"চিরকাল সবার মাঝে বেঁচে থাকুক মানবতা, প্রতিরোধ করতে হবে আত্মহত্যা প্রবণতা" এই শ্লোগানে শুরু করছি আজকের টিউন।
একজন ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়া বা একটি আত্মহত্যার ঘটনা কেবল কি একজন ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা?
এটা কি তার চারপাশের প্রিয়জনের জন্য অসহনীয় বেদনার নয়। অনেকের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে এর মাধ্যমে। একজনের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকের জীবনের গতির আকষ্মিক পরিবর্তন নিয়ে আসে এই ঘটনা। আপনি কি জানেন ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ আত্মহত্যা। আপনি কি জানেন, বিশ্বজুড়ে বছরে সাত লাখের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে।
প্রতি হাজার মৃত্যুর মধ্যে ১৩ জনই আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। বিষয়টা কি আপনার বিবেককে নাড়া দেয় না। অবশ্য আপনার আমার বিবেকে প্রভাব না পরারই কথা। আমি আপনি তো পড়ে আছি লাইক, শেয়ার ও টিউমেন্ট নিয়ে। সাধারণত যাদের বিষণ্ণতা রোগ রয়েছে অন্যদের চেয়ে তারা বিশ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকে।
বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী - বাংলাদেশে প্রতি বছরে এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ছয় জন মৃত্যুবরণ করে আত্মহত্যার মাধ্যমে। আপনি কি জানেন, গত এক বছরে ১৪ হাজারের ও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে বাংলাদেশে।
আপনি কি জানেন, দেশের পাঁচ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে। দেশে খবর নিলে দেখা যাবে যে হাজারো মানুষ আছে যারা আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছে বা চেষ্টা করেছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা তিনগুণ বেশি আর গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় শহরে আত্মহত্যার প্রবণতা দ্বিগুণ।
তবে বেশিরভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। বিষন্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, বাইপোলার ডিসঅর্ডার মাদকাসক্তির ইত্যাদি ছাড়াও মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। গবেষকগণ আত্মহত্যাকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন-একটি হলো পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা যাকে ডিসিসিভ বলে আরেকটা হলো হঠাৎ করে করে ফেলা আত্মহত্যা যাকে ইমপালসিভ বলে।
সাধারণত যারা আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তি তারা বেশিরভাগই আগে থেকে বেশ কিছু ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। যে আত্মহত্যাপ্রবণ তার কাছের মানুষগুলো অর্থাৎ আপনি অথবা আমি যদি ইঙ্গিত গুলোকে বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারি তাহলেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারবো। ১০ ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আগামীকাল বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় কাজের মাঝে জাগাই আশা।
আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে চাইলে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হয়ে কাজ করতে হবে। আর কাজটি হলো আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির পাশে থাকা তাকে সাহায্য করা।
এ ধরনের ইঙ্গিত যার মধ্যে থাকে তাকে মনোসামাজিক সহায়তা দিতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। ভুল করেও তাদের কোন বিষয়ে কথা নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। হয়তো একটি বড় মাত্রার ভুল এর মাধ্যমে হয়ে যেতে পারে। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে গেলে শুধুমাত্র লাইক, টিউমেন্ট ও শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় করলে এটা সম্ভব হবে না। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি আমি তাদের পাশে থাকবো।
"বিষন্নতা একাকীত্ব ও হতাশায় ভোগা মানুষগুলোর সাথে আনন্দ শেয়ার করি, অযথা সামাজিক মাধ্যমে সময় ব্যয় না করে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি মুক্ত দেশ গড়ি। " এই শ্লোগানে শেষ করছি আজকের টিউন। আশা করছি টিউন টি সবাই শেয়ার করে সবাইকে সচেতন হওয়ার সুযোগ দান করবেন।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।