নতুন মেমোরি কার্ড কেনার সময় এই ভুল গুলো আর কখনোই করবেন না! [মেগাটিউন!]

জকের দিনে মেমোরি কার্ড বা এসডি কার্ড বিশেষ করে মোবাইল ডিভাইজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্মার্টফোন, ক্যামেরা, এবং গাজেট গুলোর জন্য মেমোরি কার্ড কেনার একেবারেই সহজ কাজ তাই না? জাস্ট দোকানে গেলেন আর কিনে ফেললেন! —না, নতুন মেমোরি কার্ড কেনা মোটেও কোন সহজ কাজ না, কেনোনা এর অনেক আলাদা আলাদা মডেল রয়েছে আর সঠিক মডেল এবং টার্মের দিকে বিশেষ গুরুত্ব রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি যেমন তেমন কোন কার্ড কিনে নেন, দেখবেন বিশ্রী পারফর্মেন্স দিতে আরম্ভ করবে, বেশি খরচ পড়ে যাবে, বা এসডি কার্ড ঠিকঠাক মতো কাজই করছে না। এই আর্টিকেলে আমি জানাবো, কিভাবে মেমোরি কার্ডের স্পেসিফিকেশন বুঝবেন, এবং নতুন কার্ড কেনার সময় ভুল গুলোকে কিভাবে এড়িয়ে চলবেন!

উপযুক্ত মেমোরি কার্ড নির্বাচন

প্রথমে অবশ্যই একটি উপযুক্ত মেমোরি কার্ড নির্বাচন করতে হবে, অবশ্যই যেকোনো মাইক্রো এসডি কার্ড যেকোনো মাইক্রো এসডি স্লটে সহজেই লাগানো যাবে, কিন্তু সকল কার্ড ফরম্যাট সকল ডিভাইজে কাজ করবে না। তিনটি আলাদা কার্ড ফরম্যাট রয়েছে, যেগুলো আলাদা স্ট্যান্ডার্ড এবং আলাদা ক্যাপাসিটির উপর তৈরি। SD, SDHC, এবং SDXC —microSD এর ক্যাপাসিটি মাত্র ২জিবি পর্যন্ত হয়ে থাকে, এবং যেকোনো এসডি কার্ড স্লটে এটি সমর্থিত হয়। মাইক্রো SDHC ২ জিবি থেকে ৩২ জিবি পর্যন্ত ক্যাপাসিটি সমর্থন করে এবং যে ডিভাইজ গুলো একে সমর্থন করে, শুধু সেখানেই এই কার্ডটি চলে। SDXC স্ট্যান্ডার্ডে ৩২ জিবি থেকে ২ টেরাবাইট পর্যন্ত মেমোরি কার্ড বানানো সম্ভব, আর সাপোর্টেড ডিভাইজই শুধু এই টাইপের কার্ড কাজে লাগাতে পারে।

নতুন মেমোরি কার্ড কেনার সময় স্টোরেজ ক্যাপাসিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বেশিরভাগ সময় একজন ইউজার কতো ক্যাপাসিটি মেমোরি কার্ড কিনবে, সেটা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারে না। অনেক সময় জাস্ট প্রয়োজনের চেয়ে কম ক্যাপাসিটি কার্ড কিনে ফেলে, আবার অনেক সময় হাই ক্যাপাসিটি কার্ড কিনে ফেলে, যেটার জন্য ডিভাইজ স্লো কাজ করতে পারে। আপনি কোন টাইপের ডাটা আপনার কার্ডে স্টোর করতে চাচ্ছেন, সে অনুসারে ক্যাপাসিটি পছন্দ করা উচিৎ। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন, কোন টাইপ ডাটা কতোটুকু স্পেস নেবে? নিচের টেবিল গুলো অনুসরণ করলে, এই ব্যাপারে আপনার ভালো ধারণা হয়ে যাবে। তারপর আপনি সহজেই সঠিক ক্যাপাসিটি নির্বাচন করতে পারবেন।

মিউজিকের জন্য;—

FORMAT512 MB1 GB2 GB4 GB8 GB16 GB32 GB
MP3 (256 Kbps)60 Songs120 Songs240 Songs480 Songs960 Songs1920 Songs3840 Songs

ইমেজের জন্য;—

FORMAT512 MB1 GB2 GB4 GB8 GB16 GB32 GB
6 MP195 Photos395 Photos730 Photos1460 Photos2820 Photos5840 Photos11680 Photos
7 MP178 Photos340 Photos650 Photos1300 Photos2600 Photos5200 Photos10400 Photos
8 MP160 Photos320 Photos580 Photos1160 Photos2320 Photos4640 Photos9280 Photos
10 MP143 Photos290 Photos440 Photos880 Photos1760 Photos3520 Photos7040 Photos
12 MP100 Photos250 Photos340 Photos680 Photos1360 Photos2720 Photos5440 Photos
14 MP75 Photos205 Photos260 Photos525 Photos1050 Photos2100 Photos4200 Photos
18 MP40 Photos150 Photos154 Photos310 Photos620 Photos1240 Photos2840 Photos

ভিডিও’র জন্য;—

FORMAT512 MB1 GB2 GB4 GB8 GB16 GB32 GB
Standard20 Mins35 mins50 Mins100 Mins3.3 Hrs6.7 Hrs13.3 Hrs
720p10 Mins15 Mins22 Mins45 Mins90 Mins3 Hrs6 Hrs
1080p5 Mins10 Mins20 Mins40 Mins80 Mins2 Hrs4 Hrs

মেমোরি কার্ড স্পীড

SDHC, এবং SDXC মেমোরি কার্ড গুলো আলট্রা হাই স্পীড বাস ইন্টারফেসকে সমর্থন করে। এর মানে হচ্ছে, এই কার্ড গুলো অনেক দ্রুত ডাটা রীড রাইট করার ক্ষমতা রাখে। আলট্রা হাই স্পীড’কে সাধারণত ইউএইচএস (UHS) ধরা হয়, এর আবার দুইটি ভার্সন রয়েছে; ইউএইচএস-১, এবং ইউএইচএস-২। ইউএইচএস-১ সর্বচ্চ ১০৪ মেগাবাইট/সেকেন্ড এবং ইউএইচএস-২ ৩১২ মেগাবাইট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড প্রদান করতে সক্ষম। তবে ইউএইচএস থেকে সুবিধা গুলো পেতে অবশ্যই আপনার ডিভাইজ এটিকে সমর্থন করতে হবে।

মেমোরি কার্ড ক্লাস

আপনার মেমোরি কার্ড কতোটা ফাস্ট হবে সেটা নির্ভর করে এর ক্লাস রেটিং এর উপর। মোট ৪টি ক্লাস রেটিং রয়েছে, ক্লাস ২—সর্বনিম্ন ২ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীড; ক্লাস ৪— সর্বনিম্ন ৪ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীড; ক্লাস ৬— সর্বনিম্ন ৬ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীড; এবং ক্লাস ১০— সর্বনিম্ন ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীড প্রদান করতে সক্ষম। আপনার মেমোরি কার্ডের উপর এটি কোন ক্লাসের তার রেটিং ইংরেজিতে লেখা থাকে, এবং রেটিং এর উপর গোল বৃত্ত আঁকানো থাকে। আপনার কার্ডের ক্লাস স্পীড দেখে আপনি সহজেই অনুমান করতে পারবেন, কোন কার্ড দিয়ে কোন টাস্ক গুলো করা সম্ভব হতে পারে।

ইউএইচএস স্পীড

ইউএইচএস স্পীড স্ট্যান্ডার্ড ইউএইচএস-১ এবং ইউএইচএস-২ দুই ক্লাসের মেমোরি কার্ড ছেড়ে থাকে; ইউ-১ এবং ইউ-৩ —যথাক্রমে মিনিম্যাম স্পীড প্রদান করে ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড এবং ৩০ মেগাবাইট/সেকেন্ড। যদি আপনার কার্ডটি ইউএইচএস রেটিং করা হয়ে থাকে, অবশ্যই ১ বা ৩ সংখ্যা ইউ এর মধ্যে আর কার্ডে ফিজিক্যালি লেখা থাকবে!

এখন যদি কথা বলি মাক্সিম্যাম স্পীড নিয়ে, কোন এসডি কার্ডেই কিন্তু মাক্স স্পীড উল্লেখ্য থাকে না, শুধু মিনিম্যাম স্পীড রেটিং করা থাকে। এটা নির্ভর করে কার্ড প্রস্তুতকারী কোম্পানির উপর তারা তাদের কার্ডের কোন টেক উন্নতি করার মাধ্যমে মাক্স স্পীড প্রদান করবে। এজন্য দেখে থাকবেন, আপনার ক্লাস ১০ মেমোরি ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীড দেয়, কিন্তু আপনার বন্ধুর ক্লাস ১০ মেমোরি ১৪ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীড প্রদান করে। কম্পিউটার থেকে ডাটা ট্র্যান্সফার করার সময় কতো স্পীড প্রদান করবে সেটা নির্ভর করে আপনি কেমন ক্যাবল ব্যবহার করছেন, বা কোন কার্ড রিডার ব্যবহার করছেন, অথবা আমার কম্পিউটারের স্পেকও এতে গুরুত্বপূর্ণ!

ভুল মেমোরি কার্ড নির্বাচন করবেন না!

সঠিক কাজের জন্য সঠিক মেমোরি কার্ড নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন কাজের হাই ক্যাপাসিটি ডিম্যান্ড থাকে, আবার কোন কাজের জন্য হাই স্পীড ডিম্যান্ড থাকে, কোন কাজে ক্যাপাসিটি+স্পীড দুইটারই প্রয়োজন পড়ে। ধরুন আপনি ফোনের জন্য একটি কার্ড কিনতে চাচ্ছেন, সেখানে জাস্ট ডাটা স্টোর করার জন্য। ৭২০পি/১০৮০পি ভিডিও, ইমেজ, এমপি৩ —এই টাইপের ডাটা স্টোর করার জন্য ক্লাস ৬ হলেই যথেষ্ট, সাথে যতোবেশি ক্যাপাসিটি কিনবেন ততোই ভালো!

এখন আপনি এই শুধু ডাটা স্টোর করার জন্য হাই স্পীড বা ইউএইচএস মেমোরি কার্ড কেনেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই টাকার অপচয় হবে, কেনোনা স্পীড অনুসারে দামও বেশি হয়ে যাবে। আবার ধরুন আপনি ফোনে ৪কে রেকর্ড করতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই হাই স্পীড মেমোরি কার্ড ক্লাস প্রয়োজনীয় হবে, কেনোনা ৪কে রেকর্ড করার জন্য হাই ব্যান্ডউইথ প্রয়োজনীয় হবে। সাথে ৪কে ভিডিও অনেক স্পেস গ্রহন করবে, তাই অবশ্যই ক্যাপাসিটির দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ফোনের অ্যাপ মেমোরি কার্ডে ইন্সটল করতে চাইলে অবশ্যই কমপক্ষে ক্লাস ১০, এবং আমি রেকমেন্ড করবো অন্তত ইউ-১ মেমোরি কার্ড কিনতে, কেনোনা অ্যাপ লোড করার জন্য আপনার ফাস্ট স্পীড প্রয়োজনীয় হবে। এভাবে আপনার জব অনুসারে আপনাকে সঠিক স্পীড এবং ক্যাপাসিটি উভয় দিকেই তাল মেলাতে হবে।

ফেক কার্ড থেকে সাবধান!

নকল মেমোরি কার্ড কেনা একেবারেই আশ্চর্যজনক কিছু নয়। অনেকেই শপিং মল থেকে কম টাকা দিয়ে বড় বড় ক্যাপাসিটি মেমোরি কার্ড কিনে নিয়ে আসেন, কিন্তু সেগুলোর ক্যাপাসিটি অনেক কম হয়ে থাকে, সাথে ক্লাস রেটিংও ভুল থাকে। অনেক দোকানেও ফেক মেমোরি কার্ড আপনার হাতে ধরিয়ে দিতে পারে। ওয়েবসাইট গুলো থেকে কার্ড কেনার সময়ও আপনি প্রতারিত হতে পারেন।

তাই আমি বলবো সস্তা ডিলে কার্ড কেনা থেকে বিরত থাকুন। দেখবেন মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে ৩২ জিবি কার্ড কিনেছেন, কিন্তু ৪ জিবি ডাটা লোড করার পরে ক্যাপাসিটি শেষ শো করবে। বা প্যাকেটের গায়ে বা কার্ডের ফেক স্পীড রেটিং করা থাকে। উইন্ডোজ কম্পিউটারের জন্য একটি ইউটিলিটি রয়েছে  H2testw —যার মাধ্যমে মেমোরি কার্ড ফেক কিনা, তা ডিটেক্ট করতে পারবেন।


বেস্ট চয়েজ হবে, নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট মেমোরি কার্ড নির্বাচন করা। আর আশা করছি, এই আর্টিকেল আপনাকে সঠিক এসডি কার্ড নির্বাচন করতে বিশেষ সাহায্য করবে। তো নতুন কার্ড কেনার পূর্বে আপনি কোন বিষয় গুলো আগে লক্ষ্য করেন? আমাদের নিচে টিউমেন্ট করে জানান!

ক্রেডিট; TecHubs.Net
ইউটিউব; TecHubs TV
ফেসবুক; TecHubs

Level 6

আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস