ইদানিং অনলাইনে বড় বড় বিজ্ঞাপনে দেখা যায় কেউবা ডাটা সেন্টারের মালিক আবার কেউবা বাংলাদেশী হোস্টগেটর, কেউবা বাংলাদেশের ১ নম্বর কোম্পানী, আবার কেউবা দাবি করে তারা তিন হাজার/পাঁচ হাজার/দশ হাজার+++ দেশী বিদেশী ওয়েব সাইট হোস্ট করে বসে আছে।
কিছু কিছু প্রোভাইডার আপনাকে বলবে তাদের কাছ থেকে হোস্টিং কিনলে মনে হবে আপনার ওয়েব সাইট বুঝি আপনার নিজের কম্পিউটার এর হার্ড ডিস্ক থেকে ব্রাউজ করতেছেন।
কেউ কেউ বলবে তারা বাংলাদেশের সেরা ডেডিকেটেড সার্ভার প্রোভাইডার। দেশী বিদেশী অনেক হোস্টিং কোম্পানি তাদের কাছ থেকে সার্ভার নিয়ে হোস্টিং ব্যবসা করে। অথচ মজার ব্যাপার কি জানেন, খোজ নিয়ে দেখা যায় তারা তাদের নিজেদের ওয়েব সাইট হোস্ট করে আছে অন্য একটা দেশী প্রোভাইডারের কাছে!!!
আবার কেউ কেউ আপনাকে বলবে, ভিজিটর বাড়লে কখনো আপনার ওয়েব সাইট ডাউন হবে না, স্লো হবে না। অথচ কাজের বেলায় দেখা যায় তাদের নিজেদের ওয়েব সাইট খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আসল কথা হচ্ছে, কথা বলতে ট্যাক্স লাগে না, আবার লিখতেও ট্যাক্স দিতে হয় না। সুতরাং প্রবলেম টা কোথায়???
সমস্যা হচ্ছে কাস্টমার যখন রামধরা খায় তখন বলে, ভাই ওমুক যায়গায় তমুক কিনছিলাম। মাগার কোম্পানী এখন ফোন ধরে না, মেইল অথবা টিকেট এর কোন রিপ্লাই দেয়না। ডোমেইন হোস্টিং রিনিউ করমু কেমনে? ফোন পাই এ্ইসবের, কারন আমার একখান ছোট খাটো ওয়েব হোস্টিং বিজনেস আছে। তখন এদের কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। আমার এই লেখাটি তাদের জন্য, যারা বর্তমানে হোস্টিং কিনতে আগ্রহী।
সমস্যা হচ্ছে সবাই খুজে সস্তার দিকে। যেমন জাম এর দামে আম, ডিম এর দামে মুরগী কিনতে চায় অনেকে। বুঝুন কি অবস্থা!!! ভালো কোম্পানী কোনগুলো তা চিনতে আপনাকে বিজ্ঞানী হতে হবে না। মনে রাখবেন, দামি জিনিসের একটাই সমস্যা, দাম বেশি, বাকি সব ভালো, সস্তা জিনিসের একটাই সুবিধা, দামে সস্তা, বাকি সব খারাপ।
ডোমেইন কেনার আগে যে সব বিষয় মাথায় রাখবেন :
× বাংলাদেশের মানুষ ডোমেইন বলতে মনে করে .com ই আসল ডোমেইন। তাই ডোমেইন কেনার সময় আপনাকে প্রথমে .com নেম কে মাথায় রাখতে হবে। এর পর অন্য কিছু।
× ডোমেইন যাতে ছোট, সহজে মনে রাখা যায় সেইদিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। উদ্ভট টাইপের কিংবা বড় নাম দিয়ে ডোমেইন রেজি: করলে সেটা সবাই মনে রাখতে পারবেনা। তাই সঠিক ডোমেইন নাম পছন্দ করতে না পারলে শুরুতেই ভিসিটর হারাবার আশংকা থাকে।
× কোন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর/ওয়েব সাইটের সাখে আপনার ডোমেইন নাম যাতে না মিলে যায় সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। তাহলে ভবিষ্যতের ঝুট-ঝাামেলা থেকে বেঁচে যাবেন।
আনলিমিটেড ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ নিয়ে কিছু কথা :
* আনলিমিটেড ডিস্ক স্পেস : অনেকেই নতুন ওয়েব সাইট তৈরী করার সময় আনলিমিটেড হোস্টিং এর উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। মনে রাখবেন আনলিমিটেড এর একটা লিমিট আছে এবং বোনাস হিসেবে সেইটার সাথে আনলিমিটেড সমস্যা থাকে। আপনি কি কোনদিন আনলিমিটেড হার্ডডিস্ক দেখেছেন, যেটার মধ্যে ফাইল কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিস আপনি যতই রাখুন না কেন সেটার স্পেস কোনদিন শেষ হবে না। এটা কি সম্ভব? যদি উত্তর আপনার না হয় তাহলে আশা করি এখন থেকে ভাববেন আনলিমিটেড ডিস্ক বলতে কোন কিছু হয়না। কারন আপনার প্রোভাইডার এর সার্ভার ও এই আমার আপনার মত কম্পিউটার এর হার্ডডিস্ক এর মত ডিস্ক থেকে সেবা দিয়ে থাকে। সুতরাং সার্ভারের ডিস্ক আনলিমিটেড না হলে আপনি কিভাবে আনলিমিটেড ডিস্ক স্পেস পাবেন?
* আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ : এখন হয়ত বলবেন আনিলিমিটেড ডিস্ক স্পেস নাই পেলাম। কিন্তু আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ তো অবশ্যই পাবো। ভাই দাড়ান, এখানেও কথা আছে। প্রত্যেকটা সার্ভারের পোর্ট স্পীড কিন্তু ফিক্সড করে দেওয়া থাকে। যেমন আপনার পিসির ল্যান কার্ডের স্পীড নির্দিষ্ট করা থাকে। অবশ্য সেটা আপনার প্রয়োজনে পিসি/সার্ভার এর পোর্ট স্পীড আপগ্রেড করতে পারবেন।
এখন দেখুন কোন পোর্ট সর্বোচ্চ মাসিক কতটুকু ব্যান্ডউইথ দিতে পারে
10 Mpbs port speed = 3287 গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ
100 Mpbs = 32871 গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ
1 Gbps = 328717 গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ
10 Gbps = 3287179 গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ
এই ব্যান্ডউইথ দিতে পারবে যদি সার্ভার এর পোর্ট সবসময় লোড খাকলে। যা বাস্তবিক পক্ষে কোনদিনই সম্ভব না। আর আপনার প্রোভাইডার নিশ্চয় সেখানে আপনার একার সাইট হোস্ট করবেনা, সেখানে আপনার মত প্রচুর আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ দরকার এই রকম ক্লায়েন্ট বহু আছে। সো এই লিমিট ব্যান্ডউইথ থেকে আপনি কিভাবে আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ পাবেন? প্রশ্নটা আশা করি ক্লিয়ার।
আনলিমিটেড আসলে কি :
এখন নিশ্চয় মাথায় হাত। ভাবছেন তইলে কেমনে কি? তাহলে বিভিন্ন কোম্পানী আনলিমিটেড বিজ্ঞাপন দেয় কেন? আসলে হচ্ছে এটা একটা মার্কেটিং পলিসি। কেননা বাস্তবিক আনলিমিটেড ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ বলে কিছু নেই। ৫/১০ ডলার মাসিক আনলিমিটেড হোস্টিং এর বিল দিয়ে যদি সাইট চালানো যেত তাহলে আর পৃখিবীতে ডেডিকেটেড/ভিপিএস/ক্লাউড হোস্টিং নামে কোন সার্ভিস/সার্ভারের দরকার পরতো না। সব ঐ আনলিমিটেড দিয়ে চলে যেত। কিংবা ঐ সব আনলিমিটেড হোস্টি কোম্পানীর আর ডেডিকেটেড/ভিপিএস/ক্লাউড সার্ভিস নামে কোন প্রোডাক্ট থাকতো না। মনে রাখবেন, আনলিমিটেড হোস্টিং কোম্পানী একটা সময় অবশ্যই কোন না কোন কারন দেখিয়ে আপনার সাইট সাসপেন্ড করে দিবে। সো আশা করি বুঝে গেছেন, আনলিমিটেড আসলে কি?
এখন ভাবুন হোস্টিং কেনা নিয়ে :
১। ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ : অনেকেই শুরুর দিকে মনে করে তার ওয়েব সাইট করতে প্রচুর ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ লাগবে। দেখা যায় অনেকের ওয়েব সাইট করতে ৫০০ মেগাবাইট হোস্টিং দরকার। কিন্তু না বুঝে কিনে ফেলেছে, ৫ জিবি/১০ জিবি প্যাকেজ। ফলস্বরুপ তাকে প্রতি বছর টাকা দিতে হয় অযথা। সুতরাং আপনার ওয়েব সাইটের জন্য কতটুকু ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ লাগবে তা হিসাব করে নিন। এবং সেই ভাবে আপনার হোস্টিং প্যাকেজ কিনুন, যাতে আপনাকে অযথা টাকা দিতে না হয়। এবং ভবিষ্যতে যদি আপনার অতিরিক্ত ডিস্ক স্পেস/ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়লে তাহলে পরবর্তী প্লানে আপগ্রেড করে নিবেন। এখন প্রায় সব কোম্পানিই প্যাকেজ আপগ্রেড সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে আপনার যদি গান/মুভি/ভিডিও নিয়ে ওয়েব সাইট করার ইচ্ছা থাকে তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে বড় ওয়েব স্পেস এর দিকে নজর দিতে হবে।
২। মানিব্যাক গ্যারান্টি :
মানিব্যাক গ্যারান্টি ওয়েব হোস্টিং এর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশিরভাগ কোম্পানিই ৩০ দিনের মানিব্যাক গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন কোম্পানি মানিব্যাক গ্যারান্টি দিচ্ছে কিনা।
৩। সাপোর্ট :
ওয়েব হোস্টিং এ সাপোর্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার হোস্টিং সার্ভার যদি কখনো ডাউন হয় আর যদি তা জানাতে এবং উত্তর পেতে কয়েক দিন লেগে যায় তাহলে লক্ষ ভিজিটর হারাতে পারেন। আর যদি আপনি রিসেলার ক্লায়েন্ট হোন তবে তো মহা বিপদে পড়বেন। আপনার ক্লায়েন্টকে কোন উত্তর দেয়ার মতো কিছু থাকবে না। তাই কোম্পানির সাপোর্ট কত দ্রুত তা নিশ্চিত হয়ে নিন। হোস্টিং কোম্পানিকে জিজ্ঞাসা করুন তাদের গ্যারান্টেড সাপোর্ট রেসপন্স টাইম কেমন। এবং কি কি মাধ্যমে সাপোর্ট দিয়ে থাকে। প্রয়োজন পড়লে, কোম্পানীর কাছে ইমেইল করে এইসব বিষয় জেনে নিন।
৪। প্রোডাক্ট প্রাইজিং :
আপনার ডোমেইন হোস্টিং এর প্রাইজিং ও একটা বড় বিবেচ্য বিষয়। স্বাভাবিক মূল্যের থেকে অতিরিক্ত কয়েক গুন বেশী দাম দিয়ে ডোমেইন হোস্টিং কিনলেই আপনি লাভবান বা নিরাপদ থাকবেন এই আশা করাটা বোকামী। যারা ইতিমধ্যে সুনামের সাথে ডোমেইন হোস্টিং সেবা দিয়ে আসছে, তাদের প্রাইজিং দেখেন, তাহলে আশা করি আপনার প্রোডাক্ট এর দাম এর ব্যাপারে ধারনা হয়ে যাবে।
৫। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক অবস্থা :
# হোস্টিং কেনার আগে হোস্টিং কোম্পানি ভাল না মন্দ তা জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। কোম্পানি সম্পর্কে ইউজারদের দৃষ্টি ভঙ্গি কেমন তা কোম্পানির রিভিউ দেখলেই বুঝতে পারবেন। সব থেকে প্রাধান্য দিবেন আপনার পরিচিত যারা বর্তমানে বিভিন্ন হোস্টিং ব্যবহার করছে তাদের কথায়।
# কোম্পানি যেসব বিলিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে তা বৈধ্য উপায়ে করে কি না। নাকি চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার করে তা নিশ্চিত হয়ে নিন। যারা চোরাই বিলিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে সার্ভিস দেয় তাদের থেকে ভাল কিছু আশা করা ঠিক হবে না। কারন এটার জন্য যে কোন সময় ডাটা সেন্টার থেকে আপনার পুরা সাইট এবং সব ক্লায়েন্টদের গুরুত্বপূর্ন তথ্য ডিলেট করে দিতে পারে। পাইরেটেড বিলিং সফটওয়ার ইউজ এর কারনে সব ডাটা হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
# কোম্পানি কি কি মাধ্যমে পেমেন্ট নিবে এইসব একটা বিবেচ্য বিষয়। কখনই কোন কোম্পানীর সাথে ব্যক্তিগত একাউন্টে লেনদেন করবেন না। সব সময় চেস্টা করবেন তাদের প্রতিষ্ঠানের নামের একাউন্টে লেনদেন করতে।
আশা করি এই লেখাটি, যারা ডোমেইন হোস্টিং কিনবেন তাদের অনেকের কাজে লাগবে।
পুর্বে প্রকাশিত ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে নিচের লেখাগুলো পড়তে পারেন, জানতে পারবেন অনেক কিছু-
ডোমেইন কিনবেন? একটু বুঝে শুনে কিনুন, যদি প্রতারিত হতে না চান! মনোযোগ দিয়ে পড়ুন
সার্ভার ডাউন!!! আপনার সাইট দেখা যাচ্ছে না? কিভাবে বুঝবেন আপনার প্রোভাইডারের ওয়েব সার্ভার ডাউন?
লেখাটি HostClation.com এর সৌজন্যে প্রকাশিত
আমি সুমির। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 190 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
এই আমি সুমির। পুরো নাম সুমির সূত্রধর। একজন প্রযুক্তিপ্রেমী। প্রযুক্তিকে ভালবাসি অসম্ভব। ছোট একটা ওয়েব হোস্টিং বিজনেস আছে। ঠিকানা- http://hostclation.com ফেসবুকে আমি : http://facebook.com/sumir.sutradhar গুগল/ইয়াহু/স্কাইপ : sumirbd
ঘরে বসে আয় করার জন্য এই পোষ্টটি দেখতে পারেন।
https://goo.gl/iGaqGW