গ্রাফিক ডিজাইন একটি বহুল চাহিদা সম্বলিত পেশা। এই পেশায় মেধা ও দক্ষতা উভয়ই কাজে লাগাবার পথ রয়েছে।
আজকের টিউনে আমরা জেনে নেব কিভাবে গ্রাফিক ডিজাইন করে আউটসোর্সিং ছাড়াই নিজের ই-কমার্স সাইট থেকে ইনকাম করব। তবে তার আগে জেনে নিই আউটসোর্সিং কি।
তো চলুন, শুরু করা যাক!
একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন কোনো নির্দিষ্ট কাজ ইন-হাউজ নিজে না করে বাইরের কাউকে দিয়ে কাজটি আদায় করে নেয় তখন সেটাকেই আউটসোর্সিং বলে অভিহিত করা হয়। আর যারা আউটসোর্সিং করে তারাই মূলত ফ্রিল্যান্সার। ১৯৮৯ সালে আউটসোর্সিং প্রথম কেবলমাত্র বিজনেস স্ট্র্যাটেজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ১৯৯০ সালে এটি আনুষ্ঠানিকতা লাভ করে অর্থাৎ ব্যবসায় অর্থনীতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায়।
যদিও আউটসোর্সিংকে মূল ব্যবসার অংশ করায় একদল বলে এটির মাধ্যমে কোম্পানির নিজস্ব খাতের লোক, বিশেষ করে যারা ম্যানুফ্যাকচারার তাদের পেশায় দিন দিন চাকরি কমে যাচ্ছে।
তবে আজকের প্রসঙ্গ আউটসোর্সিং এর ত্রুটি সম্বলিত নয়। বরং যারা আপনার মেধাগুণ দেখে আউটসোর্স থেকে আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিয়োগ করবে তাদের নিয়েই আজকের প্রসঙ্গ। এখানে মূলত যারা আউটসোর্স করে তাদের মধ্যে কে বা কারা আপনার টার্গেটেড কাস্টমার তা খুঁজে বের করতে হবে আপনাকে। এরজন্য আপনার কাছে দুটি অপশন থাকবে
এই আর্টিকেলে আমি দুটিরই সমান প্রভাব উল্লেখ করার চেষ্টা করব। তবে তার আগে আপনার একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকে পেইজ খুলতে হবে। কারণ আমাদের কাজটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নয়।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস কি? অনলাইন মার্কেটপ্লেস একধরনের ই-বাণিজ্য ওয়েবসাইট। যেখানে পণ্য বা পরিষেবার তথ্য দেবার জন্য সবসময় তৃতীয় পক্ষ থেকে একাধিক লোক নিযুক্ত থাকে। এই তৃতীয় পক্ষ মার্কেটপ্লেসের অপারেটর হিসেবে কাজ করে, যারা কাজের তথ্য বিনিময় করে আউটসোর্স এর ব্যক্তি ও ফ্রিল্যান্সারদের থেকে একটি নির্দিষ্ট কমিশন আদায় করে থাকে।
বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে গ্রাফিক ডিজাইন এর মত ভার্চুয়াল রিসোর্স নিয়ে কাজ করা হয়। তন্মধ্যে রয়েছে fiverr, upwork, 99designs, freelancer, guru ইত্যাদি।
এদের মধ্যে ফাইভার নন-অ্যাপ্রুভাল অনলাইন মার্কেটপ্লেস সাইট। অর্থাৎ এখানে কাজ করতে আপনার অ্যাপ্রুভাল লাগবে না এবং দ্রুত কাজ পেতে সর্বনিম্ন ৫ ডলার থেকে সেল শুরু করায় ফাইভার ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্ট এর কাছে খুবই সহজলভ্য। তবে এতে আশান্বিত হবার কিছু নেই। কারণ ফাইভারের রেস্ট্রিকশনও প্রচুর। আর তা মেইনটেইন করা খুব কঠিন। অপরদিকে অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের মধ্যে upwork ও 99designs এ কাজ পেতে আপনাকে আগে প্রোফাইল অ্যাপ্রুভ করাতে হবে।
তাছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্তপেশা হলেও প্রত্যেক মার্কেটপ্লেসেই রয়েছে অধিক সীমাবদ্ধতা এবং অধিক কমিশন দেবার মত যন্ত্রণা। তাই সরাসরি ক্লায়েন্ট এর থেকে আউটসোর্সিং দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাবার সহজ প্রক্রিয়া আজ আমি আলোচনা করব।
আগেই বলেছি অনলাইন মার্কেটপ্লেসের বাইরে পার্মানেন্ট কাজ পেতে আপনাকে কিছু স্ট্র্যাটেজি ফলো করতে হবে। তারমধ্য থেকে একটি হল নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করা। যেহেতু এই ওয়েবসাইট এ গ্রাফিক ডিজাইন পরিষেবা প্রদান করবেন, তাই এটি হতে হবে ই-কমার্স সাইটের আওতাভুক্ত।
একটি ই-কমার্স সাইট ঠিকমতো রান করতে পারলে আপনি মাসে হিউজ ইনকাম করতে পারবেন। তবে তার আগে জানা দরকার ই-কমার্স ওয়েবসাইট কি?
ই-কমার্স হচ্ছে ইলেকট্রনিক বাণিজ্য। যেখানে অনলাইনে ডিজিটালি রিসোর্স বা পণ্য বা পরিষেবা প্রদান করা হয়। যেহেতু এখানে কেনাবেচা করা হয় তাই এটি পেমেন্ট গেটওয়ের ওপর নির্ভরশীল। এখন আসুন, জেনে নিই পেমেন্ট গেটওয়ে আসলে কি?
সহজ ভাষায় অনলাইনে লেনদেন করার জন্য নির্ভরযোগ্য যে ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয় তাই পেমেন্ট গেটওয়ে। একটি পেমেন্ট গেটওয়ে থাকবার অনেক সুবিধার মধ্যে বড় সুবিধা হল আপনি ঘরে বসেই এর সাহায্যে লেনদেন করতে পারবেন। ই-কমার্স সাইট ব্যবহারে পেমেন্ট গেটওয়ের ব্যবহার অতি পুরাতন ও সহজলভ্য।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি ধারণা মোতাবেক মনে মনে ই-কমার্স সাইটের প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন? এখন কথা হচ্ছে, কিভাবে এই সাইট সাজাবো?
মূলত আপনার কাছে গ্রাফিক ডিজাইন এর যে সকল হাতে তৈরি রিসোর্স আছে তা ওয়েবসাইটে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজান। যদি আপনি লোগো ডিজাইন এর সেবা দিতে চান তাহলে ভিনটেজ লোগোর জন্য একটি ক্যাটাগরি, মাস্কাটের জন্য অন্য ক্যাটাগরি হতে হবে। আর প্রত্যেক ক্যাটাগরির নিচে ওয়েবসাইটের ইউজার ম্যানুয়াল অনুযায়ী লোগোর প্রাইস জানিয়ে দিতে হবে।
এই প্রাইসের ওপর নির্ভর করে ক্লায়েন্ট আপনাকে অর্ডার করবে, যা রিসিভ করতে একটি পেমেন্ট গেটওয়ে জরুরি। তবে তার থেকেও জরুরি আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স কারা সেটা জেনে নেয়া।
কেন?
চলুন, জেনে নিই।
টার্গেটেড অডিয়েন্স এই কারণেই জানা জরুরি কারণ আপনি যদি নিজ দেশের লোকেদের টার্গেট করে সেল করেন তবে আপনার কাজ অনুযায়ী রিভিনিউ অত জেনারেট হবে না। অপরদিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে গ্রাফিক রিলেটেড আর্টের যেমন ডিমান্ড তেমনি তাদের কারেন্সিও আমাদের দেশের তুলনায় বেশি।
এজন্য আপনার উচিত সঠিক টার্গেটেড অডিয়েন্স সিলেক্ট করা। অতঃপর ফেসবুকে একটি পেজ বানিয়ে তাদেরকে টার্গেট করে আপনার পেমেন্ট গেটওয়ে বা মেথডের সাহায্যে প্রোডাক্ট দেশভেদে সঠিকভাবে বুস্ট করলেই রেজাল্ট পেয়ে যাবেন।
এক্ষেত্রে ধরাবাধা কোনো ইনফরমেশন দেয়া কঠিন আর ই-কমার্স এর বিজনেসের ক্ষেত্রে আরও কঠিন। তারপরও অ্যাভারেজ যদি আপনি প্রতিদিন ৫০ ডলারের রিভিনিউ আর্ন করেন তবে মাসে তা দাঁড়ায় ১৫০০ ডলার।
পরিশেষে, মার্কেটপ্লেসের কাজ এমনিতেও কমে আসছে। এখন থেকেই যারা স্কিলড আর্টিস্ট বা গ্রাফিক ডিজাইনার তারা তাদের ভার্চুয়াল রিসোর্স মাইক্রো স্টক সাইটে সেল করা শুরু করেছে। এরমধ্যে অ্যাডবি স্টক প্রচুর রিভিনিউ দিয়ে থাকে। আগামী প্রজন্ম তাই মাইক্রো স্টক সাইটের দিকে ঝুঁকছে বেশি। আপনাদের যদি মাইক্রো স্টক সাইট সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে আমাকে জানান, নেক্সট টিউনটি মাইক্রো স্টকের ওপর করবার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আর আজকের এই টিউন কেমন হল সেটা জানাতে ভুলবেন না।
আমি আল মাহমুদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 8 টিউনারকে ফলো করি।