বিট-কয়েন কমিউনিটির গৃহযুদ্ধ! কে এই Satoshi Nakamoto?

Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আপনারা জানেন আমি প্রায়ই বিভিন্ন বিশ্লেষণ মূলক টিউন করে থাকি। টিউন গুলোতে  বিভিন্ন কোম্পানি বা বিষয়ের ভাল দিক খারাপ দিক, তাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, সুযোগ প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি উঠে আসে। তো আজকেও এমন একটি টিউন নিয়ে হাজির হলাম।

আমরা এখন সবাই হয়তো জানি বিট-কয়েন বা ক্রিপটোকারেন্সি  কোথা থেকে এসেছে, ক্রিপটোকারেন্সির অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম, এবং ক্রিপ্টো কমিউনিটির দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমের ফলাফল। আজকের এই টিউনে আমরা জানব ক্রিপটোকারেন্সি কমিউনিটির মধ্যে বিদ্যমান গৃহযুদ্ধ, ব্যাংক এর মত প্রতিষ্ঠান কি বিট-কয়েনকে নিয়ন্ত্রণ করবে কিনা এবং ধারণা নেবার চেষ্টা করব কে হতে পারে রহস্যময় Satoshi Nakamoto। আমরা আগের টিউনে বিট-কয়েন কোথা থেকে এসেছে, এর পেছনে কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল এসব বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম চাইলে, বিট-কয়েন কোথা থেকে এসেছে? জানুন ক্রিপ্টোকারেন্সি ধারণার বিস্তারিত ইতিহাস টিউনটি দেখে আসতে পারেন।

বিট-কয়েন কমিউনিটির গৃহযুদ্ধ

বিট-কয়েন তৈরি বা ধারণাটির ক্রমবিকাশের পেছনে রয়েছে বিশাল একটি কমিউনিটি। সেই কমিউনিটির কারো কারো পরিচয় সবার জানা এবং এমন কিছু ক্যারেক্টর রয়েছে যারা লোক চক্ষুর আড়ালে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। সেই নব্বই দশক থেকে ক্রিপটোকারেন্সির ধারনা বিকশিত হলেও, সবাই যে বিষয়টিকে একভাবে ভেবেছে এমনটি নয়। একেক জন একেক ভাবে লেনদেনের প্রক্রিয়াটি নিয়ে চিন্তা করেছে। ২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিট-কয়েন লঞ্চ হলেও সেই বিট-কয়েন কমিউনিটির মধ্যেও মতের অমিল দেখা যায়।  বিশাল সেই কমিউনিটির অভ্যন্তরীণ যে দ্বন্দ্ব সেটাই আমি "বিট-কয়েন কমিউনিটির গৃহযুদ্ধ" বলে উল্লেখ করছি। কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় চলে যাই,

বিট-কয়েন নিয়ে ক্রিপটোকারেন্সি কমিউনিটির সবচেয়ে বড় যে দ্বন্ধ, সেটা হল বিট-কয়েনের ব্লক সাইজ নিয়ে। আগে আমরা জেনেছিলাম বিট-কয়েন মাইন হয় নির্দিষ্ট ব্লকের মধ্যে। এই ব্লক গুলোর মধ্যেই সম্প্রতি করা সকল লেনদেন গুলো সংরক্ষিত থাকে। এই ব্লক গুলোর সাইজকে মেগাবাইট দ্বারা পরিমাপ করা হয়, বিট-কয়েন ফাংশনালিটিতে  যার ব্যাপক অবদান রয়েছে।  Satoshi Nakamoto এই ব্লকের সাইজ লিমিট করে দিয়েছে ১ মেগাবাইটে। এমনটি করার কারণ ছিল সে চাইতো না কেউ অনেক বড় সাইজের ব্লক তৈরি করে পুরো সিস্টেমকে বিপাকে ফেলুক।

কিন্তু সময় এগিয়ে যাওয়ায় এই ১ মেগাবাইট সাইজ কিছু সমস্যার তৈরি করেছে যেমন আগের চেয়ে অধিক ইউজার সিস্টেমে প্রবেশ করার কারণে বিট-কয়েন স্ক্যাল করা কঠিন হয়ে পড়েছে।  তাছাড়া পেমেন্ট টাইম আগের চেয়ে বেশি লাগছে একই সাথে ফি তুলনামূলক বাড়ছে। বর্তমানে  বিট-কয়েন প্রতিসেকেন্ড সাতটি লেনদেন করতে পারে, যেখানে Paypal করে ১৫ টি এবং Visa করে ২০ টি।

তবে Satoshi Nakamoto আগেই বুঝতে পেরেছিল এমন একটি সমস্যা হতে পারে, তাই সে তার লেখনীতে বলেছিল বিট-কয়েন এর ব্লক সাইজ এটির স্ক্যাল অনুযায়ী ভবিষ্যতে বাড়ানো হতে পারে। আর বিষয়টি থেকেই কমিউনিটির মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কমিউনিটি দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল চায় ব্লক সাইজ বাড়ানো হোক কিন্তু অন্য দল সেটার বিরোধিতা করে।

যারা বড় ব্লক চায় (বড় ব্লকার) তাদের দাবী, বিট-কয়েন এর ব্লক সাইজ ১ মেগাবাইটের চেয়ে বাড়ানো হোক তাহলে লেনদেনের সময় কমবে একই সাথে এর গতি বর্তমান ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ গুলোর মত হবে। কিন্তু যারা ছোট ব্লক চায় (ছোট ব্লকার) তাদের কাছে স্টোর ভ্যালু বেশি গুরুত্বপূর্ণ, লেনদেনে কতটা সময় ব্যয় হচ্ছে এটা তাদের দেখার বিষয় না। তারা আরও জানায় ব্লক সাইজ বড় করা হলে অনেক কম্পিউটার গুলোই বিট-কয়েন মাইন করার অযোগ্য হয়ে পড়বে।  ব্যক্তিগত ভাবে যারা মাইনিং করে তারা বঞ্চিত হবে এবং মাইনিং ইন্ডাস্ট্রি গুলো মনোপলি প্রতিষ্ঠা করবে।

আমরা সবাই মাইনিং এর বিষয়টি সম্পর্কে হয়তো জানি, প্রথম দিকে ব্যক্তিগত ভাবে মাইনিং করা সম্ভব হলেও GPU এর কর্মক্ষমতা, অধিক ব্যয় ইত্যাদির ফলে সেটা কঠিন হয়ে পড়ে।  যারা চায় ব্লক সাইজ ছোট থাকুক, তাদের ধারণা ব্লক সাইজ বাড়ালে ব্যক্তিগত কম্পিউটার দিয়ে মাইনিং কিছু ক্ষেত্রে একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়বে।

নতুন নতুন বিট-কয়েন এর উৎপত্তি

তো এই সমস্যা সমাধানে জন্য Gavin Anderson, এবং গুগল ডেভেলপার Mike Hearn একসাথে Bitcoin XT রিলিজ করে, যাতে ছিল ২ মেগাবাইট ব্লক সাইজ। একই সাথে প্রতি সেকেন্ডে এটি দিয়ে ২৪ টি লেনদেন করা যেতো। তো এই ব্যবস্থাটি বড় ব্লকারদের কাছে বেশ ভাল লাগে এবং তাদের পিসিতে Bitcoin XT ইন্সটল দেয়, যাতে করে তাদের সমস্যার সমাধান হয়।

পক্ষান্তরে ছোট ব্লকাররা বিষয়টিকে ভাল ভাবে নেয় নি তারা এটিকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখে। এর পর বিভিন্ন কারণে এবং ছোট ব্লকারদের বাধায় Bitcoin XT খুব বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। একটি সূত্র জানিয়েছে এটিকে ব্যাহত করার জন্য DOS এটাকও করা হয়েছিল।

এমনও জানা গেছে Reddit এর মত অনলাইন কমিউনিটি গুলোতে Bitcoin XT নিয়ে লেখালেখি করলে সেই ফোরাম গুলোকে ব্যান করা হতো। Mike Hearn, ২০১৬ সালে জানায়, কেন Bitcoin XT ব্যর্থ হয়েছিল?  Bitcoin XT ব্যর্থ হয় কারণ কমিউনিটি ব্যর্থ হয়েছিল। পুরো সিস্টেমটি কন্ট্রোল হচ্ছিল ক্ষমতাবান লোকদের দ্বারা"।

২০১৭ সালে, বিট-কয়েন কমিউনিটি ডেভেলপাররা স্ক্যালিং সমস্যা সমাধানের জন্য Segwit নামে নতুন একটি আইডিয়া নিয়ে আসে। তারা ব্লকে লেনদেনের ডেটা গুলো স্টোর করতে একটি স্মার্ট টেকনিক বের করে। তারা ব্লক থেকে ক্রিপ্টোগ্রাফিক সিগনেচার রিমুভ করে দেয়, এবং সেখানে শুধু রিসিভার এবং লেনদেনের ডেটা রাখে। ক্রিপ্টোগ্রাফিক সিগনেচার মুছে দেয়াতে ব্লকে কিছুটা বাড়তি স্পেস উন্মুক্ত হয়।

বেশ কয়েকজন কমিউনিটি  ডেভেলপারদের এই আইডিয়া পছন্দ হয় নি তারা বিট-কয়েন এর মূল চেইন থেকে সরে যায় এবং বিট-কয়েন এর নতুন ভার্সন নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তারা নিয়ে আসে BitcoinCash। BitcoinCash এ ডেটা সেভিং টেকনিক Segwit ব্যবহার না করে ৮ মেগাবাইটের ব্লক সাইজ নিয়ে আসা হয়।

কিন্তু কিছুদিন পর বিষয়টি এলোমেলো হয়ে যায়, ডেভেলপাররা BitcoinCash আরও পরিবর্তন নিয়ে আসতে চায়।  ২০১৮ সালে Craig Wright নামে এক ডেভেলপার BitcoinCash কে  দুটি ভাগে ভাগ করে নতুন করে Bitcoin Satoshi Vision নিয়ে আসে। যেখানে কোন ব্লক সাইজ লিমিট ছিল না এবং ছিল খুবই স্বল্প ফি।  এখানে বলে রাখা ভাল অধিকাংশ লোক বিশ্বাস করে Craig Wright হচ্ছে Satoshi।

Bitcoin S.V. কমিউনিটি বিশ্বাস করে Bitcoin S.V. হচ্ছে মূলধারার আসল বিট-কয়েন এর মত যেখানে প্রতিসেকেন্ডে আরও বেশি লেনদেন সম্ভব এবং এটি আরও বেশি নমনীয়। তবে অনেক ডেভেলপার বলে ভিন্ন কথা! যেমন, Coingate নামে একটি স্বত্ব  Bitcoin S.V. এর ৫১% মাইনিং কম্পিউটিং কন্ট্রোল করে। তাই অনেক সমালোচকরা বলে এটি ম্যানুপুলেট  হতে পারে। এটিকে স্ক্যাম বলেও উল্লেখ করেছে কেউ কেউ।

শেষ পর্যন্ত বলা যায় ভিন্ন ভিন্ন মতামতের জন্য এখন পর্যন্ত বিট-কয়েন তিন ভাগে ভাগ হয়েছে যেমন মূলধারার বিট-কয়েন, Bitcoin cash এবং Bitcoin Satoshi Vision বা Bitcoin S.V.।

বিটকয়েনে ব্যাংকের হস্তক্ষেপ

এবার আমরা জানার চেষ্টা করব, বিটকয়েনে কখনো কি ব্যাংক ব্যবস্থা হস্তক্ষেপ করবে?  ২০১৪ সালে যখন বিট-কয়েন এর স্ক্যালিং নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে তখন BlockStream নামে একটি কোম্পানি গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল দুইটি, ১) সেলস সাইড টু এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস, ২) মাসিক ফি দিতে হবে এবং লেনদেন চার্জ থাকবে। সহজ ভাবে বলতে গেলে তারা মূলত বিট-কয়েন নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে ব্লক চেইনে বাইরে লেনদেন  এবং মাইনারদের অর্থ প্রদান রোধ করার ধারণা নিয়ে আসে। তাদের এই সিস্টেমটিকে বলা হয় Lightning Network এবং তারা কোন ব্লকচেইন ব্যবহার করে না।

বলা যায় বিট-কয়েনকে সীমাবদ্ধ কর‍তে এবং ধারণাটিকে পুরনো করতে BlockStream এর মত কোম্পানি যথেষ্ট। একইভাবে BlockStream একটি মুনাফা-ভোগী প্রতিষ্ঠান। BlockStream প্রতিষ্ঠা করেছিল Adam Back। Adam Back কে আবার অনেকে Satoshi বলে ধারণা করে। Adam Back কে কেন Satoshi Nakamoto বলে মনে করা হয় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে একটু পর।

যাই হোক, আমি BlockStream সম্পর্কে যদি আমার ব্যক্তিগত মতামত দেই তাহলে বলব, BlockStream হয়তো বা বিট-কয়েন নেটওয়ার্কের সমস্যার সমাধান করে লেনদেন Visa অথবা Paypal এর মত দ্রুত করতে পারবে, কিন্তু তাদের চার্জটা বিট-কয়েন ধারনার সাথে সাংঘর্ষিক। বিট-কয়েন এর ধারনাটিই ছিল সেখানে কোন মিডল-ম্যান থাকবে না কিন্তু BlockStream এই ধারণাকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।

তো BlockStream এর এই Lightning Network এর অবশ্যই ফাইনান্সিয়াল রেগুলেশন দরকার হবে, একটা বিশাল এমাউন্টের লিকুয়েডিটি রাখতে হবে, লেনদেনে দুর্নীতি রোধে একটা সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট রাখতে হবে, লেনদেনের জন্য সার্ভিস চার্জ তো আছেই। এবার একটু মিলিয়ে দেখুন তো এই সব বৈশিষ্ট্য কোথায় পাওয়া যায়?  অবশ্যই আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো বা ব্যাংকে এমন বৈশিষ্ট্য নজরে আসে। তাহলে দেখা যাচ্ছে বিট-কয়েন যে প্রতিষ্ঠান গুলোকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য এসেছিল, BlockStream এর মত প্রতিষ্ঠান বিট-কয়েনকে সেখানেই নিয়ে যাচ্ছে।

বিট-কয়েন এর আসল লক্ষ্যকে নষ্ট করতে BlockStream এ ৫৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে AXA Insurance। AXA Insurance এর বর্তমান CEO, বিলিয়নিয়ার Andre De Castries একই সাথে Bilderberg Group এর প্রেসিডেন্ট। এবং এই গ্রুপটির গ্লোবাল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে দারুণ সম্পর্ক  রয়েছে।  সমালোচকরা বলে BlockStream একই সাথে Digital Currency Group থেকেও ফান্ডিং পাচ্ছে। তাছাড়া প্রথম দিকের বিট-কয়েন ডেভেলপারদের ভাড়া করার জন্যও ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হয়েছে Adam Back।

কে হতে পারে রহস্যময় Satoshi Nakamoto

এবার আমরা আলোচনা করব Satoshi Nakamoto নিয়ে। বিট-কয়েনের উদ্ভাবক বা Satoshi হটাৎ করে হারিয়ে যায় এবং একটি ক্রিপ্টো ইমেইলে সে সম্পর্কে জানায়৷  সে যেহেতু Anonymous ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করতো সেহেতু তার আসল পরিচয় কেউ জানতো না। এখনো রহস্য রয়ে গেছে কে এই Satoshi Nakamoto।

বিট-কয়েন এর উদ্ভাবনের পর থেকেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন গোষ্ঠী খুঁজে বেড়াচ্ছে Satoshi Nakamoto কে, এখন পর্যন্ত অনেক ব্যক্তিকে Satoshi Nakamoto বলে সন্দেহ করলেও কেউ স্বীকার করতে চায় নি এবং আলোচনায় আসার জন্য কেউ কেউ নিজেকে Satoshi বলে পরিচয় দিলেও পরে বিষয়টি প্রমাণিত হয় নি।

Satoshi Nakamoto ইন্টারনেটে ব্যাপক ঘাটাঘাটির পর আমি তাকে চেনার দুইটি ক্লু বের করেছি।  একটি ক্লু হল, বিট-কয়েন এর আসল কোড ছিল C+, আরেকটি ক্লু হচ্ছে Satoshi তার লিখাতে সব সময় ব্রিটিশ ইংলিশ ব্যবহার করতো এবং প্রায়ই ডাবল স্পেস দিয়ে বাক্য লিখতো। আর এই লেখার অভ্যাস গুলো থেকে ধারণা করা যায় Satoshi কোন গ্রুপ ছিল না সে একজন ব্যক্তি ছিল। চলুন Satoshi Nakamoto হিসেবে সন্দেহ করা আলোচিত কিছু ব্যক্তির সম্পর্কে জানা যাক,

Dorian nakamoto

কে আসল Satoshi  এটা খুঁজতে আমাদের প্রথম সন্দেহজনক ব্যক্তি Dorian nakamoto। যদিও তাকে আসল  Satoshi বলার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই তবুও তাকে এখানে মেনশন করা হয়েছে কারণ তার সাথে পরবর্তী ব্যক্তির কিছু যোগসূত্র রয়েছে।

Dorian nakamoto একজন জাপানিজ পদার্থবিদ এবং ইঞ্জিনিয়ার। ২০১৪ সালে একটি আর্টিকেলে তাকে বিট-কয়েন প্রতিষ্ঠা হিসেবে তুলে ধরা হয়। এই ঘটনায় Dorian nakamoto যেন আকাশ থেকে পড়ে!  সে সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট ভাবে জানায় সে কখনো বিট-কয়েন এর ডেভেলপের পেছনে ছিলেন না, এমনকি এর নামও আগে কখনো শুনেন নি।

Hal Finney

আগের টিউনে আমি বলেছিলাম প্রাথমিক দিকে ক্রিপটোকারেন্সি মুভমেন্টের অন্যতম অংশ ছিল  Hal finney। এমনকি তার সাথেই Satoshi এর প্রথম বিট-কয়েন লেনদেন হয়। শুধু তাই নয়, Satoshi এবং Finney মিলেই বিট-কয়েন এর বিভিন্ন বাগ ফিক্স করতো। অনেকে ধারণা করে  Hal Finney হতে পারে Satoshi Nakamoto।

মজার ব্যাপার হল Hal Finney এবং Dorian Nakamoto একই এলাকায় বাস করতো আর এজন্যই Dorian nakamoto সন্দেহ করা হয়েছিল। যাইহোক ২০০৯ সালে Hal Finney, একটি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয় এবং ইমেইল Posting কমিয়ে দেয়।  তাছাড়া Finney বেশিরভাগ সময় বিট-কয়েন এর বাগ ফিক্স করতো। যদি সে Satoshi হবে তাহলে অবশ্যই সে নিজে বাগ তৈরি করে নিজে ফিক্স করতো না। দুর্ভাগ্যবশত Hal Finney, ২০১৪ সালে মারা যায়। বলা যায় সে Nakamoto নয়।

Nick Szabo

Satoshi Nakamoto বলে সন্দেহ করা আরেকজন ব্যক্তি হচ্ছে Nick Szabo। সে University Of Washington থেকে কম্পিউটার সাইন্স ডিগ্রি অর্জন করে একই সাথে আইন এবং অর্থনীতি নিয়ে তার ছিল অগাধ জ্ঞান। তাছাড়া শুরু থেকে ক্রিপটোকারেন্সি নিয়ে সকল মুভমেন্টে তার বিচরণ ছিল। আগের টিউনে আমি উল্লেখ করেছিলাম সে DigiCash এর অন্যতম একজন কন্ট্রিবিউটর ছিল।

তাকে Satoshi Nakamoto ভাবার মূলত দুটি প্রধান করণ রয়েছে, প্রথমত তার আইপি এড্রেস লোকেশন ছিল California তে এবং Satoshi Nakamoto এরও আইপি এড্রেসও একই স্থানে ছিল। দ্বিতীয়ত একবার Satoshi Nakamoto অন্য ক্রিপটোগ্রাফারদের সাথে একটি এক্সচেঞ্জ করে এবং সেখানে তার ওয়ালেটের এড্রেস পাওয়া যায়, দারুণ ব্যাপার ছিলো তার ওয়ালেটের প্রথম দুই অক্ষর ছিল NS৷ এই মিল গুলো ছাড়া তাদের মধ্যে আর কোন মিল পাওয়া যায় নি এবং Nick Szabo নিজেও সরাসরি জানায় সে Satoshi Nakamoto নয়।

আরও জানা গেছে Nick Szabo প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ C+ খুব ভাল জানতো না এবং ব্রিটিশ ইংলিশও ব্যবহার করতো না।

Craig  Wright

সন্দেহজনক ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হচ্ছে  Craig  Wright। তিনি একজন অস্ট্রেলিয়ান সাইন্টিস্ট একই সাথে তার ছিল একাধিক বড় বড় ডিগ্রি। Craig  Wright কে Satoshi Nakamoto হিসেবে প্রথম সন্দেহ করা হয় ২০১৫ সালে।

অন্য ব্যক্তিদের এবং Craig  Wright এর মধ্যে পার্থক্য ছিল সে সরাসরি জানায় সে Satoshi Nakamoto। সে জনসম্মুখে, Satoshi Nakamoto এর এড্রেস হিসেবে বিবেচনা করা একটি এড্রেসে ডিজিটাল সিগনেচার দিতে সমর্থ হয়। একই সাথে সে অস্ট্রেলিয়ান হওয়ায় তার সাথে ব্রিটিশ ইংলিশ ক্লু টিও মিলে যায়। তারপরেও কোথাও যেন একটি রহস্য ছিল এবং সেটি পরিষ্কার হয় ২০২০ সালে।

২০২০ সালে একটি নিউজ পোর্টাল প্রমাণ করে যে Craig  Wright এর দাবীটি সম্পূর্ণ মিথ্যে ছিল, সে ওই বিট-কয়েন এড্রেসের মালিক ছিল না। তারপরেও অনেকে বিশ্বাস করে Craig  Wright হচ্ছে Satoshi Nakamoto।

Adam Back

সাম্প্রতিক সময়ে Satoshi Nakamoto বলে মনে করা সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব হচ্ছে Adam Back, যদিও সে এটি অস্বীকার করে নি। এখন পর্যন্ত সন্দেহ করা ব্যক্তিদের মধ্যে Satoshi এর সাথে সবচেয়ে বেশি মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে Adam Back এর। বিট-কয়েন নিয়ে আগের করা টিউনে আমি ক্রিপটোকারেন্সি যাত্রায় যে কতজন অগ্রদূতের নাম বলেছিলাম তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Adam Back। Computer Distribution System এর উপরে সে Phd করেছিল, এবং এটি সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। ১৯৯৭ সালে তার তৈরি করা Hashcat এর সাথে মাইনিং এলগোরিদমের দারুণ মিল ছিল। Adam Back ও লিখার সময় ব্রিটিশ ইংলিশ ব্যবহার করতো এমনকি Satoshi Nakamoto এর মত ডাবল স্পেস দেবার বিষয়টিও সম্পূর্ণ মিলে যায়। তাছাড়া  Adam Back, C+ ল্যাংগুয়েজেও দারুণ দক্ষ ছিল, যে প্রোগ্রামিং ভাষা দিয়ে বিট-কয়েন তৈরি করা হয়েছে।

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রথম মাইন হওয়া ব্লকে যে কোডটি পাওয়া গিয়েছিল সেটি Adam Back আচরণের সাথেও মিলে যায়। সে ছিল লন্ডনের এবং সেই সময় কোডিং এর মধ্যে পলিটিক্যাল স্ট্যাটমেন্ট লিখার ট্রেন্ড তৈরি করার জন্য সে সুপরিচিত ছিল। সে তখন একটি টি-শার্টে কোডের মাঝে  পলিটিক্যাল উক্তি লিখে বেশ আলোচিত হয়।

Satoshi Nakamoto এর সাথে Adam Back এর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মিল থাকলেও অনেকে এটা মানতে নারাজ যে Adam Back হল Satoshi Nakamoto। আমরা জানি Satoshi Nakamoto ইচ্ছে করেই বিট-কয়েন এর ব্লক সাইজ ১ মেগাবাইট করে দিয়েছে, তাহলে Adam Back কেন এটি বাড়াতে চাইবে।  যেখানে বিট-কয়েন একটি ইউনিক ধারণা থেকে এসেছে, সেখানে Adam Back কেন BlockStream এর মাধ্যমে সেটাকে নষ্ট করতে চাইবে। BlockStream একটি মুনাফা-ভোগী প্রতিষ্ঠান যার CEO হচ্ছে Adam Back, যদি সে Satoshi Nakamoto হয় তাহলে তো তার উপার্জনের জন্য এমন কোন প্রতিষ্ঠান দরকার নেই, কারণ এখন পর্যন্ত তার কাছে যে পরিমাণ বিট-কয়েন রয়েছে সেগুলোই তাকে বিশ্বের সেরা ধনীতে পরিণত করার জন্য যথেষ্ট।

তাহলে কে Satoshi Nakamoto?  এই রহস্য এখনো অভেদ্য।

শেষ কথাঃ

দীর্ঘ এই টিউনে আমরা জানলাম বিট-কয়েন কমিউনিটির মধ্যকার দ্বন্দ্ব সম্পর্কে, একই সাথে দেখলাম কিভাবে BlockStream কোম্পানি বিট-কয়েন ধারণাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

সব কিছুর পরে বলা যায়, ২০০৯ সালে শুরু হওয়া বিট-কয়েন এর এই যাত্রায় কার অবদান রয়েছে এটা এখনো সবার কাছে অজানায় রয়ে গেছে। কে এই Satoshi Nakamoto এই প্রশ্নের জবাব সে নিজেই দেয় নাকি অন্য কেউ বের করতে পারে এটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

তো কেমন হল আজকের এই টিউন জানাতে অবশ্যই টিউমেন্ট করুন, পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস