টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত আজকেও হাজির হলাম নতুন কিছু নিয়ে। আজকে আমি একটি প্রফেশনাল ই-মেইল লেখার ১৫ টি শিষ্টাচার নিয়ে আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক।
আমাদের জীবনে ইমেইলে গুরুত্ব অনেক। যদিও এখন চারপাশে রয়েছে অসংখ্য ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ তারপরেও ই-মেইল এর আবেদন কখনোই কমে নি বা কমবেও না। অফিস আদালতের বিভিন্ন যোগাযোগে এখনো সবাই ই-মেইলকেই প্রেফার করে।
বর্তমানে মার্কেটিং অথবা বিপণনে ই-মেইল এর রয়েছে দারুণ গুরুত্ব। এমনকি সরাসরি বিশাল ক্রেতাকে নতুন কিছু জানানোর একমাত্র মাধ্যম হল ই-মেইল বিপণন। অনেক আগে থেকে মার্কেটিং তথা ব্যবসায় বাণিজ্যে ই-মেইল এর প্রচলন ছিল। পূর্বের ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা এবং নতুন পণ্যের ক্রেতা তৈরিতে ই-মেইল এর বিকল্প নেই। অন্য দিকে ই-মেইল বিপণন খুবই জনপ্রিয় বর্তমানে ব্যবসায় জগতে। এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ সময় এবং অর্থের অপচয় রোধ। একমাত্র ই-মেইল এর মাধ্যমে খুবই কম সময়ে এবং কম খরচে যোগাযোগ করা যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বর্তমানে ইমেইলে টেক্সট এর পাশাপাশি বিভিন্ন ফাইন আদান প্রদান করা যায়।
বর্তমানে ই-মেইল এর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেমন, Gmail, yahoo mail ইত্যাদি। ই-মেইল এর অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে Gmail বর্তমানে সর্বাধিক ব্যবহৃত। দ্রুত এবং সহজ যোগাযোগ এর জন্য দিনের দিন আপডেট করা হচ্ছে ই-মেইল সেবা।
একটি রিসার্চে উঠে এসেছে আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত কর্মীরা দিনে ৫ ঘণ্টা ব্যয় করে তাদের ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত ই-মেইল চেক করাতে। তারা যেকোনো জায়গায় যেমন, ড্রাইভিং এ, টিভি দেখার সময়, মিটিং এর সময়, খাওয়ার সময় ই-মেইল চেক করে থাকে। আপনার পাঠানো মেইল বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ
আমরা সবাই মোটামুটি ইমেইলের রিপ্লাই বাটন ব্যবহার করি কিন্তু অধিকাংশই জানি না কিভাবে একটি প্রফেশনাল মানের ই-মেইল লেখতে হয়। চলুন জেনে নেয়া যাক ই-মেইলের ১৫ টি শিষ্টাচার।
মানুষজন সাধারণত আপনার ইমেইলের শিরোনাম দেখেই ডিসিশন নেয় মেইলটি পড়বে কি পড়বে না তাই সাবজেক্ট লেখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
কিছু চমৎকার সাবজেক্ট দেয়া হল, "আপনার রবিবারের মিটিংটি স্থগিত করা হয়েছে", " আপনার প্রেজেন্টেশন এর প্রশ্ন গুলো", "আমরা আপনার প্রস্তাবে রাজী"। যদি ইংরেজিতে মেইল লিখতে চান তাহলে এই সাবজেক্ট লাইন গুলো ব্যবহার করতে পারেন,
আপনি যেখানে মেইল পাঠাতে যাচ্ছেন সেখানে আপনার পরিচিত কি এটার উপর ই-মেইল এড্রেস কি হবে তা নির্ভর করবে। যেমন আপনি ব্যক্তিগত কোন মেইল পাঠালে সেখানে আপনার ব্যক্তিগত মেইল ব্যবহার হতে পারে যেমন, [email protected]।
আপনি যখন কোন কোম্পানির পক্ষ থেকে মেইল করবেন সেক্ষেত্রে দেখতে হবে মেইল এড্রেসটি আপনার কোম্পানিকে রিপ্রেজেন্ট করছে কিনা যেমন, [email protected] ইত্যাদি।
কিছু কিছু ই-মেইল এড্রেস একদম বর্জন করতে হবে যেমন, babygirls@. lovelyboy@. ইত্যাদি।
প্রতিদিন আমাদের অনেক মেইল আসবে কিন্তু এটা জরুরী নয় যে সবার মেইলের রিপ্লাই দিতে হবে। আপনি ই-মেইলটি ভালভাবে পড়ুন, দেখুন আপনার রিপ্লাই চাচ্ছে কিনা তারপর সিদ্ধান্ত নিন যে রিপ্লাই দেবেন কিনা। ঠিক যাদের রিপ্লাই দেয়ার প্রয়োজন আছে তাদের মেইলেরই কেবল রিপ্লাই দিন।
আপনার ই-মেইল যাকে পাঠাবেন খেয়াল করুন সে আপনার পরিচয় ভাবে পাচ্ছে কিনা। আপনার পরিচয় ঠিকভাবে দিতে এবং ই-মেইলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে আপনার নিজের একটি সিগনেচার তৈরি করুন এবং প্রয়োজন সব মেইলে একই সিগনেচার ব্যবহার করুন।
খেয়াল করবেন যেন সিগনেচারের font, type size, and color আপনার বাকি মেইলের মতই হয় আলাদা ফন্ট ব্যবহার করার দরকার নেই।
একটি প্রফেশনাল মেইল লিখার আগে গতানুগতিক সম্বোধন সূচক শব্দ গুলো পরিহার করতে হবে যেমন, “Hey you guys, ” “Yah, ” or “Hi folks.”
আমরা হয়তো ইনফর্মাল জায়গায় ok কে Yah বলতে পারি কিন্তু যেহেতু ইমেইল একটা ফর্মাল বিষয় সুতরাং সেখানে সব কিছু প্রফেশনাল ভাবে করতে হবে।
কারো নাম ধরে কিছু বলতে চাইলে অবশ্যই আগে কিছু সম্বোধন সূচক কিছু ব্যবহার করুন যেমন, "Hi Kamal" সরাসরি "kamal" পরিহার করুন।
আমরা কারো সাথে চ্যাট করে বা টেকস মেসেজ কোন বাক্যে প্রায়ই একাধিক আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করি এবং বিভিন্ন ইমোজি ব্যবহার করে থাকি এটা মেইলের ক্ষেত্রে একদমই করা যাবে না৷ যেকোনো বাক্য শেষ করে উপযুক্ত যতি চিহ্ন ব্যবহার করাই ইমেইলের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ।
আমরা যেহেতু ব্যবসায়িক বিভিন্ন কাজে ই-মেইল আদান প্রদান করে থাকি সুতরাং মেইলের মাঝে হাস্যকর কোন বাক্য বা শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। যেহেতু ই-মেইল একটি ফর্মাল বিষয় সেহেতু যাকে ই-মেইল পাঠাবেন তার সম্পর্কে না জেনে হাস্যরসাত্মক কোন বাক্য ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে অপর পক্ষ আপনার সম্পর্কে এবং আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে পারে।
যাকে পাঠাবেন বা যে দেশে ইমেইল পাঠাবেন সেই দেশ সম্পর্কে ভালভাবে তথ্য জেনে মেইল লিখুন। বাইরের দেশে ব্যবসায় করতে গেলে অবশ্যই আগে সেই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আচার-আচরণ ইত্যাদি জেনে তারপর ব্যবসায় সিদ্ধান্ত নিতে হয় তেমনি কোন দেশে বা কোন প্রতিষ্ঠানে আপনার মেইলটি যাবে সে বিষয়ে ভাল ধারনা রাখতে হবে। একেক সংস্কৃতির মানুষ জন একেক ধরনের সম্বোধন বা বাক্য পছন্দ করে তাই সঠিক যোগাযোগের জন্য অবশ্যই কালচার জানাটা জরুরী।
মাঝে মাঝে অন্য ব্যক্তির মেইল আপনার মেইলে চলে আসতে পারে সেক্ষেত্রে আপনি ভদ্রতা দেখাতে পারেন কারণ অপর-পাশের ব্যক্তি এর মাধ্যমে জানতে পারবে তার মেইল ঠিক জায়গায় যায় নি। এমনকি এতে করে তার সাথে আপনার একটি সম্পর্ক ও তৈরি হতে পারে।
আপনার মেইলটি ফাইনালি পাঠানোর আগে অবশ্যই প্রাপকের জায়গা থেকে দু একবার পড়ুন দেখুন কোন ভুল আছে কিনা বিশেষ করে বানানের দিকে নজর দিন। বানান ভুল আপনার মেইলের আবেদনই নষ্ট করে দিতে পারে এতে করে অপর পক্ষ আপনার সম্পর্কে এবং আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে পারে।
আমরা অনেকে একটি ভুল করে থাকি মেইল শুরু করার প্রথমে যাকে পাঠাব তার মেইল এড্রেস দিয়ে দিই এটা আগেই করা যাবে না। কারণ এতে করে মেইল ভাল ভাবে শেষ হবার আগেই ভুলবশত চলে যেতে পারে যা আপনার জন্য লজ্জাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তাই আপনার মেইল আগে ভাল ভাবে শেষ করুন সবার শেষ এ মেইল এড্রেস দিন।
যখন to তে কোন ব্যক্তি সিলেক্ট করবেন তখন অবশ্যই চেক করুন সঠিক ব্যক্তিকেই দিচ্ছেন কিনা। প্রায় সময় হয় মেইল এড্রেস লিখার পর একাধিক সাজেশন চলে আসে। তাই এই দিকে ভাল ভাবে নজর দিতে হবে। এবং সঠিক ব্যক্তিকে সিলেক্ট করে মেইল সেন্ড করতে হবে।
ই-মেইল যেহেতু একটি ফর্মাল লিখনি তাই চেষ্টা করতে হবে ক্লাসিক ফন্ট গুলো ব্যবহার করার এখানে অতিরিক্ত ডিজাইনের আঁকাবাঁকা ফন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অফিস আদালতে যেহেতু, Arial, Calibri, অথবা এই Times New Roman ফন্ট ব্যবহৃত হয় সেহেতু মেইলের ক্ষেত্রেও এগুলো ব্যবহার করাই শ্রেয়।
ইমেইলের ক্ষেত্রে সব সময় নেগেটিভ শব্দ পরিহার করতে হবে যেমন, “failure, ” “wrong, ” অথবা “neglected”। এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করুন যেগুলো আপনার সম্পর্কে অপর পক্ষকে একটি ভাল ধারণা দেবে যেমন বেশি ব্যবহার করুন, “please” “thank you, ” অথবা আরও কিছু পজিটিভ শব্দ।
সব শেষ আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে কি লিখছেন তার উপর। আপনি যা লিখবেন অবশ্যই বিচার বিশ্লেষণ করে লিখবেন কারণ এটার উপর আপনার ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত। বারবার মতামত পাল্টানো যাবে না নিজের সিদ্ধান্তে আপনাকে অটল থাকতে হবে। এবং আপনাকে ভাবতে হবে অন্যরা আপনার মেইলটি পড়ে কি বুঝবে এবং আপনার সম্পর্কে, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কি ভাববে।
ব্যক্তিগত ই-মেইল আর ব্যবসায়িক ইমেইলের মাঝে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। একটি ব্যবসায়িক ইমেইলের উপর নির্ভর করবে আপনার একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক তৈরি হবে কিনা। আপনি একটি নির্দিষ্ট প্রজেক্ট পাবেন কিনা।
প্রতিদিন একটি ই-মেইল এজন্য যেমন হাজার কোম্পানি এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমনি ভুলভাবে ই-মেইল লেখার কারণে অনেক কোম্পানি হারিয়ে যাচ্ছে। একটি ব্যবসায়িক ইমেইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অপর পক্ষের কালচার বা ঐতিহ্য জানা। আপনি আপনার একটা লেখা তখনি অন্য পক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারবেন যখন সেটা তার মত করে হবে। আবার আপনার কাছে কোন কোন শব্দ পজিটিভ মনে হলেও অপর পক্ষের নিকট তা নেগেটিভ হতেই পারে কারণ একেক জাতি একেক ভাবে যোগাযোগে অভ্যস্ত। আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের গতানুগতিক মেসেজিং এবং ই-মেইল এক জিনিস নয়। আমরা হয়তো বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করতে গিয়ে বিভিন্ন শব্দের শর্টকাট ব্যবহার করি, একাধিক যতি চিহ্ন ব্যবহার করি, বিভিন্ন ইমোজি ব্যবহার করি কিন্তু ইমেইলের ক্ষেত্রে এটা কখনোই করা যাবে না কারণ মনে রাখতে হবে ই-মেইল একটি ফর্মাল যোগাযোগ মাধ্যম।
সব কিছু মিলিয়ে শেষ কথা হচ্ছে অপর পক্ষকে জানুন নিজের ভেতরে ইমেইলের শিষ্টাচার গুলো তৈরি করুন এবং যোগাযোগ করুন।
কেমন হল আজকের টিউন জানাতে অবশ্যই টিউমেন্ট করুন এবং জানান আপনার কাছেও আছে কিনা কোনও শিষ্টাচার যা আমরা ব্যবহার করতে পারি।
পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আমাদের সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন কারণ আপনার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।