ডাটা সেন্টার: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ

ডাটা সেন্টার: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ

ডাটা সেন্টার আধুনিক ডিজিটাল বিশ্বের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি এমন একটি স্থান যেখানে সার্ভার, স্টোরেজ সিস্টেম, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস এবং অন্যান্য কম্পিউটিং সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়, যা ডিজিটাল ডাটা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিতরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ডাটা সেন্টারগুলি ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ই-কমার্স, সরকারি সেবা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আর্টিকেলে আমরা ডাটা সেন্টারের মার্কেট সাইজ, মার্কেট গ্রোথ রেট, বাংলাদেশের পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক বিশ্বের পরিস্থিতি এবং ডাটা সেন্টারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করব।

ডাটা সেন্টারের মার্কেট সাইজ ও গ্রোথ রেট

বিশ্বব্যাপী ডাটা সেন্টার মার্কেটের আকার এবং প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে গ্লোবাল ডাটা সেন্টার মার্কেটের আকার ছিল প্রায় ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং এটি ২০২৩ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ১০% এর বেশি বার্ষিক বৃদ্ধি হার (CAGR) নিয়ে বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বৃদ্ধির পিছনে মূল কারণ হলো ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), এবং ৫জি প্রযুক্তির বিস্তার।

বাংলাদেশেও ডাটা সেন্টার মার্কেটের আকার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ডাটা সেন্টার মার্কেটের আকার ছিল প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং এটি ২০২৬ সাল নাগাদ ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এই মার্কেটের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।

বাংলাদেশের ডাটা সেন্টার পরিস্থিতি

বাংলাদেশে ডাটা সেন্টারের বিকাশ তুলনামূলকভাবে নতুন। তবে গত কয়েক বছরে দেশে ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডাটা সেন্টারের চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানি ডাটা সেন্টার পরিচালনা করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), রবি আজিয়াটা লিমিটেড, এবং গ্রামীণফোন।

বাংলাদেশ সরকারও ডাটা সেন্টার নির্মাণে বিনিয়োগ করছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের জন্য ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি দেশে ডাটা সেন্টার নির্মাণের জন্য বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করছে।

তবে বাংলাদেশে ডাটা সেন্টার নির্মাণে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিদ্যুতের অপ্রতুলতা, ইন্টারনেট সংযোগের গতি এবং স্থায়িত্বের সমস্যা। এছাড়াও, দক্ষ জনবলের অভাব এবং ডাটা সেন্টার পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্বের ডাটা সেন্টার পরিস্থিতি

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডাটা সেন্টার মার্কেটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি এবং ভারতের মতো দেশগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (AWS), মাইক্রোসফ্ট অ্যাজুর, এবং গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের মতো কোম্পানিগুলো বিশ্বের বৃহত্তম ডাটা সেন্টার পরিচালনা করছে।

চীনেও ডাটা সেন্টার মার্কেট দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলিবাবা, টেনসেন্ট, এবং বাইডুর মতো কোম্পানিগুলো দেশটিতে ব্যাপক সংখ্যক ডাটা সেন্টার নির্মাণ করেছে। ইউরোপে জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য ডাটা সেন্টার নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

ভারতেও ডাটা সেন্টার মার্কেট দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটিতে রিলায়েন্স জিও, টাটা কমিউনিকেশনস, এবং আদানি গ্রুপের মতো কোম্পানিগুলো ডাটা সেন্টার নির্মাণে বিনিয়োগ করছে। ভারত সরকারও ডাটা লোকালাইজেশন নীতি গ্রহণ করেছে, যা দেশটিতে ডাটা সেন্টার নির্মাণকে উৎসাহিত করছে।

ডাটা সেন্টারের ভবিষ্যৎ

ডাটা সেন্টারের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের বিস্তারের সাথে সাথে ডাটা সেন্টারের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতে ডাটা সেন্টারগুলি আরও শক্তিশালী, দক্ষ এবং পরিবেশবান্ধব হবে। গ্রিন ডাটা সেন্টার নির্মাণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে ডাটা সেন্টার পরিচালনা করা হয়।

এছাড়াও, এজ কম্পিউটিং (Edge Computing) এবং হাইব্রিড ক্লাউড সলিউশনের প্রবণতা ডাটা সেন্টার নির্মাণকে প্রভাবিত করবে। এজ কম্পিউটিং এর মাধ্যমে ডাটা প্রসেসিং ব্যবহারকারীর কাছাকাছি স্থানান্তর করা হবে, যা লেটেন্সি কমাতে এবং পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। উপসংহার

ডাটা সেন্টার আধুনিক ডিজিটাল বিশ্বের একটি অপরিহার্য অংশ। বাংলাদেশে ডাটা সেন্টার মার্কেটের আকার এবং প্রবৃদ্ধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডাটা সেন্টার মার্কেটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, এবং ভারতের মতো দেশগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে ডাটা সেন্টারগুলি আরও শক্তিশালী, দক্ষ এবং পরিবেশবান্ধব হবে, এবং এজ কম্পিউটিং এবং হাইব্রিড ক্লাউড সলিউশনের প্রবণতা ডাটা সেন্টার নির্মাণকে প্রভাবিত করবে।

ডাটা সেন্টারের বিকাশ শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডাটা সেন্টার নির্মাণ এবং উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে ডিজিটাল বিশ্বের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।

Level 1

আমি হুসাইন বিল্লাহ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 মাস 2 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস