আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই, আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরের মত হাজির হলাম নতুন একটি টিউন নিয়ে।
আজকে আমরা ১৫ টি দুর্দান্ত অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো দিয়ে আপনি ফোনকে সিস্টেম লেভেলে কাস্টমাইজ করতে পারবেন।
অ্যাপ গুলো ব্যবহার করতে আপনার ফোনে Shizuku অ্যাপটি চালু থাকতে হবে। আপনার ফোনে যদি Shizuku অ্যাপ না থাকে তাহলে কীভাবে এটি সেটআপ করবেন তা নিয়ে টিউনের শেষে আলোচনা করব।
আমাদের ফোনের বিভিন্ন পারমিশন যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট, মাইক্রোফোন, মিডিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবে কিনা সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এমন কিছু হিডেন পারমিশন রয়েছে যেগুলো আপনি চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। অ্যাপ চাইলে আপনার ক্লিপ-বোর্ড এক্সেস পেতে পারে, বায়োমেট্রিক হার্ডওয়্যারে এক্সেস নিতে পারে চাইলেও সেটা আপনি অফ করার কোন অপশন ফোনে ডিফল্ট ভাবে পাবেন না। কোন সমস্যা নাই আপনার জন্য আছে App ops।
অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি যেকোনো অ্যাপের হিডেন পারমিশন গুলো দেখতে পাবেন এবং চাইলে পারমিশন ব্লক করতে পারবেন।
প্লে-স্টোর লিংক @ App ops
বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এখন মোবাইল ডাটা বা ওয়াই-ফাই অফ অন করার সিঙ্গেল টাইল পাওয়া যায় না। আবার অ্যান্ড্রয়েড 12 এর পর থেকে অনেক ফোনে মোবাইল ডাটা এবং ওয়াই-ফাই একই টাইলের মধ্যে থাকে। বারবার ক্লিক করে আলাদা করে সিলেক্ট করা বেশ বিরক্তিকর। এর সমাধান আপনি পাবেন Better internet tiles এ।
দারুণ এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি ইন্টারনেট টাইল কাস্টমাইজেশনে পাবেন দারুণ সুযোগ, ইচ্ছে মত টাইল সেট করে নিতে পারবেন।
প্লে-স্টোর লিংক @ Better Internet Tiles
রুট করা ছাড়াই যদি আপনার ফোনের অডিও সিস্টেমে ফুল এক্সেস পেতে চান তাহলে আপনার জন্য রয়েছে RootlessJamesDSP। ফোনের অডিও সিস্টেমে ভিন্ন এবং ক্রিয়েটিভ অভিজ্ঞতা পেতে এই অ্যাপটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
ফোনের সিস্টেম অডিওকে ইচ্ছেমতো কাস্টমাইজ করার সুযোগ পাবেন যেমন, ডাইনামিক রেঞ্জ, বেইস বুস্ট, ইত্যাদি। অ্যাপটির কিছু লিমিটেশন যেমন এটি ক্রোম এবং কিছু অ্যাপ সাপোর্ট করে না তবে YouTube, YouTube Music, Amazon Music, Deezer সহ অনেক অ্যাপই সাপোর্ট করে।
প্লে-স্টোর লিংক @ RootlessJamesDSP
আপনার যদি সাইড বাটম নষ্ট হয়ে যায় এবং ফোন অফ অন বা রিস্টার্ট করতে চাইলে প্রতিবারই বিপাকে পড়েন তাহলে Reboot Menu অ্যাপটি আপনার জন্য।
Reboot Menu অ্যাপটির শর্টকাট স্ক্রিনে রেখে আপনি কোন বাটম ছাড়াই ফোন অফ অন বা রিস্টার্ট করতে পারবেন। লক স্ক্রিনের কাজও করবে এই অ্যাপ। অফ, অন রিস্টার্ট ছাড়াও বাড়তি সুবিধা হিসেবে এখানে আপনি পাবেন Bootloader, Recovery অপশন।
গিটহাব লিংক @ Reboot Menu
আপনি ফোনের ব্যাটারি নিয়ে খুব বেশি সচেতন থাকলে আপনার জন্য এবারের অ্যাপটি বেশ কাজে আসতে পারে। আমরা জানি এমন অনেক অ্যাপ আছে যেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে একটিভ থেকে ফোনের ব্যাটারি ড্রেন করে। চাইলেও পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করা যায় না। কোন সমস্যা নাই, Ice Box এর মাধ্যমে আপনি ফোনের যেকোনো অ্যাপকে ফ্রিজ করে রাখতে পারবেন।
Ice Box অ্যাপটি ওপেন করে নির্দিষ্ট অ্যাপ আপনি চাইলে ফ্রিজ করে রাখতে পারেন। অ্যাপ গুলো পুরোপুরি বন্ধ থাকবে, ফোনের ব্যাটারিও ড্রেন করবে না এমনকি এই অ্যাপ গুলো থেকে কোন নোটিফিকেশনও পাবেন না। ফ্রিজ করা অ্যাপ গুলো আপনি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে লক করে রাখতে পারবেন। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি ফ্রিতে দশটি অ্যাপ ফ্রিজ করে রাখতে পারবেন।
Ice Box এর ফিচার গুলো আপনি ফ্রিতে ব্যবহার করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন Amarok। অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি ফ্রিতে যেকোনো অ্যাপ ফ্রিজ করতে পারবেন। এখানে আপনি অবশ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক পাবেন না।
আগের দুটি অ্যাপের বিকল্প অ্যাপ হতে পারে Root Activity Launcher। এই অ্যাপ দিয়ে নির্দিষ্ট অ্যাপ ফ্রিজ করার পাশাপাশি, অ্যাপ হাইলও করতে পারবেন। ফ্রিজ করার অ্যাপ কোন কোন কাজ করতে পারবে সেটাও Root Activity Launcher এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন। তবে এটি ফ্রি অ্যাপ না।
প্লে-স্টোর লিংক @ Ice Box
এই অ্যাপটি খুব কাজের এমনটি বলব না, ফান অ্যাপ হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি ফোনের নেটওয়ার্ক বা সিমের নাম ইচ্ছে মত চেঞ্জ করে ফেলতে পারবেন।
গিটহাব লিংক @ Carrier Vanity Name
এই অ্যাপটি অনেকের জন্যই কাজের হতে পারে। আপনি যদি ব্যাকগ্রাউন্ড বা স্ক্রিন বন্ধ করে কোন অ্যাপ রানিং রাখতে চান তাহলে আপনার জন্য রয়েছে Extinguish অ্যাপ। অ্যাপটির শর্টকাটে ক্লিক করার সাথে সাতে আপনার ফোনের স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যাবে। ফোন প্রকৃতপক্ষে লক হবে না, সব অ্যাপই সচল থাকবে।
এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি ইউটিউব প্রিমিয়াম এর সুবিধা নিতে পারবেন সহজে। ভিডিও রান করে স্ক্রিন অফ করে দিলেও ভিডিও চলতে থাকবে। এই অ্যাপটি সুপার এমোলেট ডিসপ্লের জন্য ডিজাইন করা। Extinguish ফোনের ব্যাটারি ইউজ অনেকটা কমাতে পারে।
প্লে-স্টোর লিংক @ Extinguish
আমরা এটা সবাই জানি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আগে কানেক্ট করা ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড দেখা প্রায় অসম্ভব ছিল। এটা দেখার জন্য ফোন রুট পর্যন্ত করতে হতো। যদিও মডার্ন অ্যান্ড্রয়েড ফোনে QR কোড সুবিধা থাকে এবং পরবর্তীতে এই কোড স্ক্যান করে তারপর পাসওয়ার্ড বের করতে হয়। তবে এটাও কিন্তু ঝামেলার।
ফোনের সকল ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড দেখতে আপনাকে সাহায্য করবে Wifilist। এই অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই আপনি কানেক্ট করা সকল নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ড দেখতে পাবেন৷
প্লে-স্টোর লিংক @ WifiList
ডার্ক মুড কে না পছন্দ করে? রাতে চোখকে প্রেশার কম দেয়ার জন্য হোক বা ব্যাটারি সেভ করা হোক অধিকাংশ ইউজার ডার্ক মুড পছন্দ করে। তবে ডার্ক মুডের একটা সমস্যা হচ্ছে বেশিরভাগ অ্যাপে এই মুড সাপোর্ট করে না। দেখা যায় ফোন ডার্ক মুডে রান হতে থাকলেও অ্যাপে আগের মুডই থাকে।
তো যেকোনো অ্যাপে ডার্ক মুড এনেবল করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন DarQ। নির্দিষ্ট অ্যাপে ডার্ক মুড সাপোর্ট না করলেও সাপোর্ট করানোর দায়িত্ব DarQ এর।
গিটহাব লিংক @ DarQ
আপনি যদি ফোনের ডার্ক মুড শিডিউল করে ব্যবহার করতে চান তাহলে ব্যবহার করতে পারেন Auto Dark। দিনে বা রাতে আপনাকে আলাদা করে মুড চেঞ্জ করতে হবে না স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিডিউল করে দিতে পারবেন চমৎকার এই Auto Dark অ্যাপ এর মাধ্যমে।
ডাউনলোড লিংক @ Auto Dark
প্লে-স্টোরের মতই চমৎকার একটি অ্যাপ স্টোর হচ্ছে F-Droid। এখানে আপনি পাবেন অসংখ্য ফ্রি, মোডিফাই, এবং ফ্রীওয়ার অ্যাপ। কিছু অ্যাপ আছে যা সাধারণত প্লে-স্টোরে পাওয়া যায় না, সেই সমস্ত অ্যাপও পাওয়া যাবে F-Droid এ।
আপনি যদি F-Droid Shizuku Privileged এক্সটেনশনটি ইউজ করেন তাহলে পুরোপুরি প্লেস্টোরের মত এটি কাজ করবে। F-Droid থেকেই আপনি অ্যাপ ইন্সটল এবং আনইন্সটল করতে পারবেন। আপনি F-Droid এর সাথে Droid-ify ব্যবহার করতে পারেন। F-Droid এর একটি ক্লাইন্ট হচ্ছে Droid-ify। যেকোনো অ্যাপ এর দ্রুত আপডেট পেতে সাহায্য করবে এই ক্লাইন্ট।
গিটহাব লিংক @ F-Droid Shizuku Privileged
Material You হয়তো অনেকেই পছন্দ করেন। যেখানে Wallpaper এর উপর ভিত্তি করে ফোনের বিভিন্ন সেকশনের কালার সিলেক্ট করে দেয়া যায়। কিন্তু কখনো কখনো কালার সিলেকশন সঠিক হয় না, ফলে দেখতে আরও খারাপ লাগে।
তো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে Repainter। কালার সিলেক্ট করায় এখানে আপনি পাবেন পূর্ণ স্বাধীনতা। নিজের ইচ্ছে মত ডিজাইন আপনি করে নিতে পারবেন Repainter দিয়ে। কাস্টমাইজেশনকে নিয়ে যেতে পারবেন নেক্সট লেভেলে।
প্লে-স্টোর লিংক @ Repainter
পিক্সেল ফোনে দারুণ একটি ফিচার আছে যেটা আমরা অনেকেই চাই, ফিচারটি হচ্ছে আশেপাশে কোন মিউজিক বাজলে ফোন নিজে নিজে ডিটেক্ট করতে পারে। Pixel ফোনে ফিচারটির নাম Now Playing।
আপনি চাইলে যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে চমৎকার এই ফিচারটি ব্যবহার করতে পারবেন। এই ফিচারটি ব্যবহার করতে আপনাকে সাহায্য করবে mbient music mod। আপটির মিউজিক ডেটাবেজ প্রতিনিয়ত আপডেট হবে এবং নতুন গানও ডিটেক্ট করতে পারবে।
গিটহাব লিংক @ Ambient Music Mod
অধিকাংশ ফোনে আপনি চাইলেও ইচ্ছেমতো কী কাস্টমাইজ করতে পারবেন না। যেমন চাইলেও পাওয়ার কী তে এবং ভলিউম আপ ডাউন কী তে যেকোনো কাজ সেট করতে পারবেন না। কোন চিন্তা নাই আছে Key Mapper।
Key Mapper অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি ফোনের বাটম গুলো ইচ্ছে মতো কাস্টমাইজ করতে পারবেন। বিভিন্ন কী এর কম্বিনেশন আপনি তৈরি করতে পারবেন যেমন ভলিউম আপ কীতে দুইবার পাওয়ার কী তে একবার প্রেস করলে ক্যামেরা অন হবে। এমনকি ব্লুটুথ কানেক্টেড ডিভাইস গুলোও কী ম্যাপ করা যাবে।
প্লে-স্টোর লিংক @ Key Mapper
আজকের এই লিস্টের সবচেয়ে শক্তিশালী কাস্টমাইজেশন অ্যাপ হচ্ছে SystemUI Tuner। এখানে আপনি পাবেন অসংখ্য হিডেন সেটিংস এবং ফিচার। সিস্টেম লেভেলে কাস্টমাইজ করার সেরা অ্যাপ হচ্ছে SystemUI Tuner। বিভিন্ন Gesture সেট করা থেকে শুরু করে ইচ্ছে মত সেটিংস Tweek করতে পারবেন। যেমন আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন Airplane মুডে কী কী বন্ধ থাকবে, শুধু ওয়াইফাই বন্ধ থাকবে নাকি ওয়াই-ফাই ব্লুটুথ উভয় বন্ধ থাকবে। আবার চাইলে স্ট্যাটাস বার থেকেও কোন আইকন রিমুভ করতে পারবেন।
প্লে-স্টোর লিংক @ SystemUI Tuner
এবার আমরা জানব কীভাবে আপনি Suzuku অ্যাপ ইন্সটল করবেন।
প্রথমে ফোনের ডেভেলপার মোড এনেবল করুন। ডেভেলপার মোড এনেবল করতে, About Phone > software information এ গিয়ে Build Number এ সাতবার ক্লিক করুন। সেটিংস এ Developer Options নামে নতুন একটি অপশন পাবেন।
এবার প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করে ওপেন করুন। Pairing এ ক্লিক করুন।
Developer Options এ গিয়ে USB Debugging এনেবল করে, Wireless Debeging এ ট্যাপ করুন। Allow এ ট্যাপ করুন। এক্ষেত্রে আপনার ফোনটি একটি ওয়াই-ফাই এ কানেক্ট থাকতে হবে।
Pairing with code এ ক্লিক করুন। নোটিফিকেশনে Pairing service found শো করলে সেখানে ক্লিক করুন
কোডটি দিয়ে Sent এ ট্যাপ করুন।
আবার অ্যাপটি ওপেন করে Start বাটনে ক্লিক করুন
ব্যাস আপনার অ্যাপ রেডি।
এখন আপনি টিউনে উল্লেখিত সব গুলো অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করতে পারবেন।
টিউনের অ্যাপ গুলো আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সিস্টেম কাস্টমাইজেশনকে নেক্সট লেভেলে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তাহলে আর দেরি কেন? এখনি ট্রাই করুন চমৎকার অ্যাপ গুলো।
আজকে এ পর্যন্তই শীঘ্রই দেখা হবে নতুন কোন টিউনের সাথে ততদিন ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।