আজ থেকে মাত্র ২০ বছর আগেও বাংলাদেশে যাবতীয় ব্যাকিং কার্যক্রম, টাকা লেনদেন সহ যাবতীয় আর্থিক কার্যক্রমগুলো নন-ভার্চুয়ালি করা হতো! আর এখন! ক্লাস ৬/৭ এর স্টুডেন্টরাও এখন বিকাশ করা শিখে গিয়েছে! তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আজকাল আমাদের জীবনে সেন্সিটিভ এবং গোপনীয় সবকিছুই এখন অনলাইন হয়ে গিয়েছে।
ব্যাকিং কার্যক্রম থেকে শুরু করে টাকা লেনদেন, কলেজের ফরম পুরণ, শপিং করে টাকা পরিশোধ সহ সকল প্রকার জটিল কাজগুলোও আজকাল ভার্চুয়াল লাইফে চলে এসেছে। জটিল কাজগুলো ভাচুর্য়ালি সহজ হয়ে গেলেও অন্যদিক দিয়ে কাজগুলোর নিরাপত্তার দিকটিও আমাদের কাছে সহজ হবার কথা কিন্তু বাস্তবে এর উল্টো হচ্ছে। একজন বয়স্ক মানুষের কাছে তার ব্যাংক একাউন্টে টিপসই কিংবা তার সিগনেচারের নিরাপত্তা সিস্টেম কে অনলাইন ব্যাকিং এর মাল্টিস্টেপ পাসওর্য়াড সিস্টেমের চাইতে সহজবোধ্য হবেই!
তাই আমাদের সবার উচিৎ অনলাইনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুর্ত্বের সাথে নেওয়া। আর যে বিষয়টির সাথে আমরা অতি সহজেই প্রায় সবসময়ই অনলাইনে কানেক্টেড থাকি তা হচ্ছে আমাদের স্মার্টফোন!
আমাদের স্মার্টফোনেই আমাদের লাইফের যাবতীয় গুরুর্ত্বপূর্ণ এবং অদরকারী দুই ধরনেরই ইনফরমেশনগুলো থেকে থাকে। আর তাই সবার আগে আমাদের উচিৎ আমাদের স্মার্টফোনকে সুরক্ষিত রাখা! সুরক্ষিত রাখা বলতে বিভিন্ন হ্যাকারদের হাত থেকে স্মার্টফোনকে নিরাপদ রাখা কে বুঝায়।
আর বর্তমান যুগে অনলাইনে সুরক্ষিত থাকার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এনক্রিপ্টশন সিস্টেম। আমাদের আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমেও আজকাল এই এনক্রিপ্টশন সিস্টেম চলে আসায় আমরা এবার আমাদের স্মার্টফোনকে হ্যাকিংয়ের হাত থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষিত রাখার সুযোগ পাচ্ছি! কিভাবে আপনি আপনার স্মার্টফোনকে এনক্রিপ্ট করবেন তা জানেন না? তাহলে আজকের এই টিউনটি আপনার জন্য! তো চলুন বরাবরের মতো কথা না বাড়িয়ে আজকের টিউনের টপিকে চলে যাচ্ছি।
যারা আইটি বা ইনফরমেশন টেকনোলজি কিংবা তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে কম অভিঞ্জ তাদের কাছে এনক্রিপ্টশন ব্যাপারটি অন্যরকম লাগতেই পারে। তাদের কাছে নরমাল পাসওর্য়াড সিস্টেম টাই মাঝে মাঝে বিরক্তিকর মনে হয় আর সহজবোধ্য পাসওর্য়াডগুলোকেই অনেক সময় তারা ভুলে যান। আর এদিকে এনক্রিপ্টশন সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি আপনার ডাটাগুলোকে এমন ভাবে বিছিন্ন করে রাখতে পারবেন যেখানে ডিক্রিপ্টশন ব্যাতীত সেগুলোতে আপনি নিজেও একসেস করতে পারবেন না।
এভাবেই এনক্রিপ্টশনের মাধ্যমে যেকোনো জাতীয় ডাটাকে সবোর্চ্চ সুরক্ষিত রাখা যায়। আপনার ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশন, পাসওর্য়াড, ব্যক্তিগত মেসেজ, ফটো সহ বিভিন্ন গোপনীয় এবং সেন্সিটিভ জিনিসের ডাটাগুলোকে এনক্রিপ্ট করার মাধ্যমে আপনি সেগুলোকে হ্যাকিংয়ের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
এনক্রিপ্টশনের মাধ্যমে ডাটাগুলোকে অতিরিক্ত পরিমাণের কঠিন ধাপে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে হ্যাকিং প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। এনক্রিপ্টশনের মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোনের ডাটাগুলোকে Unreadable এবং scrambled আকারে নিয়ে যাওয়া হয়! হ্যাকারা সাধারণত যেভাবে স্মার্টফোনে হ্যাকিং চালায় তাদের মধ্যে বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম হচ্ছে ব্রুট ফোর্স এট্যাক! এখানে সকল সম্ভাব্য পাসওর্য়াড কম্বিনেশনকে হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কিন্তু এনক্রিপ্টশনের মাধ্যমে ডাটাগুলো পাসওর্য়াড ছাড়াই সুরক্ষিত রাখা হয় বিধায় এই পদ্ধতিতে হ্যাক করা সম্ভব হয় না।
আইওএস এর নতুন আপডেট iOS 11 তে ডাটা এনক্রিপ্টশনকে বাই ডিফল্ট ভাবে দিয়ে দেওয়া রয়েছে। মানে হলো আপনি এবার শুধু মাত্র আপনার আইওএস ডিভাইসে সাধারণ পাসওর্য়াড কিংবা প্যাটান লক সিস্টেম ব্যবহার করলেও স্মার্টফোনটি নিজে থেকেই অটোম্যাটিক্যালি ডাটাগুলোকে এনক্রিপ্ট করে নিবে এবং প্রয়োজনমাফিক ডাটাগুলোকে ডিক্রিপ্ট করে আপনার সামনে উপস্থাপন করবে।
এই কারণেই অনেকের কাছেই আইওএস এর ১১ সংস্করণটি স্লো মনে হচ্ছে! যাই হোক আইওএস ডিভাইসে এনক্রিপ্ট ফিচারটি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে প্রথমে ডিভাইসে একটি পাসকোড ব্যবহার করতে হবে। এখানে আপনি ৪ ডিজিট কিংবা ৬ ডিজিটের পাসকোড ব্যবহার করতে পারবেন। পাসকোড দেওয়ার পর এপলের এনক্রিপ্টশন ফিচার Data Protection টি অটোম্যাটিক্যালি আপনার ডিভাইসের জন্য চালু হয়ে যাবে।
এই বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্য পাসকোড সেটআপ করার পর আপনি আপনার ডিভাইসের Touch ID & Passcode পেজে চলে যান এবং এর নিচের দিকে দেখবেন লেখা রয়েছে "Data Protection is enabled"! এছাড়াও আপনি আইওএস এর ধ্বংসাত্বক ফিচারটিও সেটআপ করে নিতে পারেন যদি আপনি চান। Erase Data ফিচারটি চালু করে রাখলে আপনার পাসকোড ১০বার ভুল চাপলে আপনার আইওএস ডিভাইসের ডাটাগুলো নিজে থেকেই মুছে যাবে! ফোন চুরি হয়ে গেলে ডিভাইসের ডাটার সুরক্ষার জন্য আপনি এই ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন।
বর্তমান যুগের দামী দামী এবং নতুন মডেলের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোতেও বাই ডিফল্ট ভাবে এনক্রিপ্টশন সিস্টেম চালু করা থাকে এবং এই সব ডিভাইসগুলোকে এনক্রিপ্টশন সিস্টেমকে বাদ দিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই আপনার কাছে। তবে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে যদি আগে থেকেই এই এনক্রিপ্টশন সিস্টেমটি চালু করা না থাকে এবং আপনি যদি আপনার ডিভাইসে এনক্রিপ্টশন সিস্টেম কে চালু করতে চান তাহলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
১) পারফরমেন্স স্লো হতে পারে: একবার ডিভাইসটি এনক্রিপ্ট হয়ে গেলে ডাটাগুলো আপনার প্রয়োজন মাফিক on-the-go এবং on-the-fly হিসেবে যখন তখন ডিক্রিপ্ট করে আপনার সামনে উপস্থাপন করা হয়। এই প্রক্রিয়ার কারণে আপনার ডিভাইসটি হালকা স্লো হতে পারে। তবে আপনার ডিভাইসটি পাওয়ারফুল হলে এটা কোনো প্রকার ইফেক্ট ফেলবে না আপনার ডিভাইসের পারফরমেন্সের উপর।
২) একমুখি এনক্রিপ্টশন: আপনি যদি নিজ থেকে ম্যানুয়ালি এনক্রিপ্টশন সিস্টেম একটিভ করেন তাহলে ডিভাইসটিকে সম্পূর্ণ ভাবে এনক্রিপ্টশন মুক্ত করার জন্য ডিভাইসকে ফ্যাক্টরি রিসেট মারতে হবে! তাই এনক্রিপ্টশন করার আগে ১০ বার ভেবে নিন।
৩) রুট করা অ্যান্ড্রয়েড: আপনার ডিভাইসটি যদি রুট করা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এনক্রিপ্টশন সিস্টেম চালু করার আগে আপনার ডিভাইসটিকে আনরুট করে নিন। রুট করা ডিভাইসে ডাটা এনক্রিপ্টশন ফিচারটি ব্যবহার করলে বহুমুখি সমস্যার মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে! তাই প্রথমে ডিভাইসটিতে আন রুট করে নিন, তারপর এনক্রিপ্টশন সিস্টেম চালু করুন এবং তারপর আবার সেটটি রুট করে নিন।
আর এনক্রিপ্টশন প্রক্রিয়াটি ৪০ মিনিট থেকে আরো বেশি সময় নিতে পারে সেটা আপনার ডিভাইসে পারফরমেন্স এবং আপনার ডিভাইসের ডাটার উপর নির্ভর করে। তাই ডিভাইসের ব্যাটারী চার্জ ফুল করে তারপর এনক্রিপ্টশন প্রক্রিয়া শুরু করুন। বাই ডিফল্ট ৮০% চার্জ ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম আপনারকে এনক্রিপ্টশন শুরু করতে দিবে না!
আপনার ডিভাইসের সেটিংস মেনু তে যান এবং সেখান থেকে সিকুরিটিতে যান। যদি আপনার ডিভাইস আগে থেকেই এনক্রিপ্ট করা হয়ে থাকে তাহলে সেটা এখানে দেখতে পাবেন। আর যদি না হয় তাহলে Encrypt Phone অপশন সিলেক্ট করে এনক্রিপ্টশন প্রক্রিয়াটি চালু করুন।
বি:দ্র: আপনার ডিভাইসে যদি Encryption সেটিংটি না পেয়ে থাকেন তাহলে আপনার অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণটি এই ফিচারটি সার্পোট করে না। অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ থেকে এই ফিচারটি রয়েছে।
পরবর্তী স্ক্রিণে আপনাকে এনক্রিপ্টশন নিয়ে কিছু সর্তকবার্তা দেখাবে যেটা আমি আগেই আপনাদেরকে বলে রেখেছি। এবার ENCRYPT PHONE বাটনে চেপে প্রক্রিয়াটি শুরু করুন।
হাহাহা! পরবর্তী স্ক্রিণেও আপনার এনক্রিপ্টশন নিয়ে ফাইনাল সর্তকবার্তা দেখাবে! এরপরেও যদি ভয় না পান তাহলে ENCRYPT PHONE বাটনে চেপে ফাইনালি প্রক্রিয়াটি শুরু করুন।
আপনার ডিভাইসটি রিবুট হবে এবং এনক্রিপ্টশন প্রক্রিয়াটি চালু হবে। এখানে প্রগ্রেস বার এবং কতক্ষণ সময় লাগবে সেটাও আপনাকে দেখাবে। যেখান থেকে আপনি আইডিয়া পেতে পারেন যে ঠিক কতক্ষণ সময় লাগবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে। এর ফাঁকে আপনি ডিভাইসটি রেখে দিয়ে চা নাস্তা খেয়ে আসতে পারেন!
প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে গেলে আপনার ডিভাইসটি চালু হবে এবং এনক্রিপ্টশন সিস্টেমটি আপনার ডিভাইসের জন্য রেডি হয়ে যাবে! নিশ্চিত হবার জন্য সেটিংস এ গিয়ে সিকুরেটি অপশনে গিয়ে দেখতে পারেন!
তো এভাবেই আপনি এনক্রিপ্টশনের মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোনের ডাটা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোকে সুরক্ষিত করে রাখতে পারবেন। তবে আপনার জন্য কি এনক্রিপ্টশন সিস্টেমটি প্রয়োজনীয় নাকি সাধারণ পাসওর্য়াড সিস্টেমটাই আপনার জন্য পারফেক্ট? সেটা আমাদেরকে টিউমেন্টে জানাতে ভুলবেন না যেন! আজ এ পর্যন্তই! আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে চলে আসবো আপনাদের প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে!
টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!