আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। ছোট একটি বিরতির পর আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে। আজকে আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি ওয়াইফাই স্পিড সমস্যার সমাধান নিয়ে।
নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা আমরা কে না চাই? কিন্তু বিভিন্ন কারণে সব সময় উপযুক্ত ইন্টারনেট আমরা পাই না। ISP এর সমস্যা তো আছেই তারপরেও কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমাদের ইন্টারনেট স্পিডকে প্রভাবিত করতে পারে। টুকটাক কাজে ইন্টারনেট এর স্পীড খারাপ না হলেও, একই সাথে অনলাইন স্ট্রিমিং গেম, ইউটিউব এবং ওয়েবসাইট ব্রাউজারে প্রায়ই স্পীড নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়।
আপনি যদি বাড়িতে হোম নেটওয়ার্ক বা ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আজকে আলোচনা করব কিভাবে, বিভিন্ন মেথড ফলো করে এর পূর্ণ গতি পাওয়া যায়।
ইন্টারনেটে স্পীডে সমস্যা দেখা দিলে ওয়াইফাই এর সমস্যা খুঁজে বের করার আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে, আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ঠিক আছে কিনা। ISP সংক্রান্ত সমস্যা আছে কিনা সেটা জেনে নেয়া জরুরি। এটার জনার জন্য প্রথমে আপনার ISP কে কল করুন, জানুন লাইনে কাজ হচ্ছে কিনা। আরেকটা কাজ করতে পারেন, আপনার ইথারনেট ক্যাবলটি সরাসরি ল্যাপটপ বা অন্য ডিভাইসে প্লাগ-ইন করুন। দেখুন ইন্টারনেট ঠিক মত চলছে কিনা।
যদি সরাসরি ক্যাবল কানেক্ট করার পরেও ইন্টারনেট কাজ না করে তাহলে বুঝে নেবেন সমস্যা আপনার লাইনে। ISP কে কল দিন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
তবে ল্যাপটপে ক্যাবল কানেক্ট করার পর যদি ইন্টারনেট ঠিক মত চলে তাহলে বুঝবেন সমস্যা আপনার ওয়াইফাই কানেকশনে। কখনো কখনো আরেকটা সমস্যা হতে পারে, আপনি যে ওয়েবসাইটে ঢুকতে চাচ্ছেন হতে পারে সেটা ডাউন হয়ে আছে। ওয়েবসাইট ডাউন আছে কিনা চেক করতে IsUp.me ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করতে পারেন।
তাছাড়া আপনি ইন্টারনেট স্পীড চেক করার জন্য Speed Test ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন। ওয়াইফাই ডিভাইস এবং সরাসরি ইথারনেট ক্যাবল দুই ভাবেই স্পীড চেক করুন। তবে মনে রাখবেন ক্যাবল কানেকশন থেকে ওয়াইফাই কানেকশনের স্পীড কিছুটা কম হতেই পারে।
ওয়াইফাই কানেকশনের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য রাউটার সব সময় আপ-টু-ডেট রাখা উচিত। রাউটারের বিভিন্ন বাগ ফিক্স হয় সময় সময় Firmware আপডেট এর মাধ্যমে। স্পীড এর সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হতে পারে নিয়মিত Firmware আপডেট রাখা।
তবে সব সময় রাউটার আপডেট দেয়ার দরকার নেই যদি কোন সমস্যা না দেখা দেয়। যদি আপনার রাউটার ল্যাটেস্ট ভার্সনে আপডেট থাকে তাহলে রাউটারটি রিবুট করুন, Cache ক্লিয়ার দিন এবং প্রয়োজনে সফটওয়্যার রিসেট করুন।
যদি নির্দিষ্ট ডিভাইসে ইন্টারনেট স্পীডে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেই ডিভাইসটি আপডেট আছে কিনা নিশ্চিত হোন। সেটিংস এ গিয়ে আপডেট চেক করুন অথবা ডিভাইস রিস্টার্ট দিন।
ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক সাধারণত অনেক গুলো ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল এবং দুইটি আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের মাধ্যমে ব্রডকাস্ট হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ১১ টি স্ট্যান্ডার্ড ওয়াই-ফাই চ্যানেল এবং ওয়ার্ল্ড-উইড ১৩ টি।
প্রথমদিকে রাউটার গুলো 2.4 GHz এ ব্রডকাস্ট হতো। বর্তমানে হোম ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মডার্ন রাউটার গুলো একই সাথে 2.4GHz অথবা 5GHz এ ব্রডকাস্ট করতে পারে।
তবে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো বা কমানোর সুবিধাটি কখনো কখনো ঝামেলা হয়েও দাড়াতে পারে। কারণ যদি আপনার পাশাপাশি কোন রাউটার বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যদি একই ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্রডকাস্ট হয় তাহলে ফ্রিকোয়েন্সি ওভারক্রাউডেট হয়ে ইন্টারনেট স্পীড কমে যেতে পারে। তাই কখনো সব কিছু ঠিক থাকার পরেও ইন্টারনেট সমস্যা দেখা দিলে রাউটারের চ্যানেল পরিবর্তন করে দেখতে পারেন।
আপনি যদি খেয়াল করেন দিনের কিছু নির্দিষ্ট সময় আপনার ইন্টারনেট স্পিড ড্রপ করছে, তাহলে বুঝবেন নির্দিষ্ট কোন ডিভাইস বা সফটওয়্যার অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ খেয়ে ফেলছে। বড় ফাইল ডাউনলোড, ভিডিও স্ট্রিমিং, এবং অনলাইন গেমিং এ মাত্রাতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ খরচ হতে পারে যা আপনার ওভারঅল ইন্টারনেট স্পীডকে প্রভাবিত করে। সুতরাং আপনার উচিৎ প্রথমেই চেক করা কোন অ্যাপ গুলো বা ডিভাইস গুলো আপনার রাউটার দখল করে আছে।
আপনি বিভিন্ন ভাবে এটা চেক করতে পারেন যেমন Capsa টুল দিয়ে চেক করা যায়।
কখনো কখনো ম্যালওয়্যার এর কারণে অতিরিক্ত ইন্টারনেট ইউজ হতে পারে এজন্য আপনার সিস্টেমে ইন্সটল করা এন্টিভাইরাস সব সময় আপডেট রাখুন এবং নিয়মিত স্ক্যান করুন।
যখন আপনার রাউটারটি সেট করবেন তখন নিশ্চিত হোন উপযুক্ত জায়গায় রাউটারটি সেটআপ করছেন কিনা। কারণ যে জায়গায় রাউটারটি বসানো হচ্ছে তার উপর ইন্টারনেট স্পীড অনেকাংশে নির্ভর করে।
আমরা না দেখলেও ওয়ারলেস সিগনাল গুলো আমাদের চারপাশ দিয়ে চলাচল করে, যদি কোন বাধা পায় তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই এর গতি কমে যেতে পারে। মেটালের কোন বস্তু সিগনাল চলাচলে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। তাই সব সময় এমন জায়গায় রাউটারটি বসাবেন যেখানে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই।
রাউটারটি ঘরের মাঝখানে বসানো সবচেয়ে উপযোগী এতে সিগনাল চমৎকার ভাবে চলাচল করতে পারে। তাছাড়া ভাল স্পীড পেতে ঘরের কোণে রাউটার বসানোর দরকার নেই কারণ সিগনাল ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ব্রডকাস্ট হতে পারে।
মাইক্রোওয়েভ এর মত অন্যান্য ডিভাইসের কারণেও ওয়াইফাই স্পীড কমে যেতে পারে।
যদি আপনার ওয়াইফাই রাউটারে যদি সন্দেহজনক কোন ডিভাইস কানেক্ট থাকতে দেখেন তাহলে দ্রুত সেটা রিমুভ করে দিন। এমনটি হবার কারণ কেউ অবৈধ ভাবে আপনার নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ করেছে। এক্ষেত্রে আপনার উচিত আপনার কানেকশনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
হোম নেটওয়ার্ক সিকিউর করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে তবে মিনিমাম লেভেলের কনফিগারেশন হচ্ছে ডিফল্ট লগইন পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করা। ডিফল্ট ভাবে রাউটারের লগইন পাসওয়ার্ড হয়, Username: admin Password: admin/password। রাউটার সেট করার আগেই আপনার উচিত এটি চেঞ্জ করে ফেলা।
ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক এর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী একটা পাসওয়ার্ড দিন। কমন পাসওয়ার্ড অবশ্যই এড়িয়ে যান। পাসওয়ার্ড কম্বিনেশনে নাম্বার, আপার কেইস, লোয়ার কেইস ব্যবহার করুন।
কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা রাউটারের সিগনাল ছোট খাট হার্ডওয়্যার আপগ্রেড এর মাধ্যমে বৃদ্ধি করতে পারেন। অল্প খরচের মাধ্যমে আপনি সিগনালে দারুণ ইম্প্রুভমেন্ট পেতে পারেন।
পুরনো রাউটার আপডেট করার সহজ একটি পদ্ধতি হচ্ছে এর এন্টেনা আপগ্রেড করা। আপনি ১০ ডলারের মত খরচ করে ভাল মানের এন্টেনা কিনে নিতে পারেন। মডেল অনুযায়ী এন্টেনা নিলে ফিট হতে কোন সমস্যা হবে না।
আপনি যদি ঘরের নির্দিষ্ট এরিয়াতে সিগনাল কম পান সেক্ষেত্রে ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার ইউজ করতে পারেন। যেসব এরিয়াতে সিগনাল পেতে সমস্যা হয় সেসব জায়গায় নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করতে পারে এটি।
নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ তথা অনলাইন গেমিং, অনলাইন স্ট্রিমিং এ উপরের পদক্ষেপ গুলো দারুণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সহজেই অপটিমাইজ করে ফেলতে পারেন আপনার নেটওয়ার্কে।
হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার আপডেট রাখার পাশাপাশি সঠিক জায়গায় রাউটার সেট করে এবং উপযুক্ত চ্যানেল নির্ধারণ করে চমৎকার ইন্টারনেট স্পীড নিশ্চিত করা যায় তবে সেক্ষেত্রে আপনার ডিভাইসটিকে ভাল মত কনফিগার করতে হবে।
আশা করছি উপরের মেথড গুলো ফলো করে আপনার ওয়াইফাই স্পিড ড্রপ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। তো আজকে এ পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ!
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।