ওয়াইফাই নেটওর্য়াককে সুরক্ষিত রাখার জোস কয়েকটি টিপস

টিউন বিভাগ টিপস এন্ড ট্রিকস
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

বাসায় ব্রডব্যান্ড নেট লাইন ব্যবহার করেন কিন্তু ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করেন না এমন লোক হয়তো অনেক কম আছে। ব্রডব্যান্ড নেট লাইন দিয়ে আমরা প্রাথমিক ভাবে একটি পিসিতে ইন্টারনেট কানেক্টশন নেই। তারপর একাধিক পিসিতে এবং আপনার বাসার যাবতীয় ডিভাইসে ওয়াই-ফাই এর মাধ্যমে সেই নেটকে ব্যবহার করার জন্যই আমরা রাউটার ব্যবহার করে থাকি। রাউটারকে কিনে নিয়ে আসার পর একবার সেটআপ করে ফেলার পর সেটার দিকে আমরা হয়তো আর নজর দেই না। তবে বর্তমান যুগ এডভান্স তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আজকাল ছোট ছোট বাচ্চারাও অনেক এডভান্সড ধরনের হ্যাকিং পারে! সে ক্ষেত্রে আপনার ওয়াই ফাই নেটওর্য়াকের পাসওর্য়াড হ্যাক করা তেমন কঠিন ব্যাপার নয়! তাই অবশ্যই প্রাথমিক ভাবে ওয়াইফাই এর পাসওর্য়াডকে শক্তিশালি করা এবং প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে দুবার করে পাসওর্য়াড পরিবর্তন করা উচিত। ওয়াইফাই নেটওর্য়াকে অতিরিক্ত লোড থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি আপনার পিসি বা ব্যক্তিগত মোবাইলে ডাটা হ্যাক হওয়া থেকে আপনি বেঁচে যেতে পারেন। তবে পৃথিবীর কোনো কিছুই ১০০% পারফেক্ট নয় তবে আজকের টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি ওয়াই ফাই নেটওর্য়াককে আরো বেশি শক্তিশালি করে তুলতে পারবেন এবং হ্যাকিংয়ের হাত থেকে নিজের নেটওর্য়াককে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন। তো চলুন আমাদের আজকের টিউনটি শুরু করা যাক:

১) রাউটার এডমিন ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

ওয়াই ফাই হ্যাকের প্রথম টার্গেট থাকে আপনার রাউটারের এডমিন ইউজারনেম এবং পাসওর্য়াডের উপর। কারণ আপনার রাউটারের এডমিন ইউজারনেম আর পাসওর্য়াড যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলে আপনি যতবারই ওয়াইফাই পাসওর্য়াড পরিবর্তন করেন না কেন হ্যাকার আপনার পাসওর্য়াড জেনে নেবে নিমিষেই! সকল ব্রান্ডের সকল প্রকার রাউটারগুলো একটি নির্দিস্ট ইউজারনেম আর পাসওর্য়াড দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। এইগুলো দিয়ে আপনাকে প্রথমবারের মতো রাউটার পেজে প্রবেশ করে নিয়ে যাবতীয় সেটিংস ঠিক করে নিতে হয়। আর এখানে আপনার উচিত এই ডিফল্ট ইউজারনেম আর পাসওর্য়াডটি পরিবর্তন করে নেওয়া। কারণ রাউটারের ডিফল্ট পাসওয়ার্ড আর ইউজারনেমটি পাবলিক ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকে, আর এটি সহজেই অনুমানযোগ্য। তাই আপনার রাউটার পেজের ইউজারনেম আর পাসওর্য়াডটি পরিবর্তন করে নেওয়া উচিত আর এটা কারো সাথে শেয়ার করা উচিত নয়। আর পাসওর্য়াড এবং ইউজারনেম পরিবর্তন করে নেবার পর সেটা কাগজে কলমে কোথাও লিখে রাখা উচিত। কারণ এই দুটি তথ্য ভুলে গেলে আপনি আর আপনার রাউটার পেজে একসেস করতে পারবেন না!

২) নেটওর্য়াক নাম পরিবর্তন করুন।

প্রতিটি ওয়াই ফাই নেটওর্য়াকে একটি নাম দেওয়া থাকে। আর প্রথমবারে আপনি যখন কোনো ওয়াইফাই নেটওর্য়াক সেটআপ করে নিবেন তখন দেখবেন যে আপনার রাউটারের নাম এবং SSID (The Service Set Identifier)  দিয়ে একটি নাম সিলেক্ট করা থাকে। এই মাধ্যমে হ্যাকাররা তাদের প্রথম টার্গেটকে সহজেই পেয়ে যায়। যেমন আপনার রাউটারটি যদি Tendra 1200 মডেলের হয়ে থাকে তাহলে প্রথম বার রাউটার ওয়াইফাইয়ের নাম দেখতে পাবেন যে এইরকম দেওয়া রয়েছে: tendra1200wifi, আবার NetGear R6700 মডেলের রাউটারের ওয়াই ফাইয়ের নাম হবে linksysNetGearR6700। এভাবে আপনার রাউটার আইডির মাধ্যমে আপনার রাউটারটির ব্যাপারে হ্যাকাররা সহজেই ব্যাপক তথ্য জেনে যাবে আর এতে হ্যাক হবার সম্ভাবনাও আরো সহজ হয়ে যাবে। তাই ওয়াই ফাই নেটওর্য়াকের নাম আপনারকে পরিবর্তন করে নিতে হবে এবং ডিফল্ট নামটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩) এনক্রিপ্টশন একটিভ করে নিন।

আমাদের আজকালকার যুগের মর্ডান রাউটারগুলোকে এক্সট্রা সিকুরিটির জন্য এনক্রিপ্টশন সিস্টেম দেওয়া থাকে। আমরা হয়তো অনেকেই এই ব্যাপারে জানিনা তাই এই চমৎকার ফিচারটি ব্যবহারও করে থাকি না। কিন্তু আপনার ওয়াইফাইয়ের নিরাপত্তার জন্য আপনাকে অবশ্যই এনক্রিপ্টশন এর সাহায্য নিতেই হবে। এনক্রিপ্টশন একটিভ করার জন্য আপনার রাউটার পেজে যান। সেখান থেকে সিকুরিটি অপশনস য়ে যান। এখান থেকে WPA Personal বা WPA2-PSK টি অন করে নিন, আর Encryption Type টিকে AES করে নিন। এবার আপনাকে  একটি পাসওর্য়াড সেট করে নিতে হবে যেটা Network Key হিসেবে থাকবে। এবার আপনার কাজ হবে এখানে একটি শক্তিশালি পাসওর্য়াড ব্যবহার করে নেওয়া।

৪) ফায়ারওয়াল একটিভ রাখুন

প্রতিটি মর্ডান রাউটারে আলাদা করে একটি ফায়ারওয়াল অপশন দেওয়া থাকে যেটা কাজ হলো রাউটার নেটওর্য়াককে বাহিরে এট্যাক থেকে সুরক্ষিত রাখা। আপনার উচিত এই ফায়ারওয়াল অপশনটিকে একটিভ করে রাখা। অধিকাংশ রাউটারের এই নিজস্ব ফায়ারওয়াল সিস্টেমটি অটোম্যাটিক্যালি একটিভেট করা থাকে তবে যদি এটা না হয় তাহলে আপনি নিজেই এটা একটিভ করে রাখুন। অপশনটি আপনার রাউটারে সরাসরি ফায়ারওয়াল নামে কিংবা SPI (stateful packet inspection) বা NAT (network address translation) নামে থাকবে। রাউটারের ফায়ারওয়ালের পাশাপাশি আপনার পিসির এন্টিভাইরাসের ফায়ারওয়াল বা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ফায়ারওয়ালটিও চালু রাখুন। এতে ডাবল ফায়ারওয়ালের সুরক্ষা থাকবে আপনার নেটওর্য়াকের উপর।

৫) Guest Networks অফ করে রাখুন

আপনার রাউটারে যদি এই গেস্ট নেটওর্য়াক অপশনটি থেকে থাকে এবং এটি যদি অটোমেটিক্যালি আগে থেকেই চালু করা থাকে তাহলে এক্ষুনি এটি অফ করে দিন। এটি কোনো কাজের নয় বরং হ্যাকিং হবার জন্য এটি আরো সুবিধা করে দেবে হ্যাকারদের। মূলত এই গেস্ট নেটওর্য়াকের মাধ্যমে আপনার রাউটার দেয় আরেকটি নেটওর্য়াক তৈরি করা হয় যেখানে কোনো পাসওর্য়াড থাকে না, নামের মতোই বাসায় কোনো মেহমান এলে তাদের ব্যবহারের জন্য রাউটারের এই ফিচারটি দিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। আর আমাদের দেশে বাসায় মেহমান এনে চা-নাশতা খাওয়াই আমরা, ওয়াইফাই ব্যবহার করতে দেই না। তাই এই ফিচারটি অফ করে রাখুন।

৬) VPN ব্যবহার করুন

VPN বা Virtual private network কানেক্টশন আপনার নেটওর্য়াক এবং আপনার ব্যবহৃত ডিভাইসের মাঝে একটি টানেল তৈরি করে এবং এখানে একটি থার্ড পার্টি সার্ভারের মাধ্যমে আপনাদের ডাটা আদান প্রদানে কাজ করে থাকে। ভিপিএন এর মাধ্যমে আপনি অনলাইনে আপনার আইডেন্টেকটিউনসকে গোপন রাখতে পারবেন। বিশেষ করে আমরা যারা টরেন্ট সাইট থেকে ডাউনলোড বা আপলোড করে থাকি তারা ভিপিএন সার্ভিসটি বেশি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু অন্যরা এটি ব্যবহার করবেন না তা নয়, আপনার ওয়াই ফাই নেটওর্য়াক কে এক্সট্রা সিকুরিটি দেবার জন্য আপনিও একটি ভালো ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন।

৭) রাউটার ফার্মওয়ার আপগ্রেড করুন

এন্টিভাইরাস, সফটওয়্যার বা আপনার পিসির অপারেটিং সিস্টেমের মতোই রাউটারেও একটি ফার্মওয়্যার দেওয়া থাকে। যেটিকে নিয়মিত আপডেট করে নিতে হয়। কারণ হ্যাকাররা প্রতিনিয়তই রাউটারগুলোতে সিকুরিটি হোল খুঁজার চেষ্টা করে থাকে। আর রাউটারের ফার্মওয়ার আপডেট গুলোকে এই সিকুরিটির জন্য নতুন নতুন লেয়ারের প্রটেক্টশন দেওয়া হয়ে থাকে। তাই আপনার নিয়মিত রাউটার ফার্মওয়্যার আপগ্রেড করা উচিত।

৮) WPS অফ করে রাখুন

Wi-Fi Protected Setup বা WPS হলো রাউটারের এমন একটি ফাংশন যেটির মাধ্যমে কোনো ডিভাইসে একটি মাত্র বাটন চেপে আপনার রাউটারের নেটওর্য়াক ব্যবহার করতে পারবে, কোনো প্রকার পাসওর্য়াড ছাড়াই। এটি যেমন কানেক্ট হবার কাজকে সহজ করে দেয় ঠিক তেমনটি হ্যাকিং কাজকেও সহজ করে দেয়। আর WPS অপশনটি অনেকদিন ধরেই আমাদের বাজারে রয়েছে তাই এটি কিভাবে ক্রাক করা যায় সেটি অনেকেই এখন জানেন। তাই এই আউটডেটেড অপশনটি আপনার অফ করে রাখাটাই শ্রেয়।

৯) SSID Broadcast বন্ধ করে রাখুন

আপনি ওয়াই ফাই রাউটার ব্যবহার করছেন কিন্তু ওয়াই ফাই নেটওর্য়াকের নামটাই যদি আপনি হাইড করে রাখেন তাহলে এটি হ্যাকিংয়ের জন্য বেশ কস্টদায়ক হয়ে পড়বে হ্যাকারের কাছে। তাই প্রথমে আপনার যাবতীয় ডিভাইসগুলোকে আপনার ওয়াইফাইটি কানেক্ট করে নিন। তারপর রাউটারের পেজ থেকে SSID Broadcast অপশনটি বন্ধ করে রাখুন। এতে আপনার ওয়াইফাই নেটওর্য়াক নামটি আর কোথাও দৃশ্যমান হবে না। তবে এতে আপনি নতুন কোনো ডিভাইসেও নেটওর্য়াকটি কানেক্ট করতে পারবেন না, তার জন্য আপনাকে আবারো অপশনটিকে অন করে নিতে হবে। এই পদ্ধতিটি অফিস ক্ষেত্রে কাজের নয় কারণ সেখানে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ডিভাইস কানেক্ট হয় কিন্তু বাসায় আমরা এই টিপসটি অনুসরণ করতে পারি!

১০) একসেস লিমিট করুন

ওয়াইফাই নেটওর্য়াকে প্রবেশকৃত প্রতিটি ডিভাইসের একটি করে ইউনিক media access control (MAC) address থাকে। যেটার মাধ্যমে ডিভাইসটিকে অনান্য ডিভাইসের থেকে আলাদা করা যায়। আপনি আপনার ডিভাইস লিস্টে গিয়ে আপনার নেটওর্য়াক কে কে কোন কোন ডিভাইস দিয়ে ব্যবহা করছে সেটা দেখতে পারেন এবং যেসকল ডিভাইসগুলোকে আপনি চেনেন না সেগুলোকে নেটওর্য়াক ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে পারেন। তাই এই একসেস লিস্টটি আপনার নিয়মিত চেক করা উচিত।

১১) সিগন্যাল লিমিট করে রাখুন

আমাদের আজকের টিপসের একদম শেষে আমি আমার নিজস্ব একটি টিপস আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি। ধরুন আপনি বাসায় ওয়াইফাই নেটওর্য়াক ব্যবহার করে থাকেন। আপনার বাসার ৪/৫টি রুমের জন্য আপনার রাউটারটি বেশ ভালোই সার্ভিস দেয়। কিন্তু বাসার বাইরে গিয়ে দেখলেন যে বাইরের একটি দোকান পর্যন্ত আপনার নেটওর্য়াকটি পাওয়া যাচ্ছে। এতে উৎসুক কৌতুহলি জনগন যারা মাঝে মাঝেই তাদের ডিভাইসের ওয়াইফাই দিয়ে এলাকাগুলোর ওয়াইফাই নেটওর্য়াক নিয়ে গবেষনা করে তারা জেনে যাবে যে এখানে একটি ওয়াই ফাই নেটওর্য়াক রয়েছে। তাই আপনি আপনার ওয়াইফাই নেটওর্য়াককে আপনার প্রয়োজন মাফিক নেটওর্য়াক লিমিট করে রাখতে পারেন। যেমন ৭০% বা ৬০% নেটওর্য়াক লিমিট করে রাখলে আপনার বাসার গন্ডি পর্যন্তই নেটওর্য়াকের সিগন্যাল যাবে! তো এই ছিল আপনার ওয়াইফাই নেটওর্য়াকটি সুরক্ষিত রাখা কয়েকটি টিপস। আশা করবো আজকের টিউনটি থেকে আপনার আপনাদের নেটওর্য়াককে কিছুটা হলেও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে! আর হ্যাঁ টিউনটি সম্পর্কে আপনার যেকোনো মতামত আমাকে জানাতে পারেন নিচের টিউমেন্ট বক্সে টিউমেন্ট করে! টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস