বাসায় ইন্টারনেট লাইন বা ব্রডব্যান্ড থাকলে ওয়াইফাই ব্যবহার করেন না এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। ব্রডব্যান্ড লাইন দিয়ে পিসি বা ল্যাপটপে তো ইন্টারনেট সংযোগ আপনি উপভোগ করছেন কিন্তু ওয়াইফাই রাউটার দিয়ে আপনি উক্ত ইন্টারনেট লাইনকে Wifi এর সাহায্যে আপনার পুরো বাসার যাবতীয় ডিভাইসেও আপনি ওয়াইফাই ইন্টারনেট এর মজা উপভোগ করতে পারবেন! আর ওয়াইফাই এর সিগন্যাল কিভাবে আপনি বুস্ট করবেন সেটা নিয়ে আজকে আমি আপনাদের সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি।
সাধারণত এবং মূলত ওয়াইফাইয়ের সিগন্যাল সম্পূর্ণ ভাবে ওয়াইফাইয়ের রাউটারের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে থাকে। ওয়াইফাই রাউটার কেনার সময় আপনি সিগন্যাল শক্তি এবং স্পিডের প্রকারভেদ দেখতে পাবেন আর এই প্রকারভেদের কারণেই এক একটি রাউটারের দাম এক এক রকম হয়ে থাকে। তাই আমরা বলতে পারি যে নতুন রাউটার না কিনে আমরা বাস্তবিক অর্থে ওয়াইফাইয়ের সিগন্যালকে বুস্ট করতে পারবো না। তবে আজকের এই টিউনে আমি দেখাবো যে কিভাবে আপনি আপনার ওয়াইফাইয়ের রাউটারের সবোর্চ্চ সিগন্যালটুকুকে ব্যবহার করতে পারবেন! আশা করি আজকের টিউনের বিষয়বস্তুটিকে আমি আপনাদের কাছে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।
আমরা সাধারণত হাজার দুয়েক বা তার চেয়ে খানিকটা বেশি মূল্য দিয়ে যেসকল ওয়াইফাই রাউটার কিনে থাকি ব্যবহার করার জন্য সেগুলো বলতে গেলে চাইনিজ রাউটার! শুধু ব্রান্ডগুলোর নামে ভিন্নতা থাকে। অরিজিনাল ব্রান্ডের কোনো ওয়াইফাইয়ের রাউটারের দাম অনেক বেশি। সো এইসকল চাইনিজ রাউটারের প্যাকেটে যে স্পিড এবং সিগন্যালের যে ক্ষমতা দেওয়া থাকে সেটাও চাইনিজ! মানে সত্য নয়! প্যাকেটে স্পিড লেখা থাকে Speed Upto 150Mbps কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে 12Mbps এর বেশি স্পিডের নেটলাইন জনগণ এখনো দেখতে পারেনি তাই রাউটারের স্পিডের ব্যাপ্তি আমরা এখনোই করতে পারবো না। রাউটারের দামের অনুসারে স্পিড পাবেন আর রাউটারের স্পিড নিয়ে এখনই কোনো টেনশন করার দরকার নেই কারণ স্পিড নিয়ে টেনশন করার দিন বাংলাদেশে আসতে এখনো অনেক দেরি আছে! যে জিনিসটা নিয়ে মাঝে মাঝে আমাদের টেনশন হয় সেটা হলো রাউটারের সিগন্যাল! বাসার ড্রয়িং রুমে পিসির সাথে ওয়াইফাই রাউটার সেট করলেন কিন্তু বাথরুমে গিয়ে দেখলেন যে সিগন্যাল ড্রপ করে! আর বাসার গেটের বাইরে গেলে তো সিগন্যাল ১০% এর নিচে নেমে যায়! কিংবা কোনো সাইবার ক্যাফের সিগন্যালের কথাই ধরুণ! দোকান থেকে ১০০ গজের বাইরে গেলেই সিগন্যাল ড্রপ করতে থাকে!
তাই বলে সকল রাউটারই কিন্তু এক নয়! আমার দেশের বাড়ি গাজীপুরের কথাই ধরুন। ঢাকা গাজীপুরের কথা বলছি। তো গাজীপুরের ডিসি অফিসের একটি ওয়াইফাই নেট চালু আছে। সেটির সিগন্যাল ডিসি অফিসের থেকে অনেকটা দুরে গাজীপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ডিসি অফিসের ওয়াইফাইয়ের নেট সিগন্যাল পাওয়া যায়! আমি তো দেখে অবাক! আবার আমি বর্তমানে যেখানে আছি খুলনার কথা বলি। খুলনার রয়েল মোড়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফ্রি ওয়াইফাই রয়েছে। এটা পুরোটা রয়েল মোড়কে কভার করে সাত রাস্তার মোড় পর্যন্ত সিগন্যাল পাওয়া যায়। আবার হাদিস পার্কের ওয়াইফাইটিও কিন্তু খুলনা ডিসি অফিসেরই ওয়াইফাই যেটা পুরোটা হাদিস পার্ককে কভার করে থাকে!
এগুলো হলো অরিজিনাল এবং উচ্চমূল্যের ওয়াইফাই রাউটার বা ওয়াইফাই স্টেশন! কিন্তু এসব কথা থাক। আমাদের বাসায় ওয়াইফাই রাউটারের দিকে চলে আসি আবার। তো আমাদের বাসা যদি মিডিয়াম থেকে ছোট সাইজের হয়ে থাকে তাহলে এসকল চাইনিজ রাউটারে আমাদের সিগন্যালের কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে যারা বড়সড় বাসায় থাকি তাদের ক্ষেত্রে Distance একটি সমস্যাই বটে রাউটারের সিগন্যালের ক্ষেত্রে। কিন্তু ছোট ছোট বাসাতেও যদি কর্নারের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলেও আপনি ওয়াইফাই সিগন্যালে সমস্যা দেখতে পাবেন বা পারফরমেন্সে দুবর্লতা খুঁজে পাবেন। এছাড়াও যারা ঘনবসতি এলাকায় থাকে যেমন একটি ১০ তলার বিল্ডিংয়ের সবাই যদি ওয়াইফাই ব্যবহার করে তাহলে ওই বিল্ডিংয়ের সবাই ওয়াইফাই সিগন্যালে সমস্যা পাবেন। কারণ একটি স্থানে একসাথে এতগুলো ওয়াইফাই সিগন্যাল পরস্পরের মধ্যে ডিগবাজি খেতে থাকে!
এছাড়াও আপনি আপনার নেটওর্য়াকের ব্যবহারকারীদেরও চেক করতে পারেন। একটি ওয়াইফাইয়ের ব্যবহারকারী যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে এটাও সিগন্যালের উপর প্রভাব ফেলে থাকবে। তাই অদরকারী বন্ধুবান্ধব কিংবা অপ্রয়োজনীয় ডিভাইসগুলোকে একসাথে আপনার ওয়াইফাই ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখাই উত্তম!
তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন এবার আমি আপনারদেরকে দেখাই কিভাবে আপনি আপনার ওয়াইফাই রাউটারের সিগন্যালকে বুস্ট করবেন বা অপটিমাইজ করবেন:
প্রত্যেকটি আধুনিক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো হার্ডওয়্যার এবং অপরটি হলো সফটওয়্যার! এটা আমরা জেনে থাকি। ওয়াইফাই রাউটারও এর ব্যতিক্রম নয়। হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে আমরা তেমন কিছুই করতে পারি না কিন্তু সফটওয়্যারটির নিয়ন্ত্রণ কিন্তু আমাদেরই হাতে দেওয়া থাকে।
আপনার ওয়াইফাই রাউটারের সিগন্যাল কম বা কোনো সমস্যার কারণ হিসেবে হতে পারে আপনার রাউটারের ফার্মওয়্যার আউটডেটেড বা ব্যাকডেটেড! রাউটার ম্যানুফেকচাররা প্রতিনিয়তই তাদের রাউটারের সফটওয়্যারের আপডেট দিয়ে থাকে যেখানে বিভিন্ন বাগ ফিক্সিং এবং পারফরমেন্স বৃদ্ধির কাজও থেকে থাকে। তাই আপনি প্রথমে আপনার ওয়াইফাই রাউটারের ফার্মওয়্যারকে আপগ্রেড দিতে পারেন। আপনার রাউটারের ফার্মওয়্যার আপগ্রেড প্রসেসিং কতটুকু সহজ কিংবা কতটুকু কঠিন হবে সেটা আপনার রাউটার ডিভাইসের ম্যানুফেকচার এবং মডেলের উপর নির্ভর করে থাকে। চাইনিজ এসকল রাউটারের অধিকাংশেই রাউটার আপগ্রেডের কোনো সুযোগ নেই তার এরা এগুলোকে ওয়ান টাইম ইউজের জন্যেই কমমূল্যে বানিয়ে থাকে।
আর অরিজিনাল ব্রান্ডের বর্তমান যুগের রাউটারের এডমিন পেজেই আপনি রাউটারের ফার্মওয়্যার আপগ্রেডের অপশনটি দেখতে পাবেন। আর পুরাতন মডেলের রাউটারগুলোতে আপনাকে ম্যানুয়াল ভাবে নিজে নিজেই রাউটারের মডেল দিয়ে নেট থেকে ফামওর্য়াড আপগ্রেডকে ডাউনলোড করে নিয়ে তারপর আপডেটিং করতে হতে পারে। তো রাউটারের সিগন্যাল বুস্ট সহ ভালো পারফরমেন্সের জন্য আপনি আপনার রাউটারটিকে প্রতিনিয়তই আপডেট চেক করতে পারেন।
অপটিমাল রাউটার প্লেসমেন্ট বলতে আমি আপনার রুমের এমন একটি নির্দিষ্ট জায়গাকে চিহ্নিত করতে বুঝিয়েছি যেখানে রাউটারটি রাখলে আপনার বাসায় সকল রুমেই সমানভাবে রাউটারটি সিগন্যাল পাঠাতে পারবে। একটি রুমের সকল অংশই কিন্তু সমান নয়! ঠিক এটাই রাউটারের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য! ধরুন রাউটারটিকে সিপিইউ এর উপরে রেখে দেখতে পারেন সিগন্যাল কেমন পায় পরের রুম থেকে, আবার সাউন্ড বক্সের কাছে রেখেও টেস্ট করতে পারেন। আবার রাউটারের তার বড়সড় হলে রুমে বিভিন্ন স্থানে রাউটারটি নিয়ে গিয়ে এর সিগন্যালের টেস্ট করতে পারেন। এভাবে টেস্ট করিয়ে নিয়ে আপনার রুমের বেস্ট একটি স্থানকে চিহ্নিত করুন যেখান থেকে আপনার বাসায় সকল স্থানেই সমান এবং ভালো ওয়াইফাই সিগন্যাল পাওয়া যায়। আবার রাউটারের এনটেনা আছে বিধায় সবসময়ই যে রাউটারকে জানালার পাশে সেট করলেই কাজ হবে এমনটাও কিন্তু না!
সাধারণত ওয়ারলেস রাউটারগুলোর ওপেন স্পেসের প্রয়োজন হয় সঠিক ভাবে কার্যাবলি সম্পাদন করার জন্য। কিন্তু আমাদের বাসা বাড়িতে দেয়াল এবং কর্নার থাকার কারণে এই পরিমাণের ওপেন স্পেস আমাদের ক্ষেত্রে সরবরাহ করা সম্ভব হয়ে থাকে না। আবার আমাদের অফিসেও একই কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু সবসময় ওপেন স্পেস ছাড়াও রাউটারের আশে পাশে অতিরিক্ত পরিমাণের হেভি ডিউটি জাতীয় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থাকলেও রাউটারের পারফরমেন্সে উত্থানপতন হতে পারে। এছাড়াও আপনার রাউটারে যদি এক্সটারনাল এন্টেনা থেকে থাকে তাহলে সেগুলোকেও এদিক ওদিক ভাবে বসিয়েও আপনি সঠিক মুভমেন্টটির টেস্টিং করতে পারেন। টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ভিজুয়্যাল নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে পারেন। Heatmapper, inSSIDer for Office, Netgear's Wifi Analytics ইত্যাদি সফটওয়্যারের সাহায্য আপনি নিতে পারেন।
আপনার রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সির সাথে রাউটারের সফটওয়্যারটিকে এডজাস্ট করে নিতে পারেন ভালো সিগন্যালের জন্য। আপনার রাউটারের এই কাজটি করে নিলে ফ্রিকোয়েন্সি অপটিমাইজেশন এর ফলে ভালো রেজাল্ট পেতে পারে। আপনার রাউটারটি যদি ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার হয় তাহলে এডমিন পেজে 2.4GHz band এর জায়গায় 5GHz Band সেটিংয়ে সুইট করিয়ে নিতে পারেন। কারণ বর্তমানেও ৫ গিগাহার্জের ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস খুব কমই দেখা যায় এবং এর কারণে আপনি অনান্য ডিভাইসের সিগন্যালের সাথে আপনার রাউটারের সিগন্যাল ক্রসচেক হবে না এবং ফলাফলসরুপ আপনি ভালো সিগন্যাল পেতে পারেন।
ওয়াকি টকি নিয়ে ছোটবেলার খেলেছেন কখনো? যদি খেলে থাকেন তাহলে ওয়াকি টকির একটি বৈশিষ্ট্য এর ব্যাপারে নিশ্চয় জেনে থাকবেন যে ওয়াকি টকিতে বিভিন্ন চ্যানেলের মাঝে সুইচ করার অপশন থাকে। আপনার চ্যানেল এবং যার সাথে ওয়াকি টকিতে কথা বলবেন তার চ্যানেল এক না চলে আপনারা কারো কথাই শুনতে পারবেন না। এবং এমনকি অনান্য চ্যানেলে সুইচিং করিয়ে নিয়ে অন্যদের ওয়াকি টকির কথাও আপনি শুনতে পারবেন! একই প্রসেস আমরা বিভিন্ন Baby Monitorয়েও দেখতে পাই।
একই ভাবে মর্ডান রাউটারগুলোও মাল্টি চ্যানেল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। তাই রাউটারগুলো আপনার ডিভাইসে সঠিক ভাবে তথ্য বা ডাটা আদানপ্রদানের জন্য বিভিন্ন চ্যালেনের মধ্যে সুইচিং করতে থাকে। কিন্তু আপনার প্রতিবেশির বাসার রাউটারটিও যদি একই চ্যানেলের হয়ে থাকে তাহলে আপনি এবং আপনার প্রতিবেশি দুজনই সিগন্যালে সমস্যা পাবেন।
উইন্ডোজ কমান্ড প্রোমোটে netsh wlan show all কমান্ডের মাধ্যমে আপনি আপনার এবং আপনার প্রতিবেশীদের নেটওর্য়াকের চ্যানেলগুলোকে দেখতে পাবেন। সাধারণত বাসার রাউটারগুলো চ্যানেল ৬ এবং চ্যানেল ১১ ব্যবহার করে থাকে।
যখন আপনি জানতে পারবেন যে আপনি নিজে এবং আপনার প্রতিবেশি কোন চ্যানেল ব্যবহার করছে তখন আপনি আপনার রাউটারের এডমিন পেজ থেকে আপনার রাউটারের চ্যানেলটি পরিবর্তন করিয়ে নিতে পারেন।
প্রায় সকল মর্ডান রাউটারগুলো Quality-of-Service (QoS) টুলস সহ এসে থাকে। এর মাধ্যমে আপনি প্রায় সকল অ্যাপস কতটুকু ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করবে সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। এই টুলসগুলো আপনার জন্য দরকারী হবে যদি আপনি ভিডিও স্ট্রিমি বা Voice over IP (VoIP) বেশি পরিমাণের ব্যবহার করে থাকেন। যেমন স্কাইপে আপনি একটি জরুরী ভিডিও কলের ভিতর আছেন কিন্তু ওই দিকে আপনার ছোট ভাই মোবইলে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ডাউনলোড করছে! এই রাউটারের এই জাতীয় টুলের মাধ্যমে আপনার রাউটারের কোন সফটওয়্যারটিকে বেশি প্রাধান্য (priority) দিবেন সেটি নির্ধারণ করে দিতে পারেন। বিশেষ করে একই অফিসের সবার জন্য যখন একটি রাউটার বরাদ্দ থাকে তখন এডমিন হিসেবে আপনি এই জিনিস করে নিয়ে পারেন। QoS সেটিংটি আপনি আপনার রাউটার এডমিন পেজের network's administration এর advanced settings এর ভিতর পাবেন।
এই পর্যন্ত যে ৫টি টিপস আমি আপনাদের সামনে এনেছি সেগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে কিছুটা হলেও আপনি আপনার রাউটারের সিগন্যালের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি মান্ধাতার আমলের পুরোনো রাউটার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে যতকিছুই করেন না কেন তেমন কোনো পার্থক্য আপনি দেখতে পাবেন না। কারণ এই টিউনের শুরুতেই আমি বলে দিয়েছি যে রাউটারগুলোর সিগন্যাল প্রধাণত রাউটারের হার্ডওয়্যারের উপর নির্ভর করে থাকে। আমাদের মধ্যে একটা ট্রেন্ডেসি থাকে যে নস্ট না হলে আমরা কোনো ডিভাইস পরিবর্তন করে থাকি না। যতই পুরানো হোক, মোবইল বলি, মনিটর বলি বা পিসিই বলি না কেন নস্ট না হলে আমরা নতুন কোনো ডিভাইস কিনে থাকি না। কিন্তু সবসমই পুরাতন জিনিস থেকে আমরা বেস্ট পারফরমেন্স পেতে পারবো না। আমাদেরকে নস্ট না হলেও নতুন ডিভাইস ব্যবহার করা উচিৎ। বিশেষ করে অফিস আদালতের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই আপ-টু-ডেট ডিভাইস ব্যবহার করা উচিত।
পুরাতন রাউটারের স্পিড, ব্যান্ডউইথ, ওজন, এন্টেনা সবকিছুই পুরাতন আমলের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি যে নেট লাইন ব্যবহার করছেন সেটি কিন্তু আপনার রাউটারের চেয়ে আপগ্রেডেট হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব নেটের লাইনেই এখন ফাইবার অপটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এই উচ্চ গতির ফাইবার অপটিক তারের জন্য আপনার দরকার হবে নতুন মডেলের রাউটার।
আপনার রাউটারটির যদি ইন্টারনাল এন্টিনা থাকে তাহলে একটি বা দুটি এক্সটারনাল এন্টিনা লাগিয়ে নিতে পারেন পারফরমেন্স বুস্টের জন্য। কিংবা এক্সটার এন্টিনাটি পুরোনো কিংবা ভেঙ্গে গেলে নতুন এন্টিনা কিনে এনে রিপ্লেস করে দেখতে পারেন পারফরমেন্স ভালো পান কিনা। তবে এই পদ্ধতিটি অরিজনাল ব্রান্ডের দামী দামী রাউটারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য! কারণ বাজারে হাজার দুয়েকের চাইনিজ রাউটারগুলোর এন্টেনা আপনি খুঁজেই পাবেন না। আর দু হাজারে নতুন রাউটার পেলে এই এন্টেনা রিপ্লেস এর ঝামেলায় আপনি নিশ্চয় যেতে চাইবেন না!
অফিসের রুমের সাইজ বা অফিসের সাইজ বেশি বড় হয়ে গেলে আপনি এই ওয়্যারলেস রেঞ্জ এক্সটেনডার ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি আপনার রাউটারে সিগন্যাল রেঞ্জ ড্রামাটিকভাবে বৃদ্ধি করে নিতে পারবেন। এই ডিভাইসকে Wireless Range Extender, Wireless Repeater, Wi-Fi Expander নামেও আপনি বাজারে পেতে পারেন। রেঞ্জ এক্সটেনডারগুলো সাধারণ রাউটারের মতোই দেখতে কিন্তু এদের কাজগুলো একদম ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এদের কাজ হলো আপনার রাউটারের ওয়াইফাইয়ের সিগন্যালকে ক্যাপচার করে নিয়ে আবারো তাদের মধ্যে দিয়ে সিগন্যাল প্রচার করে থাকে এবং ফলাফল সরুপ আপনার রাউটারের সিগন্যালকে বৃদ্ধি করে থাকে। ডিজিটাল ভাবে রেঞ্জ এক্সটেনডারকে আমরা একই সিগন্যালের আরেকটি আইপি এড্রেসযুক্ত ক্লায়েন্ট বলতে পারি।
আপনার রাউটারের মডেল কিংবা একই ব্রান্ডের এক্সটেনডার কিনতে হবে এমন কোনো কথা নেই তবে আপনার রাউটারের সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি সাথে মিল রেখে যেকোনো ব্রান্ডের সিগন্যাল এক্সটেনডার আপনি কিনে নিতে পারেন।
রেঞ্জ এক্সটেনডার ব্যবহার করে আপনি আপনার রাউটারের মুল সিগন্যালের প্রায় অর্ধেক বেশি রেঞ্জ পেতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি আসলেই অনেক জায়গা কভার করার প্রয়োজন হয় তাহলে আপনার এই সকল রাউটার আর এক্সটেনডারের উপর নির্ভরশীলতাকে বাদ দিতে হবে। আর আপনাকে টাকা পয়সা খরচ করে Mesh-Based Wi-Fi সিস্টেম বানিয়ে নিতে হবে। কিংবা বাসার জন্য মিডিয়াম সাইজের ওয়াইফাই সিস্টেম কিনে নিতে পারেন।
রাউটারের চেয়ে ওয়াইফাই সিস্টেমগুলো বাসার দেয়াল প্রতিটি কর্নারেও একই ভাবে সিগন্যাল পাঠিয়ে থাকে আর আপনি পান নিরবিচ্ছিন্ন সিগন্যাল কোয়ালিটি। বাসার প্রতিটি দেয়ালের কর্নারে স্যাটালাইট মডিউল বাসানো থাকে যেগুলো সরাসরি আপনার মেইন রাউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এরা সকলই একটি সিঙ্গেল ওর্য়ারলেস নেটওর্য়াকের সাথে সংযুক্ত থাকে। বাসার বা অফিসের সাইজ যত বড় হবে বা যতগুলো রুম থাকবে যতগুলো নোডের প্রয়োজন হবে আর আপনার খরচের পরিমাণও তত বৃদ্ধি পাবে। এটাই হচ্ছে এই পদ্ধতির মূল সমস্যা!
বর্তমান যুগের বিভিন্ন লিডিং রাউটারগুলো যেমন Linksys, Netgear, TrendNET, TPLink রাউটারগুলো সবই DD-WRT রাউটার অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। অথবা আপনার রাউটারটি এই অপারেটিং সিস্টেমটির না হয়ে থাকে তাহলে আপনি সহজেই নেট থেকে DD-WRT ডাউনলোড করে আপনার রাউটারের ফার্মওয়্যারে ইন্সটল করে নিতে পারেন। এই অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন নেটওর্য়্যাক টুইকিং করতে পারবেন। এবং এদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি পারফরমেন্স এবং রেঞ্জ বৃদ্ধি করে নিতে পারবেন।
তো এই ছিলো আজকের রাউটারের ওয়াইফাই সিগন্যাল বৃদ্ধি ১০টি জোস এবং চমৎকার পদ্ধতি। আশা করি এই পদ্ধতিগুলো আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এবং পদ্ধতিগুলো নিজে একবার ট্রাই করে টিউমেন্টে ফলাফল আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আজ তাহলে এ পযর্ন্তই থাকুক। আগামীকাল অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে! টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
খুবই সুন্দর তথ্য নির্ভর টিউন। আশা করি সবাই উপকৃত হবে। wifi কে যদি শেয়ার করে তার রেঞ্জ বাড়াতে চান? যেখানে wifi এর সিগন্যাল নেই সেখানে wifi সিগন্যাল পাঠিয়ে দিন wifi এ কানেক্ট থাকা অবস্থায়।
তাহলে এ টিউনটি আপনার জন্যই-https://www.techtunes.io/android/tune-id/529188