অ্যান্ড্রয়েড ফোন দ্রুত চার্জ করার দুর্দান্ত ও সেরা ৮ টি টিপস এন্ড ট্রিকস

টিউন বিভাগ টিপস এন্ড ট্রিকস
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 7
২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে স্মার্ট-ফোন এখন মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর স্মার্ট-ফোন মানেই নেটওয়ার্ক সিস্টেম এবং সেই সাথে ইন্টারনেট সংযোগ। প্রতিদিন প্রযুক্তির কল্যাণে নানা ধরনের স্মার্ট-ফোনগুলো বাজাতে আসছে। স্মার্ট-ফোন কোম্পানি গুলো প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছে কিভাবে স্মার্ট-ফোন গুলোকে ন্যূনতম সময়ে চার্জ করা যায়।

কারণ সাধারণত আমরা যারা মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত অথবা যাদের মোবাইল ফোনে সর্বদাই টুকটাক কাজ থাকে, তাদের ক্ষেত্রে মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া মানে, বিরক্তিকর সময়ের শুরু। অর্থাৎ, মোবাইল চার্জ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি।

এর ফলে আমরা হয়তো অনেক সময় ভাবি যে, আমার ফোনটা যদি ৫ মিনিটে চার্জ হতো, তবে কি যে ভালোই না হতো। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে বর্তমান সময়েও এটাও সম্ভব হয়েছে। তবে এ ধরনের মোবাইল একটু দামি হওয়ায় সবাই সেটা আসলে কিনতে পারে না। তাহলে মূল কথা হচ্ছে, আমাদের মধ্যে অনেককেই হয়তো স্লো চার্জিং এর সমস্যাটা ফেস করতে হয়।

আপনি কি জানেন, আপনার কাছে যে ফোনটি আছে তার চার্জের গতি পূর্বের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি করা সম্ভব? এখন আপনার মনে হয়তো একটা প্রশ্ন জাগবে যে, দ্রুত কীভাবে স্মার্ট-ফোন গুলোকে চার্জ করা যায়? টেনশন নেবার কোন দরকার নেই। আমিই আপনাদেরকে জানিয়ে দেব যে, কীভাবে আপনার ফোনের চার্জের গতি পূর্বের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে?

একটা স্মার্ট ফোনে ইউএসবি ক্যাবল প্লাগ-ইন করা যতটা সহজ, ফোনকে দ্রুত চার্জ করার বিষয়টা ততটাও সহজ নয়। আপনার ফোনটিকে পূর্বের তুলনায় দ্রুত চার্জ করার জন্য আমার বলা টিপস এবং ট্রিকস গুলো প্রয়োগ করবেন।

বার বার স্মার্ট ফোনটিকে চার্জে দেওয়া যদি আপনাকে বিরক্ত করে থাকে, তাহলে আর আপনাকে বিরক্ত হতে হবে না। আপনি যদি একজন সাধারণ স্মার্ট ফোন ইউজার হন এবং তারপরেও যদি আপনার স্মার্ট-ফোনের চার্জ সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তো আপনাকে অবশ্যই ফোন দ্রুত চার্জ করার কৌশল সম্পর্কে জানতে হবে।

যদিও বর্তমান স্মার্ট-ফোন গুলোতে USB Type-C ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সেই সাথে ফাস্ট চার্জিং অ্যাডাপ্টর। তবুও দ্রুত চার্জ করার প্রয়োজনীয়তা কিন্তু এসব স্মার্ট-ফোনের ক্ষেত্রেও রয়েছে। বর্তমানে সময়ে USB Type-C ক্যাবলের উদ্ভব হওয়ায়, মোবাইল চার্জিং এর সময়ের ক্ষেত্রে কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে। আর এতে করে, চার্জিং এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়ের ঝামেলা দূর হয়ে যাচ্ছে। তবে, আপনার কাছে ব্যাটারিটির পুনরায় পূর্ণ চার্জ হওয়ার সেই সময়টুকুও কষ্টকর মনে হতে পারে।

টেনশন করার কোন দরকার নেই, আমার কাছে বেশ কয়েকটি টিপস এবং ট্রিকস রয়েছে যা নিশ্চয়ই বেদনাদায়ক চার্জিং এর সময় টুকু কমিয়ে আনবে। আজ আমি আমার এই টিউনটিতে, ৮ টি টিপস এবং ট্রিকস নিয়ে আলোচনা করবো যা স্মার্ট-ফোনের চার্জ আরও দ্রুত ফিল-আপ করবে।

১. Airplane মোড Enable করুন

আমাদের মোবাইল ফোন গুলোতে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল সবসময় যাওয়া আসা করতে থাকে। অর্থাৎ নেটওয়ার্ক সিগন্যাল ক্রমাগত কমে ও বাড়ে। মোবাইল শব্দের শাব্দিক অর্থ হল বার্তাবাহক। অর্থাৎ কথোপকথন, বার্তা প্রেরণ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আহরণ করাই আসলে স্মার্ট-ফোনের কাজ।

তাই আমাদের স্মার্ট-ফোন গুলোতে সর্বদা নেটওয়ার্ক সিগন্যাল থাকা আবশ্যক। আর এই নেটওয়ার্ক সিগন্যাল যতক্ষণ মোবাইলে যাওয়া আসা করে ততক্ষণ ব্যাটারি ড্রেইন হতে থাকে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলও, নেটওয়ার্ক সিগন্যাল যত স্ট্রং আপনার ব্যাটারি খরচ তত কম বা নেটওয়ার্ক সিগন্যাল যত দুর্বল আপনার ব্যাটারি ড্রেইনের পরিমাণ তত বেশি।

আমরা হয়তো সকলেই জানি যে, Airplane মোড Enable অর্থ মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। ফলে ব্যাটারি ড্রেইন এর পরিমাণ কমে যায়। বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করে দেখা যায় যে, Airplane মোড অন করে মোবাইল চার্জে রাখলে, মোবাইল চার্জ হতে পূর্বের তুলনায় ২৫% সময় কম লাগে।

আপনার যদি মোবাইল দ্রুত চার্জ করার প্রয়োজন থাকে, তাহলে অবশ্যই Airplane মোড Enable করে মোবাইল ফোনটি চার্জে দিবেন। কিন্তু যদি গুরুত্বপূর্ণ ফোন কল আসার সম্ভাবনা থাকে সে ক্ষেত্রে এটা করার দরকার নেই। কারণ এটা নেটওয়ার্ক সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন করে।

আপনি যদি আপনার ফোনটিকে Airplane মোডে রাখতে চান, তাহলে আপনার নোটিফিকেশন বার টিকে উপর থেকে নিচের দিকে সোয়াই-প করুন।

তারপর Airplane মোড আইকন টিতে ক্লিক করুন।

অন্যভাবে করতে চাইলে, প্রথমে ফোন সেটিংস ওপেন করুন।

তারপর নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেটিংস এ যান। অনেক সময় এটি More connection এর ভিতরেও থাকে।

সেখান থেকে Airplane মোড টিকে অন করুন।

আপনার স্মার্ট-ফোনটি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেলে আপনাকে অবশ্যই Airplane মোড অফ করতে হবে অর্থাৎ ডিজেবল করতে হবে। কেননা, যতক্ষণ এটি অন থাকবে ততক্ষণ আপনার ফোনে কোন নোটিফিকেশন, ইমেইল বা ফোন কল এর কিছুই আসবে না। সুতরাং, অবশ্যই আমরা আমদের প্রয়োজন অনুযায়ী এটাকে চালু বা বন্ধ করবো।

২. ফোনটি বন্ধ করুন

আমরা সবাই জানি যে, ফোন বন্ধ রাখলে এটি আর একটুও ব্যাটারি ড্রেইন করে না। শুধুমাত্র বন্ধ করার সময় বা চালু করার সময় যতোটুকু ব্যাটারি ড্রেইন হয় ততোটুকুই। এটা খুব সিম্পল বিষয় যে ফোন বন্ধ থাকলে চার্জ দ্রুত উঠবে আর এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতো সহজ হওয়ার পরেও আমরা মোবাইল ফোন বন্ধ করে চার্জে দেইব্জা। কেন যে বন্ধ করে চার্জে দেই না সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন?

বন্ধ করার পর চার্জ করার ক্ষেত্রে ব্যাটারির উপর অন্য কোন ধরনের চাপ পরে না। শুধুমাত্র নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চার্জ ফিল-আপ করতে শুরু করে। কিন্তু এটা তো বললাম সুবিধার কথা, অসুবিধাও তো থাকে।

আর সেটা হল প্রয়োজনীয় কল বা বার্তা পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, যা অনেকেই হয়তো চায় না। কিন্তু ধরেন যে, আপনাকে বাড়ি থেকে বাহিরে যেতে হবে এবং ফোনেও যথেষ্ট চার্জ নেই। তাহলে আপনি অবশ্যই ফোনটিকে ১৫-২০ এর জন্য বন্ধ করে চার্জে লাগাতে পারেন। যাতে করে ন্যুনতম সময়ে যথেষ্ট চার্জ হয়। ফলে ফোনটি দ্রুত চার্জ হবে এবং আপনিও বাড়ি থেকে জলদি বের হতে পারবেন। সিম্পল।

৩. চার্জ মোড Enable করা আছে কী না তা নিশ্চিত করুন

স্মার্ট-ফোন চার্জিং এর ক্ষেত্রে, আমরা যখন চার্জার ব্যবহার করি অর্থাৎ মোবাইল, ক্যাবল, চার্জার ও বৈদ্যুতিক লাইন একত্রে সংযুক্ত করি, তখন এটি সাধারণত আমাদেরকে কোন অপশন দেয় না যে এটি কী ধরনের সংযোগ তৈরি করবে। কিন্তু ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থেকে USB এর মাধ্যমে কানেক্ট এর ক্ষেত্রে, এটি আপনাকে বেশ কয়টি অপশন দিবে। অর্থাৎ, আপনি আসলে কী ধরনের সংযোগ পেতে চান তা নির্ধারণ করার সুযোগ আপনার সামনে উপস্থাপন করবে।

আপনি চাইলেই এই অপশন গুলো থেকে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারেন অথবা ডেটা ট্রান্সফারের সংযোগ দিতে পারেন। পরিশেষে, আপনি চাইলে শুধুমাত্র চার্জিং এর সংযোগও দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক অপশন টি নির্ধারণ করতে হবে। তো, আপনি যদি ফোনটিকে চার্জের উদ্দেশ্যেই ল্যাপটপে কানেক্ট করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই চার্জিং ফিচারটি ইন্যাবল করতে হবে।

ল্যাপটপে সংযোগের সময়ই অবশ্যই আপনি এ অপশন গুলো পেয়ে যাবেন। কিন্তু যদি আপনি ম্যানুয়ালি অপশন গুলোতে যেতে চান তবে, প্রথমে সেটিংস ওপেন করুন।

 

তারপর আপনাকে Device Connection এ যেতে হবে। এবং তারপর USB Option এ গিয়ে তালিকে থেকে বৈশিষ্ট্য টি নিশ্চিত করুন। তবে সব ফোনের ক্ষেত্রে এটি এক নাও হতে পারে। যেমন- আমার ফোনের জন্য এটি ডেভেলপার অপশনের অভ্যন্তরে বিদ্যমান।

১. প্রথমে সেটিংস ওপেন করি।

২. তারপর স্ক্রল ডাউন করে নিচে যাই এবং ডেভেলপার অপশনে যাই।

৩. ডেভেলপার অপশনের অভ্যন্তরে স্ক্রল ডাউন করতে করতে Default USB configuration এ যাই।

৪. সেখান থেকে Only charging ফিচার টি সিলেক্ট করি।

আপনি ততোক্ষণ পর্যন্ত এসব পরিবর্তন করতে পারবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আপনার স্মার্ট-ফোনটিকে কোন ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সাথে USB তে কানেক্ট করবেন। আমার কাছে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ না থাকায় আমি Only Charging অপশনটি দেখাতে পারলাম না। আর এ অপশন গুলো খুঁজে পেতে অসুবিধা হলে সেটিং এর সার্চ বারে USB লিখে সার্চ দিলেই, আশাকরি সবকিছুই অটোমেটিক সামনে চলে আসবে।

৪. দেয়ালের সকেট ব্যবহার করুন

আপনি যদি কখনো ল্যাপটপ বা কম্পিউটার অথবা কখনো গাড়ির USB পোর্ট থেকে আপনার স্মার্ট-ফোনটিকে চার্জ করে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে এটা কতটা স্লো চার্জ ফিল-আপ করে। অর্থাৎ চার্জ হতে অনেক সময় লাগে যা খুবই বিরক্তিকর।

সাধারণত এসব USB সকেট গুলো মাত্র ০.৫ A (অ্যাম্পিয়ার) পাওয়ার সাপ্লাই করে। ওয়াল সকেট থেকে আউটপুট পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা সর্বনিম্ন ১ A বিদ্যুৎ দিয়ে থাকে। তবে, এটা আপনার চার্জার নামক ডিভাইসের উপর নির্ভর করে। এটা কতোটা পাওয়ার সাপ্লাই করতে পারবে তা নির্ভর করে চার্জারটি ক্ষমতার উপর। অর্থাৎ, কতো ওয়াটের চার্জার ব্যবহার করছেন সে বিষয়টি ম্যাটার করে। আর, আপনার মোবাইলের পাওয়ার রিসিভিং ক্ষমতার উপরও কিছুটা নির্ভর করে।

কম অ্যাম্পিয়ারে চার্জিং এর ক্ষেত্রে এটা আপনার ডিভাইসের কোন ক্ষতি করে না। তবে আপনার ফোনটি চার্জ হতে অনেকটা সময় নিয়ে থাকে। আপনি যদি বিপদে পরেন অর্থাৎ চার্জিং এর ক্ষেত্রে ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও গাড়ির USB পোর্টই একমাত্র অপশন হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি এই ধরনের পোর্ট বা সকেট ইউজ করতে পারেন। অন্যথায় সর্বদা ফুল চার্জ করার জন্য ওয়াল সকেট অর্থাৎ উন্নত শক্তির সোর্স থেকে স্মার্ট-ফোনটিকে চার্জ করুন।

৫. একটা পাওয়ার ব্যাংক কিনে রাখুন

আপনি যদি সর্বদাই বাড়ির বাহিরে থাকেন এবং আপনার প্রায়ই ফোনের চার্জ বাড়ির বাহিরেই শেষ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনি একটি পাওয়ার ব্যাংক কিনে নিতে পারেন। অর্থাৎ, আপনার চলাচলের ক্ষেত্রে চার্জ করা প্রয়োজন পড়লে বা ফোন এর চার্জ দ্রুত শেষ হলে, তাহলে পাওয়ার ব্যাংকই হতে পারে একটা বেস্ট আইডিয়া। এটা যেকোনো সময় ফোনের চার্জ শেষ হওয়ার মতো বিপদ থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে।

বর্তমানের উন্নত মানের পাওয়ার ব্যাংক গুলো ওয়াল সকেটের মতো বেশি অ্যাম্পিয়ারের আউটপুট দিয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ওয়াল সকেটের চেয়ে বেশি পরিমাণের আউটপুট দিয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনার USB ক্যাবলটি উন্নত ক্যাবল কী না অর্থাৎ, পর্যাপ্ত আউটপুট সরবরাহ করতে পারে কী না?

তা না হলে আপনার পাওয়ার ব্যাংক এর চার্জ তাড়াতাড়ি শেষ হবে এবং মোবাইলও ততোটা চার্জ হবে না যতোটা আপনি আশা করবেন। অর্থাৎ ভীষণ বাজে চার্জিং অভিজ্ঞতার শিকার হবেন। অর্থাৎ, আপনার ফোনের জন্য  যত অ্যাম্পিয়ারের ক্যাবল লাগবে, ততো অ্যাম্পিয়ারের  ক্যাবলই ব্যবহার করবেন।

৬. ওয়্যারলেস চার্জিং এড়িয়ে চলুন

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, ওয়্যারলেস চার্জিং হয়তো সবচেয়ে ভালো চার্জিং পদ্ধতি। কারণ এটাতে কোন ঝামেলায় নেই। শুধুমাত্র ফোনটিকে যথাস্থানে রেখে দেওয়া। ক্যাবল লাগানোর ঝামেলা নেই এবং সেই সাথে তাড়ের ঝামেলাও নেই। তাই হয়তো আমরা, এখনকার সময়ে এই চার্জিং পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছি।

কিন্তু, কথা হচ্ছে যদি দ্রুত চার্জিং এর প্রশ্ন আসে, তাহলে ক্যাবল ব্যবহার করে চার্জ করাই সর্বোত্তম পদ্ধতি। কারণ ওয়্যারলেস চার্জিং পদ্ধতি ক্যাবল চার্জিং পদ্ধতির তুলনায় একটু বেশিই স্লো। তাই আপনি যদি দ্রুত চার্জ ফিল-আপ করতে চান, তাহলে ক্যাবল চার্জ পদ্ধতিই ব্যবহার করতে হবে এবং ওয়্যারলেস চার্জ পদ্ধতিকে এড়িয়ে চলতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের চার্জিং টেস্ট চালিয়ে দেখা গেছে যে ওয়্যারলেস পদ্ধতি, ক্যাবল পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ৫০% স্লো হয়ে থাকে। এরকমটা হওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা জানি যে তড়িৎ শক্তি বিভিন্ন ধাতুতে (যেমন- তামা) কম সময়ে পরিবাহিত হয় অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায়। তামার মধ্য দিয়ে তড়িৎ চলার সময় খুব কম তাপ উৎপন্ন হয়। ফলে শক্তির লস কম হয়ে। কিন্তু ওয়্যারলেস মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহনের সময় তুলনামূলক বেশি তাপ উৎপন্ন হয় এবং শক্তির লস বেশি হয়। ফলে স্লো চার্জিং সমস্যার  সৃষ্টি হয়।

৭. আপনার ফোনের কাভারটি খুলে রাখুন

আপনি যদি আপনার ফোনটিকে দ্রুত চার্জ করতে চান, তাহলে ফোনটিতে চার্জিং ক্যাবল লাগানোর পূর্বে অবশ্যই ফোনটির এক্সট্রা কাভারটি খুলে ফেলুন। কেননা, বর্তমান সময়ের মোবাইল ফোনের ব্যাটারিগুলো লিথিয়াম আয়ন দিয়ে তৈরি করা হয়। একটা বিশেষ পদ্ধতিতে, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি গুলো তৈরি হয়ে থাকে। রসায়ন বিজ্ঞান বলছে, এ পদ্ধতিতে তৈরি ব্যাটারি গুলো কম তাপমাত্রায় দ্রুত চার্জ ফিল-আপ করতে সক্ষম।

সর্বোত্তম চার্জিং এর জন্য, ফারেনহাইট স্কেলে ব্যাটারির তাপমাত্রা ৪১ F থেকে ১১৩ F পর্যন্ত হতে হয়। আর সেলসিয়াস স্কেলের ক্ষেত্রে ইহা ৫° C  থেকে ৪৫° C পর্যন্ত হতে হয়। অপ্টিমাম তাপমাত্রাটা আসলে ব্যাটারির তাপমাত্রা, কখনোই বাতাসের তাপমাত্রা নয়। কিন্তু আমরা হয়তো জানি যে, কিছুক্ষণ চার্জ করার পর ফোনটির তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যদি চার্জিং এর ফলে ব্যাটারির তাপমাত্রা আদর্শ তাপমাত্রার বাইরে চলে যায় তাহলে স্লো চার্জিং সমস্যার সৃষ্টি হবে।

আর আমরা হয়তো এটাও নিশ্চিতভাবে জানি যে, স্মার্ট-ফোনে কাভার লাগানো থাকলে, ব্যাটারির তাপমাত্রা বাড়তেই থাকে এবং কাভারের কারনে কখনোই কমতে পারে না। কিন্তু যদি কাভারটি খোলা হয়, তাহলে ব্যাটারির তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে মিশে যায় এবং তাপের আদান-প্রদান এর মাধ্যমে ব্যাটারিতে আদর্শ তাপমাত্রা বজায় থাকে। ফলে দ্রুত চার্জিং ফিচারটি বহাল থাকে।

এতো কিছু শোনার পর, ফোনটিকে আবার ফ্রিজে রাখার কথা চিন্তাও করবেন না। কেননা, ফিজের তাপমাত্রা ০°C বা তার থেকেও কম। এছাড়াও ফ্রিজে পানি রয়েছে যা আপনার ডিভাইসের ক্ষতি করতে পারে।

৮. একটি উচ্চ মানের কেবল ব্যবহার করুন

আপনি যদি কখনো অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে USB কেবল নিয়ে প্রবলেমে পড়ে থাকেন, তাহলে হয়তো প্রবলেমটা সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে। একটা ভালো মানের USB ক্যাবল এবং একটি নিম্নমানের USB ক্যাবলের মধ্যে পার্থক্যটা এতটাই বিশাল যে, কোন কোন সময় নিম্নমানের ক্যাবল দিয়ে স্মার্ট-ফোন চার্জই হয় না।

আমাদের সর্বদাই স্মার্ট-ফোনের অরিজিনাল USB ক্যাবল ব্যবহার করা উচিত এবং খুব যত্নসহকারে ব্যবহার করা উচিত। কেননা, একটা USB ক্যাবল নষ্টের পর আরেকটা অরিজিনাল USB কেবল খুঁজে নেয়া বা কিনে নিয়ে একটু কঠিন হয়ে যায়। কারণ আমাদের দেশের বাজারে ভালো কোয়ালিটির ক্যাবলের পাশাপাশি বাজে কোয়ালিটির ক্যাবলের পরিমাণও যথেষ্ট। সুতরাং, যেকোনো সময় ক্যাবল নিয়ে প্রতারিত হতে পারেন।

আমরা যে অরিজিনাল ক্যাবলটি ব্যবহার করি তার ভেতরের চারটি আলাদা আলাদা তার থাকে। যেমন- লাল, সবুজ, সাদা এবং কালো। এদের মধ্যে সাদা ও সবুজ তার গুলো আসলে ডেটা স্থানান্তরের জন্য। এবং লাল ও কালো তার গুলো তড়িৎ পরিবহনের জন্য বা পাওয়ার সাপ্লাই করার জন্য অর্থাৎ, সহজভাবে বলতে গেলে চার্জ করার জন্য।

এই লাল ও কালো তার দুটি কী পরিমাণ বা কত অ্যাম্পিয়ার এর তড়িৎ পরিবহন করবে, তা নির্ভর করে তাদের আকারের ওপর। সাধারণত একটি স্ট্যান্ডার্ড ২৮- গজের ক্যাবলগুলো ০.৫ অ্যাম্পিয়ার তড়িৎ পরিবহন করে। এবং বড় আকারের ২৪-গজের ক্যাবল গুলো ২ অ্যাম্পিয়ারের তড়িৎ পরিবহন করে।

বাজারে যে ক্যাবল গুলো সস্তা বা চিপ সেগুলো সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড ২৮-গজের সেট-আপ ব্যবহার করে। ফল হিসেবে আমাদেরকে স্লো চার্জিং এর শিকার হতে হয়। তাই আমাদের অবশ্যই বড় আকারের ২৪-গজের ক্যাবলটি ব্যবহার করা উচিত।

আপনার যদি কখনো USB ক্যাবল নষ্ট হয়ে যায় এবং নতুন একটি USB ক্যাবল কেনার প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে আপনি Ampere অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। এটা ঐ ক্যাবলের জন্য ঐ স্মার্ট-ফোনে, চার্জের গতিবিধি পরিমাপ করে থাকে। আপনি চাইলে নিচের লিংক থেকে অবশ্যই অ্যাপ্লিকেশনটিকে ডাউন-লোড করে নিতে পারবেন।

Ampere

Official Download @ Ampere

আপনার ফোনের চার্জের গতি বাড়িয়ে নিন

ফোন চার্জের সময়, যে বেদনাদায়ক মুহূর্ত সৃষ্টি হয়, সেই বেদনাদায়ক মুহূর্ত কম করার জন্য আমি আপনাদেরকে ৮ টি সেরা উপায় ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। আপনি যদি টিপস এবং ট্রিকস গুলোকে যথাযথ অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি আপনার সময়কে বাচাতে পারবেন অর্থাৎ ফোনকে দ্রুত চার্জ করতে পারবেন।

এতকিছু করার পরও যদি, আপনার ফোন দ্রুত চার্জ না হয়, তাহলে আপনি আপনার ফোনটিকে আপগ্রেড করে নিবেন। কেননা, ফোন আপগ্রেড করলে এটা আপনার ফোনের সবধরনের পারফরম্যান্স ইমপ্রুভ করে থাকে। উপরিউক্ত টিপস গুলো অনুসরণ করলে আপনার চার্জিং সময় থেকে বেশ কয়েক মিনিট বেঁচে যেতে পারে। যদি কৌশল গুলো কাজে না আসে অর্থাৎ ফোন চার্জিং যদি ঠিকঠাক মতো না হয় তাহলে আমাদের দেওয়া নির্দেশনা গুলো আরও ভালো করে পড়ুন, এবং আবার চেষ্টা করুন।

তো বন্ধুরা, এই ছিলো আজকের টিউন। আশাকরি টিউনের টপিক গুলো আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যদি ভালো লাগে অবশ্যই একটা জোসস দিবেন। টিউন সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে টিউমেন্ট করে আমাকে জানাবেন। আমার টিউন গুলো সবার প্রথমে দেখতে চাইলে আমাকে ফলো করুন। আজকের মতো এ পর্যন্তই। দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন এক টিউনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

Level 7

আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস