জন্ম নিবন্ধন বানাতে কি কি লাগে ২০২৩

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

জন্মস্থান বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সরকার কর্তৃক একজন ব্যক্তির প্রথম সরকারী স্বীকৃতি হিসাবে কাজ করে এবং জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে এটি করা বাধ্যতামূলক। এই নিবন্ধটি জন্ম নিবন্ধন পোর্টালের প্রক্রিয়া, এর গুরুত্ব, প্রয়োজনীয় নথি এবং অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা আমরা দিয়েছি। আমরা জন্ম নিবন্ধন না করার পরিণতি কি? এবং এর জন্য কত টাকা ফি লাগবে তা নিয়েও আমরা আলোচনা করব।

জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্ব

জন্ম নিবন্ধন একজন ব্যক্তির জন্ম, বয়স, পরিচয় এবং নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে কাজ করে। এটি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রয়োজন হয়। যেমনঃ-

  1. পাসপোর্ট প্রদান।
  2. বিবাহ নিবন্ধন।
  3. স্কুলে ভর্তি।
  4. সরকারি, বেসরকারি বা স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান।
  5. ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান।
  6. ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্ত।
  7. জমি রেজিস্ট্রেশন।
  8. ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা।
  9. আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স গ্রহন।
  10. ইউটিলিটি সংযোগ (গ্যাস, পানি, টেলিফোন, বিদ্যুৎ)।
  11. ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) গ্রহণ।
  12. ঠিকাদার লাইসেন্স গ্রহণ।
  13. হাউস প্ল্যান অনুমোদন।
  14. যানবাহন নিবন্ধন।
  15. ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি।
  16. জাতীয় পরিচয়পত্র অর্জন।

একটি বৈধ জন্ম নিবন্ধন ছাড়া ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে বিভিন্ন সেবা পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে৷

জন্ম নিবন্ধন বানাতে কি কি লাগে

জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সন্তানের বয়সের উপর নির্ভর করে জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের পার্থক্য রয়েছে:
৪৫ দিন বা তার কম বয়সী শিশুদের জন্য:

  1. পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা তাদের অনলাইন করা জন্ম নিবন্ধন (বাংলা ও ইংরেজি)।
  2. হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট বা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থেকে জন্ম-সম্পর্কিত কাগজ পত্রের একটি সত্যায়িত অনুলিপি।
  3. হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রসিদের ফটোকপি বা ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্স আদায়ের রসিদের ফটোকপি।
  4. একটি সচল মোবাইল নাম্বার (যেই নাম্বারে ওটিপি আসবে)।

৪৫ দিন থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য:

  1. ইপিআই (টিকার কার্ড) কার্ড – এর সত্যায়িত ফটোকপি বা ইপিআই কর্মীর প্রশংসাপত্র।
  2. হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রসিদের ফটোকপি বা ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্স আদায়ের রসিদের ফটোকপি।
  3. পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা তাদের অনলাইন করা জন্ম নিবন্ধন (বাংলা ও ইংরেজি)।
  4. সন্তানের একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি।
  5. একটি সচল মোবাইল নাম্বার (যেই নাম্বারে ওটিপি আসবে)।

৫-১৮ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য:

  1. একজন নিবন্ধিত সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক (MBBS বা এর উর্ধে) এর কাছে থেকে প্রশংসাপত্র অথবা ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ, যেমন,  PSC/JSC/SSC সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
  2. হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রসিদের ফটোকপি বা ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্স আদায়ের রসিদের ফটোকপি।
  3. পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা তাদের অনলাইন করা জন্ম নিবন্ধন (বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়)।
  4. সন্তানের একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি।
  5. একটি সচল মোবাইল নাম্বার (যেই নাম্বারে ওটিপি আসবে)।

কিভাবে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন

জন্ম নিবন্ধন করার জন্য আগে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কিভাবে জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন:

  1. অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন: https://bdris.gov.bd/br/application
  2. আপনি যে অফিসে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট করতে চান সেটি নির্বাচন করুন।
  3. সন্তানের নাম (বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়), জন্ম তারিখ, লিঙ্গ এবং জন্মস্থানের ঠিকানা দিয়ে পেইজটি ফিলাপ করে পরবর্তীতে ক্লিক করুন।
  4. এরপর পিতামাতার নাম এবং জাতীয়তা সহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পূরণ করুন।
  5. পরবর্তী পেইজে গিয়ে আপনার স্থায়ী ঠিকানা এবং আপনার বর্তমান ঠিকানার সকল তথ্য ফিলাপ করুন।
  6. প্রয়োজনীয় তথ্য  যেমন,  EPI কার্ড, শিক্ষা বোর্ড সনদ, হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ এবং পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। আপলোড করুন।
  7. আপনার সচল একটি মোবাইল নাম্বার দিন। এবং ওটিপি সাবমিট করুন।
  8. আবেদনপত্রটি ভালো করে পড়ে নিন এবং জমা দিন।
  9. আবেদন সাবমিট হয়ে গেলে একটি এপ্লিকেশন নাম্বার পাবেন, যা দিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন।
  10. আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করুন।
  11. অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার পর, সকল ডকুমেন্টস সাথে নিয়ে স্থানীয় অফিসে জমা দিন।

জন্ম নিবন্ধন বানাতে কত টাকা লাগে

৪৫ দিন বা তার কম বয়সী শিশুদের জন্য, জন্ম নিবন্ধন সম্পূর্ণ ফ্রি। যাইহোক, ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধন এর সরকারি ফি ২৫ টাকা মাত্র। ৫ বছরের উপরে জন্ম নিবন্ধন এর সরকারি ফি ৫০ টাকা। তবে এগুলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি। আপনার নিকটস্থত সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ সেখানে জন্ম নিবন্ধন এর ফি কিছুটা কমবশি হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।

জন্ম নিবন্ধন না করা করলে কি কি সমস্যার সমুখীন হবেন

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  1. স্কুলে ভর্তিতে অসুবিধা।
  2. জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড পেতে ব্যর্থ।
  3. পাসপোর্ট পেতে অসুবিধা।
  4. সরকারী কর্তৃক-শাসিত চাকরি খুঁজে পেতে অসুবিধা।
  5. বিবাহ নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যা।
  6. জমি- সম্পত্তি ক্রয় এবং বিক্রয় সমস্যা।
  7. অপরাধমূলক কার্যকলাপ অথবা অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়া।

উপসংহার

জন্ম নিবন্ধন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবনের একটি অপরিহার্য দিক। একটি স্বীকৃত নাগরিকের অধিকার ভোগ করা এবং বিভিন্ন প্রকার সরকারী বা বেসরকারী সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি ভালো প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা অপরিহার্য। আমাদের দেওয়া নির্দেশিকা ফলো করে আপনিও আপনার স্থানীয় অফিস থেকে জন্ম নিবন্ধন করে নিতে পারবেন। ধন্যবাদ!

Level 1

আমি হাফিজুর রহমান। Owner, Jonmo Nibondhon Helpline, Manikganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস