কম্পিউটার কেনার সময় সাথে একজন এক্সপার্টকে কেন রাখতে বলা হয়? যাতে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এবং বাজেট মতো কম্পিউটারের সঠিক যন্ত্রাংশে সঠিকভাবে বাজেটটি ব্যবহার করতে পারেন। কম্পিউটার সাধারণত দুটি কাজের জন্য কেনা হয়ে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে জেনারেল কাজ। যেখানে অফিসের কাজ থেকে শুরু করে ঘরের বিনোদন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অন্যটি হচ্ছে গেমিং এবং হেভি ডিউটি গ্রাফিক্সের কাজের জন্য। প্রথম কাজের জন্য আপনি যেকোনো ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন। তবে গেমিং এবং গ্রাফিক্সের কাজের জন্য আপনাকে আলাদা হাই এন্ড পিসির প্রয়োজন হবে। যাদের বাজেট রয়েছে তারা নিশ্চিন্তে আজকের আমার এই টিউনটি দেখে তাদের গেমিং পিসি বিল্ড করতে পারবেন।
গেমিং জগত সময়ের সাথে সাথে উন্নত হচ্ছে। মাত্র ১২ বছর আগেও গেমিং পিসি বলতে আলাদা কোনো পিসি ছিলো না তবে বর্তমানে গেমসগুলোর অত্যাধুনিক গ্রাফিক্স এবং বড়সড় সাইজ গেমিংয়ের জন্য গেমারদের আলাদা গেমিং পিসি বিল্ড করার জন্য ভাবিয়ে তুলেছে। তো চলুন দেখে নেই গেমিং পিসি বিল্ড করার কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্স:
গেমিং পিসি বিল্ড করার অতো কঠিন কিছু না। হ্যাঁ তবে আপনি যদি এমন একটি পিসি কিনতে চান যা দিয়ে আগামী কয়েক বছর নিশ্চিন্তে গেমস কোপাতে পারবেন তাহলে সেটা একটু কঠিন। আর তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে প্রতি মাসে মাসে কম্পিউটার গেমস এর গ্রাফিক্সের কোয়ালিটি পরিবর্তিত হচ্ছে। আর গেমিং পিসি বিল্ড করতে গিয়ে আপনাকে ভবিষ্যৎতেও হালকা পিসি আপগ্রেড করতে হতে পারে যদি একটি পিসি দিয়ে কয়েক বছর গেমিং এর স্বাদ নিতে চান তবে। গেমিং পিসির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর পারফরমেন্স। তাই গেমিং পিসি মূলত চারটি যন্ত্রাংশের উপর নির্ভর করে। যেগুলো হলো মাদারবোর্ড, প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড এবং র্যাম। এই চারটি জিনিস আপনার পিসিতে যত উন্নত মানের বসাবেন আপনার পিসিটি তত উন্নত মানের পারফরমেন্স দেবে।
গেমিং পিসিতে দুটি ভাগে ভাগ করেছি আমি। প্রথমটি হলো এন্ট্রি লেভেলের গেমিং পিসি। যেখানে আপনি সকল গেমসকে HD রেজুলেশন (1920 x 1080 Pixels) য়ে চালাতে পারবেন এবং গেমস এর গ্রাফিক্স সেটিং থাকবে Low এবং Medium। দ্বিতীয়টি হলো এক্সট্রিম লেভেলের গেমিং পিসি। এই পিসি বানাতে আপনাকে বাজেট ঢালতে হবে। এখানে আপনি সকল গেমসকে UHD (4K, 3849 x 2160 Pixels) য়ে চালাতে পারবেন এবং গেমস এর গ্রাফিক্স সেটিংস থাকলে High এবং Ultra। আর কয়েক বছর পর যে পিসি দিয়ে আপনি গেমসকে Ultra সেটিংসয়ে চালাতে পারছেন সেটি তখন High তে চালাতে হতে পারে। আরো কয়েক বছর পর একই পিসিতে আপনি Medium সেটিংস এর উপরে আর দিতে পারবেন না। তখন আপনার পিসিতে আপগ্রেড করতে হবে।
আপনার পিসির মূল পারফরমেন্স নির্ভর করবে আপনার প্রসেসরের উপর। তাই প্রথমেই আপনাকে সঠিক প্রসেসরটি নির্বাচন করতে হবে। আর প্রসেসরটি যদি সঠিক ভাবে বসাতে পারেন তাহলে এই পিসিতে দিয়ে আগামী কয়েক বছর আপনি নিশ্চিন্তে গেমিং করে যেতে পারবেন। বর্তমানে প্রসেসর এর বাজারে সবথেকে বড় দুটি ব্রান্ড AMD এবং Intel অনেক ধরনের প্রসেসর অফার করছে। তবে লক্ষ্য রাখবেন যে AMD প্রসেসর নিলে আপনাকে মাদারবোর্ডও AMD এর মডেল অনুযায়ী নিতে হবে। বর্তমানে ১৮টি কোর যুক্ত ইন্টেলের কোর আই ৯ এবং অপর দিকে এএমডি রাইজেন সিরিজের নতুন প্রসেসর বাজারে ছেড়েছে। তবে ১৮টি কোর যুক্ত কোর আই ৯ নিতে হলে সেখানে আপনাকে শুধু প্রসেসরেই প্রায় লাখের উপরে বাজেট দিতে হবে আর হ্যা এই প্রসেসরটি শুধুমাত্র একটি মাদারবোর্ডের সাথেই বর্তমানে চলবে।
প্রসেসরটিতে আপনি যত পারেন তত বাজেট বরাদ্দ দিন। কারণ আগামীতে পিসি আপগ্রেডের সময় আপনাকে আর প্রসেসর আপগ্রেড যাতে না করতে হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করুন। কারণ প্রসেসর পাল্টানো একটি ঝামেলার কাজ। প্রসেসরের সাথে মাদারবোর্ডের একটি সরাসরি কানেক্টশন থাকে।
প্রসেসরের স্পিড নির্ধারণ করা হয় GHz গতি আর কোরের সংখ্যার উপর। আর টিউনের শুরুতেই বলা হয়েছে যে এখানে দুই ধরনের পিসি বিল্ড নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
এবার আপনি যদি এন্ট্রি লেভেলের গেমিং পিসি বিল্ড করতে চান তাহলে আপনার দুটি কোর যুক্ত মর্ডান প্রসেসর হলেই চলবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ৭তম প্রজন্মের ডুয়াল কোর প্রসেসর দিয়েই আপনি মিড বা এন্ট্রি লেভেলের গেমিং পিসি বিল্ড করতে পারেন। অথবা সর্বোচ্চ কোর আই ৩ তেও চলে আসতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ডুয়াল কোর আর আই ৩ দুটিতেই দুটো কোর রয়েছে।
অন্যদিকে এক্সট্রিম লেভেলের গেমিং পিসির জন্য আপনার চাই Intel এর K সিরিজের আই ৭ প্রসেসর। এগুলো ওভারক্লকিং এর জন্য সেরা। তবে বাজেটে থাকলে আপনি আরো হাই এন্ড কোর আই ৯ য়ে চলে যেতে পারেন। আর ১৮টি কোর যুক্ত কোর আই ৯ নিয়ে নিতে পারলে তো কথাই নেই। এই পিসি দিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে আগামী ৫/৬ বছর Ultra গ্রাফিক্সে গেমস খেলতে পারবেন।
গেমিং পিসি বলেন আর সাধারণত পিসি বলেন, সঠিক মাদারবোর্ড নির্বাচন করতেই হবে আপনাকে। মাদারবোর্ডের উপরই সকল অনান্য খুচরা যন্ত্রাংশের সংযোগ থাকে তাই একে মাদার - বোর্ড বলা হয়। আর মাদারবোর্ডের উপরই প্রসেসর এর মডেল নির্ভর করবে। তাই আপনি যদি কোর আই ৯ ১৮কোর প্রসেসরটি নির্বাচন করে থাকেন তাহলে আপনার আলাদা একটি মাদারবোর্ড লাগবে। গেমিং মাদারবোর্ডের কয়েকটি আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে নরমাল মাদারবোর্ডের থেকে। গেমিং মাদারবোর্ডে ভবিষ্যৎতে আপগ্রেডের জন্য যথেষ্ট খালি পোর্টস রয়েছে কিনা সেটাও কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।
এন্ট্রি লেভেলের গেমিং পিসির মাদারবোর্ডে ২টি র্যাম স্লট, ১ গ্রাফিক্স কার্ড স্লট এবং অন বোর্ড অডিও স্লট থাকা উচিত। এতে কুলি সিস্টেম হিসেবে পুরাতন মডেলের কুলিং ফ্যান থাকবে আর এতে ওভারক্লকিংয়ের সিস্টেম থাকবে না।
অন্যদিকে এক্সট্রিম লেভেলের গেমিং পিসির জন্য মাদারবোর্ডে ৬ টি র্যাম স্লটস, ২টি গ্রাফিক্স কার্ড স্লটস এবং ওভারক্লকিং ফিচার থাকবে। এছাড়াও এতে লিকুইড কুলিং সিস্টেমও থাকা উচিত। এছাড়াও এতে র্যামকেও ওভারক্লকিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
গেমিং পিসি বিল্ড করার সময় প্রসেসর ও মাদারবোর্ডে যথেষ্ট পরিমাণের বাজেট সেট করা উচিত কারণ এই দুটি জিনিস ভবিষ্যৎতে আপগ্রেড করা যাবে না।
Random Access Memory বা RAM এর উপরই আপনার পিসির চলমান পারফরমেন্স নির্ভর করবে। যত বেশি র্যাম আপনি তত বেশি প্রোগ্রাম একই সাথে চালাতে পারবেন। র্যামকে বর্তমানে DDR দিয়ে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। বর্তমানে DDR4 র্যাম বাজারে চলছে। তাই গেমিং পিসির জন্য DDR3 না নিয়ে DDR4 র্যাম নেওয়াই উত্তম। তাই মাদারবোর্ডকেও DDR4 র্যাম সার্পোট করে এই রকম হতে হবে। আর ভবিষ্যৎতে আপগ্রেডের জন্য আপনি আরো র্যাম পিসিতে যুক্ত করতে পারেন।
এন্ট্রি লেভেলের গেমিং পিসিতে কমপক্ষে ৬ গিগাবাইটের র্যাম এর প্রয়োজন হবে। তবে ২০১৮ সালের প্রায় সবগুলো গেমসেই চালাতে হলে ৮ গিগাবাইট র্যামের প্রয়োজন হবে। আর এন্ট্রি লেভেলের গেমিং পিসির মাদারবোর্ডে র্যাম স্লট ২টির কারণে আপনাকে ৪ জিবি + ৪ জিবি র্যাম নিতে পারেন কিংবা ভবিষ্যৎতে আপগ্রেড করতে হলে একটি ৮ জিবি র্যাম নিয়ে আরেকটি স্লট ভবিষ্যৎ ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে পারেন।
অন্যদিকে এক্সট্রিম লেভেলের গেমিং পিসির জন্য সরাসরি ৩২ জিবি র্যামে চলে যান। ৬টি র্যাম স্লটের জন্য ৩ টি ব্যবহার করে ৩২ জিবি করে নিন এবং বাকি তিনটি রেখে দিন ভবিষ্যৎতের জন্য। তবে এতে র্যাম ওভারক্লকিংয়ের সিস্টেম যাতে থাকে সেটি খেয়াল রাখবেন।
গেমিং পিসি অনান্য সাধারণত পিসির থেকে শুধুমাত্র গ্রাফিক্স কার্ডের জন্যই আলাদা হয়ে থাকে। কারণ গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া আপনি গেমিং ও গ্রাফিক্সের কাজ বাদে অন্য সবকিছুই করতে পারবেন। কিন্তু গেমিং আর গ্রাফিক্সের কাজ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি গ্রাফিক্স কার্ডের ব্যবহার করতে হবে। তাই বলে ইন্টারনাল বিল্ট ইন গ্রাফিক্স দিয়েও কিন্তু হবে না। তবে প্রসেসর আর মাদারবোর্ডে বাজেট সেট করার ফলে গ্রাফিক্স কার্ডে বর্তমানে বাজেট না দিতে পারলেও সমস্যা নেই কিন্তু একে বারে গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া পিসি কিনে ফেলবেন না।
এন্ট্রি লেভেলের গ্রাফিক্স কার্ডে আপনি বিগত ২ বছরের গেমস Ultra সেটিংস য়ে এবং বর্তমানের গেমস Mediem থেকে High সেটিংসয়ে খেলতে পারবেন। এই সকল গ্রাফিক্স কার্ডে FPS থাকবে ৩০ থেকে ৪০ এর মধ্যে। এই এন্ট্রি লেভেলের গ্রাফিক্স কার্ডের মধ্যে রয়েছে পুরাতন এনভিডিয়ার জিটিএক্স ১০৫০ এবং এর আগের মডেল গুলো।
অন্যদিকে এক্সট্রিম লেভেলের গেমিং পিসির জন্য গ্রাফিক্স কার্ড চাই সেই রকম। যেখানে ৬০ FPS এর উপরে পারফরমেন্স থাকবে। এক্ষেত্রে আপনি Nvidia GTX 1080 Ti কিংবা AMD R9 Fury তে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে কিন্তু পুরাতন Titan Z কাজে দেবে না। এক্সিট্রিম লেভেলের গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে আগামী ৩ বছর আপনি Ultra High গ্রাফিক্সে গেমস আরমসে খেলতে পারবেন। তবে 4K রেজুলেশনে যদি গেমস চালাতে চান তাহলে একটি গ্রাফিক্সে আপনার কাজ হবে না আপনার চাই দুটি গ্রাফিক্স কার্ড। বর্তমানে Nvidia দুটি একই মডেলের গ্রাফিক্স কার্ড Bridge করতে পারবে অন্যদিকে AMD তাদের যেকোনো Crossfire ফিচারযুক্ত গ্রাফিক্স কার্ডগুলো Crossfire করতে পারবে।
তবে এখান আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো গেমিং এর জন্য Nvidia গ্রাফিক্স কেনাই বুদ্ধিমানে কাজ হবে। এগুলো দামে একটু বেশি নেবে কিন্তু trust me এটা AMD গ্রাফিক্সের থেকে অনেকগুণে সেরা।
গেমিং পিসির জন্য উচ্চ সাইজের স্টোরেজ এর প্রয়োজন হবে। কারণ বর্তমানে গেমসগুলোর সাইজ তাদের গ্রাফিক্সের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে। আগে GTA 5 এর জন্য প্রায় ৭০ জিবির হার্ডডিক্স স্পেস এর দরকার হতো কিন্তু এখন ফাইনাল ফ্যান্টাসী সিরিজের সর্বশেষ গেমটির জন্য আপনার চাই প্রায় ১৪০ জিবির ফ্রি হার্ডডিক্স স্পেস। গেমিং পিসির জন্য নুন্যতম ১ টেরাবাইটের হার্ডডিক্স এর প্রয়োজন পড়বে। আর যদি এক্সট্রিম লেভেলের গেমিং পিসি চান তাহলে ৪ টেরাবাইটের হার্ডডিক্স এবং আরেকটি SSD নিতে পারেন পারফরমেন্সের জন্য। তবে মনে রাখবেন 1 TB SDD এর মূল্যে আপনি 5TB হার্ডডিক্স ড্রাইভ কিনতে পারবেন। তবে বাজেট থাকলে আপনি NVMe SSD নিয়ে নিতে পারেন। এগুলোর সাইজ র্যামের থেকেও ছোট কিন্তু এগুলো বর্তমানের SSD এর থেকে কয়েকগুণ বেশি স্পিড দেবে এবং এগুলোর স্টোরেজ ক্ষমতাও অনেক বেশি আর দামের ক্ষেত্রেরও এগুলো উচ্চমুল্যের।
তবে মনে রাখবেন হার্ডডিক্স এর সাইজ আপনার গেমিং এর পারফরমেন্সকে সরাসরি প্রভাবিত করবে না তাই হার্ডডিক্সে বেশি বাজেট রেখে অন্যদিকে গ্রাফিক্স কার্ডে কম বাজেট রাখলেন এমনটি করলে চলবে না।
গ্রাফিক্স কার্ডযুক্ত কম্পিউটারে গ্রাফিক্স কার্ড চালাতে হলে আপনাকে আলাদা শক্তিশালি PSU লাগাতে হবে। কারণ গ্রাফিক্স কার্ড প্রচুর বিদ্যুৎ খায় যেটি সাধারণ পাওয়ার সাপ্লাই ব্যাকআপ দিতে পারে না। আর অত্যাধুনিক কিছু কিছু গ্রাফিক্স কার্ডের জন্য নির্দিষ্ট করে আলাদা পাওয়ার সাপ্লাই বানানো হয়ে থাকে। তবে গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট কিনবেন কারণ উচ্চ কোয়ালিটির উচ্চ মানের পাওয়ার সাপ্লাই কেনা একটা অপচয় কারণ গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন মেটানোর পর বাকি ওয়াটগুলো অব্যবহৃত অবস্থাতেই পড়ে থাকবে। তাই আপনার যদি ৭৫০ ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের প্রয়োজন হয় তাহলে আগ বাড়িয়ে ১০০০ ওয়াটের কিনবেন না। তবে আপনি যদি গ্রাফিক্স কার্ড ওভারক্লকিং কিংবা ক্রসফায়ার করতে চান তাহলে বেশি ক্ষমতার পাওয়ার সাপ্লাই কিনে রাখতে পারেন।
কম্পিউটারের CPU এর ভেতরের প্রায় সকল পার্টসই চালানোর সময় প্রচুর হিট হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ডকে সবসময় ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রায় সকল প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে তাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরি ডিফল্ট কুলিং সিস্টেম দেওয়া থাকে। তাই এন্ট্রি লেভেলের গেমিং পিসির জন্য আলাদা কোনো কুলিং সিস্টেম এর প্রয়োজন হবে না। তবে এক্সট্রিম লেভেলের গেমিংয়ের ক্ষেত্রে প্রসেসর এবং গ্রাফিক্সে লিকুইড কুলিং সিস্টেম থাকে বিধায় এক্ষেত্রে অনান্য যন্ত্রাংশের জন্য আলদা কুলিং ফ্যান ক্যাসিংয়ের সাথে সেট করে দিতে পারেন। তবে ফ্যানটিও কিন্তু আপনার PSU থেকে পাওয়ার টানবে।
সাধারণত কেসিং নিয়ে কেউই মাথা ঘামায় না। কারণ কেসিং যেমনই হোক না কেন তা পিসির পারফরমেন্সের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু গেমিং কেসিং গুলো যেমন টেকসই ও মজবুত এগুলো দেখতেও সুন্দর হয়। আর আলাদা লাইটিংয়ের জন্য অনেকেই উচ্চমুল্যে কেসিং কিনে থাকেন। কিন্তু গেমিং পিসির গ্রাফিক্স কার্ড ও মাদারবোর্ডের সাইজ অনান্য সাধারণ থেকে বড় হয়ে থাকে তাই কেসিংটিও এদের সাথে মানান সই হতে হয়। আর লাইটিং ও কুলিং ফ্যান এর জন্যেও এটি PSU থেকে পাওয়ার টানবে। তাই কেসিং এর সাথে দেওয়া ডিফল্ট পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিটের উপর নির্ভর থাকলে চলবে না।
মনিটর হচ্ছে গেমিং পিসির একটি অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গেমিং মনিটর শুধু সাইজেই নয়, টেকনোলজিতেও ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনার গ্রাফিক্স কার্ডে উল্লেখিত সবোর্চ্চ রেজুলেশন সার্পোটের উপর আপনার মনিটর বেছে নেওয়া উচিত। এন্ট্রি লেভেলের গেমিং এর জন্য যেকোনো LED বা LCD মনিটর হলেই চলে যাবে কিন্তু এক্সট্রিম লেভেলে গেমিং এর আপনার 4K রেজুলেশন যুক্ত UHD ডিসপ্লে নেওয়া উচিত কারণ এটি আপনার গেমপ্লে তে আলাদা বৈশিষ্ট্য এনে দেব।
এবার আসি অনান্য যন্ত্রাংশের উপর। গেমিং মাউস, গেমিং কিবোর্ড, স্পিকার ইত্যাদি আপনি আপনার বাজেট এর ধরন মোতাবেক কিনে নিতে পারেন। এগুলো পারফরমেন্সে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাই এতে বেশি বাজেট না বরাদ্দ দেওয়াই উচিত।
আমি আমার নিজের কথাই বলি। সর্বপ্রথম আমি পিসি কিনি ২০০৬ সালে। তখন ক্লাস ৬ য়ে পড়তাম। তাই তখন পেন্টিয়াম ৩ আর উইন্ডোজ এক্সপি দিয়ে আমার কম্পিউটারে যাত্রা শুরু। পরে ২০১১ সালে প্রায় অনেকগুলো টাকা খরচ করে তখনকার সময়ের বেশ ভালোই একটি গেমিং পিসি কিনে নেই। ৮ গিগাবাইট র্যাম, ২ গিগাবাইট গ্রাফিক্স কার্ড ও কোর আই ৭ প্রসেসরযুক্ত ওই পিসি দিয়ে আমি গত বছর পর্যন্ত গেমিং সহ যাবতীয় সকল কাজই করতে পেরেছি। কিন্তু এ বছরের গেমসগুলো চালাতে গিয়ে আমার পিসিতে আমি পারফরমেন্স খোট দেখতে পাচ্ছি। এখন আর আগের মতো গেমিংয়ে নেশাটা নেই তাই আর পিসি আপগ্রেডের কথা মাথায় নেই। তবে আমার পিসিকে আপগ্রেড করতে হলে প্রথমেই আমাকে র্যাম আপগ্রেড করতে হবে। মানে আরো বেশ কয়েক জিবি র্যাম পিসিতে লাগতে হবে। আর গ্রাফিক্স কার্ডকে পাল্টাতে হবে। দেখুন ২০১১ সালের ৮০ হাজার টাকার উচ্চ মানের গ্রাফিক্স কার্ড দিয়ে এখন ৭ বছর পর গেমস Medium সেটিংয়ে ভালোভাবেই খেলা যায়।
তাই ভবিষ্যৎতে আপগ্রেডের চিন্তা না থাকলে হাই এন্ড প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড ও ৩২ জিবি র্যাম নিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু তাই বলে ৩২ জিবির উপরে র্যাম নেওয়াটা এখন বোকামি কারণ বর্তমান যুগের গেমস গুলো ১৬ জিবি র্যামের উপর ব্যবহার করছে না আর সিস্টেম কখনো ২ জিবির উপর টানে না তাই ৩২ জিবিই আগামী কয়েক বছরের জন্য পারফেক্ট।
তবে বাজেট নিয়ে টেনশন থাকলে আপনি একটি জেনারেশন পুরাতন হার্ডওয়্যার কিনতে পারেন। একটি জেনারেশন পুরাতন হার্ডওয়্যারের সাথে বর্তমান জেনারেশনের তেমন কোনো বড়সড় পারফরমেন্স পাথর্ক্য খুঁজে পাবেন না কিন্তু এটি আপনার অনেক বাজেট সাশ্রয় করবে। যেমন একটি মিড রেঞ্জ 6th Generation এর ইন্টেল মাদারবোর্ড এর দামে আপনি 7th Generation এর এন্ট্রি লেভেলের মাদারবোর্ড পাবেন। এক্ষেত্রে আপনার মিড রেঞ্জ মাদারবোর্ড নেওয়াটাই উত্তম। কারণ গেমিংয়ে আপনার নতুন হার্ডওয়্যারের থেকে আপনার পারফরমেন্স বেঞ্চমার্ক বেশি প্রাধান্য পায়।
আর প্রসেসরের ক্ষেত্রে আপনার GHz গতির উপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। যেমন মাত্র ১০০০ টাকার জন্য আপনি Core i5 4.10 GHz না কিনে Core i5 4.00 GHz কিন্তু এই.১০ GHz এর স্পিড কিন্তু আপাত দৃষ্টি তেমন কিছু না মনে হলেও এই.১০ স্পিডের জন্যেই এই দুটি প্রসেসর আলাদা করে বাজারে ছাড়া হয়েছে। এছাড়াও আপনি উচ্চ GHz এর কোয়াড কোর প্রসেসর দিয়েও কিন্তু কোর আই ৫ এর স্পিড ধরতে পারবেন।
আর কম্পিউটার আপগ্রেড নিয়ে আগামীতে একটি আলদা টিউন করবো যেখানে সেকেন্ড হ্যান্ড হার্ডওয়্যার কেনার উপরেও কিছু আলোচনা থাকবে। তো আজ এ পযর্ন্তই থাক। টিউনটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত থাকলে সেটা নিচের টিউমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আর টেকনোলজি বিষায়ক যেকোনো সমস্যা কথা আপনি সরাসরি টেকটিউনস জ্যাকেটে টিউন করতে পারেন। আর হ্যাঁ টিউনটি ভালো লাগলে অবশ্যই জোস বাটনে ক্লিক করতে ভূলবেন না যেন।
ওহ! আরেকটি কথা, এখানে Nvidia গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে মন্তব্যটি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ভাবে করা আর এখানে AMD কার্ডকে হেয় করা হয়নি। বাজেটের ভেতর AMD কার্ডও ভালো হয়। তবে একটি ৫১২ মেগাবাইটের এনভিডিয়া কার্ড আপনাকে AMD এর ১ জিবি কার্ডের মতোই পারফরমেন্স দেবে।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!