টিউন তো সবাই লিখতে পারে। কিন্তু নিয়ম মেনে টিউন লিখে কজন! নিয়ম গুলোই বা জানে কজন!
প্রকাশনা (post) লিখতে নিয়ম কিসের?
জনপ্রিয় ব্লগ গুলোতে যদি আপনি নিয়মিত ভিজিট করেন তাহলে দেখবেন তাদের প্রতিটি টিউন সাজানো গুছানো! মনে হতে পারে হয়ত তা ব্লগের থিমের কারসাজি! কিন্তু সব থিমের কারসাজি; প্রতিটি লেখককেও কিছু নিয়ম মেনেই টিউন করতে হয় ব্লগের সৌন্দর্য বজায় রাখতে এবং ব্লগের লোড-স্পিড বাড়াতে।
কি কি নিয়ম মানতে হবে?
প্রথম কাজ হচ্ছে সম্পূর্ণ প্রকাশনা (Post) লিখা শেষ করা। তারপর নিচের কাজ গুলো করা। প্রকাশনা লিখার কাজ শেষ না করেই নিচের কাজ গুলো করতে গেলে সময় বেশী নষ্ট হবে।
১. আকর্ষণীয় প্রকাশনা শিরোনাম (টাইটেল)
টিউনের নাম হতে হবে ছোট এবং আকর্ষণীয়। এখানে দ্রষ্টব্য হচ্ছেঃ
শিরোনাম দেখে যাতে বুঝা যায় প্রকাশনাটা কি নিয়ে।
শিরোনাম কিন্তু টিউনের “বর্ণনা/সারাংশ” নয়; টিউনের “বিষয়”।
২. প্রকাশনা (post) শুরু করতে হবে প্রকাশনার সারাংশ দিয়ে
প্রকাশনার শুরুর প্রথম প্যারা অবশ্যই ১০০ অক্ষর মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এ অংশে টিউনের প্রধান কথা লিখার চেষ্টা করুন। যা পড়ে একজন পাঠক যাতে বুঝতে পারেন তিনি টিউন পড়ে কি জানতে পারবেন। শিরোনামের পরে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
৩. প্রকাশনার (post) সারাংশ লিখার পর অবশ্যই <!–more–> ট্যাগ ব্যবহার
টিউনের শুরুর প্যারার পর অবশ্যই <!--more--> ট্যাগ দিতে হবে। এটি দিলে ব্লগের শুরুর পাতায় <!--more--> ট্যাগ পর্যন্ত অংশটুকু প্রকাশনায় দেখাবে। প্রথম প্যারা বলতে দ্বিতীয় অংশে যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা বুঝানো হচ্ছে।
excerptnoun
a short extract from a film, broadcast, or piece of music or writing.
excerpt/সারসংক্ষেপ বাক্সে টিউনের সারাংশ/সারসংক্ষেপ লিখা হয়। এখানে সাধারণত উপরে বর্ণিত (দ্বিতীয় অংশে প্রকাশনার শুরুর প্যারাটাই (অর্থাৎ <!--more--> ট্যাগ এর আগ পর্যন্ত লিখা) কপি-পেস্ট করা হয়। এছাড়া নিজের ইচ্ছা মতও সারসংক্ষেপ দেয়া যায়।
প্রকাশনাতে বাংলা ব্যবহার করার চেষ্টার করুন। বাংলা নতুন শব্দ যেমনঃ হালনাগাদ, প্রকাশনা, অনুলিপি ইত্যাদি ব্যবহার করলে ব্রাকেটে ইংরেজি শব্দটি লিখে দিন, যাতে মানুষ নতুন শব্দ গুলোর ব্যবহার জানতে পারে। যেমনঃ হালনাগাদ (update), প্রকাশনা (post), অনুলিপি (copy) ইত্যাদি।
যারা অভ্র ব্যবহার করে কম্পিউটারে বাংলা লিখেন তাদের জন্য কিন্তু এ কাজটি আরো সহজ। আপনার সম্পূর্ণ লিখা কপি করুন। কীবোর্ড থেকে Ctrl+F7 চাপুন, তাহলে অভ্র প্যাড চালু হবে। এবার অভ্র প্যাডে লিখা পেস্ট করুন এবং F7 চাপুন। অভ্র প্যাড আপনাকে ভুল বানান ধরিয়ে দিবে।
৬. শিরোনাম ট্যাগ (heading tag) ব্যবহার করুন
প্রকাশনা ছোট হলে হয়ত শিরোনাম ট্যাগ (h1, h2, …, h6) ব্যবহার এর প্রয়োজন হয়না। কিন্তু প্রকাশনা বড় হলে চেষ্টা করুন প্রতিটি ভাগের জন্য একটি করে শিরোনাম দিতে। শিরোনাম ট্যাগ গুলো লেখা ছোট বড় করার জন্য ব্যবহার করবেন না।
শিরোনাম ট্যাগ গুলোর ব্যবহার এরকমঃ
প্রাথমিক কোনো অংশের জন্য h1 (শিরোনাম ১) ট্যাগ ব্যবহার করুন।
h1 ট্যাগের ভিতর যদি আরো অংশ থাকে সেগুলোর জন্য h2 (শিরোনাম ২) ব্যবহার করুন
h2 ট্যাগের ভিতর যদি আরো অংশ থাকে তাহলে h3 (শিরোনাম ৩) ব্যবহার করুন। এভাবে চলতে থাকবে..
পরামর্শ হল সর্বোচ্চ h3 (শিরোনাম ৩) ট্যাগ পর্যন্ত ব্যবহার করুন। h4, h5 এবং h6 না ব্যবহার করা ভাল।
৭. সঠিক বিভাগ (category) নির্বাচন করুন
টেকমাস্টার ব্লগে একাধিক বিভাগ নির্বাচন করার সুবিধা আছে। তাই সঠিক বিভাগ বা বিভাগ সমূহ নির্বাচন করুন।
৮. প্রয়োজন মতো ট্যাগ (tag) দিন
ট্যাগ অংশে দিতে হবে আপনার টিউনের কি-ওয়ার্ড সমূহ। কি-ওয়ার্ড মানে হল এমনকিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যেগুলো আপনার প্রকাশনার সাথে মিলে।
যেমনঃ “ফেসবুক প্রোফাইল ভিডিও চালু” নামে প্রকাশনার জন্য ট্যাগ হতে পারে- ফেসবুক, প্রোফাইল ভিডিও, ফেসবুক প্রোফাইল ভিডিও, ভিডিও ইত্যাদি।
৯. ছবির ফাইলের আকার ছোট করা (ইমেজ অপটিমাইজেশন)
যে কোনো ওয়েব সাইটে সব থেকে লোডিং টাইম বেশী লাগে ছবি (image) লোড হতে। তাই অবশ্যই ছবির আকার ছোট রাখার প্রতি ব্লগের লেখকদের দৃষ্টি দিতে হবে।
ছবির ফাইলের আকার কমাতে ছবির আকারই ছোট করতে হবে অথবা কোয়ালিটি কমিয়ে ফেলতে হবে তা কিন্তু না!
কিছু সফটওয়্যার এবং ওয়েব সাইট আছে যেগুলো ছবির (দৃশ্যত) কোনো ক্ষতি না করে ফাইলের আকার ছোট করতে পারে। আমি নিজে ছবি ছোট করতে ব্যবহার করি RIOT (http://luci.criosweb.ro/riot/)। এটি বিনামূল্য সফটওয়্যার। এটি দিয়ে jpg, gif, png ইত্যাদি সব ইমেজ ফাইলের আকার ছোট করা যায়। এটির ব্যবহারও সহজ, RIOT চালু করে শুধু ড্র্যাগ-ড্রপ করে ছবি RIOT উইন্ডোতে ফেলুন এবং সেভ করুন..
অনলাইন সার্ভিস গুলো ব্যবহার করতে চাইলে গুগলে অনুসন্ধান করুন “Free Online Image Optimizer” দিয়ে, তালিকার শুরুতেই অনেক গুলো সাইট পাবেন ছবির ফাইলের আকার ছোট করার জন্য।
১০. ফিচার ইমেজ দিন
ফিচার ইমেজ অবশ্যই দিবেন। এখন থেকে ফিচার ফাইলের আকার হতে হবে: 800 px × 400 px
অর্থাৎ প্রস্থ: ৮০০ পিক্সেল এবং উচ্চতা: ৪০০ পিক্সেল।
কিভাবে ছবির আকার পরিবর্তন (রিসাইজ) করতে হয় তা জানতে নিচের লেখাটি পড়তে পারেনঃ
ফিচার ইমেজ হিসেবে অবশ্যই আকর্ষণীয় কিছু দিতে হবে। আজ-কাল সব বিষয়েই গুগলে HD ছবি পাওয়া যায়।
যে ছবি ফিচার ইমেজ দিবেন তা আবার প্রকাশনার ভিতরে দেয়া যাবে না। ফিচার ইমেজ শুধু ফিচার ইমেজ হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। প্রকাশনার ভিতরে অন্য ছবি ব্যবহার করতে হবে।
১২. ছবির অবস্থান প্রকাশনার (post) বিষয় অনুসারে সাজানো যেতে পারে
প্রকাশনার ভিতর ছবি দেয়া হলে সেগুলোর অবস্থান (alignment) প্রকাশনার বিষয় অনুযায়ী আলাদা হতে পারে।
যেমন এ প্রকাশনাতে প্রতিটি ছবি মাঝখানে দেয়া আছে। মাঝখানে দেয়ার জন্য প্রকাশনার ছবিকে ক্লিক করে ছবিটি সিলেক্ট করে align center বাটনে ক্লিক করলেই ছবি মাঝখানে চলে আসবে।
এখন align left এবং align right বাটন (উপরের ছবিতে চিহ্নিত করা বাটনের বাম এবং ডান বাটনটি) দিয়ে প্রকাশনাকে নিচের ছবির মত সাজাতে পারবেন।
অতিরিক্ত কিছু কথা
প্রকাশনাতে অযথা লেখার রং পরিবর্তন করবেন না!
প্রকাশনাতে লেখার গুরুত্ব পরিবর্তনের জন্য bold, underline অথবা italic প্রয়োজন হলে heading ট্যাগ ব্যবহার করুন। লেখার রং নিজে নিজে পরিবর্তন করবেন না। এটি প্রকাশনার সৌন্দর্য কখনো বাড়ায় না।
তবে খুব বিশেষ প্রয়োজনে লাল রংটি ব্যবহার করতে পরেন।
প্রকাশনাতে (post) ক্রেডিট (credit) দিন
অবশ্যই প্রকাশনা কপি-পেস্ট করবেন না। নিজের ব্লগের প্রকাশনা হলেও একটু পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন এবং পূর্বপ্রকাশিত লিখে দিবেন টিউনের শেষে।
গবেষণামূলক টিউন গুলোতে যেখান যেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলোর ক্রেডিট দিবেন। ক্রেডিট দিলে প্রকাশনার মূল্য কিন্তু কমেনা। মানুষ জানতে পারে প্রকাশনাটির কথা গুলোর সত্যতা কত বেশী।
ব্লগে প্রোফাইল ঠিক করুন
ব্লগে টিউন করার আগে অবশ্যই আপনার প্রোফাইল ঠিক করুন। প্রোফাইলে কমপক্ষে প্রোফাইল ছবি এবং প্রোফাইল বায়ো (আত্মজীবনী) যুক্ত করুন। প্রোফাইল আত্মজীবনীতে আপনার নিজের ফেসবুক, টুইটার, গুগল-প্লাস ইত্যাদি লিঙ্কও যু্ক্ত করে দিতে পারেন।
আমি ওয়েব মাস্টার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।
আমি রাকিব। ভালো লাগে টেকটিউন কে ভালোবাসি বললে ভালো হয় , আর তাই বার বার ফিরে আসি। নতুন কে জানার টানে। নতুন কে জানানোর টানে।