বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। তো বন্ধুরা আমরা যারা মোবাইল দিয়ে কিংবা ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলে থাকি, তারা সবাই একটি বিষয় লক্ষ্য করি ক্যামেরা মেগাপিক্সেল এর দিকে। যেখানে আমাদের মাথায় চলে আসে কোন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল বেশি হলে সেই ক্যামেরাটি অনেক ভালো। তো বন্ধুরা, আজকের এই টিউনে আমি ক্যামেরার মেগাপিক্সেলের এর বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ এবং সেইসঙ্গে এটিও আপনারা জানতে পারবেন যে একটি মোবাইলে কোন ছবি কিংবা ভিডিও তোলার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় ভূমিকা রাখে।
আমরা যারা ছবি তুলতে পছন্দ করি তাদের ক্ষেত্রে বেশি মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা সব সময় দরকার পড়ে। আর আমরা মোবাইল কেনার সময় বেশি মেগাপিক্সেল যুক্ত মোবাইলকে ও খুঁজে থাকি। আপনাদের কাছে এটি মনে হতে পারে বেশি মেগাপিক্সেল মানেই ভালো ক্যামেরা; যে ক্যামেরা দিয়ে অনেক ভালো ছবি তোলা যাবে। তবে এই কথাটি সম্পূর্ণ ভুল হতে পারে। স্মার্টফোনের বেশি মেগাপিক্সেল যুক্ত ক্যামেরা হলেই যে ভালো ছবি তোলা যাবে এই ধারণাটি আজকে আপনাদের ভেঙ্গে দেবো।
হ্যাঁ, স্মার্টফোনের বেশি মেগাপিক্সেল যুক্ত ক্যামেরা হলে সেটি দিয়ে ভালো ছবি তোলা যায় না। বরং তার চাইতেও কম মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা দিয়ে সেটির চাইতে ভালো ছবি তোলা সম্ভব। তো বন্ধুরা, এসব বিষয় নিয়েই আজকের এই টিউনে বিস্তারিত আলোচনা করব। এজন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ টিউনটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন। এছাড়া আপনি যদি আমাকে এখনও ফলো করে না রেখে থাকেন, তবে উপরের ফলো বাটনে ক্লিক করে রাখুন। চলুন তবে আজকের টিউনটি শুরু করি।
যখন একটি ক্যামেরার কথা বলা হয় তখন সবার মাথায় একটি বিষয় চলে আসে মেগাপিক্সেল। আমাদের তখন মাথায় চলে আসে এটি কত মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা। অর্থাৎ, সেসব মানুষেরা ক্যামেরার মেগাপিক্সেল দেখেই এটা নির্ধারণ করতে শুরু করে দেয় যে এটার পিকচার কোয়ালিটি কেমন হবে। এ ক্ষেত্রে এটি মাথায় চলে আসে একটি ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত ভালো হবে সেটির পিকচার কোয়ালিটি ততোই ভালো হবে। যেটি কিনা একেবারেই ভুল।
একটি ক্যামেরার কোয়ালিটি ভালো হবার পেছনে মেগাপিক্সেল ব্যতীত অনেকে বিষয় রয়েছে; যেগুলোর ওপর একটি ক্যামেরার পিকচার কোয়ালিটি এবং ভিডিও কোয়ালিটি নির্ভর করে। যেরকম ধরুন Pixcel Size, Optics (Lens), Aperture, Auto-Focus, OIS ইত্যাদি। এগুলো বিবেচনা করার পরেই আপনি একটি ক্যামেরার পিকচার কোয়ালিটি এবং ভিডিও কোয়ালিটি নির্ধারণ করতে পারেন। তো আপনি যদি এখনো এগুলো না জেনে থাকেন তবে আপনাকে এগুলো পর্যায়ে করবেন জেনে দিচ্ছি। নিচে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি বিষয়ে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করা হলো।
আমি আশা করছি এই টিউনটি থেকে জানার মাধ্যমে পরবর্তীতে আপনি কোন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল দেখে এটা নির্ধারণ করবেন না যে সেই ক্যামেরার ভিডিও কোয়ালিটি কিংবা পিকচার কোয়ালিটি কেমন হতে পারে। এজন্য প্রথমে শুরু করা যাক ক্যামেরার মেগাপিক্সেল নিয়ে।
প্রথমেই বলে নিচ্ছি, মেগাপিক্সেলের দিয়ে কোন একটি ক্যামেরার কতগুলো পিক্সেল রয়েছে সেটি বোঝানো হয়। যেখানে ১ মেগাপিক্সেল এর অর্থ হচ্ছে ১ মিলিয়ন পিক্সেল বা ১০ লক্ষ পিক্সেল। এবার যদি কোন ক্যামেরা ১ মেগাপিক্সেল এর হয়; তার মানে এটাই যে সেই ক্যামেরাতে ১০ লক্ষ টি পিক্সেল রয়েছে। কোন ক্যামেরা মেগাপিক্সেল দিয়ে সেই ক্যামেরার রেজুলেশন কে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন বা বলতে পারবেন কিন্তু সেই ক্যামেরা দিয়ে তোলা ভিডিও কোয়ালিটি কিংবা ফটো কোয়ালিটি কেমন হবে সেটি বলতে পারেন না। এক্ষেত্রে মেগাপিক্সেল কে জানার জন্য জানতে হবে সেই ক্যামেরার পিক্সেল এর সাইজ।
আপনি হয়তোবা অনেক স্মার্ট ফোন এর স্পেসিফিকেশন এ দেখেছেন ক্যামেরা ক্যাটাগরিতে 1.4 micron অথবা 1.2 micron লেখা। এটি দিয়ে সেই ক্যামেরার সেন্সরে যে পিক্সেলগুলো রয়েছে সেগুলোর সাইজগুলো কে বোঝানো হয়। আর একটি ক্যামেরার পিক্সেল সাইজ গুলো যত বড় হবে সেই ক্যামেরার মান ততোই ভালো হবে। এক্ষেত্রে বেশি মাইক্রো সাইজ এর পিক্সেল গুলো বেশি আলো ধারণ করার কারণে সেটির পিকচার কিংবা ভিডিও ফলাফল ভালো দিতে পারে, বিশেষ করে লো লাইট পরিস্থিতিতে। তো দেখুন, এটি একটি সাধারণ ধারণা যে একটি ক্যামেরা পিক্সেল সাইজ যত বড় হবে সেই ক্যামেরার ভিডিও কোয়ালিটি কিংবা পিকচার কোয়ালিটি অনেক ভাল হবে।
একটি ক্যামেরা পিক্সেল যত বেশি বড় হবে সেই ক্যামেরাটি ততবেশি লাইট ক্যাপচার করতে পারবে এবং সেগুলো একত্রিত করে একটি ভালো ছবি আপনাকে উপহার দিতে পারবে। অপরদিকে যদি কোন ক্যামেরার পিক্সেল সাইজ গুলো ছোট হয়ে যায় তবে সেটির ভিডিও কিংবা পিকচার কোয়ালিটি খারাপ হবে এমনকি কম মেগা পিক্সেলের ক্যামেরার চাইতেও। কেননা সেই ক্যামেরা তে বেশি মেগাপিক্সেল থাকলেও পিক্সেল এর সাইজ অত্যন্ত ছোট। যে কারণে বেশি মেগাপিক্সেল থাকলেও সেটি কোন কাজের নয়। এটি বোঝানোর জন্য আপনাকে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
এক্ষেত্রে ধরুন একটি ১ ইঞ্চি ক্যামেরা সেন্সর ১ মেগাপিক্সেল; অর্থাৎ ১০ লক্ষ টি পিক্সেল। অন্যদিকে একটি হাফ ইঞ্চি ক্যামেরা সেন্সরও ১ মেগাপিক্সেল; অর্থাৎ এখানেও ১০ লক্ষ টি পিক্সেল রয়েছে। তো এদের মধ্যে এবার পার্থক্য কি থাকল? উপরের দুইটি ক্যামেরার মেগাপিক্সেলই তো ১ মেগাপিক্সেল করে। কিন্তু এখানে ঘাটতি হচ্ছে সেই পিক্সেল এর সাইজে।
ক্যামেরার সেন্সর এর সাইজ নির্ভর করে না সেই ক্যামেরাটি ভিডিও কোয়ালিটি কিংবা পিকচার কোয়ালিটি তে। এটা নির্ভর করে সেই ক্যামেরা পিক্সেল এর সাইজে। আর পিক্সেল এর সাইজ গুলোকে যদি বাড়ানো হয় তবে সেন্সর এর সাইজ টিকেও বাড়াতে হবে। অর্থাৎ, যদি একটি ১ মেগাপিক্সেল এর ইমেজ সেন্সর হয়, আর সেটির যদি পিক্সেল সাইজগুলো ছোট হয় তাহলে ইমেজ সেন্সর এর সাইজ টিও কিন্তু ছোট হবে। অন্যদিকে যদি সেই ১ মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা পিক্সেল সাইজ গুলো যদি বড় হয় তবে সেই ক্যামেরা সেন্সর টিও বড় হবে।
যেমনটি আপনি উপরের উদাহরণে বললাম যেখানে ১ ইঞ্চি, ১ মেগা পিক্সেল ক্যামেরা সেন্সরে ১০ লক্ষ টি পিক্সেল রয়েছে এবং অন্যদিকে একটি হাফ ইঞ্চি ক্যামেরা সেন্সরও ১ মেগাপিক্সেল; অর্থাৎ ১০ লক্ষ টি পিক্সেল রয়েছে। এখানে এক ইঞ্চির যে ক্যামেরা সেন্সরটি রয়েছে সেখানে হাফ ইঞ্চি ক্যামেরা সেন্সর এর চাইতে বড় পরিমাণে পিক্সেল সাইজ রয়েছে। আর এই যে ইমেজ সেন্সর এর পিক্সেল সাইজ এবং সেন্সর সাইজ এর পার্থক্য রয়েছে সে কারণেই পিকচার কোয়ালিটি তে আপনি ভিন্ন ধরনের পার্থক্য দেখতে পাবেন। তো এবার প্রশ্ন আসতে পারে যে, কি কি ধরনের পার্থক্য দেখতে পাওয়া যাবে এসব ক্ষেত্রে?
সবার প্রথমে আপনি এখানে যে পার্থক্যটি দেখতে পাবেন তাহলোঃ ১ মেগা পিক্সেল এর ক্যামেরাটিতে যে ইমেজ সেন্সর রয়েছে সেটি দিয়ে আপনি ভালো কোয়ালিটির ছবি তুলতে পারবেন। বিশেষ করে এটি লো লাইট পরিস্থিতিতে ভালো পারফর্ম করবে হাফ ইঞ্চি ক্যামেরা সেন্সর এর চাইতে। এছাড়া বেশি বড় সাইজের পিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে আপনি ভালো ডায়নামিক রেঞ্জ এবং অন্যান্য সুবিধা গুলো বেশি পাবেন। মোট কথা বলতে গেলে, এটি দিয়ে পিকচার কোয়ালিটি অনেক ভালো হবে সেই হাফ ইঞ্চি ক্যামেরা সেন্সর এর চাইতে। আর এগুলো হচ্ছে ক্যামেরা দুটির পিক্সেল সাইজ এবং সেন্সর সাইজ এর পার্থক্য।
কোন ক্যামেরার যত বেশি পরিমাণে ইমেজ সেন্সর হবে সেটি তত বেশি পরিমাণে লাইটকে ক্যাপচার করতে পারবে এবং যত বড় পিক্সেল হবে সে তত ভালো ভাবে লাইট কে ক্যাপচার করতে পারবে, তত ভালো সে ক্যামেরাটি লো লাইটে ছবি তুলতে পারবে। এতে করে সে ক্যামেরাটি ততো ভালো পিকচার কোয়ালিটি আপনাকে উপহার দেবে। তো, আমরা এবার এখান থেকে বুঝলাম যে ক্যামেরা যতই ভালো হোক না কেন সেটির পিক্সেল সাইজ যদি ছোট হয় তবে সেটি কোন কাজেই আসবে না। এক্ষেত্রে যদি তার চাইতে নিচের কোন মেগাপিক্সেল অর্থাৎ, সেই ক্যামেরাটি যদি 64 মেগাপিক্সেল এর হয় এবং অন্য একটি ক্যামেরা যদি 48 মেগাপিক্সেল এর হয়; তবে এক্ষেত্রে 48 মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা টি বেশি ভালো ছবি তুলতে পারবে। কেননা এ ক্ষেত্রে সেই কম মেগা পিক্সেল এর ক্যামেরা তে বড় সাইজের পিক্সেল ব্যবহার করা হয়েছে।
এবার আপনাকে যদি 48 মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরার পরিবর্তে 64 মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা দেওয়া হয়; তবে এক্ষেত্রে ও 64 মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিটি খারাপ হতে পারে। কেননা সেটির পিক্সেল সাইজ গুলো ছোট হলে। যে কারণে আমরা দেখতে পারি অনেক কম মেগা পিক্সেল এর ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি বেশি মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবির চাইতে অনেক ভাল হয়। যেখানে ছবি তোলার ক্ষেত্রে মেগাপিক্সেল কোন ব্যাপার নয়। বরং ছবি তোলার ক্ষেত্রে সেই পিক্সেল এর সাইজ টি যদি বড় হয় তবে বেশি মেগা পিক্সেল এর ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবির চাইতে ভাল হবে।
এটি বোঝানোর জন্য আপনাকে একটি ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক। মনে করুন আপনি কোথাও দাওয়াত খেতে গেছেন। যেখানে আপনাকে এবং অন্য একজনকে খাবার দেওয়া হল। যেখানে আপনাদের দু'জনকেই একই পরিমাণ খাবার দেওয়া হল। কিন্তু এখানে অন্য একজনকে দেওয়া হল শুধুমাত্র একটি থালায় করে; অপরদিকে একই পরিমাণ খাবার আপনাকে দেওয়া হল মোট চারটি থালায় করে।
এখানে খাবারের পরিমাণ কিন্তু একই। এখানে কিন্তু আপনাকে বেশি পরিমাণে খাবার দেওয়া হয়নি, বরং আপনাকে বুঝানো হয়েছে যে আপনাকে বেশি থালায় করে খাবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে বেশি পরিমাণে খাবার দেয়া হয়নি, বরং দুইজনার খাবারের পরিমাণ একই। ঠিক একই রকম প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করতে পারে স্মার্ট ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি গুলো। যেখানে সেই থালার খাবার এর মত একটু একটু করে খাবার দিয়ে বেশি বুঝাতে পারে।
যেখানে আপনাকে ঠিকই বেশি মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা দেওয়া হবে, কিন্তু সেই বেশি মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরার পিক্সেল গুলোর সাইজ থাকবে ছোট। যেখানে হয়তোবা 16 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা তেই সেই কাজটি হয়ে যেত সেখানে ছোট ছোট পিক্সেলে ক্যামেরা সেন্সর ব্যবহার করার মাধ্যমে সেটি 64 মেগাপিক্সেল করেছে। এবার অন্য কেউ যদি সেই ক্যামেরাটি বড় সাইজের পিক্সেল নিয়ে 16 মেগাপিক্সেল এর করে তবে সেটি কিন্তু সেই 64 মেগাপিক্সেল এর মতই হবে। যে কারণে আমরা কিন্তু দেখতে পাই অ্যাপেলের ফোন গুলোতে কম মেগা পিক্সেল এর ক্যামেরা ব্যবহার করলেও সেগুলোর পিকচার কোয়ালিটি অনেক ভালো হয়। যেখানে অ্যাপেলের ফোন গুলোতে বেশি মেগাপিক্সেল এর কথা বলে ব্যবহারকারীকে কোন লোভ দেখানো হয় না।
এবার আপনি নিশ্চয় ক্যামেরার মেগাপিক্সেল এর বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যেখানে বেশি মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা মানেই সেটি ভালো ছবি তুলতে কিংবা ভালো ভিডিও করতে পারেনা। বরং এক্ষেত্রে ক্যামেরা দেখার ক্ষেত্রে দেখতে হবে সেই ক্যামেরাটির পিক্সেল সাইজ কত মাইক্রন সাইজে তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা যদি দুইটি মোবাইলের ক্যামেরা নিয়ে তুলনা করি তবে এক্ষেত্রে দেখতে হবে কোন ক্যামেরাটির মাইক্রোন বেশি বড় পরিমাণে রয়েছে। এক্ষেত্রে যদি কম মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা পিক্সেল সাইজ বেশি পরিমাণে হয় সেই বেশি মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরার চাইতে তবে এক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে কম মেগা পিক্সেল এর ক্যামেরা টি কেই বেছে নেওয়ার।
মেগা পিক্সেলের এই ব্যাপারটি আমরা আবার ডিএসএলআর ক্যামেরার ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। যেখানে ধরুন, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরার মেগাপিক্সেল থাকে মাত্র 20 মেগাপিক্সেল। যে ক্যামেরাটির দিয়ে তোলা ছবি কিন্তু মোবাইল দিয়ে তোলা 64 মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা কেও হার মানায়। এখানে মোবাইলের ক্যামেরা তে অতিরিক্ত মেগা পিক্সেল দিলেই যে শুধু এটি ভালো হবে তা নয়। এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের ক্যামেরা তে পিক্সেল সাইজ গুলো থাকে অত্যান্ত ছোট এবং অপরদিকে ডিএসএলআর ক্যামেরার পিক্সেলগুলো এর সাইজ থাকে বড় পরিমাণে। যে কারণে ডিএসএলআর ক্যামেরার পিক্সেল সাইজ ছোট হওয়া সত্বেও এটি 48 কিংবা 64 মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরার চাইতে ভালো ছবি এনে দেয়।
তো বন্ধুরা এটি ছিল ক্যামেরার মেগাপিক্সেল এর কাহিনী। আশা করছি আপনারা সহজ ভাষায় আমার এই উদাহরণটি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝে থাকেন তবে টিউনমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন এবং টিউন টি কেমন লাগল সেটিও জানাবেন। তবে বন্ধুরা আমরা এটা জানতে পারলাম যে ক্যামেরা এর পিক্সেল ভালো হলেই পিকচার কোয়ালিটি কিংবা ভিডিও কোয়ালিটি ভালো হয়না। পিকচার কোয়ালিটি কিংবা ভিডিও কোয়ালিটি ভালো হবার জন্য দরকার সেই ক্যামেরাটি পিক্সেল এর সাইজ।
ক্যামেরার পিক্সেল এর সাইজ এরপরে আসে সেটির লেন্স। যদিও ডিএসএলআর ক্যামেরার ক্ষেত্রে অনেক অনেক লেন্স ব্যবহার করার অপশন রয়েছে; কিন্তু সাধারণত মোবাইলে যে লেন্স ব্যবহার করা হয় সেটি পাল্টানোর আর কোনো সুযোগ নেই। যেখানে সব ধরনের লেন্স ব্যবহার করা হয়, আর এজন্য এখানে লেন্সের ব্যাপারটি নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কিন্তু যে বিষয়ে মাথা ঘামানোর দরকার রয়েছে সেটি হচ্ছে লেন্স এর অ্যাপাচার। একটি ক্যামেরা তে কিংবা একটি লেন্সের যত বেশি অ্যাপাচার হবে সে তত পরিমাণে লাইট ইমেজ সেন্সরে পৌঁছে দেবে।
আর এই অ্যাপাচার কে f দিয়ে হিসাব করা হয়। যেখানে রয়েছে f/2.2, f/2.0, f/1.7, f/1.4 ইত্যাদি। আর এই f এর পরের সংখ্যা গুলো যত কম হবে সেই ক্যামেরা কিংবা লেন্সের অ্যাপাচার তত বেশি হবে। অর্থাৎ, এখানে যে সর্বোচ্চ অ্যাপাচার রয়েছে সেটি হল; f/1.4। অ্যাপাচার বোঝানোর এ প্রক্রিয়ায় আপনাদের সমস্যা হতে পারে। তো চলুন অ্যাপাচার কে আরও সহজ ভাষায় বোঝানো যাক।
তো ধরুন, একটি বদ্ধ ঘর যদি একটি ইমেজ সেন্সর হয়; তবে অ্যাপাচার হচ্ছে সেই ঘরের জানালা। যেখানে জানালা টিকে যত বেশি পরিমাণে খোলা হবে ভিতরে ততো বেশি পরিমাণে আলো প্রবেশ করবে। ঠিক একই রকমভাবে একটি লেন্স বা ক্যামেরা অ্যাপাচার যত বেশি হবে অর্থাৎ সেই f এরপরে নাম্বারগুলো যত কম হবে সেই লেন্স কিংবা ক্যামেরা ততো বেশি পরিমাণ লাইট কে ইমেজ সেন্সর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবে। এক্ষেত্রে আপনার ফটো কিংবা ভিডিওর কোয়ালিটি অনেকটা ভালো হবে বিশেষ করে low-light পরিস্থিতিতে। এছাড়া আপনি দিনের বেলায় বাইরের পরিবেশে ব্যাকগ্রাউন্ড কে বেশি পরিমাণ ঝাপসা করে ছবি তুলতে পারবেন।
একটি ক্যামেরার f এরপরে নাম্বার গুলো যত কম হবে এক্ষেত্রে সেই ক্যামেরাটি অ্যাপাচার তত বেশি হবে এবং সেটি দিয়ে তোলা ছবি অনেক ভালো হবে। সেই ক্যামেরাটি দিয়ে আপনি তত বেশি পরিমাণ low-light পরিস্থিতিতে ছবি তুলতে পারবেন এবং বাহিরের পরিস্থিতিতে প্রতিটি ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড কে আপনি বেশি পরিমাণে ঝাপসা করে তুলতে পারবেন।
কোন একটি ক্যামেরা পিক্সেল এবং অ্যাপাচার দেখার পর যেটি দেখা উচিত তা হল; এটির অটোফোকাস সিস্টেম। যেখানে অটোফোকাস হিসেবে রয়েছে Dual-pixel, Laser Auto-Focus, PDAF, CDAF। তো, এসব অটো ফোকাস এর মধ্যে সবচাইতে ভালো হয়েছে Dual-pixel অটোফোকাস। যেটি কিনা আজকের সময়ে সবচাইতে ফাস্ট অটোফোকাস সিস্টেম। তারপরের নাম্বারে আছে Laser Auto-Focus, PDAF, CDAF।
CDAF অটোফোকাস টি সবচাইতে পুরাতন অটো ফোকাস সিস্টেম। আজকালকার ক্যামেরাতে কিংবা স্মার্টফোনে হয়তোবা এটিকে আর দেখতে পাবেন না। তবে এখানে আপনি একটি বিষয় মনে রাখবেন যদি ক্যামেরা তে PDAF পান তবে ভাল, যদি Laser Auto-Focus পান সেটিও ভালো, আবার যদি দুটির মিশ্রণে পান, অর্থাৎ Laser Auto-Focus+PDAF আরো ভালো। আর যদি Dual-pixel অটোফোকাস পান তবে সেটি তো অবশ্যই বেস্ট, কেননা এটি হচ্ছে সবচাইতে ফাস্ট অটোফোকাস সিস্টেম।
এসব কিছু দেখা শেষ হলে দেখা উচিত ক্যামেরাটির OIS, অর্থাৎ Optical Image Stabilization। OIS কি করে, আপনি যখন কোন ফটো তে ক্লিক করেন তখন যে আপনার হাতে কিছু মুভমেন্ট বা নড়াচড়া হয় তখন এই OIS সেটি কম করে। এক্ষেত্রে আপনি যখন ভিডিও শুট করবেন তখন দেখতে পাবেন আপনার হাতটি অনেক নড়াচড়া করছে, যার কারণে আপনার ভিডিও কোয়ালিটি অনেকটা খারাপ চলে আসতে পারে। এক্ষেত্রে Optical Image Stabilization আপনার হাতের নড়াচড়াটা ভিডিওতে কিছুটা কমিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে আপনার ভিডিওটি অনেক smooth হবে।
স্বাভাবিক ভাবে আমরা যখন হাতে ধরে কোন ছবি তুলি তখন হাত নড়াচড়া হতে পারে। আর যখন আমরা কোনো ছবি তোলার জন্য ক্লিক করি তখন ক্যামেরাটি দিনের বেলায় সাধারণত এক সেকেন্ডের ১০০ থেকে ২০০ ভাগের এক ভাগ সময় নিয়ে থাকে একটি ছবি তোলার ক্ষেত্রে। আর এসময় যদি আমাদের হাত থেকে ক্যামেরাটি নড়ে যায় তবে সে ক্ষেত্রে পিকচার কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যাবে। কোন ক্যামেরার লেন্সে OIS থাকার ফলে যখন সেটি দিয়ে ভিডিও করা হয় কিংবা ছবি তোলা হয় তখন যদি মোবাইলটি হাত থেকে নড়ে যায় তবে লেন্স সেদিক ঘুরে গিয়ে একটি স্থির অবস্থানে থাকে। যে কারণে OIS থাকার ফলে একটি স্থির এবং সুন্দর ছবি চলে আসে।
Optical Image Stabilization-এ আরো একটি বাড়তি সুবিধা হচ্ছে; আপনি যখন low-light পরিস্থিতিতে কোন ছবি তুলবেন তখন আপনার ফোনের ক্যামেরার শাটার টিকে আরও অধিক সময় খোলার সুযোগ করে দিবে। যাতে করে সে অধিক থেকে অধিকতর লাইট সে ক্যাপচার করতে পারে।
তো বন্ধুরা, উপরের এসব তো গেল ক্যামেরার হার্ডওয়ার এর বিষয়। আপনার ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও এবং ফটো কোয়ালিটি ভালো হবার পেছনে আরও একটি বিষয় কাজ করে প্রসেসিং। আপনার ফোনের হার্ডওয়ারগুলো যদি অনেক ভালো হয় অর্থাৎ আপনার ফোনের পিক্সেল সাইজ গুলো অনেক বড়, অ্যাপাচার অনেক বড়, সর্বশেষ অটোফোকাস সিস্টেম থাকে কিন্তু আপনার ফোনের প্রসেসিং যদি খারাপ হয় তবে পিকচার কোয়ালিটি কিংবা ভিডিও কোয়ালিটি আপনি কিন্তু ভালো পাবেন না। এর একটি উদাহরণ হতে পারে সনির ফোনগুলো। যারা কিনা ক্যামেরার সেরা হার্ডওয়ার তৈরি করে থাকে তাদের সফটওয়্যার অ্যালগরিদম খারাপ হবার কারণে ফোনের ক্যামেরাতে ভালো পিকচার কোয়ালিটি ব্যবহারকারীরা পান না।
এছাড়া কোন একটি ফোনের পিকচার কোয়ালিটি ভালো হবার পেছনে সেই ফোনের প্রসেসর টিও অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। যদি সেই ফোনের প্রসেসরটি অনেক দুর্বল হয় তবে পিকচার কোয়ালিটি এবং ভিডিও কোয়ালিটি ও এক্ষেত্রে খারাপ আসতে পারে। যে কারণে ক্যামেরা এর মেগা পিক্সেল বেশি হওয়া সত্বেও পিকচার কিংবা ভিডিও কোয়ালিটি খারাপ হবার পেছনে বোনের প্রসেসরটি কে দায়ী করা যায়।
তো বন্ধুরা এই ছিল তবে স্মার্টফোনের ক্যামেরা নিয়ে আজকের এই টিউন। আশা করছি আপনাদের কাছে কিন্তু অনেক ভালো লেগেছে। যদি আপনাদের কাছে কিন্তু ভালো লেগেই থাকে তবে টিউনটিতে একটি জোসস করার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিবেন এবং সেইসঙ্গে কেমন লাগলো সেটিও টিউনমেন্ট করে জানাবেন। আজ তবে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে আগামীর কোন টিউনে ইনশাআল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)