কি কারনে স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়? এটা কি স্বাভাবিক? প্রতিকার জেনে নিন

আজকাল প্রায় সবধরনের ফোন এ, সে ফোন Android হোক আর Apple হোক আর উইন্ডোজ ফোন হোক কিংবা সস্তা বা দামী। একটি সমস্যা কিন্তু লেগেই থাকে, তা হলো অত্তাধিক গরম হওয়া। আপনার ফোন এর সাথে যদি এমনই কোনো সমস্যা ঘটে থাকে তবে আজকের এই টিউনটি আপনার জন্যই। আজ আমি বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করবো, যেমনঃ কেনো স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়? স্মার্টফোন গরম হওয়াটা কি স্বাভাবিক? এবং অত্তাধিক গরম হওয়া থেকে আপনার স্মার্টফোনটিকে কীভাবে রক্ষা করবেন?

স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়ার কারন সমূহ

দেখুন যদি গরম হওয়ার কথা বলি তবে বলতেই হয় যে প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি বা মেশিন ই গরম হয়। উদাহরণ সরূপ আপনার গাড়ি, কম্পিউটার ইত্যাদি সব কিছুই গরম হওয়া থেকে বিরত নয়। গাড়ি ঠাণ্ডা রাখতে পানি ঢালা হয়,  কম্পিউটার ঠাণ্ডা রাখতে ফ্যান ব্যবহার করা হয় তাছাড়া এর ভেতর HeatSheild থাকে। তো আসলে বলতে পারেন স্বাভাবিক ভাবে স্মার্টফোন একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র হওয়ার কারনে এটি গরম হয়। তারপরও আমি আপনাদের সব কিছু খুলে বলবো। তো চলুন জেনে নেয় স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়ার কারন সমূহ।

  • প্রসেসরঃ স্মার্টফোন গরম হওয়ার জন্য প্রথম যে দায়ী তা হলো প্রসেসর। প্রসেসর আপনার ফোন এর প্রধান অঙ্গ সরূপ। যে আপনার ফোন এর প্রতিটি কাজ করে থাকে। আপনি ফোন ব্যবহার করেন আর নাই বা করেন প্রসেসর কিন্তু সবসময় চলতে থাকে এবং তার কাজ করতে থাকে। আর এই প্রসেসর নির্মাণ করা হয় অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে। এবং এর ভেতর অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র  ইলেকট্রন থাকে। যখন প্রসেসর তার কাজ করে তখন এই ইলেকট্রন গুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে (সহজ ভাষায়)। এবং এই দৌড়াদৌড়ি করার সময় ইলেকট্রন গুলো নিজেদের ভেতর সংঘর্ষ ঘটায় এবং তাপ উৎপাদন করে। অর্থাৎ আপনার প্রসেসর যত বেশি কাজ করে তাপ ও ততো বেশি উৎপাদন হয়। আপনি যদি কম কাজ করেন, যেমন ধরুন শুধু ফোন এ কথা বলছেন, কিংবা মিউজিক শুনছেন তবে আপনার ফোনটি কম গরম হবে। কিন্তু মনে করেন আপনি গেম খেলছেন এবং একসাথে ইন্টারনেট থেকে কোনো ফাইল ও ডাউনলোড করছেন, তবে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার ফোন এর প্রসেসর কে বেশি কাজ করতে হবে এবং যার ফলে বেশি গরম হবে আপনার স্মার্টফোনটি। আজকাল কার স্মার্টফোন গুলো দিন এর পর দিন চিকন হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রসেসর এর দ্বারা উৎপন্ন তাপ আপনার ফোনটি চিকন হওয়ার কারনে বের হতে পারে না। এবং লক্ষ করলে দেখা যাবে যে আপনার ফোন এর প্রসেসরটি ফোন বডির সাথেই লেগে থাকে, যার ফলে খুব তারাতারি এবং অত্যাধিক গরম অনুভূত হয়।
  • অত্যাধিক লোডঃ আমি আগেই বলেছি অত্যাধিক লোড ফেললে আপনার ফোনটি দ্রুত এবং বেশি গরম হবে। স্বাভাবিক কাজ যেমন ফোন এ কথা বলা, এসএমএস সেন্ড করা বা গান শোনার মত ছোট কাজ এ কম গরম হবে আপনার ফোনটি। কিন্তু আপনি যখন অনেক গুলো কাজ এক সাথে করবেন বা কোনো বড় কাজ করবেন তখন আপনার ফোনটি অত্যাধিক লোড এর সম্মক্ষিন হবে এবং স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হবে।
  • ব্যাটারিঃ স্মার্টফোন গুলো দিনদিন চিকন হয়েই চলছে। কিন্তু ব্যাটারি প্রযুক্তিতে তেমন একটা বিশেষ উন্নতি আনা হচ্ছে না। তারপর ফোনটি অনেক চিকন হওয়ার কারনে  যন্ত্রপাতি গুলোর একে অপরের মধ্যে খুব বেশি দূরত্ব থাকে না। ব্যাটারি চার্জ বা ডিসচার্জ হওয়ার সময় কম বেশি গরম হয়েই থাকে। আর যন্ত্রপাতি গুলোর একে অপরের মধ্যে খুব বেশি দূরত্ব না থাকার ফলে এই ব্যাটারির গরম সব দিকে ছড়িয়ে পরে এবং আপনার স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়ে পরে।
  • পরিবেস্টিত তাপমাত্রাঃ স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম, হওয়ার আরেকটি বড় কারন কিন্তু পরিবেস্টিত তাপমাত্রা হতে পারে। সাধারন ভাবে গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ৩৫-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে যায়। এই পরিবেশে আপনি ঘরে বসে থাকলেও আপনার আসেপাশের তাপমান থাকে প্রায় ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এই তাপমান এর ভেতর আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করলে এটি আরো তাড়াতাড়ি গরম হয়ে পরবে।
  • দুর্বল নেটওয়ার্ক সিগনালঃ মনে করুন আপনি এমন এক জায়গায় আছেন, যেখানে নেটওয়ার্ক সিগনাল খুব দুর্বল। অথবা আপনার ওয়াইফাই সিগনাল অনেক কষ্টে আপনার স্মার্টফোন অবধি আসছে। এই অবস্থায় আপনার স্মার্টফোন এ বেশি চার্জ খরচ হয়। দুর্বল নেটওয়ার্ক সিগনাল পাওয়ার জন্য আপনার ফোনটি অ্যান্টেনাতে বেশি পাওয়ার প্রয়োগ করে, যাতে ফোনটি ভালো সিগনাল ধরতে পারে। এতে স্মার্টফোনটির প্রসেসরকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এবং স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়ে পরে।

কতটা গরম হওয়া স্বাভাবিক এবং কতটা গরম হওয়া অস্বাভাবিক

এখন চলুন কথা বলি স্মার্টফোন স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক গরম হওয়া নিয়ে। স্বাভাবিক অবস্থায় কাজ করতে করতে আপনার স্মার্টফোনটি ৩৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম হতে পারে। আর বিশ্বাস করুন এটা শুধু আপনার ফোন এর ক্ষেত্রে না, বরং সবারই গরম হয়। আপনার ফোনটি কম দামী বলেই যে বেশি গরম হচ্ছে, তা কিন্তু মতেও ঠিক নয়। স্যামসাঙ বলুন আর অ্যাপেল, সব ফোনই কিন্তু গরম হয়।

তবে হাঁ, আপনি যদি লক্ষ্য করে দেখেন যে আপনার ফোনটি সবসময়ই ৩৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম থাকছে। এমন কি যখন আপনার ফোনটি স্ট্যান্ড-বাই মোড এ থাকে তখনও, তবে আপনার ফোন এ সমস্যা আছে।

স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়াতে কি কি অসুবিধা হতে পারে?

  • কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়াঃ স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়াতে আপনার ফোন এর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। দেখুন স্মার্টফোন এর প্রসেসরকে এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে এটি বেশি গরম হয়ে পরলে কাজ করা কমিয়ে দেয়, যাতে এটি ঠাণ্ডা হতে পারে। আর প্রসেসর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করা কমিয়ে ফেলার জন্য আপনার স্মার্টফোন এর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।

অত্যাধিক গরম হওয়া থেকে স্মার্টফোনকে কীভাবে রক্ষ্যা করবেন

স্মার্টফোনে বেশি কাজ করা যাবে না বা বেশি গেম খেলা যাবে না, আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। অত্যাধিক গরম হওয়া থেকে স্মার্টফোনকে বাচাতে চাইলে আপনার ফোন এর সফটওয়্যার গুলো কে আপডেট রাখুন। অনেক সময় ফোন এর সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার সমকক্ষতা রাখতে বার্থ হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। নিয়মিত অনুসন্ধান করে দেখুন যে কোন কোন অ্যাপস ব্যাকগ্রাউন্ড এ বেশি জায়গা নিচ্ছে। সে অ্যাপস গুলো সনাক্ত করে অস্থায়ী ভাবে বন্ধ করে রাখুন।

উপসংহারঃ

আশাকরি আজকের এই টিউনটি আপনারা খুব উপভোগ করেছেন। আপনাদের কাছে যদি স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়ার আরো কোনো কারন থাকে কিংবা কীভাবে অত্যাধিক গরম হওয়া থেকে স্মার্টফোনকে কীভাবে রক্ষ্যা করা যায় যে বিষয়ে আরো ধারণা থাকে তবে টিউমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারেন।

এই রকম আরো টিউন পড়ার জন্য আমার ছোট্ট বাংলা প্রযুক্তি ব্লগ এ আমন্ত্রন রইল। আশা করি সময় নষ্ট হবে না।

Level 6

আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

    আরো ভালো প্রতিকার আপনার জানা থাকলে দয়া করে শেয়ার করুন।

Level 0

Thanks.