অনলাইন লাইফে সিকুরিটি মেইনটেইন করাটা একটি ঝামেলাপূর্ণ কাজ হলেও সিকুরিটি সঠিক ভাবে মেনে চলাটা একটি বুদ্ধিমানের কাজ। ছোটখাট কিংবা বড়সড় হ্যাকের কারণে আমাদের অনলাইন তথ্যগুলোও প্রায়ই চুরি হয়ে যায়। বর্তমানে সব থেকে বড় সোশাল সাইট বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। আর আপনি ইতিমধ্যেই জানেন যে ফেসবুকে সম্প্রতি সময়ে ডাটা লিকের একটি স্ক্যান্ডাল ঘটে গিয়েছে। কিন্তু আপনি এটা জানেন কি এই স্ক্যান্ডালটি কোনো নিয়মাগতিক হ্যাকিংয়ের কাজ নয়। ২০১৪ সালে একজন মানুষ নিজেকে রিসার্চার হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেসবুক থেকে ডাটা সংগ্রহের কাজটি শুরু করেন, যেটি তখনকার ফেসবুকের নীতিমালায় সিদ্ধ ছিলো। সেই মানুষটি ফেসবুকের লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর ডাটা এবং তথ্যগুলোকে একটি আইটি এলাইটিকস ফার্ম Cambride Analytica কে দিয়ে দেয়। খবর পাওয়ার পর ফেসবুক Cambride Analytica কে ডাটাগুলো এবং তথ্যগুলোকে ধ্বংস করে দেবার নির্দেশ দেয় এবং ক্যামব্রিজ বলেছে যে তারা ডাটাগুলোকে মুছে দিয়েছে। তবে এখনো গুজব রয়েছে যে ডাটা এবং তথ্যগুলো ক্যামব্রিজের কাছেই রয়েছে। এই দিয়ে গত কয়েকমাস ধরে টেক বিশ্বে তোলপাড় চলছে। টেকটিউনস টেকবুমের খবরে আপনারা সেটা দেখে থাকবেন।
এটা কোনো নতুন কথা নয়, কারণ বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো সঠিক স্থানে ব্যবহার করে প্রচুর টাকাপয়সা কামিয়ে থাকে। কখনো সেটা হয় আইনসিদ্ধ উপায়ে আবার কখনো সেটা হয় বেআইনীভাবে। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না ফেসবুক থেকে আপনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সমর্থিত পার্টির তথ্যগুলো বিপরীত কোনো পার্টির কাছে চলে যাক! তাই এপ্রিল ১৯ থেকে ফেসবুকের নতুন প্রাইভেসি সেটিংস অনুযায়ী আপনি আপনার ফেসবুক একাউন্টকে সুরক্ষিত করে নিয়েছেন তো? যদি না নিয়ে থাকেন তাহলে আমার আজকের এই টিউনটি আপনাদেরই জন্য। তো চলুন দেখে নেই কিভাবে ফেসবুকের নতুন পলিসি অনুযায়ী আপনার ব্যক্তিগত ডাটা শেয়ারিং থেকে ফেসবুক সহ অনান্য প্রতিষ্ঠানকে বিরত রাখবেন:
আপনার ফেসবুক একাউন্টে এপ্রিল ১৯ এর পরে প্রথমবার লগইন করার পর নিউজ ফিডে প্রথমেই এই বার্তাটিকে আপনি দেখে থাকবেন। এর মাধ্যমে ফেসবুক আপনাকে বলতে চাইছে যে ফেসবুকে একটি সমস্যা হয়েছে এবং এখন আপনাকে আপনার প্রাইভেসি সেটিংসগুলোকে আবারো একবার চেক করে নেওয়া দরকার যাতে ভবিষ্যৎতে আর কোনো সমস্যা না হয়। এই মেসেজটির পবাার পর ফেসবুক নিজে থেকেই আপনার সকল ডিভাইস এবং সাইট থেকে ফেসবুক লগইনকে সাইন আউট করে দেবে। তারপর ফেসবুক তাদের নতুন ডাটা শেয়ারিং পলিসির অনুযায়ী আপনার একাউন্টকে সাজিয়ে দেবে। তবে ফেসবুকের ডিফল্ট সাজানোর উপর নির্ভর না করে আপনি নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে নিজেই নিজের একাউন্টের ডাটা শেয়ারিং অংশগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
উল্লেখিত নিউজ ফিডের সেই লিংকটি থেকে এবং আপনি নিজেই থেকেই ফেসবুকের সেটিংস থেকে অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট সেটিংস পেজে চলে আসুন। এখানে আপনার ফেসবুক একাউন্ট দিয়ে আপনি কোন কোন ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস রেজিস্ট্রি করে রেখেছেন সেগুলো আপনি দেখতে পারবেন। এই পেজে আসতে চাইলে সরাসরি App Settings লিংকে ক্লিক করুন বা ফেসবুক ওয়েব থেকে Settings > Apps and Websites অপশনে চলে আসুন। আর স্মার্টফোন থেকে প্রথমে হ্যামবার্গার মেন্যুতে গিয়ে সেটিংস অপশনে যান এবং সেখান থেকে Apps > Logged in with Facebook সেটিংয়ে চলে আসুন।
এখানে এসে একটিভ ট্যাবে আপনি আপনার একাউন্ট থেকে রেজিস্ট্রিকৃত বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং অ্যাপসের লিস্ট দেখবেন। এগুলোকে ভালো করে চেক করুন। এদের মধ্যে কোনোটিকে দরকার না হলে এবং আপনি নিজে এদের কোনোটিকে না চিনে থাকলে এন্ট্রিগুলোর পাশের চেকবক্সে ক্লিক করে Remove বাটনে ক্লিক করুন এবং উক্ত ওয়েবসাইট ও অ্যাপসগুলোকে আপনার একাউন্ট থেকে মুছে দিন। এবং প্রয়োজন না হলে ফেসবুকের একাউন্ট দিয়ে অন্যত্র কোথাও লগইন করা থেকে বিরত থাকুন।
আপনার অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট লিস্টের কোনো অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে সেগুলো উপর কার্সর নিয়ে View and edit লিংকে ক্লিক করুন, এতে উক্ত এন্ট্রির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন।
এখান থেকে অ্যাপটি আপনার একাউন্টের কি কি তথ্য শেয়ার করছে সেটা আপনি পরখ করে নিতে পারেন। এগুলো থেকে যেটিকে আপনি পছন্দ করছেন না সেসকল পারমিশনগুলোকে সেটিংস থেকে টিক চিহ্ন উঠিয়ে দিতে পারেন যদি আপনি অ্যাপটি বা ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করে যেতে চান। স্বাভাবিক ভাবেই আপনার ফ্রেন্ড লিস্ট তথ্য, টাইমলাইন টিউন, স্ট্যাটাস আপডেট, ইভেন্ট ইত্যাদিগুলোকে এই সকল অ্যাপস এবং ওয়েবসাইটের শেয়ারিং থেকে দূরে রাখাটাই শ্রেয়। এভাবে প্রত্যেকটি একটিভ অ্যাপস এবং ওয়েবসাইটগুলোকে আপনি চেক করে নিতে পারেন এবং সেটিংস করে নিতে পারেন।
একটিভ লিস্ট থেকে কোনো সাইট এবং অ্যাপস রিমুভ করার সময় আপনি এই ওয়ানিংটি পাবেন। লিস্ট থেকে অ্যাপস এবং সাইটগুলো মুছে দিলে উক্ত অ্যাপ এবং সাইট থেকে আপনার একাউন্টের এক্টিভিটিগুলোও, একাউন্টটি মুছে যাবে। একই সাথে এই অ্যাপস বা সাইট রিলেটেড কোনো টিউন, ছবি বা অনান্য তথ্য আপনার ফেসবুক একাউন্টে থেকে থাকে তাহলে নিচের বক্সে টিক দিয়ে সেগুলোকেও আপনি একেবারে মুছে দিতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে কোনো সাইট এবং অ্যাপস মুছে দেওয়ার পর আপনি এই কনফার্মেশন স্ক্রিণটি পাবেন। এখানে আপনি অ্যাপস এবং সাইটের সংখ্যা অনুযায়ী ফেসবুক সময় নিয়ে উক্ত সাইট ও অ্যাপসগুলোকে মুছে দেবে।
একটিভ ট্যাবের পাশেই রয়েছে Expired ট্যাব। সেখানে ক্লিক করে চলে আসুন। এখানে যেসকল অ্যাপস এবং ওয়েবসাইটের লিস্ট দেখতে পাবেন সেগুলো হচ্ছে আপনার একাউন্ট দিয়ে খোলা সকল অ্যাপস ও সাইটের লিস্ট যেগুলোর লগইন ইনফো Expired হয়ে গিয়েছে। এগুলোকেও আপনি এক এক করে রিমুভ করে দিন। কারণ এগুলো এমনিতেই কাজে লাগবে না। তবে এটা আপনার একাউন্টের সাথে সংযুক্ত থাকলে বিপদের চান্স থেকে যায়। এছাড়াও একটিভ ট্যাবের মতোই প্রতিটি এন্টির নিচের View and edit লিংকে ক্লিক করে এতদিন এগুলোর সাথে আপনি কি কি তথ্য শেয়ার করে আসছিলেন সেটাও দেখতে পারবেন।
এই অপশনের শেষ ট্যাবটি হলো Removed। এখানে আপনি এ যাবৎপর্যন্ত যতগুলো অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট ডিলেট করে দিয়েছেন সেগুলোকে দেখতে পাবেন। কোনো এন্ট্রির উপর সন্দেহ হলে সেটা নিচের View details লিংকে ক্লিক করে সেটার বিস্তারিত তথ্য আপনি জেনে নিতে পারবেন।
আপনি যদি আপনার ফেসবুক একাউন্টটি নিউক্লিয়ার সুরক্ষায় সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে যাবতীয় সকল থার্ড পার্টি অ্যাপস এবং ওয়েবসাইটগুলোকে আপনার ফেসবুক একাউন্ট দিয়ে ব্যবহার করা বন্ধ করতে পারেন। এজন্য ডেক্সটপে থাকা অবস্থায় চলে যান সেটিংস মেন্যুতে, সেখান থেকে Apss and Websites পেজে গিয়ে নিচের দিকে স্ক্রল ডাউন করে আসুন। Apps, Websites, and Games নামের একটি বক্স পাবেন। এটার নিচে দেখবেন Turned On বলা রয়েছে। এবার আপনি চিত্রে দেখানো মতো Edit বাটনে ক্লিক করুন। একটি পপ আপ আসবে
এখান থেকে আপনি Turn Off বাটনে ক্লিক করে এই সার্ভিস করে একদম বন্ধ করে দিতে পারবেন। এর মাধ্যমে এখন থেকে আপনার ফেসবুক একাউন্টের কোনো ডাটা এবং তথ্যগুলো কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ এবং সাইটের সাথে শেয়ার হবে না। তবে একই সাথে আপনি আর নতুন করে কোনো সাইট বা অ্যাপে ফেসবুক একাউন্ট দিয়ে লগইন বা রেজিস্টার করতে পারবেন না (যা করা উচিত নয়)
Apps and Websites পেজে থাকা অবস্থায় ডান দিকে আরেকটি বক্স পাবেন যার নাম Game and App Notifications। এখানে চলে আসুন। এডিট বাটনে ক্লিক করুন। একটি পপ আপ বক্স আসবে, সেখান থেকে Turn Off বাটনে ক্লিক করে আপনি আপনার ফেসবুকে একাউন্টে আপনার ফ্রেন্ড লিস্টের কাছ থেকে বিরক্তিকর গেম রিকোয়েস্ট নোটিফিকেশন থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এখানে ডাটা শেয়ারিং এর কোনো বিষয় নেই কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা বেশ বিরক্তটিকর বিধায় আপনাদের সাথে জিনিসটি শেয়ার করে নিলাম।
ফেসবুকের নতুন ডাটা শেয়ারিং পলিসিট সম্পূর্ণ ভাবে একবার পড়ে নিন। তাহলে ফেসবুক আপনার একাউন্টের ডাটাকে কিভাবে ব্যবহার করতে সেটার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। যদিও এখানে মার্ক জুকারবার্গের মাথায় কি চলছে তা জানা যাবে না অবশ্য! সম্পূর্ণ ডাটা পলিসিটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
এভাবেই আপনি আপনার ফেসবুক একাউন্টের অ্যাপস এবং সাইটগুলোর পারমিশনগুলো একে একে চেক করে নিন। এতে কোথায় আপনি কি কি শেয়ার করছেন বা করে আসছেন সেগুলো জানতে পারবেন। আর কোনো উল্টো পাল্টা অ্যাপস বা সাইট থাকলে সেটা সাথে সাথেই মুছে দিন। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গেমস বা সাইটে সাইন আপের ঝামেলা এড়াতে "sign up using Facebook" অপশনটি ব্যবহার করে থাকি। এতে করে উক্ত সাইটটি বা উক্ত অ্যাপটি আমাদের ফেসবুক একাউন্টে এক ধরনের প্রবেশাধিকার পেয়ে যায়। প্রথমবারে অ্যাপটিকে বা সাইটটিকে নিজে থেকে আমাদের ওয়ালে টিউনিং করা থেকে বিরত রাখতেও গোপনে এগুলো আমাদের একাউন্ট থেকে ডাটা এবং তথ্য চুরি করতে পারবে। তাই আমি টিউনটির শেষে আবারো বলছি, প্রয়োজন না হলে কোনো গেমস, অ্যাপস এবং সাইটে ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
আজ এখান শেষ করছি। টিউনটি ভালো লাগলে উপরের জোস বাটনে ক্লিক করতে “কিপটেমি” করবেন না যেন। আর টিউনটির ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচের টিউমেন্ট বক্সে করে ফেলুন। আর আপনার কোনো টেকনোলজি বিষায়ক সমস্যা থাকলে সেটা টিউমেন্টে না করে সরাসরি আমাদের টেকটিউনস জ্যাকেটে টিউন দিন। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি সোশাল প্ল্যাটফর্ম টেকটিউনস এ।
টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!