এখন আমরা শিখবো কি করে গ্রুপ রাইডিং করতে হয়। দলবেঁধে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেশ মজা লাগে। মজাটা আরও বেড়ে যাবে যখন বেশ কিছু সংকেত ব্যবহার করে রাইডিং করা হবে। তাছাড়া নিয়ম জানা থাকলে আনন্দের সাথে নিরাপত্তা যুক্ত হবে। উল্টাপাল্টা চালাতে হয়তো থ্রিল অনুভব করা যায়। কিন্তু কেউ একজন পড়ে গেলেই সব মজা নষ্ট হয়ে যাবে।
গ্রুপ রাইডিং বেশ কিছু সংকেত ব্যবহার করা হয়। শিখে রাখলে বেশ কাজে আসবে। হাত দিয়ে কিভাবে সংকেত ব্যবহার করতে হয় তা ছবি সহ বর্ননা করা হলো:-
➡ থামুন- বাম হাত সোজা করে ফুয়েল প্রয়োজন- বাম হাতের হাতের তালু দেখাতে হবে তর্জনী দিয়ে ফুয়েল ট্যাংক দেখাতে হবে।
➡ টার্ন সিগন্যাল অন- হাত লম্বা করে দিয়ে মুঠি পাকান।
➡ গতি কমাও- হাত লম্বা করে দিন, তালু থাকবে মাটির দিকে। এরপর নিচের দিকে হাতটি নামাতে হবে।
➡ গতি বারাও- হাত লম্বা করে দিন, তালু থাকবে উপর দিকে, তারপর উপরে ওঠাতে হবে। হাত ওঠানোর সময় হাতের তালু সামনের দিক নির্দেশ করবে।
➡ রাস্তা খারাপ- বাম দিকে হলে বাম হাত দিয়ে নির্দেশ করুন; ডান দিকে হলে ডান পা নামিয়ে নির্দেশ করুন।
➡ আরামের জন্য থামা প্রয়োজন! হাত সোজা রেখে মুঠো পাকিয়ে হাল্কা ভাবে ওঠাতে নামাতে হবে।
➡ পানি ও খাবার খাওয়ার বিরতি- হাত থাকবে মুষ্টিবদ্ধ; বুড়ো আঙ্গুল মুখের দিকে নির্দেশ করবে।
➡ ফলো মি (আমাকে অনুসরণকর)- হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে হাতের তালু সামনের দিক নির্দেশ করবে।
➡ তুমি সামনে গিয়ে লীড করো- বাম হাত সোজা বাম দিকে বাড়িয়ে তর্জনী বের করে হাত ৪৫০ ঘুরিয়ে সামনের দিকে দেখাতে হবে। ছবি ভালমত দেখলে ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যাবে।
➡ এক লাইনে চল দুই লাইনে চল
হাত উঠিয়ে তর্জনী দেখাতে হবে। হাত উঠিয়ে তর্জনী ও মধ্যমা দেখাতে হবে।
➡ হেড লাইট হাই বীম কর- হাতের তালু হেলমেটের দিকে নির্দেশ করতে হবে।
মোটরসাইকেলের ঠিকমত যত্ন নিলে হঠাৎ করে সমস্যায় খুব কমই পড়তে হয়। কিন্তু যদি সমস্যায় পড়েন সেক্ষেত্রে কি করতে হবে তা এই অধ্যায়ে আলোচনা করবো। থামতে চাইলে রিয়ার ভিউ মিরর এবং মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিন পিছনের অবস্থা। আপনার ব্রেক লাইট ঠিক নাও থাকতে পারে। শক্ত মাটি দেখে দাঁড়ান। কারণ মেইন স্ট্যান্ড শক্ত মাটি ছাড়া ব্যবহার করা সমস্যা হয়। রাস্তার খুব কাছে দাঁড়াবেননা। রাস্তা থেকে আট/দশ হাত দুরে মোটর সাইকেল থামান।
আপনার বাইকের টায়ারের এয়ার প্রেসার যেন ঠিক থাকে-সেটা লক্ষ্য রাখুন। তাছাড়া টায়ারের খাঁজ (ট্রেড) যেন ঠিক থাকে সেটা লক্ষ্য রাখুন। খুব ক্ষয়ে যাওয়া টায়ার হঠাৎ ফেটে গিয়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। টায়ার যদি ফেটেই যায়, তাহলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে হবে। সামনের টায়ার পাংচার হলে হ্যান্ডেল খুব ভারী মনে হবে। এতে মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ রাখা খুব কঠিন হয়ে যায়। পিছনের টায়ার পাংচার হলে মোটর সাইকেলে ঝাঁকুনি লাগতে পারে অথবা মোটরসাইকেল এদিক ওদিক চলে যেতে পারে। টায়ার ফ্ল্যাট হলে এই কাজগুলো করবেন:-
ধরা যাক,আপনি মোটর সাইকেল ৭০ কি:মি: বেগে চালাচ্ছেন হঠাৎ দেখলেন থ্রটল আটকে গেছে। কিছুতেই কোনদিকে ঘোরানো যাচ্ছেনা। এ’রকম পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্যেই আপনার হ্যান্ডেল বারের ডান দিকে ‘‘ইঞ্জিন কীল সুইচ’’ দেওয়া আছে। থ্রটল আটকে গেলে এই সুইচ চেপে ইঞ্জিন বন্ধ করুন। এরপর ক্লাচ চেপে রাস্তার বাম পাশে ধীরে দুই ব্রেক ব্যবহার করে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে আপনার বাইকে যদি এই ‘‘ইঞ্জিন কীল সুইচ’’ না থাকে, তাহলে ক্লাচ চেপে ব্রেক ব্যবহার করে রাস্তার বাম পাশে নিরাপদ জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ুন। এরপর ইগনিশন চাবি ঘুরিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করুন। চলন্ত অবস্থায় ইগনিশন বন্ধ করতে যাবেন না।
রাস্তায় যাচ্ছেন-গিয়ার চেঞ্জ করা দরকার। ক্লাচ চাপলেন, কিন্তু কিছুই ফলাফল ঘটলোনা। অর্থাৎ আপনার ক্লাচ কেবলটি ছিঁড়ে গেছে। ব্যাপারটি খুব ভয়ানক নয়। ক্লাচ না চেপেও আপনি গিয়ার চেঞ্জ করতে পারেন। থ্রটল একদম জিরো পজিশনে এনে হালকা ভাবে গিয়ার চেঞ্জ করুন। তবে এ’রকম পরিস্থিতি ছাড়া এভাবে গিয়ার চেঞ্জ করবেননা। থামতে চাইলে গিয়ার একদম নিউট্রালে এনেই থামা উচিত। নইলে ঝাঁকুনি খাওয়ার সম্ভবনা থাকে। ক্লাচ কেবল ছাড়া আপনি বাধ্য হলে মেকারের কাছে যাওয়া পর্যন্ত চালাতে পারেন। এতে খুব বড় সমস্যা হবেনা।
ইঞ্জিনের শক্তিটা পিছনের চাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে চেইনের কাজ। ঠিকমত দেখাশোনা করলে চেইন ছিঁড়ে যাবার সম্ভবনা কম। তবে ছিঁড়ে গেলে পিছনের চাকা লক্ড হয়ে যেতে পারে। যার ফলে আপনার বাইক স্কিড করতে পারে। চেইন ছিঁড়ে গেলে পিছনের চাকা ঘোরার শক্তি হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে থ্রটল সম্পূর্ন কমিয়ে দিয়ে ব্রেকের সাহায্যে নিরাপদ জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ুন।
মাঝে মাঝে ইঞ্জিন হঠাৎ থেমে যেতে পারে। এর কারন ইঞ্জিন অয়েলের পরিমান কমে যাওয়া। পেট্রোলের অভাবেও এমনটা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ইঞ্জিন হঠাৎ থেমে গেলে হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে ক্লাচ চেপে ধরুন। এরপর ধীরে ব্রেক কষে রাস্তার বাম পাশ ঘেঁষে দাঁড়ান। ইঞ্জিন ওয়েল ঠিকমত আছে কিনা তা নিয়মিত চেক করুন। নইলে ইঞ্জিনের ক্ষতি হবে।
উপরের কারনগুলো ছাড়াও মাঝে মাঝে মোটর সাইকেলে কিছুতেই ব্যালান্স রাখা যায়না। হ্যান্ডেল আর সামনের চাকা শুধু এদিক ওদিক চলে যেতে যায়। ইংরেজীতে এই অবস্থাকে বলা হয়Wobble.এই অবস্থার জন্য দায়ী টায়ারের এয়ার প্রেসার, অতিরিক্ত লোড নেওয়া বা লোড নিয়মমত না বাঁধা বা রাখা, মোটরসাইকেলের সঠিক পার্টস ব্যবহার না করা ইত্যাদি। এ’অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে অতিরিক্ত লোড কমিয়ে দিন। সে সুযোগ না থাকলে মাল রাখার জায়গা পরিবর্তন করুন। কিভাবে লোড বহন করতে হবে তা আগেই আলোচনা করা হয়েছে। টায়ার প্রেসার, শক অ্যাবজর্বার চেক করুন। যেসব মোটরসাইকেলে উইন্ডশীল্ড ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ঠিকমত বসানো হয়েছে কিনা তাও চেক করে নিতে হবে।
হ্যান্ডেল বার টাইট আছে কিনা, সামনের চাকার রীম সোজা আছে কিনা, অ্যালাইনমেন্ট ঠিক আছে কিনা, বিয়ারিং বা স্পোক ঢিলা আছে কিনা-এগুলো ভালমত দেখে নিতে হবে। এরপরও সমস্যা মনে হলে কোন পেশাদার মেকারের সাহায্য নিন। Wobbleঅবস্থায় যা করবেন তা হচ্ছে-
পেট্রোলের দাম যেহেতু আকাশ ছোঁয়া সেহেতু তা বাঁচানোর নিয়মগুলো জেনে থাকা উচিত।
আমাদেশে পা্ওয়া যায় এই মোটরবাইকগুলোর লিংক দিলাম। শেষের দুটো বাইক রিভিউ।
আপনার ভ্রমন নিরাপদ এবং আনন্দময় হোক এই কামনায়
মুহাম্মদুল্লাহ্ চৌধুরী
আমি মুহাম্মদুল্লাহ চৌধুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 96 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
এক্সপ্লোরার......
অস্থির!!!!!
খুব ভাল লিখেছেন ! 😀