আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি, আশা করছি ভাল আছেন সুস্থ আছেন৷ বরাবরের মতই আপনাদের সামনে হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে। আজকে আলোচনা করব স্মার্টফোন নিয়ে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
আপনি হয়তো আপনার ফোনটি নিয়ে বোরিং ফিল করছেন এবং সব কিছু ঠিক থাকার পরেও নতুন একটি ফোন কেনার কথা ভাবছেন। নতুন ফোনের বাজেট করার আগে এই টিউনের ১০ টি ট্রিক্স দেখে নিন, আশা করছি আপনার পুরনো ফোনেও নতুন ফোনের ফিল পাবেন।
ফোন কোম্পানি গুলো সব সময় চায় যেন তাদের লয়্যাল কাস্টমার বৃদ্ধি পায়। তারা ফোন ডিজাইনের ক্ষেত্রে এমন স্ট্র্যাটেজি অবলম্বন করে যে, নতুন মডেলের ফোন রিলিজ হলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনি ভাবতে শুরু করবেন আপনার ফোনটি পুরনো হয়ে গেছে, এবং আপনার আপডেট মডেলের ফোনটি কেনা উচিৎ।
আপনি নতুন ফোন কিনতে চাইতেই পারেন তবে যদি আপনার বর্তমান ফোনে কোন সমস্যা না থাকে তাহলে এক দুই বছরের মধ্যে ফোনে নেয়া আমি মনে করি অপচয়ের শামিল।
যাই হোক, আপনি নিচের ১০ টি ট্রিক্স ফলো করতে পারেন যার মাধ্যমে আপনি পুরনো ফোনেই নতুনের ফিল পাবেন।
সব সময় একই ওয়ালপেপার দেখতে দেখতে আমার পছন্দের ফোন বিরক্তি চলে আসতে পারে। কখনো কখনো শুধুমাত্র ওয়ালপেপার চেঞ্জ করেও আপনার ফোনকে নতুন ভাবে ফিল করতে পারেন।
ফোনে নতুনত্বের স্বাদ পেতে প্রতি মাসে একটা ওয়ালপেপার পরিবর্তন করতে পারেন। ভিন্নতা পেতে প্রতি মাসে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ওয়ালপেপার পিক করতে পারেন। ফোনের জন্য ওয়ালপেপার আপনি নিজেও পছন্দ করতে পারেন অথবা অন্য কাউকে দিয়েও করাতে পারেন।
আপনার ফোনটি আপ টু ডেট না থাকলে একই সাথে এক UI দেখে বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন অথবা হ্যাং সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রায় প্রতিটা ব্র্যান্ডের ফোনেই একটা অথবা দুইটা মেজর আপডেট আসে যার মাধ্যমে পুরো ইউজার ইন্টারফেস চেঞ্জ হয়ে যায় এবং ফোনের পারফরমেন্স বৃদ্ধি পায়৷
আজকেই আপনার ফোনের আপডেট চেক করুন। আপডেট এভেইলেভল থাকলে যত দ্রুত সম্ভব ফোনটি আপডেট করে নিন। যেহেতু আপডেট এর পর ফোনটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে সুতরাং আপনি পুরনো ফোনে নতুনের ফিল পাবেন।
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হচ্ছে কাস্টমাইজেশন সুবিধা। আপনি ডিফল্ট ভাবে ফোনটি যেমনই পান না কেন ইচ্ছে মত কাস্টমাইজ করতে পারবেন। ফোনে সফটওয়্যার আপডেট যদি নাও আসে তবুও লাঞ্চারের মাধ্যমে আপনি আপডেট ডিজাইনের সুবিধা পাবেন।
Google Play এ Launcher লিখে সার্চ দিলে আপনি অসংখ্য লাঞ্চার অ্যাপ পেয়ে যাবেন। যেগুলো আপনার ফোনের চেহারাই পাল্টে দেবে। তাছাড়া আপনি আলাদা আলাদা আইকন প্যাক ডাউনলোড করেও ইন্সটল করতে পারেন। ভাল কিছু লাঞ্চার হচ্ছে, Nova Launcher, Action Launcher, এবং Microsoft Launcher।
সময়ের সাথে সাথে প্রায় সকল ফোনের ব্যাটারিই ড্যামেজ হওয়া শুরু করে। সাধারণ ভাবে প্রথম দুই থেকে তিন বছর কোন সমস্যা না হলেও এর পর থেকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর ফোনের ব্যাটারি ড্যামেজের প্রধান লক্ষ্মণই হল স্বাভাবিক সময়ের আগেই চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া।
অধিকাংশ ইউজাররাই ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দিলে নতুন ফোন কিনে ফেলে। তবে যদি ব্যাটারিই যদি মাত্র সমস্যা হয় তাহলে বলব আপনি ব্যাটারিটি রিপ্লেস করে ফেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে সাজেশন থাকবে অবশ্যই ফোনের ব্র্যান্ডের কেয়ার থেকে অরিজিনাল ব্যাটারি কিনবেন।
দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে আপনার ফোনের স্ক্রিন প্রটেক্টর নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা ভেঙে যেতে পারে৷ স্ক্রিন ঝাপসা মনে হওয়া বা টাচ সঠিক ভাবে কাজ নাও করতে পারে। সুতরাং স্ক্রিন প্রটেক্টর ঝাপসা বা ভেঙে গেলে সেটা পরিবর্তন করে ফেলুন।
ফোনের স্ক্রিন দেখতে পুরনো লাগলে আপনার পুরো ফোনটিই পুরনো মনে হতে পারে। স্ক্রিন প্রটেক্টের দাম খুব বেশি নয় আবার এটি পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার ফোনটিকে নতুন মনে হতে পারে। একই সাথে ফোনটি ব্যবহার করলেও ভাল লাগবে।
ফোনের অন্য সব এক্সারসোরিজের মধ্যে সবার আগে নষ্ট হয় ব্যাক কাভার। সময়ের সাথে সাথে ব্যাক কাভারের রঙ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং ময়লা দেখাতে পারে৷ যদি ব্যাক কভার ট্রান্সপারেন্টও হয় সেটাও দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে হলুদ দেখাতে পারে৷
যেহেতু ব্যাক কাভার দিয়ে ফোনের বেশির অংশ ঢাকা থাকে সেহেতু ব্যাক কাভার পুরনো হলে ফোনটিকেও পুরনো মনে হতে পারে। সুতরাং কিছু দিন পর পর ব্যাক কাভার চেঞ্জ করে আপনার ফোনটিকে নতুন করে ফেলতে পারেন।
ব্যাক কাভারের মত ফোনকে ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করা স্কিনের কাজ নয়। কাস্টম স্কিন ফোনে এপ্লাই করার মাধ্যমে আপনার ফোনটিই পাল্টে যেতে পারে ফোনটি দেখতে নতুন মনে হতে পারে।
স্মার্টফোনে স্কিন এপ্লাই করলে সেটা ফোনের থিকনেসের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না বা ফোন মোটা দেখাবে না। যদি ফোনের কেস ব্যবহার করতে না চান তাহলে স্কিন ব্যবহার করাই ভাল।
যেকোনো ফোন কয়েক বছর ব্যবহারের পর স্টোরেজ সমস্যা দেখা দেয়। মাত্রাতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ফাইল জমা হওয়াতে মূলত এমনটি হয়। কিছু সময় নিয়ে ফোনের সকল অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করে দিন। এতে করে ফোনের স্টোরেজ অনেকটাই ফাকা হবে এবং ফোনকে স্মুথলি রান হতে সাহায্য করবে। ফোনের স্টোরেজ ফুল হয়ে গেলে বারবার ওয়ার্নিং দেখাটা যেমন বিরক্তিকর তেমনি এতে ফোন ড্যামেজ হবারও আশংকা থাকে।
স্টোরেজ ক্লিয়ার করতে আপনি ফোনকে ডিপ স্ক্যান করতে পারেন অথবা ফাইল ম্যানেজারে গিয়ে অব্যবহৃত মিডিয়া ফাইল গুলো ডিলিট করে দিতে পারেন। যেহেতু মিডিয়া ফাইল বেশি স্টোরেজ দখল করে সেহেতু এই ফাইল গুলো ডিলিট করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মিডিয়া ফাইলের মতই ফোনের অব্যবহৃত অ্যাপ গুলো ফোনের অধিক স্টোরেজ দখল করে রাখতে পারে। তাই যে অ্যাপ গুলো আপনি অনেক দিন ব্যবহার করেন না সেগুলো রিমুভ করে দিন। কারণ আপনি চাইলেই সেগুলো আবার ইন্সটল করতে পারেন তাই শুধু শুধু স্টোরেজ ফুল করে রাখার কোন মানে নেই। অ্যাপ শুধু ইন্টারনাল স্টোরেজই দখল করে এমনটি নয়, ব্যাকগ্রাউন্ডে রান হয়ে আপনার র্যামকেও ফুল করে রাখতে পারে৷
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ গুলো রিমুভ করার পর আপনার যে স্টোরেজ ফ্রি হবে সেটা দিয়ে ফোনে থাকা অ্যাপ গুলো আপনি আপডেট করে নিতে পারেন।
অ্যাপ আপডেট করতে প্রথমে Google Play এ যান, আপনার প্রোফাইলে ট্যাপ করুন, Manage apps & device এ ক্লিক করুন এবং Update all এ ট্যাপ করুন।
অ্যাপ আপডেট দেয়া ফোন আপডেট দেয়ার মতই। অ্যাপ আপডেট এর ফলে বিভিন্ন বাগ ফিক্স হয়, পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান সময়ের ফোন গুলো এমন ভাবেই তৈরি করা, আপনি যদি যত্নের সাথে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে সেগুলো সহজেই কোন সমস্যা ছাড়া ৪/৫ বছর ব্যবহার করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে খুব বেশি সমস্যা না হলে নতুন ফোন না কিনলেও চলে।
তো বলা যায় বিভিন্ন পার্টস রিপ্লেস করা, অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডেটা ডিলিট করা, বডি ক্লিন করে রাখার মাধ্যমে আপনি পুরনো ফোনেও নতুনের ফিল পেতে পারেন। এতে একই সাথে আপনার ফোন কেনার অনেক গুলো টাকাও বেঁচে যেতে পারে। তো কেমন হল এই টিউনটি জানাতে ভুলবেন না। কোন কিছু জানার থাকলে টিউমেন্ট করুন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ!
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।