টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত চলে এসেছি নতুন কোন টিউন নিয়ে। আজকে আলোচনা করব স্মার্ট-ফোনের ফাস্ট চার্জিং নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
স্মার্ট ফোন! বর্তমান যুগে স্মার্ট-ফোন ব্যবহার করেন না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর। দিনের পর দিন মানুষের চাহিদা এই স্মার্ট-ফোনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হচ্ছে। একটা সময় স্মার্ট-ফোনে স্টোরেজ খুঁজতো। যে স্মার্ট-ফোনের স্টোরেজ বেশি ছিল সেটাই ছিল স্বপ্নের ফোন। তারপরে আসে ক্যামেরা! সবাই খুঁজতে শুরু করলো কোন ফোনে সেলফি ভাল হবে, কোন ফোনের ছবি DSLR এর মত হবে ইত্যাদি। তো আমার যদি ভুল না হয়, ২০১৯ থেকে মানুষের এই চাহিদার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
শুরুর দিকে মানুষ ব্যাটারি ক্যাপাসিটি বেশি চাইলেও এখন চাচ্ছে ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি। ইতিমধ্যে বাজারের বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী ফোন কোম্পানি গুলো নিয়ে এসেছে ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজির ফোন এবং চার্জার। কোনটি ফুল চার্জ হয়ে যাচ্ছে ১ ঘণ্টায় আবার কোন কোন ফোন হাতে গুনা মাত্র ৩০ মিনিটে দেখাচ্ছে ১০০% চার্জ। বর্তমান সময়ে কেউ নতুন ফোন কিনতে চাইলে অবশ্যই ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি খুঁজে এটা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
তো আপনাদের মনে হয়তো কখনো কখনো প্রশ্ন উঠে এই প্রযুক্তিটি কিভাবে কাজ করে? আজকের টিউনে আমি সেই বিষয়টি নিয়েই কথা বলব।
যদিও আপনার ফোন ফাস্ট চার্জ হবে নাকি রেগুলার স্পীডে চার্জ হবে সেটা নির্ভর করে আপনার ফোনের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার উপর তবুও কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো ফোনের চার্জকে প্রভাবিত করে।
বাজারে অনেক ধরনের USB ক্যাবল পাওয়া যায় এবং দ্রুত চার্জিং এর ক্ষেত্রে এর দারুণ প্রভাব রয়েছে। আপনার ফোনে চার্জ দ্রুত হবে নাকি ধীর গতিতে হবে সেটা নির্ভর করবে আপনার চার্জারে ব্যবহৃত ক্যাবলের উপর।
রেগুলার ক্যাবল আর ফাস্ট চার্জিং ক্যাবলের পার্থক্য কোন জায়গায়? এই প্রশ্নের উত্তর হল, পাওয়ার সাপ্লাই একই হলেও ফাস্ট চার্জিং গুলো দিয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় যা রেগুলার ক্যাবল গুলোতে হয় না।
রেগুলার ক্যাবল গুলো যেখানে মাত্র 2.5W পাওয়ার সাপ্লাই দেয় সেখানে ফাস্ট ক্যাবল গুলো (কোম্পানির উপর নির্ভর করে) 100W পর্যন্ত পাওয়ার সাপ্লাই করতে পারে। যেমন Vivo এর FlashCharge ৪০০০mAh ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ করে ফেলতে পারে মাত্র ১৩ মিনিটে। এই Flashcharge এর ক্যাবলটি 120W পর্যন্ত পাওয়ার সাপ্লাই দিতে পারে। অন্যদিকে Xiaomi এর Turbo Charger, 100W এর বেশি পাওয়ার সাপ্লাই দিতে পারে।
সুতরাং এতক্ষণে হয়তো বুঝতে পেরেছেন, আপনার চার্জার বা পাওয়ার অ্যাডাপ্টার ফাস্ট চার্জিং এর ক্ষমতা রাখলেও ক্যাবল রেগুলার চার্জিং এর হলে সেটা ফোনকে দ্রুত চার্জ করতে পারবে না।
আগেই আলোচনা করেছি তার দিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই এর উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ লাগবে চার্জ হতে। সুতরাং এটা সাধারণ ফিজিক্স, যে ক্যাবলের ভেতরের তার গুলোর আকার নির্ধারণ করে দেবে যে সেগুলো কতটা দ্রুত বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারবে। সাধারণ ভাবেই বেশি তার দিয়ে বেশি বিদ্যুৎ স্থানান্তরিত হবে।
সাধারণ ক্যাবল গুলোর ভেতরে 28 Guage তার ব্যবহৃত হয় যেখানে ফাস্ট ক্যাবল গুলোতে ব্যবহৃত হয় আরও বড় এবং ঘন 24 Guage তার, যা ব্যাটারি গুলোতে অধিক বিদ্যুৎ কম সময়ে প্রেরণ করতে পারে। নিচে বিভিন্ন তারের Guage এর ধরন দেয়া হল।
যেখানে রেগুলার ক্যাবল 0.5A কারেন্ট প্রেরণ করে সেখানে ফাস্ট ক্যাবল গুলো প্রায় 2A অথবা এর বেশি কারেন্ট প্রেরণ করতে পারে।
যদি আমাদের ফোনের সাথে ফাস্ট চার্জিং ক্যাবল দেয়া থাকে তাহলে তো টেনশন নেই। কিন্তু যদি বাজার থেকে কোন ক্যাবল কিনতে হয় তাহলে কি করবে? কিভাবে চিনবেন কোন ফাস্ট চার্জিং ক্যাবল আর কোনটি রেগুলার ক্যাবল? দুইটি দেখতে প্রায় এক হওয়াতে কখনো কখনো আপনি ভুল করতে পারেন। চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে বুঝবেন আপনার ক্যাবলটি ফাস্ট নাকি রেগুলার।
কিছু কিছু কোম্পানি সহজেই তাদের ক্যাবল চেনার জন্য সঠিক ডেসক্রিপশন দিয়ে দেয়। সেগুলোর মাধ্যমে আপনি ফাস্ট ক্যাবল চিনতে পারবেন। এজন্য আপনাকে ক্যাবল ব্র্যান্ড, ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে কিনা, লেবেল ইত্যাদি ভাল করে খেয়াল করতে হবে। যদিও বাজারের বিভিন্ন অচেনা ব্র্যান্ড তাদের ১০০ টাকার ক্যাবলেও ফাস্ট চার্জিং লিখে রাখে, সেক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের দিকে নজর দিতে হবে।
আপনার ক্যাবলটি ফাস্ট নাকি স্লো এটি আরেকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করবে আর সেটি হচ্ছে amperage। আগেই বলেছিলাম ফাস্ট চার্জিং ক্যাবল গুলো 2A এর বেশি কারেন্ট সাপ্লাই দেবে সুতরাং ক্যাবলের লেবেলে দেখে নিন এটি 2A সাপোর্ট করবে কিনা।
স্বাভাবিকভাবেই অনেকের ধারনা মোটা ক্যাবল দিয়ে দ্রুত চার্জ হয় এটা সব ক্ষেত্রে ঠিক না হলেও ফাস্ট চার্জিং ক্যাবল গুলো সাধারণ ভাবে একটু মোটাই থাকে। বাজারের কম দামি ক্যাবল গুলোর ভেতরের তার গুলো অনেক চিকন হয় তাই সেগুলো দিয়ে দ্রুত চার্জ হয় না। ফাস্ট চার্জিং চাইলে অবশ্যই চিকন তারের চার্জার পরিহার করতে হবে তবে আপনার আসল চার্জারে যদি চিকন তাদের ক্যাবল থাকে সেটা ভিন্ন কথা
আগেই বলেছিলাম ফাস্ট চার্জিং এর জন্য অবশ্যই ব্র্যান্ড ফলো করুন। যেহেতু এই যুগে সব কিছুই কপি হচ্ছে সুতরাং প্রতারিত না হতে চাইলে অবশ্যই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল বা সার্টিফাইড দোকান থেকে ক্যাবল কিনুন।
ফাস্ট চার্জিং এর সব চেয়ে বড় যে সুবিধা সেটা হল দ্রুত চার্জের মাধ্যমে আমাদের ফোনকে আরও কার্যকরী করে তুলা। দীর্ঘ সময় ফোনকে চার্জে রাখতে আমাদের সবারই প্রায় অনীহা লাগে, একই ভাবে জরুরী কোন কাজে বের হলে চার্জ দেওয়া যায় না কম সময়ের মধ্যে। সুতরাং ফাস্ট চার্জিং এর মাধ্যমে দ্রুতই আপনার ফোনটিকে ব্যবহার উপযোগী করে ফেলতে পারছেন।
বর্তমানে প্রায় সকল ডিভাইসের OLED ডিসপ্লে থাকে এবং আরও আধুনিক ডিসপ্লেও থাকতে পারে সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবে সঠিক কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য ফাস্ট চার্জিং এর প্রয়োজন পড়ে।
যদি অসুবিধার কথা বলি তাহলে বলতে হবে, যদি আপনার ফোনে আগে থেকে ফাস্ট চার্জিং দেয়া না থাকে বাইরে থেকে ফাস্ট চার্জার কিনে চার্জ দেন তাহলে ফোনের সমস্যা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাছাড়া Lithium-Ion ব্যাটারির ক্ষেত্রে ফাস্ট চার্জিং কখনো কখনো ব্যাটারির লাইফ স্পেন কমিয়ে ফেলতে পারে।
কখনো কখনো ফাস্ট চার্জিং এর ফলে আপনার ডিভাইস বেশি গরম হয়ে যেতে পারে যা ব্যাটারি এবং ফোন উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ।
ফাস্ট চার্জিং নিশ্চিত করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন টেকনোলজি ব্যবহার করে। যেমন কোন কোম্পানি তাদের ফোনের ব্যাটারির দুটি অংশে ভাগ করে চার্জারের ভোল্টেজ বাড়িয়ে দ্রুত চার্জের ব্যবস্থা করে। আবার কেউ কেউ শুধু ভোল্টেজ বাড়ায়। এখন যদি ভিন্ন ভিন্ন টেকনোলজির চার্জার ভিন্ন ভিন্ন ফোনে ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটা যেকোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে এখন হয়তো আর ফোন ৩/৪ ঘণ্টা চার্জে ফেলে রাখতে চাই না আর এজন্যই কোম্পানি গুলো নতুন নতুন চার্জিং টেকনোলজি নিয়ে আসছে। ফাস্ট চার্জিং অভিজ্ঞতা পেতে হলে আগে ফোনের ব্রান্ড বা কোম্পানি নিশ্চিত করুন এবং ফোনে ব্যবহৃত টেকনোলজি গুলো সম্পর্কে সিউর হোন।
আশা করছি এই টিউনটি আপনাকে ফাস্ট চার্জিং সম্পর্কে ভাল একটি ধারনা দিতে পারবে তারপরেও কোন বিষয় না বুঝতে পারলে অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে টিউমেন্ট করুন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।