টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে। চলুন শুরু করা যাক।
মূলত উইন্ডোজের সফটওয়্যার গুলোর সাথে আমাদের একটা অভ্যস্ততা গড়ে উঠে। আমরা শুরু থেকে যা ব্যবহার করে আসি তা সহজে ছাড়তে চাই না। আবার কিছু কিছু কাজের জন্য আমরা নির্দিষ্ট কিছু সফটওয়্যারকেই চিনি এর বাইরে যেতে চাই না। যেমন ভিডিও প্লেয়ার হিসেবে VLC, টরেন্টিং এর জন্য uTorrent, ফাইল ডাউনলোডের জন্য Internet Download Manager ইত্যাদি।
যদিও ইন্টারনেট ব্রাউজার নিয়ে একটু ঝামেলা আছে! কারণ বিশাল একটা সময় আমরা ব্যবহার করেছি মজিলা ফায়ারফক্স কিন্তু এখন সেই জায়গাটা দখন করে নিয়েছে গুগল ক্রোম। তবে হটাৎ করে মজিলার ইউজারর কমে যাবার পেছনে হাত ছিল গুগলের, যদিও সেটা ভিন্ন টপিক কিন্তু আপনি চাইলে আমার এই "ইন্টারনেট জগতে যেভাবে ব্রাউজার মনোপলি তৈরি করেছে গুগল" বিশ্লেষণ মূলক টিউনের মাধ্যমে সেটা দেখে নিতে পারেন।
তো যা বলছিলাম, উইন্ডোজ ইউজারদের এই অভ্যস্ততা কে পুঁজি করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের বিভিন্ন কার্য হাসিল করে আসছে প্রায় অনেক দিন ধরেই। যেমন আপনি যে সফটওয়্যারটিকে বিশ্বাস করে, প্রায় ৫-৬ বছর ব্যবহার করে আসছেন হটাৎ করে সেটা অন্য কোন কোম্পানি যদি কিনে নেয়, তাহলে আপনার অজান্তেই তারা আপনার বন্ধু হবার নামে ক্ষতি করার পরিকল্পনা শুরু করে দেবে।
আমাদের আজকের মূল বিষয় উইন্ডোজ ইউজারদের বহুল ব্যবহৃত CCleaner। পিসির গতি বাড়াতে, অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করতে, ইত্যাদি কাজে CCleaner ব্যবহার করেন নি এমন উইন্ডোজ ইউজার খুব কমই পাওয়া যাবে। নিঃসন্দেহে এটি ছিল উইন্ডোজ এর বেস্ট ইউটিলিটি টুল।
কিন্তু গত দুয়েক বছর আমার নিজেরও পছন্দের এই টুল CCleaner এর বেশ কিছু সন্দেহজনক আচরণ আমাকে অবাক করেছে। তো তখন থেকেই এটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলাম।
আমার যত দূর ধারণা এর সমস্যা শুরু হয়েছে তখন থেকে যখন ২০১৭ সালে Avast এটিকে কিনে নেয়। আপনারা সবাই হয়তো Avast এর সাথে বেশ পরিচিত কারণ এক সময় এটি ছিল অন্যতম বিশ্বস্ত একটি অ্যান্টি-ভাইরাস, যদিও এখন আর নেই। ইন্টারনেটে Avast এর বিরুদ্ধে হাজার হাজার অভিযোগ থাকার পরে, যখন এটি CCleaner কে কিনে নেয় তখন সেটা আমাকে মোটামুটি ভাবিয়ে তুলেছিল।
তো চলুন দেখে আসি কেন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে CCleaner এখন আর আপনার জন্য নিরাপদ না।
CCleaner এর অন্যতম একটি বিতর্ক ছিল ইউজারের পারমিশন ছাড়াই আপডেট হওয়া। CCleaner এর কমিউনিটি ফোরামে একজন ইউজার দাবী করে, তার পারমিশন ছাড়াই আপডেট হয়ে যাচ্ছে CCleaner। তখন CCleaner এর একজন স্টাফ জানায়, 5.46 ভার্সন থেকে ইউজারকে আরও স্বচ্ছতা এবং ক্ষমতা দেয়ার জন্যই এমন আপডেট করা হয়েছে।
তবে ইউজারের পারমিশন ছাড়া সিস্টেমে গিয়ে সফটওয়্যার আপডেট করার মাধ্যমে কিভাবে, আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় এটি আমার মাথায় আসে নি।
সম্প্রতি CCleaner এর সবচেয়ে বড় বিতর্কটি শুরু হয় এর 5.45 ভার্সনের সাথে। এখানে একটি ফিচার যোগ করা হয়েছে "Active Monitoring" নামে। যার মাধ্যমে এমন একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে যেখানে এটি আপনার অজান্তেই সিস্টেমের ডেটা কালেক্ট করতে পারবে। তো আপনি অবশ্যই চাইবেন এটি বন্ধ রাখতে, কিন্তু যখন আমি এটি বন্ধ করি পরের বার পিসি অন করে আবার দেখতে পাই ফিচারটি অন হয়ে আছে। যা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে।
এই ভার্সিটির আরও আরেকটি সমস্যা ছিল এটি বন্ধ করা, যখন এটি আমি ক্লোজ করতে চাচ্ছিলাম তখন সেটা বন্ধ না হয়ে System Tray এ চলে যাচ্ছিল কিন্তু রাইট ক্লিক করেও কোন Exit বাটন পাচ্ছিলাম না।
যেহেতু CCleaner ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থেকে Avast এর জন্য ডেটা কালেক্ট করছে সুতরাং আমার পরামর্শ হচ্ছে যারা শুধু মাত্র নির্দিষ্ট কাজের জন্য বা অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিটের জন্য CCleaner ওপেন করেন, তারা এটি ব্যবহার করা বাদ দিয়ে দেন।
বেশ কিছু দিন আগে কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে কয়েকবার হ্যাক হয় CCleaner এবং হ্যাকাররা এর মাধ্যমে ইউজারদের পিসিতে ম্যালওয়্যার ছড়াতে থাকে। এমনকি তাদের ৩২ বিট ভার্সনটি একবার Trojan দ্বারাও আক্রান্ত হয়েছিল।
তবে এখানে একটি ভাল দিক হচ্ছে CCleaner নিজে থেকে তার ইউজারদের এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কে অভিহিত করে। কিন্তু এখানে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে যেখানে Avast এত বড় অ্যান্টি-ভাইরাস কোম্পানি, সেখানে তাদের সফটওয়্যারে কিভাবে এই ধরনের আক্রমণ হতে পারে?
তাছাড়া আরও জানা গেছে Avast এর হাতে যাবার পর ইউজারদের প্রায়ই CCleaner পেইড ভার্সনের জন্য Pop-up মেসেজ শো করায় যা বেশ বিরক্তিকর। আপনি নিজেও খেয়াল করে দেখবেন, CCleaner ইন্সটল দেওয়ার সময় তারা Avast ইন্সটল দেবার অফার করে। যদিও টিক না দিলে কোন ভয় নেই।
আমি মনে করি উপরের কারণ গুলো, একজন সচেতন উইন্ডোজ ব্যবহারকারীর CCleaner কে আজকেই ত্যাগ করার জন্য যথেষ্ট। বাকিটা আপনার ইচ্ছে।
প্রথমে Settings > Apps > Apps & features যান এবার CCleaner খুঁজে বের করে Uninstall এ ক্লিক করুন।
তাছাড়া আরও ভালভাবে রিমুভ করতে বিভিন্ন আনইন্সটলারও ব্যবহার করতে পারেন।
এবার সবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে CCleaner এর কাজ গুলো এখন কিভাবে করব? চলুন এবার আপনাদের এই সমস্যা গুলোর সমাধান দেয়া যাক।
আপনি হয়তো জানেন না বেশ কিছু ক্লিনিং ফিচার উইন্ডোজে বিল্ড-ইন অবস্থায় দেয়া আছে।
আপনার উইন্ডোজ এর Disk Cleanup করতে প্রথমেই চলে যান My Pc তে এবং C Drive এ রাইট ক্লিক করে Properties এ যান। DiskCleanup এ ক্লিক করুন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর অপ্রয়োজনীয় ফাইল গুলো দেখাবে এবার Clean up system files এ ক্লিক করুন।
পছন্দমত ফাইল গুলো টিক দিয়ে ডিলিট করে দিন।
যদি সম্প্রতি আপনার উইন্ডোজ আপডেট দিয়ে থাকেন তাহলে Delete Old Windows file নামেও টিক দেবেন। সর্বশেষ আপনার Recycle Bin ক্লিয়ার করে দিন।
Windows 10 সকল স্টোরেজ ম্যানেজ করার জন্য সেটিং এ নতুন একটি ফিচার নিয়ে এসেছে যার মাধ্যমে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আপনার টেম্পরারি ফাইল।
Storage Sense এর মাধ্যমে আপনার স্টোরেজে জমা হওয়া বিভিন্ন ধরনের Temp ফাইল ট্র্যাক হবে এবং ক্লিনও করা যাবে।
প্রথমে Settings > System > Storage এ চলে যান। Configure Storage Sense এ ক্লিক করুন।
Storage Sense অপশন On করে দিন এবং নিচে Clean Now এ ক্লিক করুন।
CCleaner দাবী করে তারা বিভিন্ন ব্রাউজারের Caches ক্লিন করে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে Caches ক্লিন করা কোন দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়, কারণ বার বার ব্রাউজার ব্যবহার করলে এগুলো তৈরি হবেই। আর Caches আপনার ব্রাউজারকে স্মুথ ভাবে চলতেও সাহায্য করে। বড় ধরনের ইস্যু না থাকলে Caches ডিলিট না করাই ভাল।
CCleaner এ আনইন্সটল ফিচার ছিল যা আপনি সহজেই Settings > Apps > Apps & features এ গেলেই পেয়ে যাবেন।
তাছাড়া Ctrl + Shift + Esc চেপে অথবা টাস্ক-বারে গিয়ে রাইট ক্লিক করে Task Manager সিলেক্ট করে Startup ট্যাব থেকে স্টার্ট-আপ প্রোগ্রাম গুলোও ডিজেবল করে দিতে পারবেন।
অথবা Settings > Apps > Startup এখানে গিয়ে এটি করতে পারেন।
Registry cleaner নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না কারণ বেশিভাগ ক্ষেত্রে এটি তেমন কোন পরিবর্তন করতে পারে না। হাজার হাজার Registry ক্লিন করার পরে হতে পারে ক্ষুদ্র কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে Registry ক্লিন করার মাধ্যমে সিস্টেম ব্রেকের বড় সম্ভাবনা থাকে।
আমি উইন্ডোজ এর ফিচার গুলো দিয়েই কিভাবে সকল কাজ করা যায় তা দেখানো চেষ্টা করলাম, তারপরেও যদি কাজ গুলো করতে কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান তাহলে atomiccleaner অথবা BleachBit ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে আমার পরামর্শ থাকবে থার্ড পার্টি কোন সফটওয়্যার না ব্যবহার করাই ভাল।
এত কিছুর পরেও আপনি CCleaner ব্যবহার করবেন কি করবেন না এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর। সব কিছু বাদ দিলেও এর ম্যালওয়্যার ছাড়ানোটা কোন ভাবেই মানা যায় না। তারপরে এই ২০২০ সাল, যেখানে ইউজার প্রাইভেসি নিয়ে এত কথাবার্তা হচ্ছে সেখানে বলব, আপনার এমন সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত যা আপনার প্রাইভেসিকে রেসপেক্ট করবে।
আজকের মত এ পর্যন্তই, তো এই টিউনের পর আপনার মতামত কি তা জানাতে ভুলবেন না। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ-হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।