ওয়াই ফাই পাসওর্য়াড হ্যাকিং নিয়ে আমাদের অনেকের মনে অনেক ধরনের থিউরি বা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। আমাদের মধ্যে যারা এক্সপার্ট হ্যাকার রয়েছেন তাদের মধ্যেই এক এক জন বিভিন্ন রকম উপায়ে ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াডগুলোকে হ্যাক করে থাকেন। আজ ২০১৭ সালের বড়দিনে আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিভাবে আপনার ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াড হ্যাক করবেন সেটা নিয়ে। তো সবাইকে বড় দিনে অনেক সুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আজকের আমার টিউনটি শুরু করছি।
যারা বাসায় ওয়াই ফাই ব্যবহার করেন কিংবা স্কুল কলেজ, প্রতিষ্ঠান বা দেশের কোনো ফ্রি ওয়াই ফাই স্পটে গিয়ে ওয়াই ফাই চালানো অভিঞ্জতা থাকলে আপনাকে আর নতুন করে কিছু বলার নেই আমার ওয়াই ফাই সম্পর্কে! অ্যান্ড্রয়েডে মোবাইল ডাটা ব্যবহার করলে দেখবেন যে সেট যত দামীই হোক সেটটি হিট হবে এবং ব্যাটারী ড্রেইন হবে খুব দ্রুত। কিন্তু মোবাইল ডাটার থেকেও দ্রুতগতির ওয়াইফাই ব্যবহার করলেও আপনি দেখবেন যে সেট আপনার হিট হবে না এবং ব্যাটারীও তাড়াতাড়ি বা অস্বাভাবিকভাবে ড্রেইন হবে। আমার ওয়াই ফাইয়ের ভালো লাগার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো এটি।
এবার আসি আসল কথায়, আপনার প্রতিবেশির যদি ওয়াই ফাই কানেক্টশন থাকে এবং সেটার পাসওর্য়াড যদি আপনি না জানেন কিংবা আপনার নিজের ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াড যদি কোনো কারণে আপনি ভুলে যান তাহলে আজকের এই টিউনটি আপনারই জন্য! বিদেশে ফ্রি ওয়াই ফাইয়ের স্পটের সংখ্যা অনেক বেশি এবং সেখানে বিভিন্ন ওয়াই ফাইয়ের এপপ রয়েছে যেগুলো অনেক লক করা ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াডও শেয়ার করে থাকে এদের রেজিস্ট্রিকৃত ব্যবহারকারীদের কাছে কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা এটি এখনো দেখি নি। তো আমি আজকে প্রথমে দেখাচ্ছি কিভাবে যদি কখনো নিজের ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াড ভুলে যান তাহলে সেটা কিভাবে উদ্ধার করবেন:
এই মেথডটি ব্যবহার করে আপনি আপনার পিসিতে ভুলে যাওয়া ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াড উদ্ধার করতে পারবেন। কিংবা আপনার ল্যাপটপে প্রতিবেশি যদি এসে ওয়াই ফাই চালায় বা কোনো ওয়াই ফাইয়ের কানেক্টশন যদি আগে থেকেই আপনার পিসিতে দেওয়া থাকে কিন্তু আপনি এর পাসওর্য়াড জানেন না তাহলেই এই পদ্ধতিতে আপনি উক্ত ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াডটি উদ্ধার করতে পারবেন। কারণ উইন্ডোজ ৮ এবং উইন্ডোজ ১০য়ে আপনি প্রতিবার কোনো ওয়াই ফাই নেটওর্য়াকের সাথে যুক্ত হলে অটোমেটিক্যালি একটি প্রোফাইল খুলে রাখে এবং যতক্ষণ না আপনি উইন্ডোজ থেকে নেটওর্য়াকটি মুছে না দিবেন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রোফাইলে উক্ত ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াডসহ বিভিন্ন সংরক্ষিত অবস্থায় থাকবে।
এই পদ্ধতিতে কাজ করতে হলে আপনার Administrative Privileges সহ একটি Windows Command Prompt চালু করতে হবে।
এডমিনিট্রিভ রাইটস সহ একটি উইন্ডোজ কমান্ড প্রোমোট চালু করতে হলে Cortana দিয়ে সার্চ দিন এটা লিখে “cmd" এবং মেনুতে আপনি Command Prompt অপশনটি দেখতে পাবেন। এবার কমান্ড প্রোমোট অপশনে রাইট বাটন ক্লিক করে Run as administrator অপশনে ক্লিক করলেই আপনি এডমিনিট্রিভ রাইটস সহ একটি উইন্ডোজ কমান্ড প্রোমোট চালু করতে পারবেন। যদি আপনি কমান্ড প্রোমেটের লাইনের শেষে দেখেন যে C:\WINDOWS\system32\>. এসেছে তাহলে বুঝবেন যে আপনি এডমিনিট্রিভ রাইটস সহ একটি উইন্ডোজ কমান্ড প্রোমোট চালু করতে সক্ষম হয়েছেন।
এবার কমান্ড প্রোমোটে এই কমান্ড লিখে এন্টার দিন:
netsh wlan show profile
এই কমান্ড দিলে আপনি আপনার পিসিতে যাবতীয় ওয়াই ফাইয়ের ইউজার প্রোফাইলের নাম আপনি দেখতে পারবেন। এদের মধ্যে যে নেটওর্য়াকের পাসওর্য়াড আপনি উদ্ধার করতে চান সেটির নামটি কপি করে নিন এবং এবার পরবর্তী কমান্ডটি লিখুন:
netsh wlan show profile name="XXXXXXXX" key=clear
এই কমান্ডটি টাইপ করুন শুধু xxxxxx এর জায়গায় আপনার কাঙ্খিত নেটওর্য়াকের নামটি লিখে এন্টার দিন।
বি:দ্র: প্রোফাইল নামের মাঝে কোনো স্পেস থাকলে তখনই শুধুমাত্র আপনি নামের দুধারে কোটেশন মার্কস “xxx“ দিবেন।
এই কমান্ডটি লিখে এন্টার দিলে আপনি নতুন করে একটি মেনু পাবেন, আর সেখান থেকে Security Settings থেকে আপনি Key Content এরিয়াতে আপনার কাঙ্খিত ওয়াই ফাইয়ের পাসওর্য়াডটি দেখতে পারবেন।
এটিকে অনেকটা হার্ড রিসেট মেথড হিসেবে আমরা বলতে পারি। যখন আপনি আপনার নেটওর্য়াক রাউটারের ওয়াইফাইয়ের পাসওর্য়াডটি ভুলে যাবেন এবং রাউটারের পেজের পাসওর্য়াডটাও যদি ভুলে যান তাহলে আপনাকে এই পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে অন্য কোনো পদ্ধতিতে কাজ হবে না। তবে রাউটারের এডমিন পেজে যদি আপনি ঢুকতে পারেন তাহলে আর রিসেট করার দরকার হবে না, কিন্তু রাউটারের এডমিন পেজেও যদি আপনি ঢুকতে না পারেন কোনো কারণে তাহলে এই পদ্ধতিটি ফলো করুন। শুধুমাত্র ওয়াই ফাই কিংবা এডমিন পেজটি রিসেট করতে হলে এটি করতে হয় এবং এছাড়াও ফিজিক্যালি কোনো Ethernet Cable লাগালে রিসেট মারার প্রয়োজন হতে পারে।
প্রায় সকল প্রকার রাউটারে একটি রিসেট বাটন থাকে এবং এটি একটু রাউটারের ভিতরে থাকে। আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো একটি কলম বা সুঁই দিয়ে বাটনটি ১০ সেকেন্ডের মতো চেপে রাখতে হবে তাহলে রাউটারটি ফ্যাক্টরি সেটিংস রিসেট হয়ে যাবে।
কিন্তু আপনার রাউটারটি যদি আপনার ISP (Internet Service Provider) থেকে পেয়ে থাকেন তাহলে রাউটারটি রিসেট দেবার আগে আপনার আইএসপির সাথে যোগাযোগ করা উত্তম!
রাউটারটি রিসেট দেবার পর আপনাকে রাউটারের এডমিন পেজে যেতে হবে। এর জন্য ব্রাউজারে 192.168.1.1 বা 192.168.1.2 বা 192.168.0.1 বা 192.168.2.1 ইত্যাদি এড্রেস লিখে আপনাকে রাউটারের পেজে যেতে হবে। এবার এইখানেরও এডমিন ইউজারনেম এবং পাসওর্য়াডটিও রিসেট হয়ে গেছে। এইখানের ইউজারনেম এবং পাসওর্য়াডটি আপনার রাউটারের ম্যানুয়াল পেজে পেয়ে যাবেন। যদি কোনো কারণে ম্যানুয়্যাল হারিয়ে ফেললে আপনি একটি ওয়েবসাইটে গিয়ে routerpasswords.com আপনি আপনার রাউটারের ডিফল্ট ইউজারনেম/পাসওর্য়াড পেয়ে যাবেন।
সাইটে গেলে আপনাকে শুধুমাত্র আপনার রাউটার ব্রান্ড এবং রাউটার মডেলটি খুঁজে নিতে পারেন। এভাবে আপনি আপনার রাউটার এডমিন পেজে যেতে পারেন আর সেখান থেকে ওয়াই ফাই পেজে গিয়ে ডিফল্ট ওয়াই ফাই নাম এবং পাসওর্য়াডটি পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
এবার আসি আসল বিষয়ে। আপনি যদি গুগলে লিখে সার্চ দেন Wi-fi password hack তাহলে অনেক ধরনের সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইট পাবেন যেখানে আপনি এই বিষয়ে অনেক কিছুই পাবেন। কিন্তু কাজের কাজ মতো কাজ করবে এরকম পদ্ধতি আপনি অনেক খুঁজেও পাবেন না হয়তো। সফটওয়্যার ভিক্তিক সমাধানের ক্ষেত্রে আপনি দেখবেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভূয়া জিনিস এবং ভাইরাস দিয়ে ভরা থাকে!
তবে আমার পরামর্শ হবে যে এই ধরনের টুলস নিয়ে গবেষনা করার আগে আপনি আপনার অপারেটিং সিস্টেমের একটি ব্যাকআপ করে রাখতে পারেন যদি কোনো দুঘর্টনা ঘটে তাহলে যাতে সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। অথবা আলাদা করে ডুয়াল বুট অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে পারেন শুধুমাত্র এই টেস্ট এর জন্য। এবং আরেকটি কথা হলো এন্টিভাইরাস চালু থাকলে এই টুলগুলো ভালো মতো কাজ নাও করতে পারে।
ডুয়াল বুটের কথা বলতে গেলে আমি Kali Linux এর কথা বলতে পারি। Kali Linux হচ্ছে একটি লিনাক্স ভিক্তিক টেস্টিং ডিস্ট্রিবিউশন যেটা শুধুমাত্র এই নেটওর্য়াক ক্রাক করার জন্য বিশেষ করে নির্মিত হয়েছে। Kali Linux কে আপনি ডিভিডিতে কিংবা ইউএসবি ডিভাইসে নিয়ে পিসিতে ইন্সটলের ঝামেলা ছাড়াই চালাতে পারেন। Kali Linux একটি সম্পূর্ণ ফ্রি জিনিস এবং কোনো নেটওর্য়াক ক্রাক করার জন্য যত যাবতীয় টুলস এর প্রয়োজন হয় তা এতে দেওয়া রয়েছে।
কালি লিনাক্স হচ্ছে নেটওর্য়াক ক্রাকের একদম পরিপূর্ণ সলিউশন। কিন্তু আপনি যদি সম্পূর্ণ একটি আলাদা অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে না চান তাহলে আপনি নেটওর্য়াক ক্রাকিংয়ের অনান্য সফটওয়্যারগুলোকে পরখ করে দেখতে পারেন।
তাদের মধ্যে অন্যতম একটি সফটওয়্যার হলো Aircrack. এয়ারক্রাক সফটওয়্যারটি প্রায় কয়েকবছর ধরে মার্কেটে রয়েছে। প্রথম দিকে এটি শুধুমাত্র WEP ভিক্তিক ওয়াই ফাই নেটওর্য়াকগুলোকে ক্রাক করতে পারতো। কিন্তু এই পদ্ধতির সিকুরিটি সিস্টেম অনেক আগেই আউটডেটেড হয়ে যাওয়ায় এয়ারক্রাকও তাদের ডাটাবেস আপগ্রেড করে নিয়েছে। লেটেস্ট সংষ্করণের এয়ারক্রাক সফটওয়্যারটি বর্তমানে WEP, WPA এবং WPA-PSK কীগুলোকেও ক্রাক করতে সক্ষম!
এয়ারক্রাক দিয়ে কোনো ওয়াইফাই ক্রাক করার জন্য প্রথমেই আপনার পিসির ওয়াইফাই এডাপ্টর উক্ত নেটওর্য়াকের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এইরকম মডেলের হতে হবে। এছাড়াও কমান্ড লাইনের ব্যাপারে অভিঞ্জতা থাকতে হবে এবং অবশ্যই ধৈর্য্যশীল হতে হবে। কারণ এই পদ্ধতিগুলোকে অনেক i mean অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। এয়ারক্রাকে ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন এখানে ক্লিক করে।
তবে আপনি যদি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) সমৃদ্ধ কোনো সফটওয়্যার চান তাহলে KisMAC সফটওয়্যারটি পরখ করে দেখতে পারেন। তবে এই সফটওয়্যারটি শুধুমাত্র ম্যাকওএস এর জন্য রয়েছে। KisMAC মূলত একটি Sniffer মূলত সফটওয়্যার তবে সঠিক ধরনের এডাপ্টার ইন্সটলকৃত হয়ে থাকলে এটি দিয়েও নেটওর্য়াক পাসওর্য়াড ক্রাক করা সম্ভব।
তবে বর্তমান যুগে আমাদের আর এই ধরনের Sniffer এপপ দরকার হয় না কারণ আমাদের ফোন কিংবা ট্যাবলেটের ওয়াইফাই চালু করলেই আমরা আমাদের আশেপাশের সকল ওয়াইফাই নেটওর্য়াকগুলোকে দেখতে পাই।
তবে যারা সিরিয়াস ওয়াই ফাই পাসওর্য়াডের হ্যাকের দিকে আগ্রহ আছে তারা Reaver-wps সফটটি দেখতে পারেন। সেই কমান্ড লাইনে কাজ করার অভিঞ্জতা এবং ২ থেকে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত ব্রুট ফোর্স এট্যাকের সময়টুকু ধৈর্য্য ধরে বসে থাকার পর Reaver এপপসটি অবশ্যই যেকোনো WPA/WPA2 সিরিয়াস পাসওর্য়াডযুক্ত নেটওর্য়াকের পাসওর্য়াড ক্রাক করতে সক্ষম হবে। তবে এই এপ্লিকেশনটি শুধুমাত্র তখনই কাজ করবে যখন আপনি যে নেটওর্য়াকটি ক্রাক করবেন সেটার নেটওর্য়াক সিগন্যাল ৯০% এর বেশি থাকতে হবে মানে ওয়াইফাইয়ের সিগন্যালের বেশ কাছে থাকতে হবে এবং নেটওর্য়াকটিকে WPS অন করা থাকতে হবে।
তাই আমি টিউনের শেষে এসে বলতে পারি যে, যে সকল রাউটারে WPS সিস্টেম সার্পোট করে না সেসকল রাউটারগুলো ১০০% হ্যাকিংমুক্ত! তাই নতুন কোনো রাউটার কেনার আগে দেখে নিবেন WPS সিস্টেমটি আছে কি না।
ওয়াইফাইয়ের পাসওর্য়াড হ্যাকিং একটি বেআইনি কাজ। হোক সেটা নিজের নেটওর্য়াকই! কিন্তু টেকটিউনস কখনো কোনো বেআইনি কার্যক্রমের পক্ষে নয়। তাই আমি সরাসরি কিভাবে টিউনে উল্লেখিত সফটওয়্যারগুলো স্টেপ বাই স্টেপ ব্যবহার করতে হয় সেটা দেখালাম না। তবে আমার বিশ্বাস যারা সিরিয়াস মনোভাব নিয়ে আমার এই আজকের টিউনটি পড়লেন তারা অবশ্যই নিজেরাই এটা ট্রাই করার মতো যোগ্যতা রাখেন।
তো সবাইকে আবারো বড়দিনের শুভেচ্ছা এবং অগ্রীম নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের টিউনটি এখানেই শেষ করছি।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
হুম আমি আপনার সাথে একমত. কিন্তু আমি WPS বাদে ব্রুস এটাকের মাধ্যমে WiFi password ক্র্যাক করছি….. With Kali linus