন। সকল দিক বিবেচনা করে আরেকবার বুস্টিং করে দেখুন। এবার নিশ্চই আশাহত হবেন না। আপনার ফেসবুক বিজনেস এর জন্য শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।