অযথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় না করি, বিষন্নতায় থাকা মানুষ গুলোর পাশে থেকে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে সাহায্য করি

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 7
২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা

"চিরকাল সবার মাঝে বেঁচে থাকুক মানবতা, প্রতিরোধ করতে হবে আত্মহত্যা প্রবণতা" এই শ্লোগানে শুরু করছি আজকের টিউন।

একজন ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়া বা একটি আত্মহত্যার ঘটনা কেবল কি একজন ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা?

অযথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় না করি, বিষন্নতায় থাকা মানুষ গুলোর পাশে থেকে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে সাহায্য করি

এটা কি তার চারপাশের প্রিয়জনের জন্য অসহনীয় বেদনার নয়। অনেকের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে এর মাধ্যমে। একজনের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকের জীবনের গতির আকষ্মিক পরিবর্তন নিয়ে আসে এই ঘটনা। আপনি কি জানেন ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ আত্মহত্যা। আপনি কি জানেন, বিশ্বজুড়ে বছরে সাত লাখের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে।

প্রতি হাজার মৃত্যুর মধ্যে ১৩ জনই আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। বিষয়টা কি আপনার বিবেককে নাড়া দেয় না। অবশ্য আপনার আমার বিবেকে প্রভাব না পরারই কথা। আমি আপনি তো পড়ে আছি লাইক, শেয়ার ও টিউমেন্ট নিয়ে। সাধারণত যাদের বিষণ্ণতা রোগ রয়েছে অন্যদের চেয়ে তারা বিশ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকে।

অযথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় না করি, বিষন্নতায় থাকা মানুষ গুলোর পাশে থেকে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে সাহায্য করি

বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী - বাংলাদেশে প্রতি বছরে এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ছয় জন মৃত্যুবরণ করে আত্মহত্যার মাধ্যমে। আপনি কি জানেন, গত এক বছরে ১৪ হাজারের ও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে বাংলাদেশে।

আপনি কি জানেন, দেশের পাঁচ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে। দেশে খবর নিলে দেখা যাবে যে হাজারো মানুষ আছে যারা আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছে বা চেষ্টা করেছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা তিনগুণ বেশি আর গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় শহরে আত্মহত্যার প্রবণতা দ্বিগুণ।

তবে বেশিরভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। বিষন্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, বাইপোলার ডিসঅর্ডার মাদকাসক্তির ইত্যাদি ছাড়াও মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। গবেষকগণ আত্মহত্যাকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন-একটি হলো পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা যাকে ডিসিসিভ বলে আরেকটা হলো হঠাৎ করে করে ফেলা আত্মহত্যা যাকে ইমপালসিভ বলে।

আত্মহত্যার প্রতিরোধ আপনার আমার হাতেই

সাধারণত যারা আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তি তারা বেশিরভাগই আগে থেকে বেশ কিছু ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। যে আত্মহত্যাপ্রবণ তার কাছের মানুষগুলো অর্থাৎ আপনি অথবা আমি যদি ইঙ্গিত গুলোকে বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারি তাহলেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারবো। ১০ ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আগামীকাল বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় কাজের মাঝে জাগাই আশা।

আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে চাইলে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হয়ে কাজ করতে হবে। আর কাজটি হলো আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির পাশে থাকা তাকে সাহায্য করা।

অযথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় না করি, বিষন্নতায় থাকা মানুষ গুলোর পাশে থেকে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে সাহায্য করি

সাধারণত যারা আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি তারা নিম্নোক্ত ইঙ্গিতগুলো দিয়ে থাকে

  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আত্মহত্যা নিয়ে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করে কথায় কথায় মরে যাওয়ার কথা বলে।
  • সম্প্রতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বা নিকটজনের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে যা তিনি মেনে নিতে পারছেন না এমন ব্যক্তি।
  •  ঘুমের পরিবর্তন হচ্ছে সারারাত জেগে থাকছেএমন ব্যক্তি।
  • নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে হঠাৎ রেগে যাচ্ছে এমন ব্যক্তি।
  • আত্মহত্যা বা মৃত্যু বিষয়ক কবিতা ও গান লিখতে থাকে বা শুনতে থাকেন এমন ব্যক্তি।
  • নিজের ক্ষতি করে যেমন-প্রায়ই তারা নিজের হাত পা কাটেন এবং বেশি বেশি ঘুমের ওষুধ খান এমন ব্যক্তি।
  • মন মরা হয়ে থাকা, সব কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে দোষী ভাবা ব্যক্তিগুলো।
  • ইন্টারনেট বা মাদকাসক্তিতে অতিমাত্রায় আসক্ত ব্যক্তি গুলো।
  • নিজেকে গুটিয়ে রাখা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ে ব্যক্তি গুলো।
  • পড়ালেখা, খেলাধুলার, শখের বিষয় থেকে দূরে থাকা ব্যক্তি গুলো সাধারণত আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য।

এ ধরনের ইঙ্গিত যার মধ্যে থাকে তাকে মনোসামাজিক সহায়তা দিতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। ভুল করেও তাদের কোন বিষয়ে কথা নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। হয়তো একটি বড় মাত্রার ভুল এর মাধ্যমে হয়ে যেতে পারে। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে গেলে শুধুমাত্র লাইক, টিউমেন্ট ও শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় করলে এটা সম্ভব হবে না। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি আমি তাদের পাশে থাকবো।

আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে আপনি আমি সাধারণত যে বিষয়গুলোর উপর নজর রাখব

  • শিশু কিংবা কিশোর তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে তাদের নেওয়ার সিদ্ধান্ত গুলোর গুরুত্ব দেয়া।
  • আত্মহত্যার উপকরণ যেমন ঘুমের ওষুধ ও কীটনাশক এর সহজলভ্যতা কমানো, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা ও যেখানে সেখানে কীটনাশক ঔষধ গুলো না রাখা।
  • যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত কোন ব্যক্তির কাছে থেকে পেলে দ্রুত তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়াই উত্তম।
  • যারা একাকিত্বে ভুগছে তাদেরকে যথাসাধ্য সময় দেয়া। যারা হতাশায় ভুগছে তাদেরকে উৎসাহ দেয়া।
  • ভুল করেও কোনো আত্মহত্যাকে মহৎ করে দেখানোর চেষ্টা করবেন না আর কারো মৃত্যুর ইচ্ছাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করবেন না।
  • যেসব মানসিক রোগে আত্মহত্যার ঝুঁকি রয়েছে সেগুলোতে অবশ্যই ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে বা দ্রুত সেই ব্যক্তিকে ডাক্তারের নিকটে নিয়ে যেতে হবে।

"বিষন্নতা একাকীত্ব ও হতাশায় ভোগা মানুষগুলোর সাথে আনন্দ শেয়ার করি, অযথা সামাজিক মাধ্যমে সময় ব্যয় না করে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি মুক্ত দেশ গড়ি। " এই শ্লোগানে শেষ করছি আজকের টিউন। আশা করছি টিউন টি সবাই শেয়ার করে সবাইকে সচেতন হওয়ার সুযোগ দান করবেন।

Level 7

আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস