মোটর বাইকিং And ড্রাইভিং A টু Z [পর্ব-০১] :: সূচনা, বিভিন্ন মটরসাইকেল, কেনার সময় লক্ষণীয় ও বাইক ইঞ্জিন

মোটর বাইকিং And ড্রাইভিং A টু Z

টেক টিউনস বেশ মজার একটি সাইট। Tech এর সাথে বাইকিং এর সম্পর্কটা তেমন সুদৃঢ় নয় তবে আমার মনে হয় এখানে যারা আসেন- তাদের অনেকেই বাইক চালান। তাদের নিশ্চয়ই আমার এই লেখা কাজে আসবে।

প্রস্তুতি পর্ব

দিন দিন মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। মোটরসাইকেলের বিশেষত্ব অন্য কোন যানবাহনে নেই। এ্যাক্সিডেন্টের কথা বাদ দিলে মোটরসাইকেল সত্যিই একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিষ। কার- এর চেয়ে এর ফুয়েল খরচও অনেক কম। পার্কিং এর জন্য জায়গা কম লাগে। মেইনটেইন্যান্স খরচ কম, দামও কম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দূর্ঘটনা!! দূর্ঘটনার সাথে ভাগ্যের ব্যাপার তো আছেই কিন্তু তার চেয়ে বেশি হচ্ছে ঠিকমত চালাতে না জানা। এক তৃতীয়াংশ মোটরসাইকেল এ্যাক্সিডেন্ট ঘটে নতুনদের। নতুন বলতে আমি তাদের বোঝাচ্ছি যারা ৫,০০০ কি:মি: এর নীচে চালিয়েছেন!! সুতরাং বুঝতেই পারছেন যারা বন্ধু’র মোটর সাইকেল কয়েকবার চালিয়ে ভেবে বসে আছেন, আমি মোটরসাইকেল চালাতে এক্সপার্ট-তারা কতটা ভুল ভেবেছেন। বহু প্র্যাকটিস ছাড়া এক্সপার্ট তো দুরে থাক-আপনি রাস্তায় চালানোর যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেননা। আর আমাদের দেশে টাকা দিলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। সেটা পেলেই আপনি অভিজ্ঞ হয়ে গেছেন তা বলা যায়না। তাছাড়া আমাদের দেশের মোটর সাইকেল প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা খুব নিখুঁত পরীক্ষা নয়।

এ’পদ্ধতি বাস্তবে কতটা কাজে লাগে তা পরীক্ষাতে বসলেই বুঝতে পারবেন। সাইটটি পড়ে আপনার মনে হতে পারে এত নিয়ম মনে রাখবো কি করে। আসলে পড়ার সময় অনেক কিছু মনে হলেও কাজ গুলো যখন বহুবার প্র্যাকটিস করে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তখন অবচেতন মনেই আপনি ঠিক কাজটি করবেন। কেউ যখন মার্শাল আর্ট চর্চা করেন তখন আপনি হয়তো দেখে থাকবেন তারা বিভিন্ন রকম এক্সারসাইজ করেন- যাতে সত্যিকার মারামারির সময় চিন্তা ভাবনা করে হাত-পা চালাতে হয় না । মারামারির সময় স্বয়ংক্রিয় ভাবেই তাদের হাত পা চলতে থাকে। মানুষের ব্রেন এতই শক্তিশালী যে, যেকোন সুপার কম্পিউটারের চাইতেও দ্রুত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দরকার শুধু নিয়ম জেনে প্র্যাকটিসের। আমরা অনেকেই মোটর সাইকেল চালাতে জানি কিন্তু সেই জানাটা কতটা ঠিক-এই ব্লগটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। এই লেখা শুধু নবিসদের জন্যেই নয়- অনেক এক্সপার্টও লেখাটি পড়ে উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস। আপনার বোঝার সুবিধার জন্য প্রচুর ছবি দেওয়া হয়েছে।

One Bike for All- এমন কোন বাইক পাওয়া সম্ভবত: মুশকিল। এক একটি বাইক এক এক জনের জন্য প্রযোজ্য। আপনার হাইট যদি বেশি হয়, আর আপনি যদি একটি 50 C.C বাইকে ঘুরে বেড়ান; সেটা বেমানান দেখাবে। আপনার উচ্চতা ও ওজন অনুসারে মোটর সাইকেল কেনা উচিত। অবশ্য আপনার বাজেট যদি অল্প হয় তাহলে সেটা আলাদা কথা। যেহেতু ফুয়েলের দাম দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে বাইক কেনার আগে ফুয়েল খরচের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। বিশেষ করে যারা প্রায় সারাদিনই বিভিন্ন কাজে মোটর সাইকেলে উপরই থাকেন তাদের জন্যে তো ফুয়েল সংক্রান্ত দিকটা খেয়াল রাখা উচিত। আপনার মোটর সাইকেলের সি.সি (কিউবিক সেন্টিমিটার) যত বেশি হবে; সাধারনত: তেল খরচ তত বেশি হবে। একটা ৫০ সি.সি, মোটর সাইকেল আর একটি ১২৫ সি.সি. মোটর সাইকেলের তেলের খরচের অনেক পার্থক্য। তবে সি.সি. যত বেশি হবে বাইকের শক্তি তত বেশি হবে এত জানা কথায়।

একজন বডিবিল্ডারের যেমন শক্তি বেশি; তেমনি তার খাবারের পরিমাণও বেশি। আমরা সাধারন মানুষেরা যেমন কম খেয়ে থাকি; আমাদের শক্তিও বডি বিল্ডার বা রেসলারদের তুলনায় অনেক কম। এবার হর্স পাওয়ার আর টোর্ক সম্পর্কে জেনে রাখুন। (যে যন্ত্রের সাহায্যে হর্স পাওয়ার ও টোর্ক মাপা যায় তাকে ডায়নামোমিটার বা সংক্ষেপে ডায়নো বলে।) অনেকে মনে করেন হর্স পাওয়ার (১ Horse Power বা ১ অশ্বশক্তি = প্রতি সেকেন্ডে ৫৫০ ফুট পাউন্ড) বেশি মানেই খুব ভাল মোটর সাইকেল-ব্যাপারটা শুধু তাই নয়; এর সংগে টোর্কও সম্পর্কযুক্ত। (Torque মানে হচ্ছে টেনে নেওয়ার শক্তি।) এখানে একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। ধরা যাক, আপনার খুব বেশি ২৫ হর্স পাওয়ারের একটা বাইক আছে; যার টোর্ক ১০ফুট/পাউন্ড । এক্ষেত্রে আপনার বাইক জোরে যাবে অবশ্যই তবে সেই সম্পূর্ন গতি পেতে সময় লাগবে। এবার একটি ৭০ফুট/পাউন্ড টোর্কের ইঞ্জিন; যার হর্স পাওয়ার মাত্র ৫৫।

সে চট করে স্পীড তুলতে পারবে; কিন্তু খানিকক্ষনের মধ্যেই বেশি হর্স পাওয়ারের মোটরসাইকেলের পেছনে পড়ে যাবে। সে’জন্য বাইক কেনার সময় আপনার প্রয়োজন অনুসারে হর্স পাওয়ার ও টোর্ক দেখে কিনুন। বিশেষজ্ঞদের মতে বর্তমান সময়ে হর্স পাওয়ারের চেয়ে টোর্ক বেশি হওয়ায় ভাল। বিশেষ করে আমাদের দেশের রাস্তা উন্নত দেশের মত নয়; হঠাৎ করে গতি পেলে আমাদের জন্যে সুবিধে হয়। মনে রাখবেন, Horsepower = Speed, Torque = Pull/Push forceবাংলাদেশে একসময় Honda কোম্পানীর মোটর সাইকেল ছিল খুবই জনপ্রিয়। যার জন্য এখনও অনেকে মোটর সাইকেলকে ‘‘হোন্ডা’’ বলে থাকেন। সেই সাথে Yamaha মোটর সাইকেলের বাজার বেশ ভাল ছিল। এগুলো বেশির ভাগ ছিল টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট মোটরসাইকেল। এখন অবশ্য বেশির ভাগই ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিন।

বিভিন্ন ধরনের মটর সাইকেল

মোটরসাইকেল সাধারনত: নয় ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে ছবি সহ সেগুলোর বর্ননা দেওয়া হলো।

স্কুটার :-

স্কুটারের দাম কম, নীচু সীট, ফ্লোর বোর্ড (ভেতরে পা রাখার ব্যবস্থা)আছে, টায়ারের সাইজ ছোট। সাধারনত: শহরের মধ্যে চালানোর জন্য ভালো। মেয়েরা স্কুটার চালাতে বেশি পছন্দ করেন। লাগেজ বহন করার জন্য অনেক সময় সীটের নীচে অনেক জায়গা থাকে। তবে ব্রেকিং সিস্টেম অন্যান্য মোটরসাইকেলের মত উন্নত নয়। কাঁচা রাস্তায় চালানো কঠিন। যেমন-

- LML Vespa, Honda Silverwing, Mahindra Duro

ক্রুজার/চপার:-

ক্রুজারের সীট গুলো হয় নীচু । হ্যান্ডেল বার থাকে উঁচুতে, ফুট পেগ্স থাকে সামনের দিকে যাতে আপনি পা লম্বা করে রাখতে পারেন। অনেকে বলেন এই বাইক গুলো সবচেয়ে আরামদায়ক। কিন্তু লং জার্নিতে এদের কোথাও দেখা যায়না। । এমনিতে এগুলো বেশ নিরাপদ কিন্তু বাঁক ঘুরতে এতে অসুবিধা। যেমন-Honda Shadow VLX, ,Bajaj Avenger, Yamaha Enticer.

স্ট্যান্ডার্ড (Standard):-

আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। এককালে জাপানী মোটরসাইকেল ছাড়া দেখা যেতনা। Honda CDI 125, HS-100 এবংCD 80 জাপানী মোটরসাইকেল গুলো খুবই টেকসই । কিন্তু দাম অত্যন্ত বেশি এবং দেখতে তেমন আহামরি কিছু নয় বলে ইন্ডিয়ান বাইক গুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলোর দাম বেশ কম। ফুট পেগ্স সরাসরি পায়ের নিচে থাকে, যার জন্য মোটর সাইকেল কন্ট্রোল খুব সহজ হয়ে যায়। এদের ওজন ৯০ থেকে ১৫০ কেজির মধ্যে । এগুলোর মধ্যে বেশি গতি ও বেশি শক্তির সমন্বয় চাইলে ১৫০ সিসি’র বাইকগুলো ভাল। যেমন- Honda Unicorn, Bajaj Pulsar, Hero Hunk, Yamaha FZ-FZS, Tvs Apache, Hero CBZ. এই মোটর সাইকেলগুলো বেশ শক্তিশালী সেইসাথে দেখতেও সুন্দর। ১৫০ সিসি’র গুলোর মধ্যে রাজা হচ্ছে Yamaha R-15. এর দাম অত্যন্ত বেশি। পেট্রোল খরচ কমাতে চাইলে ১০০ সিসি-১২৫সিসি’র বাইকগুলো কিনতে পারেন।

স্পোর্টস (Sport):-

এই বাইকগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। দামও সাধারণের নাগালের বাইরে। এই বাইক গুলোর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২৫০ কি:মি: থেকে ৩০০ কি:মি: পর্যন্ত হয়ে থাকে!! নতুনদের জন্য এগুলোকে ‘‘ডেথ বাইক’’ বলা হয়। তাছাড়া দূরত্ব বেশি হলে এটা চালানো বেশ কষ্টকর। বহুক্ষন ঘাড় নিচু করে চালাতে হয় বলে অল্পতে ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়। এগুলোর দামও আকাশছোঁয়া। যেমন- Yamaha YZF R1, Suzuki Hayabusa ইত্যাদি।

স্পোর্টস টুরীং (Sport-Touring):-

শক্তিশালী ইঞ্জিন, আরামদায়ক সীট, উইন্ডশীল্ড আর স্যাডল ব্যাগ যুক্ত মোটর সাইকেল। শহুরে রাস্তা থেকে পাহাড়ী রাস্তা সবখানেই মজা। লং জার্নিতে এই মোটর সাইকেলগুলো ভাল। যেমন- Yamaha FJR 1300.

টুরীং (Touring):-

সবরকম সুবিধা সম্বলিত বাইক হচ্ছে টুরীং বাইক। রেডিও, স্টেরিও, জিপিএস, ইন্টারকম, ক্রুজ কন্ট্রোল, হীটেড সীট, উইন্ডশীল্ড, স্যাডলব্যাগ এবং ট্রান্ক- এগুলো সবই আছে। এগুলোর ওজন ও দাম খুব বেশি (১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ ডলার!!)। যেমন- Harley Davidson FLSTC HERITAGE SOFTAIL .

ডুয়েল স্পোর্ট (Dual Sport):-

নতুন যারা মোটরসাইকেল চালানো শিখছেন তাদের জন্য এই বাইক গুলো সবচেয়ে ভালো। এগুলোর ওজন কম এবং যে কোন রাস্তায় চলার জন্য উপযোগী। পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা কম এবং পড়ে গেলেও মোটর সাইকেলের তেমন বড় কোন ক্ষতি হয়না। যেমন- Kawasaki KLR650, Honda XL250, XL350.

ডার্ট (Dirt):-

এই বাইক গুলো বাজে রাস্তার জন্যেই তৈরী হয়েছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তার জন্য আদর্শ। এগুলো মেইন রোডে খুব জোরে চলতে পারেনা। কারন এর টায়ার গুলো এত বেশি খাঁজ কাটা যা বাইকের স্পিড কমিয়ে দেয় কিন্তু বাজে রাস্তায় খুবই কাজে আসে। এখানে আপনার জেনে রাখা উচিত, টায়ার যত বেশি খাঁজ কাটা হবে তত পিছলে যাওয়ার সম্ভবনা কমবে। কিন্তু স্পিড যথেষ্ঠ পাবেননা। সেই জন্য স্পিড বাইক গুলোর টায়ার খুব মসৃন হয়-যাতে সর্বোচ্চ স্পিড পাওয়া যায়। ডার্ট বাইকের উদাহরণ যেমন-Honda CRF 450.

বি:দ্র: স্ট্যান্ডার্ড বাইক ছাড়া অন্য বাইক গুলো বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়। কোনটি কোন ধরনের বাইক তা জানানোর জন্য লেখা হল।

বাইক কেনার সময়

যে বাইকটি কিনবেন সেটা শো-রুমেই ভালমত পরীক্ষা নিন। আপনার বাইকটি যখন বিদেশ থেকে আমদানী করা হয় তখন এটা একটা ক্রেটের সংগে বেঁধে নিয়ে আসা হয়। নতুন বাইকে ছোটখাট অনেক সমস্যা থাকতে পারে। এখানে একটা চেক লিস্ট দেওয়া হলো। কেনার সময় ব্যাপার গুলো মিলিয়ে নিলে সার্ভিসিং এর জন্য বার বার দোকানে আসার ঝামেলা থেকে বাঁচবেন। আমি নিজে যখন প্রথম মোটর সাইকেল কিনেছিলাম তখন আমার বাইকের প্রটেক্টরটা ভাঙ্গা ছিল। বাসায় ফিরে দেখি এই অবস্থা। যা এক বছরেও চেঞ্জ করে পাওয়া যায়নি।

সামনে দিক:-

  • 1. সামনের ও পেছনের টায়ার ঠিক মত লাগানো আছে কিনা- টায়ারে গায়ে দেখুন তীর চিহ্ন আছে। সেটা মোটর সাইকেল যেদিকে যাবে সেদিকে দিক নির্দেশ করছে কিনা দেখে নিন।
  • 2. টায়ারের পাম্প বা এয়ার প্রেসার টায়ারে যা লেখা আছে সে মত পাম্প রাখবেন। সাধারনত: স্ট্রিট বাইকে ৩৮ পিএসআই এবং ৩২ পিএসআই ডুয়েল স্পোর্টস বাইকে প্রযোজ্য।
  • 3. ফ্রন্ট এক্সেল বোল্ট টাইট করুন।
  • 4. ব্রেক চেপে দেখে নিন এর কার্যকারিতা ঠিক আছে কিনা।
  • 5. এখনকার বেশির ভাগ বাইকই অবশ্য স্পোক লেস। রীম বাঁকা হওয়ার সম্ভবনা তবুও রীম সোজা আছে কিনা ভালমত দেখে নিন। স্পোক থাকলে সেগুলো ঠিক মত লাগানো আছে কিনা দেখুন।
  • 6. স্টিয়ারিং হ্যান্ডল ঠিকমত যেন ঘোরে চেক করুন। স্টিয়ারিং যে নাট বল্টু দিয়ে লাগানো থাকে সেগুলো যথেষ্ঠ টাইট কিনা খেয়াল করুন।
  • 7. বাইকে চেপে বসে খেয়াল করুন ফর্ক বা শক অ্যাবজর্বার ঠিকমত ওঠানামা করছে কিনা।
  • 8. আপনার বাইকটির সীট যদি অ্যাডজাস্টটেবল হয়; তাহলে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করে নিন।
  • 9. ক্লাচ কেব্ল আর থ্রটল কেবল ঠিক করে নিন। দেখে নিন গিয়ার ক্লাচ করা অবস্থায় সহজেই চেন্জ করা যাচ্ছে কিনা। নইলে ক্লাচ অ্যাডজাস্ট করতে বলুন।
  • 10. বাইকটি স্থির থাকা অবস্থায় ইঞ্জিন অয়েল যথেষ্ঠ আছে কিনা দেখে নিন।
  • 11. চেন অতিরিক্ত ঢিলা বা টাইট থাকলে প্রয়োজনমত অ্যাডজাস্ট করে নিন।

ব্রেক ইন/ওয়্যার ইন পিরিয়ড:

নতুন ইঞ্জিনের পূর্ণ ক্ষমতা এবং স্থায়ীত্ব বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। বাইক কেনার পর এর নতুন ইঞ্জিন এর অংশ গুলো একে অন্যের সাথে ঘর্ষণের মাধ্যমে মসৃন হয়। এই মসৃনতর করার প্রক্রিয়াটি সঠিক হলে ইঞ্জিনের স্থায়ীত্ব অনেক বেড়ে যায়। এই সময়টুকুকে বলা হয় ব্রেক ইন/ওয়্যার ইন/রানিং ইন পিরিয়ড বলে। ব্রেক ইন বা ওয়্যার ইন দু’ভাবে করা যায়। আপনার মোটরসাইকেল ম্যানুয়ালে যেটা লেখা আছে প্রথমে সেটা আলোচনা করা যাক।

ম্যানুয়ালে লেখা থাকে প্রথম ১০০০ কি:মি: পর্যন্ত সর্বোচ্চ ঘন্টায় ৪০ কি:মি: এর বেশি গতিবেগে চালাবেননা। ওভারলোড করবেননা। এই নিয়মটি ভাল। কিন্তু নতুন মোটর সাইকেল যতদিননা ১০০০ কি:মি: পার না হচ্ছে ততদিন আপনি কাউকে নিয়ে ঘুরতেও পারছেননা বা ৪০/৫০ কি:মি: এর চেয়ে বেশি জোরে চালাতেও পারছেননা। অন্য একটি নিয়ম আছে। যেটা শর্টকাট পন্থা।বর্তমানের আন্তর্জাতিক মানের মোটরসাইক্লিস্টরা তাদের মোটর সাইকেলে ওয়্যার ইন করেন কিভাবে তা এবার জানবেন। (তবে এই ব্রেক-ইন রেসিং মোটরসাইকেলের জন্য যতটা প্রযোজ্য স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেলের জন্যে নয়। সুতরাং ব্রেক-ইনের ব্যাপারে বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিন। এক্ষেত্রে ম্যানুয়াল ফলো করলে আপনার ইঞ্জিনের আয়ু বাড়বে।)

শর্টকাট ব্রেক-ইন করবার জন্য একটি ফাঁকা ও লম্বা রাস্তা বেছে নিলে সুবিধে হবে। এই কাজের জন্য আপনি বাইক চালাতে অভিজ্ঞ না হলে আপনার অন্য কোন অভিজ্ঞ লোকের সাহায্য নেওয়া উচিত। প্রথমে ইঞ্জিন স্টার্ট করে ২ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ৮ কি:মি: একটানা চালান ঘন্টায় ৩৫/৪০ কি:মি:। স্পিড কমানোর জন্য ব্রেক না চেপে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করুন। অর্থাৎ ব্রেক ব্যবহার না করে বাইকের গতি কমাতে চাইলে শুধু থ্রটল কমিয়ে দিন।

এবার রাস্তার একপাশে থেমে ইঞ্জিন ৫ মিনিটের জন্য বন্ধ করুন। আবার ১০ মিনিট বাইকটি আগের নিয়মে চালান এবং ৫ মিনিটের জন্য ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন। এতে ইঞ্জিন টেম্পারেচর সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে।

এবার ৫০/১০০ কি:মি: এর কোর্স। অাঁকাবাঁকা রাস্তা বা পাহাড়ী রাস্তা এই কাজের জন্য উপযুক্ত। আপনি এক্ষেত্রে ফুল থ্রটল দিয়ে পুরো rpm ব্যবহার করবেন। ইচ্ছে করলে স্পিডোমিটারের কাঁটা সামান্য লাল দাগও পার করতে পারেন!! ঘন ঘন গতি

ন আর কমান। এখানেও গতি কমাতে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করুন অর্থাৎ থ্রটল কমিয়ে বাইকের গতি নিয়ন্ত্রন করুন। ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন কি- এখানে আপনার ম্যানুয়ালের সাথে এই ব্রেক-ইনের কোন মিল নেই! অথচ বিশ্বের সেরা মোটরসাইক্লিস্টগণ এই ব্রেক-ইন ফর্মূলা ব্যবহার করে তাদের বাইকের স্থায়ীত্ব শর্টকার্টে বাড়িয়ে নিয়েছেন। তবে আপনার হাতে যথেষ্ঠ সময় থাকলে এভাবে ব্রেক-ইন না করাটাই সবদিক থেকে মঙ্গল!!

বাড়ী ফিরে এসে আপনার ইঞ্জিন অয়েল (যেটাকে আমরা অনেকে মবিল বলে থাকি; যদিও মবিল একটি ইঞ্জিন অয়েলের নাম!) বদলে ফেলুন। সেইসাথে আপনার অয়েল ফিল্টারটি পরিবর্তন করে ফেলুন। অয়েল ফিল্টারের দাম ৩০/৩৫ টাকা মাত্র-কিন্তু এগুলো ব্যবহার করা আপনার বাইকের কার্বোরেটর ভালো রাখে। ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের প্রধান খাবার। ইঞ্জিন কর্মক্ষম রাখতে ইঞ্জিন অয়েল নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে। আপনার ম্যানুয়াল যদি বলে ১০০০ কি:মি: পরপর বদলাতে; আপনি বদলাবেন ৭০০ কি:মি: পরপর। কারন ব্রেক- ইন করার ফলে সত্যিকার অর্থেই যন্ত্রপাতির ছোট ছোট কণা ভেংগে গিয়ে ইঞ্জিন অয়েলের সাথে মিশে যায়। এই কণাগুলো ইঞ্জিনের জন্য ক্ষতিকর। আপনার ইঞ্জিনের জন্য কোনটা বেশি প্রয়োজনীয় তা আপনার ম্যানুয়ালে লেখা আছে। SE,SF,SG,SH,SJ,SL এগুলো যথাক্রমে লো গ্রেড থেকে হাই গ্রেড ইঞ্জিন অয়েল। যেখানে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে সেখানে অপেক্ষাকৃত হাই গ্রেড ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের জন্য SG SAE 10W/30 বা SG SAE 20W/50 মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিত।

এখন আপনার বাইকের ব্রেক-ইন পিরিয়ড শেষ হলো। এখন আপনার বাইকের ইঞ্জিন রিং, সিলিন্ডার ওয়াল, ট্রান্সমিশান গিয়ার সমস্ত ধকল নেওয়ার জন্য প্রস্ত্তত। এখন আপনি ইচ্ছেমত বাইকটি ব্যবহার করতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন, একই স্পীডে বহুক্ষণ চালাবেননা। টপ গিয়ার ঘন্টায় ৪০ কি:মি: ওঠার পর ব্যবহার করা ভালো।

Level 2

আমি মুহাম্মদুল্লাহ চৌধুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 96 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

এক্সপ্লোরার......


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Bhaia, amar khub voy lag e

খুব সুন্দর লিখেছেন !
অসাধারন!!! 😀 😉

Level 0

অনেক অনেক ভালো হয়েছে… ভাই আমাকে একটু বলবেন যে ১৫০সিসি মোটর বাইক এর মধ্যে কোণটার ইঞ্জিন সব চেয়ে ভালো…? টিউনারকে ধন্যবাদ।

    Hero, Honda more reliable than Bajaj. There engines have long life. But generally every Indian bikes last there engine 1 lac kilometres if you take care of them frequently. For longevity go for CBZ,hunk,unicorn and for style Yamaha fz series. Pulsar also good but better what I have mentioned

চালিয়ে যান।

Level 0

মুহাম্মদুল্লাহ ভাই, ”ভাল লাগলো আপনার টিউন।

bike stunt” সম্বন্ধে টিউন আশা করছি আপনার কাছে থেকে।

মুহাম্মদুল্লাহ ভাই, plz contact with me..need to talk to u..suvro> 01914881547

মুহাম্মদুল্লাহ ভাই, আমি হোন্ডা চালানো শিখবো ভাবছি। আপনার কাছ থেকে হোন্ডা চালানো শিখতে পারলে মনে হয় পারফেক্ট ড্রাইভিং করতে পারতাম।