বাঁক ঘুরতে চাইলে বেশ কিছু নিয়ম আপনার জানা প্রয়োজন। নিচের ছবি দুটো দেখুন। প্রথম ছবিতে চালক ও মোটরসাইকেল দুটোই কাত হয়ে আছেন। পরেরটি শুধু মোটরসাইকেল কাত হয়ে আছে। কিন্তু চালক সোজা হয়ে আছেন। এটা করতে হয়ে যখন আপনার মোটরসাইকেল আস্তে চলবে ও রাস্তাটি হবে অল্প বাঁকের- তখন শুধু মোটর সাইকেল কাত করলেই চলে; আপনার শরীর সোজা রাখা তখন জরুরী।
১নং ছবি: দ্রুতগতিতে টার্ন নেওয়ার নিয়ম ২নং ছবি: ধীরে চলার সময় টার্ণ নেওয়ার নিয়ম
এগুলো আপনার ফাঁকা রাস্তায় প্র্যাকটিসের প্রয়োজন হবে। প্রথমে দেখে নিন পিছনে বা সামনে থেকে যানবাহন আসছে কিনা তারপর এই নিয়ম গুলো মেনে চলুন তাহলে দেখবেন নির্বিঘ্নে বাঁকটি পেরিয়ে যেতে পারবেন।
অনেকেই জানেননা যে, বাঁক ঘোরার সময় যদি প্রয়োজন মত কাত না হতে পারেন; তাহলে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায় (৯৯.৯%!!)। যে কোন বাঁক ঘুরতে চাইলেই আপনাকে কাত হতেই হবে। অল্প বাঁক হলে মোটরসাইকেল কাত করে নিজে সোজা থাকলেও চলে। সামনে বাঁক দেখলে আপনার বাইকের গতি ঘন্টায় ২০/২৫ কি:মি: এর মধ্যে নিয়ে আসুন। বাঁক ঘুরতে চাইলে যে দিকে রাস্তা চলে গেছে সেই দিকে তাকান। মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকলেই হবে। কাঁধ ঘুরাবেন না। আপনার তাকানোর উপর নির্ভর করছে কতখানি কাত হওয়া প্রয়োজন।
অবশ্যই জোর করে সোজা থাকার চেষ্টা করবেননা। মোটর সাইকেল যতখানি কাত হওয়া প্রয়োজন-ঠিক ততখানিই কাত হয়ে যাবে আপনার তাকানোর উপর নির্ভর করে। নিচের ছবি গুলো দেখলেই বুঝবেন। এসময় থ্রটল কমাবেননা বা ব্রেক কষবেননা; যে গতি আছে সেটাই ধরে রাখুন (অথবা সামান্য বাড়ালেও ক্ষতি নেই-বরং লাভ।) তাহলে প্রয়োজনমত আপনার বাইক কাত হয়ে বাঁকের অংশটুকু পার হয়ে যাবে।
আপনার বাইকের গতি যদি বেশি হয় এবং আর যদি বাঁকটি তীক্ষ্ম হয়- আপনাকে বেশি কাত হতে হবে। আপনার শরীর ও বাইক একসাথে কাত হবে, দৃষ্টি থাকবে দুরে রাস্তার দিকে। কাছে তাকালে কাত হতে সমস্যা হবে। আপনার তাকানোর উপর নির্ভর করছে কোন রাস্তায় কতখানি কাত হওয়া প্রয়োজন। ছবি দেখলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে।
ছবিতে দেখুন- সামনে না দেখে বাঁক ঘোরার সময় রাস্তা যেদিকে গেছে সেদিকে তাকাচ্ছেন মোটর সাইক্লিস্ট
লক্ষ্য করুন উপরের ছবিতে মোটর সাইক্লিস্টদের হাঁটু মেঝেতে স্পর্শ করছে। আপনি এগুলো কখনও করবেননা। প্রচন্ড স্পিড আর তীক্ষ্ম বাঁকের জন্য তাদেরকে এত কাত হতে হয়; আপনার সামান্য কাত হলেই চলবে।
চট করে বাঁক নিয়ে কোন যানবাহনের সাথে ধাক্কা থেকে বেঁচে যাওয়া ইংরেজীতে বলে সয়ার্ভ। টার্ন নেওয়া আর সয়ার্ভ এর মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। টার্ন নিতে চাইলে যথেষ্ঠ সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে সময় এবং ফাঁকা জায়গা খুব অল্প পাওয়া যায়। সিদ্ধান্ত নিতে হয় দ্রুত। মাঝে মাঝে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যখন দুটো ব্রেক একসাথে ব্যবহার করেও সামনের যানবাহন বা অন্যকিছুর সাথে ধাক্কা লেগে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়না। এরকম অবস্থায় সয়ার্ভিং ছাড়া বাঁচার পথ থাকেনা। ধরা যাক, সোজা যাচ্ছিলেন হঠাৎ পাশের রাস্তা থেকে একটা সাইকেলওয়ালা সামনে এসে পড়ল। এতটাই কাছে যে ব্রেক চেপে শুধু কাজ হবেনা-এমন অবস্থা। এ অবস্থায় সয়ার্ভ প্রয়োজন। যেদিক দিয়ে আপনি বেরিয়ে যেতে চান সেদিকে সামান্য হ্যান্ডেল ঘোরান। এতে মোটরসাইকেল চট করে কাত হয়ে যাবে। যত বেশি তীক্ষ্ণ বাঁক নিবেন, তত কাত হতে হবে। আপনার শরীর থাকবে সোজা, হাঁটু লেগে থাকবে তেলের ট্যাংকের সাথে, পায়ের পাতা শক্ত ভাবে থাকবে ফুট রেস্টে। আপনি যেদিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে চান-আপনার দৃষ্টি থাকবে সেদিকে। এখানেও কাউন্টার স্টিয়ারিং করবেন যাতে প্রয়োজনীয় কাত হতে পারেন-এরপর আবার অন্য হাত ব্যালান্স ঠিক করবেন।
কখনই সয়ার্ভিং অবস্থায় ব্রেক করবেননা। ব্রেক করতে চাইলে সয়ার্ভিং এর আগে বা পরে করুন। নইলে আছাড় অবশ্যম্ভাবী।
নিচে দেওয়া দুটো ছবি দেখুন। প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার পাশ থেকে একটা কার হঠাৎ এসে পড়েছে। এ’অবস্থায় সয়ার্ভিং করে স্যাৎ করে বেরিয়ে মোটর সাইকেল সোজা হলে তারপর ব্রেক করা হয়েছে। দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, চলন্ত গাড়ী থেকে বেশ কিছু ইট পড়ছে। এ’রকম ক্ষেত্রে প্রথমে ব্রেক চেপে তারপর সয়ার্ভ করা হয়েছে। একবার বলেছি আবারও বলছি সয়ার্ভিং অবস্থায় ব্রেক করবেননা।
ছবি(১) সয়ার্ভ, তারপর ব্রেক করুন। ছবি (২) ব্রেক, তারপর সয়ার্ভ করুন
রাস্তায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হতেই থাকে। একজন দায়িত্ববান রাইডার হিসেবে আপনার টাইমিং এবং প্রয়োজনীয় দূরত্ব সম্পর্কে ভালমত জানা প্রয়োজন। যথেষ্ঠ প্রস্ত্ততি থাকলে মোটরসাইক্লিং খুবই আনন্দদায়ক। মেইন রোডে এমন লেন বাছাই করুন যাতে অন্য ড্রাইভার সহজেই আপনাকে দেখতে পায়। মোটরসাইকেল সাইজে ছোট এবং এর গতি ও বেশি সুতরাং একে হঠাৎ রাস্তায় উদয় হতে দেখলে অন্য ড্রাইভারদের ভুল হওয়ায় স্বাভাবিক। তাছাড়া কার বা ট্রাক মোটরসাইকেলকে আঘাত করলে তাদের ব্যথা পাওয়ার কোন সম্ভবনা থাকেনা বলে মোটরসাইকেলকে তারা খুব একটা কেয়ার করেনা। তারপরও কোন ড্রাইভার চায়না ইচ্ছে করে কাউকে ধাক্কা দিতে। তারা যেন সহজেই আপনাকে দেখতে পায় সে জন্যে -উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরুন।
আপনার নিরাপত্তা হাত ও পায়ের চেয়ে চোখ ও মনের উপর বেশি নির্ভরশীল! এখানে বিশেষজ্ঞরা একটা ছোট্ট ফর্মূলা দিয়েছেন। এটি হচ্ছে নিরাপদ মোটর সাইকেল চালানোর মানসিক প্রস্ত্ততি।ফর্মূলাটা হচ্ছে SEE. S = Search, E =Evaluate, E = Execute.ফর্মূলার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিচ্ছি। মেনে চললে সত্যি উপকৃত হবেন।
Search: সাম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে ভালমত রাস্তাকে পরীক্ষা করুন। এটা আপনার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সুবিধা হবে। রিয়ার ভিউ মিরর-এ বারবার পরীক্ষা করুন। অনেক সময় কোন কোন যানবাহন আপনার পিছনে এমন এক পজিশনে থাকে; যা আয়নায় দেখা যায়না। এটাকে ইংরেজীতে বলা হয় Blind Spot.সুতরাং আয়নায় দেখা যাচ্ছেনা মানে পিছন ফাঁকা-তা নয়। ছবিতে দেখুন। গাড়ীটি আপনার পিছনে থাকলেও আয়নায় তা দেখা যাচ্ছেনা। সাদা অংশ গুলো Blind Spot Area.
Evaluate: হিসাব করে নিন কি ঘটতে পারে। ধরা যাক, রাস্তার পাশে দেখলেন কিছু বাচ্চা ছেলে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলছে। আপনি জানেন- যে কোন সময় বল রাস্তায় আসতে পারে এবং সেটা ধরতে বাচ্চাগুলো রাস্তায় চলে আসতে পারে। ব্যাপারটা খেয়াল করলে অবচেতন মনেই আপনি আপনার বাইকের স্পিড কমিয়ে ফেলবেন। এক্ষেত্রে তিনটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন। ১) আপনার ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা ২) আপনার মোটরসাইকেলের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা এবং ৩) রাস্তার অবস্থা। আপনার যদি চট করে টার্ন নেওয়ার বা ব্রেক করার ক্ষমতা না থেকে থাকে তাহলে আপনি রিস্ক নিতে কেন যাবেন? অথবা আপনি এক্সপার্ট কিন্তু আপনার মোটর সাইকেল তত নয় (সব মোটরসাইকেলের থেমে যাওয়া বা চট করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এক নয়); সেক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধান হতে হবে। এছাড়া টাইমিংটাও এখানে বিশাল ফ্যাক্টর।
নিরাপদে মোটরসাইকেল চালাতে আপনার মাথা ঠান্ডা রাখাটা জরুরী। পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে হবে।ভাল রাইডাররা জানেন কখন গতি কমাতে হয় এবং কখন গতি আর কৌশলের সমন্বয়ে বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে কিছু করে বসলে দূর্ঘটনার সম্ভবনা থাকে। কোন যানবাহনের একদম পিছনে থাকা ঠিক নয়। এমন জায়গায় থাকুন যাতে সে তার রিয়ারভিউ মিররে সহজেই আপনাকে দেখতে পায়। আপনার গতি যদি ঘন্টায় ৪০ কি: মি: এর নীচে হয় তাহলে দুই সেকেন্ড দূরত্বে থাকুন। দুই সেকেন্ড দূরত্ব বলতে বোঝায়, যখন কারটি কোন ইলেকট্রিক পোল পার হয়, তখন ‘‘বাংলাদেশ এক, বাংলাদেশ দুই’’ বলার পর যদি আপনিও ঐ ইলেকট্রিক পোল পার হোন তারমানে গাড়ীটি থেকে আপনি দুই সেকেন্ড দূরত্বে আছেন।
গতির অনুপাতে দুই থেকে বারো সেকেন্ড দূরত্বে থাকার চেষ্টা করুন।
আমি মুহাম্মদুল্লাহ চৌধুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 96 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
এক্সপ্লোরার......
Valo laglo.