ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে অনেক কিছুই জেনেছি। কিন্তু আমরা কি জানি, ডার্ক ওয়েব মনিটরিং কী? এবং এটা কীভাবে কাজ করে? এবং এটা ব্যবহারের উপকারিতা কী কী? এসব বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের টিউন।
ডার্ক ওয়েব মনিটরিং হল, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন গুলো Track করার বা অনুসন্ধান করার প্রক্রিয়া। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সহ আরও বিভিন্ন সার্ভিস ডার্ক ওয়েব মনিটরিং সুবিধাটি দিয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ডার্ক ওয়েব মনিটরিং সার্ভিসটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এর অনেক গুলো ফিচার এর মধ্যে ডার্ক ওয়েব মনিটরিং অন্যতম একটি সার্ভিস যা একজন ব্যক্তিকে আবশ্যিক ভাবে প্রাইভেসি সচেতন করে গড়ে তোলে। ডার্ক ওয়েব মনিটরিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিভিন্ন ক্রেডিট মনিটরিং ফার্মস, পরিচয় পত্র চুরির ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান এবং মনিটরিং কোম্পানিগুলো তাদের প্যাকেজ গুলোকে আকর্ষণীয় ভাবে অফার করছে। যাতে করে আপনি একজন সেবা ভোগকারী হিসেবে প্যাকেজ গুলোতে অ্যাক্সেস নিতে সজজেই উৎসুক হন।
তো, আমাদেরকে জানতে হবে যে, কেন ডার্ক ওয়েব মনিটরিং সার্ভিসটি গুরুত্বপূর্ণ। এটা জানার আগে, সংক্ষিপ্ত আকারে ডার্ক ওয়েব কী সে সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
ডার্ক ওয়েব মনিটরিং বিষয়টা বুঝতে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে জানতে হবে। আপনারা হয়তো অনেকেই জেনে থাকবেন যে ডার্ক ওয়েব আসলে কী। আবার অনেকেই হয়তো কিছুই জানেন না। তো, স্বল্প হলেও একটু আলোচনা দরকার ডার্ক ওয়েবের উপরে। অর্থাৎ, ডার্ক ওয়েব মনিটরিং সম্পর্কে জানার আগে, ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া জরুরী। তো, প্রশ্ন হচ্ছে ডার্ক ওয়েব আসলে কী?
ডার্ক ওয়েব কী তা বুঝতে চাইলে, ইন্টারনেটকে অনেক গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে। আমরা জানি যে, ইন্টারনেট হল নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ ইন্টারনেট হল পুরো বিশ্ব জুরে বিস্তৃত পরস্পরের সাথে কানেকশন যুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার এর সমষ্টি। যেখানে বিভিন্ন ধরনের ডেটার আদান প্রদান হয়। বর্তমানে এই নেটওয়ার্ক বিশ্বে যে কতটা বিস্তৃত সে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাও নেই। আমরা যে রেগুলার ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি, তা মোট ইন্টারনেটের মাত্র ৪%। ইন্টারনেটকে আমরা সাধারণত ৩ টি শ্রেণিতে শ্রেণী বিন্যাস করতে পারি। যথা- সারফেস ওয়েব, ডিপ ওয়েব ও ডার্ক ওয়েব।
সারফেস ওয়েব হল ইন্টারনেট এর একটা ক্ষুদ্র অংশ, যা অধিকাংশ মানুষ প্রতিদিন ব্যবহার করে থাকে। সারফেস ওয়েব থেকে ডেটা গুলো গুগল সার্চ ইঞ্জিন বা বিং এর সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে নিতে পারে।
ডিপ ওয়েবই মূলত ইন্টারনেট এর প্রধান অংশ। এ অংশে ব্যক্তিগত ইনফরমেশন, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ফোন নম্বর ইত্যাদি সঞ্চিত থাকে।
এসব তথ্যে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কেউ অ্যাক্সেস নিতে পারে। এই ডেটা গুলো অন্য কোন ব্যক্তি সার্চ করলে প্রদর্শিত হয় না অর্থাৎ এই ডেটা গুলো সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা অ্যাক্সেস যোগ্য নয়।
অপরদিকে, ডার্ক ওয়েব হল একটি বেনামী ওয়েবসাইট যা মূলত ডিপ ওয়েবেরই একটা ক্ষুদ্র অংশ। এটা ডিপ ওয়েবের মাঝে লুকিয়ে আছে এবং ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস এর জন্য বিশেষ সফটওয়্যার এর প্রয়োজন পরে। এখানে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অ্যাড্রেস লিংক এর মাধ্যমেই অ্যাক্সেস সম্ভব। ডার্ক ওয়েব হল সব ধরনের সাইবার অপরাধ ও সাইবার অপরাধীর কারখানা। আসলে ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের সবচাইতে নিকৃষ্টতম জগত।
ডার্ক ওয়েব মনিটরিং হল ইন্টারনেট এর ডিপ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হওয়া সংবেদনশীল ইনফরমেশন যেমন- ইমেইল অ্যাড্রেস, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডি-টেইলস ও ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া যা ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুলস এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষিত হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় অটোমেটিক ভাবে। এক্ষেত্রে তথ্য গুলো ব্যক্তিগত, ব্যাবসায়িক এবং প্রাতিষ্ঠানিকও হতে পারে।
ডার্ক ওয়েবে যদি আপনার নম্বর, ইমেইল ঠিকানা বা অন্যান্য সংবেদনশীল সনাক্তকারী ইনফরমেশন পাওয়া যায়, তাহলে প্রথমে আপনাকে সতর্ক করা হয় বা প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুযোগ দেয়া হয়। তো, এক্ষেত্রে আপনি আপনার ফাঁস-কৃত পাসওয়ার্ড গুলো পরিবর্তন করতে পারবেন এবং ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড এর বিষয় হলে ব্যাংক এ জানিয়ে এটি চেঞ্জ করতে পারেন।
ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুলগুলো বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- ইমেইল অ্যাড্রেস, ফোন নম্বর, সোশিয়্যাল সিকিউরিটি নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও পাসপোর্ট নম্বর ইত্যাদি ডার্ক ওয়েবে স্ক্যান করে এবং ফলাফল প্রদান করে।
আপনার ব্যক্তিগত এসব সংবেদনশীল তথ্য গুলো ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হলে বা চুরি হয়ে গেলে তা ডার্ক ওয়েবের ফোরামে লেনদেন হয়। এটা হতে পারে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে অথবা বিনামূল্যে। তবে এসব ফাঁস হওয়া তথ্য গুলো, ডার্ক ওয়েবের দৈনন্দিন ব্যবহারকারীর কাছে থেকে লুকানো হয়। ফোরাম হল বাজারের মতো একটা জায়গা যেখানে ডেটার লেনদেন হয়। অর্থাৎ অনলাইন বাজার। আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো ফাঁস হয়েছে কী না তা নিশ্চিত ভাবে বলা কঠিন।
কারণ, এ ঘটনার দায়বদ্ধতা পুরোটাই আপনার নিজের এবং আপনার ডেটা ধারণকারী কোম্পানি গুলোর উপরে পড়ে। আসল কথা হচ্ছে, বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের খ্যাতি ও আয় বজায় রাখার জন্য তথ্য ফাঁস করার পরেও বলে যে আমরা কিছু করি নি। অর্থাৎ, অর্থের বিনিময়ে এই কোম্পানি গুলো আপনাকে এবং বাদবাকি ইউজারদের এক সাথে ধোঁকা দেয়। তাইতো বর্তমান সময়ে, সিকিউরিটি ওয়েবসাইটে তথ্য লিকে-জের রিপোর্ট গুলো অতীব সাধারণ ঘটনা।
যাইহোক, আপনাকে ডার্ক ওয়েব নিয়ে অতটা না ভাবলেও চলবে। কারণ ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুল এবং অন্যান্য সার্ভিস গুলো আপনার তথ্য ডার্ক ওয়েব ফাঁস হয়েছে কী না সে সম্পর্কে আপনাকে জানাতে সক্ষম। এরপর আপনি চাইলে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
মনে করেন যে, আপনার ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুল থেকে একটি ইমেইল আসছে। এবং এটিতে লেখা আছে যে, আপনার পরিচয় পত্র গুলোর মধ্যে একটি ডার্ক ওয়েবে খুঁজে পাওয়া গেছে। যদি এ ধরনের ঘটনা সত্যিই ঘটে তাহলে আপনি কী করবেন? অবশ্যই ভাববেন যে, ডার্ক ওয়েবে পরিচয় পত্রটা গেল তো গেল, কিন্তু কীভাবে গেল?
ডার্ক ওয়েবে আপনার কোন ইনফরমেশন পাওয়া গেলে এটা নিশ্চিত যে, কেউ না কেউ আপনার ইনফরমেশনে অনুমতি ছাড়াই অ্যাক্সেস করেছে। নরমালি, সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন কোম্পানির ডাটাবেইজ সিস্টেমে অ্যাক্সেস করে এবং তথ্য চুরি করে। তারপর সে চাইলে সেটা কোন ওয়েবসাইট এ প্রকাশ করে অথবা কারো কাছে বিক্রি করে। আর সাইবার জগতে, এধরণের ঘটনাকে ডেটা লিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সাধারণত, হ্যাকাররা বা সাইবার অপরাধীরা দুটি উপায়ে তথ্য চুরি করে থাকে। যেমন- ম্যালওয়্যার ফিশিং এবং ATM Gas Skimmers। এই দুটি মূলত প্রতারণার এক একটি ধরন। ফিশিং আক্রমণে আপনার কাছে একটা অরিজিনাল এর মতো নকল ইমেইল বা লিংক আসবে, যেখানে ক্লিক করে লগ-ইন করলেই সাড়ে সর্বনাশ। এবং ATM Gas Skimmers একটি ATM কার্ড এর মতো একটি কার্ড রিডার যেটা কখনো কখনো ছদ্মবেশীও হতে পারে। তবে এটি ডিভাইস এ সংযুক্ত করার সাথে সাথে অটোমেটিক ইনফরমেশন চুরি করে থাকে। যা পরে অন্যান্য কার্ডে প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে বর্তমানে এ দুটি উপায় ছাড়াও, হ্যাকারদের কাছে আর বিভিন্ন উপায় আছে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা আপনার তথ্য চুরি করতে পারে।
ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুলস এর আছে Scrapers, crawlers ও স্ক্যানার। এটি প্রতিদিন হাজার বার না হলেও, শত শত বার ডার্ক ওয়েবে আপনার তথ্যগুলো খোঁজার জন্য কার্যক্রম চালায়। এই টুলস গুলো ডার্ক ওয়েবের অ্যাক্সেস অ্যাবল প্রতিটা কোনাতে এসব তথ্য খোঁজ করে। আপনার তথ্য যদি ডার্ক ওয়েবের ফোরামে প্রকাশিত হয় অর্থাৎ সার্বজনীন ভাবে প্রকাশিত হয়, তবেই এই টুলটি যথাযথ কাজ করে। কিন্তু যদি আপনার তথ্য অন্য কারো কাছে বিক্রি হয়, সেক্ষেত্রে এ টুলটি আপনার ডেটা খুঁজে বের করতে পারে না।
এদের মধ্যে Scrapers দের কাজটা একটু ভিন্ন। এরা ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটে বা ফোরামে, ব্যক্তিগত তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য সার্বজনীন ভাবে প্রকাশ্য ডেটা ডাউন-লোড করে থাকে। তারপর মিল খুঁজে পেলে সেটা প্রকাশ করে অর্থাৎ, বিশ্লেষণ করে। অর্থাৎ প্রথমে ডার্ক ওয়েব ফোরামের সমস্ত ডেটা ডাউন-লোড করে এবং তারপর অনুসন্ধান চালায়। ডাউন-লোড কৃত ডেটার সাথে চুরি হওয়া ডেটার মিল খুঁজে পেলে ফলাফল প্রকাশ করে অন্যথায় করে না।
আপনার যদি কোন তথ্য ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যায় তাহলে, ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুলটি আপনাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানিয়ে দেয়।
ডার্ক ওয়েব একটা লুকানো ইন্টারনেট জগত এবং সেখানে রেগুলার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পৌঁছাতে পারে না। এখানে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। নিকৃষ্টতম কাজ গুলো নিয়ে যত জঘন্য ইতিহাস, তা আপনি এখানে খুঁজে পাবেন। যেকোনো ব্যক্তির তথ্য চুরি করে সেই ব্যক্তিকে বিপদে ফেলতে, তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করে না। আর এসব কারণেই, আপনার তথ্য সেখানে আছে কী না তা জানা জরুরী।
সাইবার ক্রিমিনালরা আপনার তথ্য চুরি করে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। আপনার কাছে বিরাট অর্থ দাবী করতে পারে। অথবা অন্যের কাছে আপনার পরিচয় পত্র বিক্রি করে দিতে পারে। মূলত অপরাধীরা প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে চুরি করা পরিচয় পত্র ব্যবহার করে। যাতে করে আইনি তদন্তে তার সম্পর্কে কোন ক্লু যেন কেউ না পায়। ফলে অকারণে ফেঁসে যায় বেচারা অর্থাৎ যার পরিচয় পত্র চুরি করে ব্যবহার করা হয়েছে।
আর তাই, আপনাকে আপনার ডেটা লিক হল কী না সে সম্পর্কে জানতে হবে। আর এটি না করলে, ভবিষ্যতে হয়তো সাইবার আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা অনেকটা কঠিন হয়ে পরবে। কারণ আপনার লিক হওয়া তথ্যই হ্যাকারদের মেইন হাতিয়ার। তাই নিজের সংবেদনশীল ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে সর্বাধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুল গুলো আপনাকে সবসময় জানিয়ে দেয় যে, আপনার সংবেদনশীল তথ্য গুলো ডার্ক ওয়েবে প্রকাশ হয়েছে কী না। অর্থাৎ পরিচয় পত্র, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্য সব ডেটা ঠিক আছে কী না। যাতে করে আপনি অ্যাকাউন্ট দখল, পরিচয় পত্র চুরি ও আর্থিক ক্ষতি ইত্যাদি সমস্যা গুলো এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
আপনি যদি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে, ডার্ক ওয়েব মনিটরিং সার্ভিসটি নিশ্চয় ব্যবহার করবেন। এবং লাইফে সবচেয়ে খারাপ দিন আসার পূর্বেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নিবেন। নিরাপত্তার জন্য ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুলসটি আর নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে।
আমাদের প্রায়সই একটা দোষ হচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা ফ্রি জিনিস তাড়াহুড়া করে লুফে নেই, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপেক্ষা করি। মূলত কার্যকরী কী না তা যাচাই বাচাই করি না। অনেক সময় ডেটা ডার্ক ওয়েবে লিক হয়েছে কী না তা পরীক্ষা করার প্রয়োজন পরে। সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো অনেক সময়, ডার্ক ওয়েব মনিটরিং এর আশ্বাস দেয় এমন টুলস এর পিছনে কষ্টে আয় করা টাকা খরচ করি। কী দরকার? আমার কথা হচ্ছে, টাকা খরচ করার আগে বিনামূল্যের টুলস এর সার্ভিস গুলো যাচাই বাচাই করে দেখলে ক্ষতি কী?
আমাদের কাছে আছে ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুলস নামক একটি টুল। প্রথমে, এটি ব্যবহার করে দেখতে হবে যে, এটি আসলেই কাজ করে কী না?
যদি এই প্রশ্নের উত্তরে আসি তাহলে বলা যায় যে, হ্যাঁ এই টুলসটি কাজ করে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। আপনি যতটা আশা করছেন, তার চেয়ে একটু কম-ই কার্যকর এই টুলসটি। অর্থাৎ, পরীক্ষার ফলাফলে আপনার তথ্যের ফাঁস হয়নি এমন দেখালেও হয়তো আপনার তথ্য কিছুটা অথবা পুরোটা লিক হয়েছে এমনটাও হতে পারে। তবে, এটা খুবই রেয়ার ঘটনা।
একটি ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুল এর কার্যকারিতা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, চুরি হওয়া পরিচয় পত্র ডার্ক ওয়েব থেকে খুঁজে নিতে যথেষ্ট সময় নিতে পারে আবার কম সময়ও নিতে পারে। টুলসটির কার্যকারিতা সময়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক যুক্ত।
আপনার ইনফরমেশন যদি ডার্ক ওয়েবে সবার কাছে প্রকাশ করা হয়, তবেই এই টুলসটি আপনার তথ্য ডার্ক ওয়েবে খুঁজে পাবে। অন্যথায়, আপনার ইনফরমেশন যদি ডার্ক ওয়েবে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়, তাহলে টুলসটি ইনফরমেশন গুলোতে অ্যাক্সেস নিতে পারবে না। ফলে আপনার তথ্য ডার্ক ওয়েবে লিক হয়েছে কী না তা আপনি জানতেও পারবেন না। এজন্যই বলছিলাম যে, ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুলসটি পুরোপুরি কার্যকর নয়।
আর অনেক সময় চুরি করা ডেটা সার্বজনীন ভাবে প্রকাশ করার আগে, কেউ হয়তো ডেটা গুলোর অপব্যবহার করার চেষ্টা করেছে বা অপব্যবহার করেছে। এমনটাও হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তথ্য লিক হওয়ার পূর্বে এটা সম্পর্কে জানা অনেক ভালো এবং তথ্য লিক হওয়া ঠেকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তবে, আপনার তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধুমাত্র আপনার একার না বরং, আপনার ইনফরমেশন এর ডি-টেইলস ধারণকারী কোম্পানি গুলোও ততোটাই দায়বদ্ধ যতটা ঠিক আপনি।
কথা হচ্ছে, বড় বড় বিশস্ত কোম্পানি গুলোও তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। তাদের কাছে থেকেও কয়েক মাস পর বা কয়েক বছর পর তথ্য ফাঁস হয়। হতে পারে সেটা কোন কর্মচারী বা বড় কোন কর্মকর্তার মাধ্যমে।
ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুলসটিতে কিছু অসুবিধা থাকলেও এটি ব্যবহার না করার কোন কারণ আমি খুঁজে পাই না। কারণ, যেটুকু সুবিধা আছে সেটুকু ভোগ করতে অসুবিধা কোথায়?
ডার্ক ওয়েব, ডিপ ওয়েবের খুব ক্ষুদ্র অংশ হলেও এতে সঞ্চিত রয়েছে বিশাল ডেটা। অর্থাৎ, এই ডার্ক ওয়েবে এতোটাই ইনফরমেশন আছে যে, তা আপনি কল্পনাতেও আনতে পারবেন না। আর এত এত ডেটার মাঝে থেকে আপনার ব্যক্তিগত ডেটা বা কোন কোম্পানির ডেটা খুঁজে নেয়া মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। অর্থাৎ, ডার্ক ওয়েবের সমস্ত ডেটা পর্যবেক্ষণ করা কোন ব্যবহার কারী বা কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়। এবং এটা যে আপনাকেই পর্যবেক্ষণ করতে হবে বিষয়টি এমনও নয়।
ডার্ক ওয়েব মনিটরিং এর জন্য রয়েছে বিশেষ টুল যা বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। এই টুলটির নাম Have I Been Pwned?। Have I Been Pwned? নিয়ে টেকটিউনসে দারুন একটি টিউন রয়েছে। এটি দেখে নিন।
Have I Been Pwned? দিয়ে আমার তথ্য কী ফাঁস হয়েছে? এরকমটা বুঝায়। এটা ব্যবহার করলেই আপনি জানতে পারবেন যে, কখন কীভাবে আপনার ডেটা ফাঁস হয়েছে বা আদৌও হয়েছে কী না।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সার্ভিস গুলোর কাছেও একই রকম কিছু টুলস রয়েছে যা ডার্ক ওয়েবের ডাটাবেজ এ আপনার সংবেদনশীল ডেটা লিক হয়েছে কী না তা যাচাই করতে পারে।
আপনি এই দুটি টুলস এর যেকোনো একটি ব্যবহার করে ডেটা লিক এর পরীক্ষাটি চালাতে পারবেন। তাই যদি প্রয়োজন পরে অবশ্যই ট্রাই করে দেখবেন। তো বন্ধুরা, এই ছিল আজকের টিউন। আশাকরি ভালো লেগেছে। দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন এক টিউনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।