আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই, আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরের মত হাজির হলার নতুন একটি টিউন নিয়ে।
ধরুন কোন ইলেকট্রিক ডিভাইস কিনলেন কয়েক বছর যাওয়ার নির্দিষ্ট কোন পার্টস নষ্ট হয়ে গেল। হতে পারে ল্যাপটপের ব্যাটারি। এখন ব্যাটারি রিপ্লেস করারও ব্যবস্থা নেই কিন্তু ল্যাপটপের সব কিছুই ঠিক আছে। যেহেতু আপনি ব্যাটারি পরিবর্তন করতে পারছেন না যেহেতু আপনাকে নতুন একটি ল্যাপটপ কিনতে হচ্ছে।
আরেকটি ঘটনা খেয়াল করুন, আমাদের ফোনে কোন সমস্যা দেখা দিলে যদি কোম্পানির নিজস্ব কেয়ার সেন্টার বাদে অন্য কোন জায়গায় থেকে ফোন ঠিক করাই তাহলে সেই ফোনের ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে যায়। কেয়ারে গেলেও হয়তো ছোট পার্টসের জন্য পুরো ফোনটি আর ঠিক করা যায় না, আবার পুরো বোর্ড চেঞ্জ করতে হয়। এই সব সমস্যা এড়াতে এবং ভোক্তাকে তার কেনা ডিভাইসের সর্বোচ্চ অধিকার নিশ্চিত করতে Right to Repair (রাইট টু রিপেয়ার) এর উৎপত্তি।
Right to Repair (রাইট টু রিপেয়ার) এর মূল বিষয়বস্তু হল, অন্য কোথাও ফোন ঠিক করানো হলে এখন আর কোম্পানি তাদের ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে গেছে বলতে পারবে না। প্রতিটি ডিভাইসের পার্টস এভেইলেবল রাখতে হবে কখনো নতুন ফোন কিনতে বাধ্য করতে পারবে না কোম্পানি। তাছাড়া প্রতিটি ডিভাইসে বিস্তারিত ম্যানুয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এটি কেবল ফোনই নয় বিভিন্ন ইলেট্রনিক ডিভাইস, গাড়ি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে কেনা ডিভাইসের পূর্ণ অধিকার ভোগ করতে Right to Repair (রাইট টু রিপেয়ার) মুভমেন্টের কয়েকটি অবজেক্টিভ ঘোষণা করা হয়েছে,
ইনফরমেশন এভেইলেবল রাখতে হবে: সবার ম্যানুয়াল, সফটওয়্যার আপডেট সংক্রান্ত তথ্যে এক্সেস থাকবে। সফটওয়্যার লাইসেন্সে সাপোর্ট লিমিট অপশনে কোন লিমিটেশন থাকবে না এবং প্রোডাক্ট কেনার সময় সে ব্যাপারে পরিষ্কার তথ্য থাকবে।
পার্টস এবং টুল এভেইলেবল থাকবে: নির্দিষ্ট ডিভাইস রিপিয়ার করার পার্টস এবং টুল থার্ডপার্টির জন্য এভেইলেবল রাখতে হবে যেমন ডিভাইসের নির্দিষ্ট পার্টস এবং বিভিন্ন ডায়াগনোসিস টুল।
আনলককে সমর্থন করতে হবে: সরকারকে আনলক, ডিভাইস মোডিফাই লিগ্যাল করতে হবে যেন ইউজার চাইলে ডিভাইসে কাস্টম সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারে।
রিপিয়ারযোগ্য করে প্রোডাক্ট ডিজাইন করতে হবে: প্রোডাক্ট এমন ভাবে ডিজাইন করতে হবে যেন সেটা পরবর্তীতে রিপিয়ার করা যায়৷
বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে Right to Repair (রাইট টু রিপেয়ার) চালু হয়েছে। সব দেশ একই পলিসি গ্রহণ করে নি একেক দেশে একেক আইন করা হয়েছে। যেমন যুক্তরাজ্যে ম্যানুফেকচারদের প্রোডাক্ট সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে হয়, এবং নতুন পণ্যের জন্য দশ বছর পর্যন্ত পার্টস এভেইলেবল রাখতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ম্যানুফেকচারদের পার্টস, রিপিয়ার শপ, টুল, এভেইলেবল রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভারতে এই সংক্রান্ত সেবা পেতে সরকারি ওয়েবসাইট খুলা হয়েছে। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে ভোক্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সাহায্য চাইতে পারে।
বিভিন্ন দেশে Right to Repair (রাইট টু রিপেয়ার) থাকলেও আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা নেই। অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও এই উদ্যোগটি গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের ফোন বা অন্যান্য ডিভাইস নষ্ট হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে ঠিক করালেও বেশিদিন ব্যবহার করা যায় না কারণ যন্ত্রাংশ গুলো অরিজিনাল হয় না, অন্য কোম্পানির বানানো যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে হয় ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে কাজ করে না।
কিছুদিন আগে আমার এক কাজিনের ফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা দেয় কেয়ার সেন্টারে নিয়ে গেলে বলা হয় পুরো মাদারবোর্ড চেঞ্জ করতে হবে। যার দাম প্রায় নতুন ফোন কেনার সমান। আজকে বাংলাদেশে থাকলে হয়তো এই সমস্যাটির সম্মুখীন হতে হতো না।
বলা যায় Right to Repair (রাইট টু রিপেয়ার) দারুণ একটি উদ্যোগ। কোন কোম্পানি এখন চাইলেও ভোক্তা অধিকার হরণ করতে পারবে না। ইউজাররা তাদের ডিভাইস রিপেয়ারের পূর্ণ সুবিধা পাবে Right to Repair (রাইট টু রিপেয়ার) এর মাধ্যমে।
আজকে এ পর্যন্তই শীঘ্রই দেখা হবে নতুন কোন টিউনের সাথে ততদিন ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।