শুধুমাত্র মাত্র টেকনিক্যাল কারণ বা সমস্যাতেই যে পিসি নষ্ট হয় বা সমস্যা হয় ব্যাপারটা কিন্তু এমন না।আমাদের ব্যবহার পদ্ধতি,রক্ষনাবেক্ষনের উপরো এসব কিছু অনেকাংশে নির্ভরশীল।আপনার একটু সতর্কতাই পারে আপনার পিসিকে দীর্ঘায়ু দিতে।আসুন আজ আপনাদের বলব তেমনি কিছু সচেতনতার কথা যেগুলা মাথায় রেখে কাজ করলে অনেক অনাকাংখিত ঝামেলা থেকেই মুক্তি পাবেন আপনি।
পাওয়ার সকেট ঠিকমতো ভু-সংযুক্ত(আর্থিং) থাকতে হবে। আজকাল যদিও অধিকাংশ ব্যবহারকারী ভূ-সংযোগ ছাড়াই পিসি চালান তবে পিসির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় ভূ-সংযোগ থাকা ভালো। একটি সকেটের উপর মাল্টিপল না চাপিয়ে পাওয়ার স্টিপ ব্যবহার করুন। হিটার, এসি, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিনের সাথে যুক্ত পাওয়ার লাইন বাদ দিয়ে পিসির জন্য আলাদা একটি পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করুন। লোডশেডিং-এর ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে ইউপিএস ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা ব্যবহারের আগে ঠিকমতো কাজ করছে কি-না পরখ করে নিবেন। এবং পিসির সবক’টি পেরিফিরিয়ালের লোড নিতে সক্ষম কি-না তা-ও যাচাই করে দেখুন।অযথা প্রিন্টার বা স্ক্যানার ইউপিএস এর সাথে লাগাবেন না।
তাপমাত্রার পরিবর্তনের প্রতি কম্পিউটার বেশ সংবেদনশীল। ঠাণ্ডা আবহাওয়াই পিসির পক্ষে অনুকূল। তবে খুব শীতল আবহাওয়া নয়। আপনি যদি এটি সরিয়ে নিয়ে এমন কক্ষে রাখেন যেখানে তাপমাত্রা ভিন্ন রকমের তবে সেটা সাথে সাথে চালু না করে কিছুটা সময় নিয়ে করবেন। নতুন আবহাওয়ার সাথে কম্পিউটারকে আগে পরিচিত হতে দেন।
বর্তমানের উন্নত ও দ্রুতগতির কম্পিউটারগুলি ব্যবহার করা উচিত সাবধানতার সাথে। সরাসরি সূর্যের আলো লাগে এরকম জায়গায় একে রাখবেন না। এমন জায়গায় না যেখানে তাপমাত্রা খুব দ্রুত বদল হয় যেমন এসি, এয়ারকুলার বা হিটার এদের কাছাকাছি স্থান। এসি করা ঘরে যদি কম্পিউটার রাখেন তাহলে লক্ষ রাখতে হবে যেন এসির বাতাসের সরাসরি প্রবাহ তাতে না লাগে। প্রচুর জলীয় বাস্পযুক্ত বাতাস পিসির বিভিন্ন অংশগুলি ড্যাম্প করে দিতে পারে। কিছুটা ঠাণ্ডা, শুকনো এবং ধুলোমুক্ত পরিবেশ কম্পিউটার রাখার জন্য উপযুক্ত স্থান। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় এদেশে কম্পিউটার ব্যবহারে সাবধানী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। উষ্ণতা এর অন্যতম শত্রু। কম্পিউটারের কক্ষটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা বাঞ্চনীয়। ফ্যানযুক্ত সিপিইউ কেবিনেট ব্যবহার করুন।
লক্ষ রাখবেন আপনার পিসির কভার যেন যথাযথ অবস্থায় থাকে। ড্রাইভ অথবা স্লট দিয়ে যেন বাইরের ধুলোবালি, পোকামাকড় না ঢোকে। পিসি চালানোর সময় কোনো কিছু ঢেকে ভেন্টিলেশন ছিদ্র বন্ধ করবেন না। তাহলে ব্যবহারের সময় অত্যধিক উষ্ণ হয়ে যাবে সেটা। তবে ব্যবহারের পর পিসি ঠাণ্ডা হওয়ার পরে তা কাপড় অথবা কোনো আবরণী দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখবেন। শীতের দিনে ইঁদুর, টিকটিকি আশ্রয় নিতে পারে কম্পিউটারের ভেতরে। তাছাড়া এর মধ্যে মাকড়সাও জাল বুনতে পারে। সেজন্য মাঝে মধ্যে কেস খুলে দেখতে পারেন তা পরিষ্কার আছে কিনা।
কোনো কোনো সময় মেশিন পূর্বের তুলনায় ধীর সময়ে কাজ করতে পারে। এতে বিচলিত না হয়ে কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় বাহুল্যজনিত কারণে অর্থাৎ প্রয়োজনীয় যে সকল প্রোগ্রাম রয়েছে সেগুলোর কারণে সিস্টেম স্লো হতে পারে। পিসি বুটিংয়ে যদি অনেকগুলো ইউটিলিটি ওপেন করে রাখা হয় সেক্ষেত্রে এই সময় বাড়তে পারে। কোনো কোনো সময় হার্ডডিস্কের জায়গা কমে আসার জন্যও এই সময় লাগতে পারে।
প্রতি সপ্তাহে একবার অন্ততপক্ষে স্ট্যান্ডার্ড স্ক্যান ডিস্কটি চালান আপনার কম্পিউটারের ওপরে। স্ক্যানডিস্ক টুলসটি পাবেন স্টার্ট মেন্যুর প্রোগ্রাম>এক্সেসরিজ>সিস্টেম টুলসের ভেতরে।এটি চালালে দুটি অপশন পাবেন স্ট্যান্ডার্ড এবং থ্রু স্ক্যানের অপশন। ডিস্কের যে কোনো ধরনের সমস্যা, ডাটা করাপশনের সম্ভাবনা থাকলে তা সারাতে স্ক্যান ডিস্ক টুলটি ব্যবহার করতে হয়। আর থ্রু স্ক্যানডিস্কটি চালান প্রতি মাসে অন্তত একবার। আর আমাদের দেশে কারেন্ট খুব বেশি যাওয়া আসা করে। সেক্ষেত্রে যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো এপ্লিকেশন চালাতে থাকা অবস্থায় কারেন্ট চলে যায় তবে পরবর্তীতে কম্পিউটার চালানোর পরে অবশ্যই স্ট্যান্ডার্ড স্ক্যানডিস্ক করুন। এজন্য প্রয়োজনে স্ক্যানডিস্কের একটি শর্টকার্ট তৈরি করে রাখতে পারেন ডেস্কটপে।
ডিফ্র্যাগ টুলটির সাথেও আপনার নিয়মিত পরিচয় থাকা ভালো। এটি হার্ডডিস্কের এফিসিয়েন্সি বাড়িয়ে দেয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফাইলগুলোকে এক সাথে এনে। প্রোগ্রাম দ্রুত চালাতে চাইলে মাঝে মধ্যেই ডিফ্র্যাগ করা প্রয়োজন। কত নিয়মিত ডিফ্র্যাগ করা উচিত ? নির্ভর করে কত দ্রুত আপনি সফটওয়্যার ইন্সটল ও আনইন্সটল করেন তার ওপরে। যদি আপনার মাঝে মধ্যেই হার্ডডিস্কে প্রচুর পরিমাণে ডাটা পরিবর্তন হয়ে থাকে তবে দু সপ্তাহে একবার ডিফ্র্যাগ করতে পারেন।নতুবা মাসে একবার করলেই হবে।
আমাদের অনেকেরই এই অভ্যাস আছে যে যে কেউ যেকোন সফটওয়ারের কথা বললেই আমরা নিজের পিসিতে ইন্সতল করে ফেলি।এটা আদৌ আমাদের কোন কাজে আসবে কিনা তা ভেবে দেখি না।সেই যে ইন্সটল করে একবার চালিয়ে দেখা সেটাই কিন্তু শেষ।জীবনেও দেখা যায় ঐ প্রোগ্রাম আর খুলে দেখা হয় না।আর এভাবেই আমরা আমাদের উইন্ডোজকে আরো স্লো হতে যথেষ্ঠ সাহাজ্য করি।দয়া করে এই কাজটি থেকে বিরত থাকবেন।প্রোগ্রাম যতটা সম্ভব কম ইন্সত্যল করবেন।কেননা পরে আনইন্সটল করলেও দেখা যায় এর কিছু না কিছু ভ্যালু রেজিস্ট্রিতে রয়ে যায়।তাই এই কাজ থেকে বিরত থাকুন।
** চলন্ত অবস্থায় সিপিইউতে ঝাঁকুনি দেবেন না। এতে বিদ্যুতিক শক লাগতে পারে কিংবা হার্ডডিস্ক ও অন্যান্য কম্পোনেন্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
** ঢাকনাবিহীন স্পিকার- সিভিটি অথবা ইউপিএস মনিটরের কাছাকাছি আনবেন না। বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
** পিসি চালু রেখে কিছু পান করবেন না বা ধুমপান করবেন না। কারণ তরল কী-বোর্ডে পড়ে যেতে পারে অথবা ধোঁয়ার ক্ষুদ্র কণিকা ঢুকে পড়তে পারে কম্পিউটারে।
ট্রাবলশুটিং নিয়ে এতোক্ষণ অনেক কথাই হলো। আশাকরি এর কোনো না কোনোটি আপনার দৈনন্দিন কম্পিউটার সমস্যায় কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। তবে বড় কথা হচ্ছে কম্পিউটারে প্রতিদিনই নিত্যনতুন বিচিত্র সব সমস্যা দেখা দেয়। তার অনেকগুলোই মাথা ঘুরিয়ে দেবে আপনার। আবার অনেকগুলোর কোনো সমাধান নেই। যেমন কম্পিউটার মাঝে মাঝে চালু হয় না। ডিকশনারীর এ টু জেড সবকিছুই চেষ্টা করে ব্যর্থ আপনি। কিন্তু দেখলেন পরদিন আপনার চোখকে কপালে তুলে দিয়ে দিব্যি কম্পিউটার চালু হয়ে গেছে। একটা কথাই বলবো, কম্পিউটারের সব সমস্যার কারণ খুঁজতে যাবেন না। তা হবে বোকামি। অনেকক্ষেত্রেই যন্ত্রটি খামখেয়ালি। মনে রাখবেন কথাটি।
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-১: কেসিং খোলার হাতেখড়ি
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-২: কম্পিউটার ব্যাটা চালুই হচ্ছে না
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-৩: হার্ডওয়্যার ট্রাবলশ্যুটিং
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-৪: আপডেটিং বিড়ম্বনা
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-৫: অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল হচ্ছে না
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-৬: পিসি বারবার রিস্টার্ট হচ্ছে
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-৭: কম্পিউটার হার্ডডিস্ক না পেলে কি করবেন
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-৮: জেনে রাখা ভালো
পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব-৯: যত্ন নিন আপনার পিসির
প্রথম প্রকাশঃ মাসিক টেকনোলজি টুডে
আমি সেতু। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 47 টি টিউন ও 466 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আছি কম্পিউটার আর ইন্টারনেটকে সাথে নিয়ে।ভালোবাসি নতুন আর আনকোরা সফটওয়ার নিয়ে কাজ করতে।ভালো লাগে হার্ডওয়ার নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে।পড়ছি বুয়েটে।কাজ করছি টেকনোলজি টুডে'র সহকারি সম্পাদক হিসেবে।কম্পিউটার-এর জগতে শুধু ঘুরেই বেড়াচ্ছি গত প্রায় ১২/১৩ বছর ধরে।কম্পিউটার নিয়েই কাজ করছি ৮/৯ বছর ধরে।জড়িত আছি বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সাইট-এর সাথে।মোটামুটি দেশীয় কম্পিউটারের সবক্ষেত্রেই নজর রাখতে...
জানলাম 🙂